প্রতিটি রাতের একটি ভোর নিশ্চিত আছে। যতই দীর্ঘতায় সে জড়িয়ে থাকুক না কেনসূর্যের অল্প উঁকি তাকে পাঠিয়ে দেয় আলোর ভেতরে। এখন বোধহয় প্রত্যূষঅল্প বিলম্বে অরুণরাগে স্নাত হবে আমাদের পৃথিবী। মহামারির অন্তিম শয্যায় দাঁড়িয়ে আমরা শপথ নেবো এই বিশ্বকে নতুন করে গড়ে তোলার। আর তার এক বড়ো মাধ্যম হলো শিল্প ও সংস্কৃতি। শিল্প – সংস্কৃতির প্রসার এখন অনেকটা ওয়েব নির্ভর। অঙ্কুরোদগমের তাই প্রয়াস বিশ্বব্যাপী তাদের শিল্পকলাকে ছড়িয়ে দেওয়ার। এজন্য জেলাভিত্তিক এই ওয়েব ম্যাগের আয়োজন। দঃ ২৪ পরগনা জেলার পক্ষ থেকে সবাইকে প্রাক শারদ শুভেচ্ছা জানিয়ে এই অন্তর্জালিক পত্রিকা প্রকাশ করছি। আগামী দিনগুলো সকলে দুশ্চিন্তামুক্ত কাটাক দেবী মায়ের কাছে এই কামনা। সবাই সুচিন্তিত মতামত দিয়ে আমাদের বাধিত করবেন।

কবিতা

 

সৌমিত বসু

সৌগত প্রধান

বিকাশরঞ্জন  হালদার

অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

বিধান চন্দ্র হালদার

সুনেন্দু পাত্র

সুমন দিন্ডা

অভিনন্দন মাইতি

কর্ণ প্রামানিক

গোপাল পৈলান

রাখী সরদার

সুকেশ চন্দ্র পাত্র

স্বদেশ রঞ্জন মন্ডল(দাদাভাই)

 

ভিডিও

 

মানসী হালদার কুইত ও রাজশ্রী ঘটক

অমৃতাংশু ও অয়ন

সেঁজুতী ও সৌরশ্রী

ঠুনকো শব্দটা সম্পর্কের আগে বেশ জুতসই

কাছে গেলে ঠোকা লাগে ঠিক যেন ঝলমল পোরসেলিন।

যখন তখন ভেঙে মেঝেতে ছড়িয়ে

সারাটা জীবন ধরে জোড়া দেওয়াশুধু মেলানোর শ্রম

টুকরোগুলো কেন মেলাতে পারিনা কিছুতেই।

 

সংসার ঠিক যেন কাঁসার বাসন

ঠোকা লাগেশব্দ হয়আবার সে মেজেঘসে ঠিক

যেদিকেই উড়ে যাওমাস্তুলে ঠিক যেন বসবেই পাখিসংসারের দাঁড়ে।

 

আজ সম্পর্ক আর সংসার কিভাবে হাত ধরাধরি করে

উড়ে যাচ্ছে দেখো বছরের প্রথম সকাল।

মেঘের ভেতর দিয়ে মেয়ের সোনালী মুখ তুমি জলভরা চোখ নিয়ে একবার উঠে এসো ছাদে

কতো কি রয়েছে লেখা আকাশের গায়ে

কতো ছবিজলরঙ।পড়ে দেখো তোমার অতীত।

 

সম্পর্ক বিসর্জন দিয়ে সংসার তুলে রেখো কুলুঙ্গির ফাঁকে।

প্রতিদিন নিজেকে বদ্বীপ মনে হয়….

 

বারবার প্রমাণ করতে হয়

জল সাঁকো পেরিয়ে ছুটে চলা ছড়ানো জীবন

যেন না থমকে দাঁড়ায়

ঘাটশিলায় বাঁধা অবোধ নৌকায়…..

 

আজ মন্দির জুড়ে শুধু উৎসব

হাতে অন্ধকার নিয়ে দুঃসহ রাত্রি শেষে

আসবে লাজুক রঙের ভোরনতুন  দিন।

 

শুধু হিরন্ময় বাতাসে খেলে বেড়ায় আমার শরীর

আর আমি একরাশ সহজ ইঙ্গিতে

একটা মেঘবল ঘোরাই কপালে….

 

বাতাস আঁকিবুঁকি কাটে ঝরে পড়া ডালিম ফুলের গন্ধে

কৃষ্ণলতা হাতের ছোঁয়ায় জ্বলে সন্ধিপুজোর বাতি

অভিসারী হাওয়ার রাত্রি পেরিয়ে বিনির্মাণ হয় বাড়ির রাস্তা…..

 

এইভাবে শিশির ভেজা ভোর জন্মাতেই

আলতা পায়ের চিহ্ন নিয়ে দীপ্ত হয় তোমার আমার

আধভেজা বাঁশির মোহনক্রিয়া….

১.

মূঢ় জল্পনা আত্মপ্রসাদ লাভ করে। গুঢ় রাত্রি নামে রাত্রির শিকড়ে।

২.

সময়ের আত্ম-গত কথা সময় ভুলে যায়। আর ভয়ঙ্কর তেষ্টা খোঁজে মেঘ-ময়ূর গোধূলি।

৩.

কৃষ্ণবর্ণ সকাল আসে আলো-রাত্রির হিল্লোলে। পল্লবিত সাধে কাঁটাঝোপ।

৪.

বেঁচে থাক আশ্চর্য কিছু তিল। আর তেমন ভুলগুলোর প্রসঙ্গ-ক্রম।

গাছ থেকে একটা দুটো ঝরে পড়ে পাতারা

একটা নির্গমনের দৃশ্য এখনও চোখের ওপর

বুকের ভেতর জমে রয়েছে কুয়াশা ভোর

পদসঞ্চার পড়ে থাকা শিশু পাতার ওপর

একটু একটু করে অদৃশ্যমান হয়ে যাওয়া

বড় তোরণ পেরিয়ে না জানা ঠিকানায়

এক নিষ্পলক দৃষ্টি নিয়ে ভেসে থাকা

সেদিনও ছিল শ্রাবণধারা

আজও এত বছর পরও সেইএকই

ভিজছে পথঘাটভিজছে তৃণভূমি

হাতের ভেতরে রয়েছে নিকোটিন দীর্ঘ রাত

বুকের ভেতর থেকে উড়ে যাচ্ছে

রাত্রির আঁধারের মতন কালো ধোঁয়া

সব যেন স্বপ্নের মতন সমুদ্রভূমি

ঢেউ গুলো যেন পথিক বাউল

হাত থেকে ছেড়ে যাওয়া একতারার মতন….

 

আমি এখনও  নিস্পলক দৃষ্টি ফেলে

রেখেছি সেই নির্গমনের দিকে…..

আমি কাঁটার উপর অবিরাম হেঁটে চলেছি

দুটি পা রক্তে ভেজা

তবু হেঁটে চলেছি নির্বাক তরঙ্গ যুদ্ধে

 

জীবনের শেষ ঘন্টা বাজার মুহূর্তেও

পুরো শরীরটা রক্তে ভেজা

তবুও হেঁটে চলেছি জ্বলন্ত মোমবাতি যুদ্ধে

আমি ভুলে গিয়েছিলাম

থুতু দিয়ে কোনো কিছু আটকানো যায় না

 

আমি ভুলে গিয়েছিলাম

কালিহীন পেন কোনো কাজে আসে না

 

আমি ভুলে গিয়েছিলাম

নিভন্ত পঞ্চপ্রদীপ আরতির কোনো কাজে লাগে না

 

প্রয়োজন আগুনের ফুলকি

আর স্বপ্নের রঙ মশাল

 

স্বপ্নের পোড়া ফুলকি হয়ে কী লাভ !

 

ইস ! যদি বিদ্যাসাগরের কাছে হাতে খড়ি নিতাম

তাহলে মাথা উঁচু করে চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করতে শিখতাম

 

এইভাবে  ইঁদুরের গর্তে যখন তখন ঢুকে পড়তাম না ! 

পুরনো প্রশ্বাস ত্যাগ করবেন আপনি

সাজিয়ে নেবেন চন্দনচর্চিত মহিমা

আজ চারিদিকে প্রেমের গন্ধমায়া মায়া আকর্ষণ

সব ঝেড়ে ফেলবেন আপনি

চিরতরে মুছে দেবেন রাত্রিকালীন আঙ্গুলের স্পর্শ

পূর্ব চুম্বন দাগ।

আপনার সমস্ত খেলা জেনে গেছে শচীমাতা

সমস্ত চাতুরী আঁচলে গিঁট দিয়েছেন বিষ্ণুপ্রিয়া

তবে আর চলে যাওয়া কেন?

যুদ্ধক্ষেত্র ফেলে

            চুপি চুপি।

এই যে অন্ধকার ফিরে ফিরে আসে

পেছনের বাতাস আটকে রাখে এগিয়ে চলা,

মনে হয় পর্দা নেমে এলো মঞ্চের ওপর

অভিনয় শেষরঙ্গমঞ্চে রাখতে হবে সাজ।

আর ভোলানো যাবে না দর্শকদের

হাততালি মিলবে না ভালোবাসার ভানে।

বন্ধ দরজার ভেতর কেবল নিজস্ব ভঙ্গিমা

নিজেকে দেখিয়ে দেখিয়ে আনন্দ লাভ,

এরপর আর কি আলো জ্বলবে স্টেজে ?

 

ধরোএভাবেই হারিয়ে গেল নদীর স্রোত,

পলির আবেদনে জমে উঠলো ব-দ্বীপ,

দেখা গেলো মৃত শরীর জুড়ে খেলে বেড়াচ্ছে

কিছু শামুক আর কাঁটাওয়ালা গাছের চারা,

বদলে যাওয়া সময় কীভাবে আপন হবে ?

নেমে আসবে কি প্রাচীন দীর্ঘশ্বাস ?

 

এই অন্ধকার কি বদলে যাবে কাঁধে বোঝা নিয়ে ?

 

স্থির বসার ভেতর চলে জমাখরচের হিসেব

ঝাঁকড়া গাছের তলায় পান্তাভাত খাওয়া মানুষ ভুলেছে সরলঅঙ্ক

ধাপের পর ধাপ পাল্টায় মাথার বিবর্তন

কাদামাটির মাঠে জীবন গড়ে দিনের

সামান্য খুঁড়িয়ে চলার রসদ

শাখাপ্রশাখা জুড়ে লতার স্থায়ী বসতঘর

চঞ্চলতার কোন স্থান নেই

 

জামার ভাঁজে জমে কালো ছোপ

মোবাইলে বাড়ে দায়

চুকিয়ে দেওয়ার তাড়ায় চশমায় বন্দী দিন

শত্রুতা শুধু নিজের কাছে কমানো ওজন

 

মাথায় জং নিয়ে হেঁটে চলে সভ্যতার প্রবীনতা।

বর্ষার আড়ালে যখন মেঘ হাসে

বাইরের কষ্ট ভেতরে নিতে পারি না,

তারা খেলা করে সংগ্রামের সাথে।

যারা ফিরে এলো –

তাদের বলতে শোনা গেল

ওরা ভালো আছে।

বাইরে বেরিয়ে দেখি রক্তচোষা মাটি

মাথা নুইয়ে রেখে কত শরীর

লাঠি হাতে কোমর বাঁচিয়ে রেখেছে,

ভেতরের কষ্ট দিতেই বুঝে নিলো,

মাথা তুলে তাকালো আর বললো-

যারা এসেছিলো, তারা মৃত্যু সমকামী,

আমরা তাদের বাঁচাতে এসেছি

এসো মেঘ আমিও তোমার সঙ্গে হাসি।

সিংহের খাঁচায় তালা মারতে যাওয়া,সে কি সহজ কথা ?

বনের বাস্তুতন্ত্রে সবই উন্মুক্ত ,

শুধু সূর্য ওঠাই বারণ, আলো ছড়াতে গেলে,

সূর্যকে সৌরজগত থেকে বহিস্কৃত হতে হয়,

জাতিতত্তের ভেদে ত্যাজিত হয় সমাজ থেকে।

 

শিক্ষার কথা বললে বাঘের পায়েও শেকলের বেড়ি পরিয়ে দ্যায় বাঘিনী।

জেলের কুঠুরিতে বন্দী করে রাখে ভণ্ডনীতি।

তা যেন জামিন অযোগ্য।

 

আসল কথা হল,প্রশ্ন করাটা খরগোসের না কি মানায় না।

তাই ভয় এসে মুখ লুকোতে চায়।

ছাত্রের দল কৈফিয়ত চাইলে,

সিংহ ভক্ষণের হুমকি দ্যায়।

সে যে বনের আসল বন্য রাজা,হোক না সে মূর্খ।

বাবা এখন আর বকাবকি করেনা

কি লিখছি ইশারায় জানতে চায়

… দূর থেকে বাড়িয়ে ধরি খাতা

 

পড়তে পড়তে বাবার

দুচোখে কি উদগ্রীব জল!

যেন বলতে চায়-

খোকা,একটু হাত ছুঁয়ে থাক 

 

দিনরাত খুক খুক কাশি, জ্বর

ভয় পাই কাছে যেতে…

 

পৃথিবীর সব পিতা বোঝে পুত্রের মন

দূর থেকে অনিমিখ চেয়ে চেয়ে দেখে …

 

আমি ঢুকে যাই অন্য ঘরে

কথা নেইগল্প নেইস্পর্শ নেই …

 

আমরা কি সব এভাবেই

ধীরে ধীরে বোবা হয়ে যাব !

কিংবা …

তুমি যদি জ্ঞানী হও

তিনি নিশ্চই ছিলেন প্রজ্ঞাবান।

 

তাঁর একটি শব্দই

তোমার এক হাজার কথার সমান।

 

তবে তাঁর পূজা করনা কেন ?

 

কেন নিজেকে নিয়ে

মেতে থাকো সকাল বিকাল।

 

তাঁর দেওয়া একটি সিদ্ধান্ত

তোমার জীবন কিংবা

সমগ্র জগতকে পাল্টে দিতে পারে।

 

তবে কেন নিজে কী জানো

জগতকে জানানোর জন্য এত ব্যাকুলতা ?

 

একবার সাহস করে বলো-

আমিই সেই।”

 

তারপর ফিরে তাকাও পৃথিবীর দিকে।

আর কিছু বলো।

 

পৃথিবী একজন রক্ষাকর্তা চান

পরার্মশ দাতা নয়।

আপসের মাপকাঠি কস্মিন কালেও ছিল না আমার,

মুঠোয় থাকা জীবনটা না হয় কার্পেটশূন্য মেঝের বুকে বসে যতখুশী কবিতা লিখবো আপসহীন…

 

এখন তো সর্বত্র অস্থির শব্দের মধ্যে মানুষের রণং-দেহি,

সবুজ ঘাসের নিচে উলঙ্গ বসে  দিকশূন্যপুরের চাষীরা দিনকে দিন ইতরের মতো,

অথচ দুহাতে তাঁদের শর্তহীন শস্যদানা,

সেই ইতিহাস থেকে তাঁদের শিশুরা মুচমুচে গরমভাত রূপকথার গল্প শোনে,

অপলক চোখের পাতায় রক্তশূন্য চাউনি আর বিস্ময়শূন্য পৃথিবীর-ভাঁড়…

 

আমি কবিতার কলসি থেকে মাটির ভাঁড়ে জল ভরে দিই…

জলজ ছবির অন্বেষণ থাকা উপাখ্যানের মেঘবৃষ্টি আর পিপাসার গান,

ওরা ফ্যালফ্যাল করে গরম ভাতের গল্প শোনায় অনাদিকাল কবির ভাষায় চাঁদমাংস,

খবরের কাগজে ভাসমান অক্ষরে লেখা হয় চাষীর রক্তবমির রঙিন গল্প…

 

শুনেছি সোমালিয়ার শিশুরা আর্সেনিক জল খেয়ে বিন্দাস-মৃত্যুর সঙ্গে পাঙ্গা নিচ্ছে,

শুনেছি ভগবানপুর শ্মশানের পাশে বেশ্যাদের গ্রাম…এখানে অনর্গল কাকের ভাষায় কথা বলা গুটিকয় মানুষ দু টাকার চাল ফুটিয়ে ঠান্ডা ভাতের হাঁড়িয়া মুখের কাছে পাঠিয়ে দেয়,

শুনেছি সর্বত্র যেখানে সেখানেই পরিত্রাণহীন ফুটপাত মায়ের স্তনে মুখ রেখে শিশুর কান্না থেতলে যায় রক্তবমি বোনা বিছানায়,

শুনেছি কারা যেন অমাবস্যার মদ গিলে ঘরের বোনকে দিব্যি  ধর্ষণ দেগেছে 

অথচ রোজ রোজ ব্যক্তিগত কবিতার ভিতর রচনা করে

চলেছি চাঁদমাংস চক্রব্যূহ…

 

প্রপিতামহ পিতামহ এতো এতো রক্ত এতো এতো পুঁজ এতো এতো ধর্ষণ এতো এতো রক্তশূন্য চাউনি দেখেছো কখনো…

শুরু হয়েছে অঙ্কুরোদ্গমের ম্যাগ-ভিস্যুয়াল। সেখানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার পেজ করতে পারায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের জেলার সদস্যদের ও নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের এটি প্রথম প্রয়াস। আগামী দিনগুলিতে আমরা আরও সুন্দর ভাবে অঙ্কুরোদ্গম-এর এই প্রয়াসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো এমন আশা রাখি।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার যেমন  নামখানালক্ষীকান্তপুরপাথর প্রতিমাসাগরকাকদ্বীপ,  আমতলাডায়মন্ড হারবারফলতা ইত্যাদি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে অনেক কবি সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিভা আছেনভবিষ্যতে তাঁদের আমরা সামনে নিয়ে আসতে পারবো। যুগের দাবী মেনে এই ম্যাগ-ভিস্যুয়ালের মাধ্যমে সর্বত্র নিজেদের সাহিত্য ও শিল্পকর্ম ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। আসুন সবাই সমস্ত ভৌগোলিক দূরত্ব দূরে ঠেলে অঙ্কুরোদ্গমের মঞ্চে আসুন সবাই। সমস্ত বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষকে একসূত্রে বাঁধি।

সৌগত প্রধান

জেলা সম্পাদকদক্ষিণ চব্বিশ পরগণা

কবিতা

 

সৌগত প্রধান

শরৎ চট্টোপাধ্যায়

স্বপন কুমার দাস

বীরেন্দ্র কৃষ্ণ পড়ুয়া

অভিনন্দন মাইতি

স্বদেশ রঞ্জন মন্ডল

অবশেষ দাস

সুব্রত সুন্দর জানা

প্রতনু ভট্টাচার্য

ধ্রুব বিকাশ মাইতি

মানস দোলই

মনোজ জানা

দীপক হালদার

সুকুমার হালদার

বিধান চন্দ্র হালদার

 

 

গল্প

 

যাত্রাপালা : তাপস  মাইতি

হঠাৎ হঠা করে আমিও নিজের সাথে একলা হয়ে যাই

পরিত্যক্ত বাড়ি ও তালগাছ যেমন একলা একলা।

দূরে দাঁড়িয়ে কদম পলাশ

তার ছায়ায় আনন্দ মাখানো রাইকিশোরী

আলগোছে ভেসে থাকা রোদ

পাশে ক্লান্তিহীন ইছামতী

আর কানে কানে কথাবলা কোপাই বাতাস

 

এই নির্জনতা যেন একান্ত আমার…….

 

হঠাৎ হঠা করে আমিও নিজের সাথে একলা হয়ে যাই

মাঝসমুদ্রের ডাকে উড়ে চলা গাঙচিল যেমন

একা একা ভেসে যায় বেহুলা মান্দাসে

দিক থেকে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছে যে শরীরহীন শরীর

যেখানে আালো আর আঁধারের বন্দীশ বাজে একটানা

কবিতার পোষাক বদলানোর মতো

আমিও শরীর পাল্টাতে থাকি

 

এই নির্জনতা একান্তই আমার…….

কবিতায় আগুন থাকে

আর কবিতায় থাকে একটি শোয়ার খাট

গণিত জানেনা তাই

এইভাবে এলোমেলো সম্পর্ক

কোমর থেকে সামান্য নীচে কিছু অঘটনায়

কবিতা স্থির যুবতী থেকে যেতে পারে

আবার একই ঘটনার প্রার্থনার জন্য

সমগ্র অক্ষরমালার আত্মহত্যা,দেখি–

ভুবনপারের হাঁটু থেকে প্রেম আলগা হয়ে যায়

চিরুনির দাতে পা রেখে রেখে চুল চলে যাচ্ছে দোলনার মতো

মানুষ মানুষের শত্রু হয়েই যায়

পড়শির জন্য এত করলাম এত করলাম

আর একদিনের খারাপ আচরণকে মাথায় রেখে দূরের করে নিলো নিজেকে

পড়শিরা এমনই করে

পাশাপাশি থাকতে থাকতে একদিন না একদিন খারাপ ব্যবহার হয়েই যায়

আর খারাপ ব্যবহারটাকেই মনে নিয়ে,,,,,,

পাশাপাশি থাকতে থাকতে শেষ পর্যন্ত পড়শিরা পড়শির শত্রুই হয়ে যায়

 

মনের ভিতর গ্রাম আ৺কতে গিয়ে দেখেছি

আমার বাড়ির চারপাশে আমার পড়শিদের বাড়ি

মায়ের হাতে মাখা চুলগন্ধ চিরুনির চিটচিটে তৈলচিত্রে দেখেছি

আম জাম কা৺ঠালের পড়শিঘেরা হয়ে থাকি

এই যা,, ভুলেই গেছি

আমিও তো কারোর না কারোর পড়শি হয়ে আছি

হয়তো কোনদিন তাকে আর বলা হবে না ।

যে ছেলেটা পা ঘষটে ঘষটে প্রায় গড়িয়ে হাঁটে

শূণ্যে পা তোলার আনন্দ তার মেরুদন্ড বুঝবে না ।

সে উত্তর দিত কিংবা দিত না

রাতের ট্রেন ভোঁ বাজিয়ে পেরিয়ে যেত ছোট্ট ষ্টেশন

নিভে থাকা কোন বাতিস্তম্ভ আলো হয়ে জ্বলত কিছুক্ষণ ।

এখনও কপালে ঝোলে দ্বাদশ শ্রেণী বিকাল

ক্লাসরুমের জিভে ছুটির ঘন্টা

খোলা কোমরে সরস্বতী বন্য শকুন্তলা——–

জল টানছে জঙ্গল — জীবন টানছে জোয়ার

চরের মাটি ক্রমশঃ ডুবুরি হয়ে নামছে সাগরে

মাটির তলায় ঘুমিয়ে কাঁদছে

কোন এক জীবিত শহর ।

হাতের বহর বাড়লে কমে যায় মুখের উজ্জ্বলতা

টলতে থেকে গামছার গিঁটে বদ্ধ পা

হাত কি জানে মাথার টালমাটাল খেলা

খ্যাতির পেছনে যখন অস্থির অন্ধকার জড়িয়ে থাকে 

ব্যবধান দীর্ঘ হয় অন্ধকারের

পকেটের ভাঁজে নুব্জ্য ব্যবচ্ছেদ

পালকে পালকে মসৃণ ক্ষরণ

স্নিগ্ধ ভাতের গন্ধে জল বেসামাল হয়

রক্তচোখ ভোলাতে পারেনা শুকনো লঙ্কার ঝাঁজ

ঝাঁপ দেওয়া শুধু আস্ফালন

নগরে বাঁধা জীবনের উত্থানপতন

 

ঝুমকার তালে ঝাঁঝরা হয় কীর্তনের সুর

মানুষ তো জেনেছে আগেই কথায় নয় পেট ভরে নুনভাতে . . .

বিষণ্ণ পাখির ডানা নিয়ে যদি সন্ন্যাস হতে পারতাম

 

স্পষ্ট প্রাচীনকাল থেকে শুনে আসছি প্রতি প্রত্যহে সমুদ্রের সাথে চাঁদের দেখা হয় গুহালিপি আলিঙ্গনে,

এখানে কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করি ওঁম-কারে

অথবা

ঘুমের ভিতর যেতে যেতে কয়েকশো বছর এক অন্য মেরুতে,

এখানে খেলা চলে বোধের ঘোর আর ভ্রমরের যাদুগানে ধ্যান ধ্যান এবং ধ্যানে…..

 

অনেকটা বাইরে ঠিক অনেকটা ভিতরেও এই বাইরে-ভিতরে দুইয়ে চৌখশ গতায়ত আমার বিষণ্ণ পাখির ডানায় ডানায়…..

 

ধ্যানে মাদুর পেতে পালকের বারান্দায় বসে মনে হয় নিছক কোনো গ্রন্থি থেকে আমায় হাত ধরে পিচ্ছিল টেনে নিচ্ছে এক দারুন প্রপাত…..

আমাকে খুঁজতে গিয়ে

মুঠো মুঠো ছাই উঠে আসে।

 

আগুনের ফুলকিও পুলকিত হয়।

 

ছাইয়ের ভেতরে বসে মিছিলের কোলাহল

ক্লান্তিতে কেঁপে কেঁপে ওঠে।

 

আগুনের ভেতরেই লড়াইয়ের গান হু হু করে

আমাকে খুঁজতে গিয়ে সবাইকে খুঁজে পাওয়া হল।

 

নদীটা যে কাকে খুঁজে মরে,

সেই জানে কবেকার আমিকোথাকার আমি

কখনও কী খোঁজ পাবতারা খসা জানে….

কৃষ্ণচূড়ার রঙ লেগেছে

           নীল আকাশের গায়,

মাতাল হাওয়ার দুষ্টুমিতে

            একলা থাকা দায়।

 

ভাবনা গুলো এলোমেলো

            দেয় না ধরা মোটে,

অলির সুরে চঞ্চলতা

            ফুলকুঁড়ি না ফোটে।

 

সমুদ্রের জানালার পাশে

            হাতে কলম খাতা,

কেটে গেল সারাবেলা

            হলো না কবিতা।

তোমাকে ভাবতে গিয়ে-

একটার পর একটা ভাঁজ খুলতে থাকি!

পাট ভাঙা পুরাতনের ভিড়ে

নতুনের গন্ধ জেগে ওঠে।

আজ তাই বারবার মেতে উঠি

ভালোবাসার  ডুবখেলায়;

যেখানে জ্যোৎস্নার আতর মেখে

লুটে পড়ে চাঁদ চুম্বন।

বুকের পাড় ভাঙে সাগর স্বপ্ন!

এক আকাশ মেঘ চোখে টলমল মুক্তো বৃষ্টি!

তুমি স্পর্শ ছুট হয়ে

আকাশ থেকে মাটিতে নেমে এসো না যেন!

নিঃশ্বাস আর একটু উষ্ণ হলে –

দাবানল শুরু হবে।

 

ভালোবাসতে গিয়ে – – – – –

ভালোবাসা হয়ে ওঠে সংজ্ঞাহীন,

অসুস্থ ভ্রমরের ডানায় ঝুলে থাকে

প্রকৃত প্রেমের সংজ্ঞা।

তুমি আর আমি

আরেকটু ভালবাসার মত হলে-

ঝড় ভেঙে যাবে ঘরের ধাক্কায়।

তোমাকে ভাবতে গিয়ে-

মুক্তো শুকিয়ে ওঠে চোখের পাড়ে।

তোমাকে বলিনিজেকে বিশ্বাস করো

শত পাথর সম্মুখে ভেঙে যাবে,

বিস্তীর্ণ মরুভূমি অস্বীকার চাইবে

নিজস্ব পরিচয়ের অভীষ্টতা

মেলে ধরবে বাঁচার গহ্বর থেকে —

অভিন্ন নতুন ইঙ্গিতগাঢ় সুগন্ধে,

তুমি বুঝে উঠতে পারবে না

অন্ধকার গুহা থেকে কখন উঠে এসেছো,

নির্ভরতার মুঠোতে নিশ্চয়তার সুখ

তোমার আকাশে সীমাবদ্ধ হবে পাখি হয়ে,

তোমাকে বলিনিজেকে বিশ্বাস করো

আর বিশ্বাস করলেই দেখবে

তোমার পাশে ঘোরা সুযোগ সন্ধানীরা

তোমার অবসাদ গুলো বিক্রি করে দিচ্ছে

ফেরিওয়ালা হয়ে পথে প্রান্তরে।

তুই নেই বলেরাতের জোনাকি এখনও ঘুমিয়ে পড়েনি।

তুই নেই বলেচাঁদের বুকে চিরকুট ফেলে রাখিনি।

তুই নেই বলেআকাশের বুকে  শ্রাবণ শুকিয়ে যায়নি।

তুই নেই বলেচুম্বকীয় ঠোঁটে লোহা বিগলিত হয়নি।

তুই নেই বলেতেঁতুল পাতায় জীভের কামড় বসেনি।

তুই নেই বলেসাগরের বুকে অভিযোগ লিখে আসিনি।

তুই নেই বলে,কফির কাপে আলতো চুমু খাইনি।

তুই নেই বলেসবুজের মাঝে মিলনের গান গাইনি।

তুই নেই বলেআমার কবিতারা অনুযোগ কিছু রাখেনি

তুই নেই বলেআমায় কেউই ভেঙে- চুরে ভালোবাসেনি।

রৌদ্র মেখে অঙ্গ শুকায় জংলা মেয়ে গুলো

       খোঁপায় পলাশ হাতে শিমুল উড়ছে হাওয়ায় চুলও,

চিবুক ‘পরে আবির মাখা     আঁচল প্রজাপতির পাখা

       সবার বুকে বৈশাখীদূত পরশমণি ছুঁ’লো।

       রৌদ্র মেখে অঙ্গ শুকায় জংলা মেয়ে গুলো।

 

       তাদের দেখে গৃহবাসী দুয়ার খুলে হাসে

       আবিরমাখা জংলাগুলো বসল তাদের পাশে,

একে একে দুয়ে দুয়ে     আবির দিল গাত্র ছুঁয়ে

       গন্ধ পেয়ে উতলা অলিভ্রমর ছুটে আসে।

       তাদের দেখে গৃহবাসী দুয়ার খুলে হাসে।

 

       জংলা মেয়ে দিচ্ছে সবায় রঙপাবনের পাঠ

       রঙ ছড়ায়ে কুঞ্জবনে বসল খুশির হাট,

খুশির দোলে নেশায় নেয়ে     ঘর ছেড়েছে খেঁদির মেয়ে

       ফাগুন হাওয়ায় রঙের দোলায় ভরল চাষার মাঠ।

       জংলা মেয়ে দিচ্ছে সবায় রঙপাবনের পাঠ।

রেশমগুটির থেকে বেরনোর কালে

রেটিনায় গেঁথে দিয়েছিলে

উড়ান শিল্পের কথকতা

 

ভ্রূণসম সেই নীরবতা

সযত্নে লালন করেছি সৈকতে

 

পালতোলা জাহাজের দিনে তারপর

সামুদ্রিক যুগিয়েছি বর্ণলিপি

 

জলপিপি প্রায় সেসবের বিচরণ দিনে

নিজেকে নীরব রেখে

উষ্ণতায় রাঙিয়েছি তাকে

 

বাঁকে বাঁকে জনপদ

নগর শহরে 

          সবুজের অমোঘ ছোঁয়ায়

আড়ালে থেকেছি অবিরল

 

শ্বাসে- বাসে সেই থাকা

 

গনিতে ঢুকিনি অতশত

তোমার অশ্রু আঁকড়ে ধরে

হাঁটছিলাম প্রাচীন চারণভূমি দিয়ে

 

শিঙা বাজে

ধুলো ওড়ে অশ্বখুরের

দামামা বাজে

ধুলো ওড়ে অশ্বখুরের

 

চারিদিকে এক ঝাঁক রক্তডাক পাখির!

 

ভয় ধোঁয়া কুয়াশা অন্ধকারের ওড়াউড়ি

পাহাড় চুড়ায় আগুনের শিখা আকাশ জুড়ে

ভূতগ্রস্ত প্রাচীন চারণভূমি

 

পৃথিবী আবার ঋতুমতী

একান্ত গোপনে বেজে উঠল বসন্তগান

যেন হিরন্ময় ধ্বনি

প্রাণের সংযোগে আলিঙ্গন করি

 

হিরণ্য শস্যের বীজ ছড়িয়ে পড়ল

আবার পথ চলা আবার সেই তোমায় পাওয়া

 

তোমার অশ্রু কোনো না কোনো মানুষের ঈশ্বর!

রোজ ভোরে জল ঢালি শিবের মাথায়

রোজ ভোরে জবাফুলে চোখ রাখি

রোজ ভোরে বেলপাতায় হাত রাখি

রোজ ভোরে ধান-দুর্বার খোঁজ করি

রোজ ভোরে ফল মিষ্টির দোকানে ছুটি

 

তবু কেন

শান্তি নিকেতনে অদ্ভুত অন্ধকার

আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘুর্ণীঝড়

চোখের কোনায় কোনায়  টলটলে মেঘ

হাওয়ায় হাওয়ায় আগুনের ফুলকি

বালিশ ভিজে প্রশান্ত মহাসাগর

 

চাঁদের চোখ খুঁজে পেতে

মায়াবী আঁচল ছিঁড়ে

চক্রের স্রোত টপকে

বর্ণমালার ক্যানভাসে চোখ রাখি

 

আমার ক্ষুধা- তৃষ্ণা অক্ষরে অক্ষরে

আমার ভালোবাসা মূল্যহীন মানুষের

 

তাই আমি

কবিতার বর্ণমালায় জোনাকি খুঁজি….

মুন্নি যাত্রা দলে নাম লিখিয়েছে বয়স চব্বিশ কী পঁচিশ। তার শরীরে অসম্ভব ধরণের একটা লাবণ্যের দূত্যি চকিতে যে কারোর চোখ ঝলসে দিতে পারে তাই যাত্রাদলে মুন্নির পদ পাওয়াটা একেবারে অসম্ভব ছিল না

               এবং অভিনয়ের ঢঙ না জেনেও নির্দেশকবাবু নায়িকার নাম ভূমিকায় তার নাম রাখলেন সর্বাগ্রে।

               মাইনে বরাদ্দ হলোও যথেষ্ট। প্রতি নাইট পিছু সে সেভাবেই পারিশ্রমিক পাবে।

                বর আছে তারকিন্তু ঘর নেই মানে যাকে বলে সংসার।

                মুন্নির স্বামী অধীর চেয়েছিলতার স্ত্রী বাড়িতে যেমন টেলারিং করছেকরুক। কিন্তু বছর না ঘুরতে মুন্নি সেলাই মেশিনে আর মন বসাতে পারলে  না বললে, ” বড্ড বাকি পড়ে যায় ভালো লাগে না। আমি যাত্রাপালায় যাবো

                 তারপর মতান্তর। তারপর জেদাজেদি তারপর মুন্নির যাত্রাদলে চলে যাওয়া

 

                                    ( দুই )

 

                   অধীর নিঃসন্তান ছিল সে একটা স্টেশনারি দোকানে কাজ করতো। বাড়ি ফিরতো রাত করেই

                    তার এক বয়স্কা পিসিমুন্নি থাকতেই সংসারে তদারক নেয় সে মাঝেমধ্যে মুন্নিকে বাড়িতে ফেরত আনবার জন্য পীড়াপীড়িও করতো

                     অধীর কুলটা বলে গাল পাড়ে তখন মুন্নির উদ্দেশ্যে এবং একসময়ে সে যে বারবনিতার চেয়েও জঘন্য মহিলা রুপে নিজেকে চিহ্নিত করবেএমন কদর্য ভাষা প্রয়োগ করতে তার কুণ্ঠাবোধ হলো না

                     বলল, ” যেমন বাবা –মাতেমনি মেয়ে

এক লাউ এর দানাযেখানে পড়বে বিষবৃক্ষ তৈরি হবে

 

                                     ( তিন )

 

                      যাত্রাদলে এখন বেশ যোগ্যা হয়ে উঠেছে  মুন্নি এখন খবরের কাগজের পাতায় তার ছবি সহ একটা যাত্রা — অভিনয়ের মুহূর্তের বিজ্ঞাপন বেরুচ্ছে ।তাই নিয়ে গ্রামে অধীরের কানে যেন ঢোল বাজছে

                       কেউ বলল , ” তোর বউর কী ছিরিকীত্তনরেবুকে লজ্জা নেই

                        কেউ আবার,  ” আ হা হা হা হা । যেন বাদশামলের বেগম

                         এইরূপ মুন্নির সম্পর্কে নানা অপবাদ যেন অধীরের গায়ে মাংস ভেদ করে হাড়ে লেগে বাজতো

                           অধীর বলতো, ” আমার কপাল

 

                                      ( চার )

 

                         ক ‘ দিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না বলে দোকানের মালিককে  বলে কয়ে আজ অগ্রীম ঘর ধরতে চলেছে অধীর

                         তখন শেষ  সায়াহ্নের অস্তরেখা আকাশ রাঙিয়ে শেষ নমস্কার জানিয়ে সূর্য ডুব দিতে চললো

                         বাড়ির গেটে অধীর দেখলোএকটা খবরের কাগজে পোস্টার ছবি সমেত । বেশ রঙিন জ্বল জ্বল করছে। মুন্নির দেহ সেটি বুকের ঊর্ধ্বতন

নগ্ন প্রায় । খুব খেঁচা ভাব করে জামাখানি তার গায়ে পরা

                         এখানে কে মাড়িয়ে দিয়ে গেল এটি ?

                          অধীরের মনের ভেতর আরও অনেক প্রশ্ন তোলপাড় করতে লাগলো এই ছাপা কাহিনি সে সংবাদে বেরোয় বহুবার শুনেছে ঘেন্নায় দেখবার চেষ্টা করে নি কোনদিন আজ চাক্ষুষ দেখছে। তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে

                           তারপর রাগে — অভিমানে অধীর পোস্টারখানা ছিঁড়ে পায়ের তলায় দলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো

কবিতা

শান্তনু প্রধান

নাগসেন

সৌগত প্রধান

শরৎ চট্টোপাধ্যায়

বিকাশরঞ্জন হালদার

অরুণ পাঠক

সুমন দিন্ডা

সুনেন্দু পাত্র

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ পড়ুয়া 

স্বপন কুমার দাস

তাজিমুর রহমান

রমেশ পাত্র

বিশ্বজিৎ রায়

 

ছোট গল্প

সুদামকৃষ্ণ মন্ডল

ভিডিও

সৌমিত বসু

দ্যুতি পড়ুয়া

সৌরশ্রী প্রধান

সুপ্রীতি দিন্ডা

১.

মাটির খুব কাছাকাছি

 

যেভাবে সন্ধ্যা নামে

মাটির খুব কাছাকাছি গুল্মঘ্রাণে বকুল কুড়াই

 

আগুন আসুক কিংবা আরোগ্যের সফলতা

একদিন প্রতিটি শরীর হবে দ্বিধাহীন ছাই

 

আজ কেন তবে মিহি কাচের সমীরণে সংকোচ

দৃশ্যত যা কিছু প্রথাসিদ্ধ পাহারা

 

হয়তো কেউ এই ভাবে

জং ধরা তরবারির অন্তরালে করেছে টিটেনাস

বিনীত শয্যায় যেভাবে সন্ধ্যা নামে

তোমার প্রেম ছবি আকাঙ্ক্ষিত ধুলোবালিও

কেন যে ভোকাট্টা ঘুড়ির লেজে বারেবারে পাক খায়

হয়তো তাই মাটির খুব কাছাকাছি বকুল খুঁজে বেড়াই

 

২.

জানালার পাশে

 

কখনো কেউ জানালার পাশে বাতাস হলে

নড়ে উঠিথেমে যায় সমস্ত রক্তের তঞ্চকতা।

 এ- ঘর ও-ঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আতঙ্কিত চোখেরা অভাজন।

 কোথায় যে থাকে সবাই–

 উঠোন জুড়ে বেদনার গানতবু সেই কৃষ্ণপক্ষের বাতাস

 গ্রিল টপকে ঢুকে পড়েবৈধ চেতনার কোলাহলে

 

বাতাস কি জানে    বৈকুণ্ঠরিপু।

স্বচ্ছতর নদীর আধারে যদি কেউ

যথার্থ যাপনের অন্তরা টুকু খুলে রাখে

সেই আলিঙ্গন বুঝে যায় স্বর্গের পর্দায়

লেগে থাকা গ্রহণ নক্ষত্রের বিভাজন।

আমার এই আত্মউন্মোচন কিভাবে আরোগ্যের অপরাধী

নির্লিপ্ত আকাশ পুঁতে রাখে চৈতন্যের ভ্রান্ত ভবিষ্যৎ।

 

এখনো কেউ জানালার পাশে বাতাস হলে

সে যেন আমায় আরোও শূন্য করে…

 

.

শ্যাওলার ভাস্কর্য

 

পাহাড় থেকে নেমে আসা অন্ধকার সারা গায়ে মেখে

এপারের সমস্ত কথা উড়ে যায় সিন্ধু নদীর তীরে

ভেঙে যাওয়া কাচের মতো ধারালো কুয়াশা

আমার হাতের তালুতে জড়ো করে দুঃস্বপ্নের ছাই

তাই দেখে পাতায় পাতায় লেগে থাকা জোনাকিরা

বুঝে গেছে এই যথার্থ সময়ের আগুনরঙা সৌখিনতা

আমাকে জল দাও সেই জলে ভাসাই শ্যাওলার ভাস্কর্য

 

পাহাড় থেকে নেমে আসা অন্ধকারে দেখি নিজস্ব বুদবুদ

আর মাথাটা ভেসে যাচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক স্রোতে

 

 

.

পাহাড়ি লতা

 

চোখের ঘনিষ্ঠতা কতখানি নির্জন হলে

মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসে বুকেরই চূর্ণ কঙ্কাল

হাত ফসকে জল সেই জলে

কারা যেন ডুবে মরে আমাদেরই বারান্দায়

তবুও তো কেউ গান হয়ে ঝুলে থাকে

             পাহাড়ি গাছের শাখা-প্রশাখায়

  একদিন সেই গান বিঁধেছিল বুকের পাঁজরে

  আজ শুধু সেই সম্পর্কের অবনতি

  লিখে রাখে পাহাড়ি লতা

 

জানি না কতটা পথ কৌশলের

জানি না কতটা দূরত্ব দুর্বল হলে

সম্পর্কের ছোঁয়া নিবিড় পর্যবেক্ষণে

আরোও বেশি আঁধার হবে

 

অপেক্ষার আঁধার ভিজে গড়িয়ে গেল আমার ছাই

সেই মুহূর্তের মধ্যে কারা

সেই ছাইয়ের পুতুল ধরে লোফালুফি করো নির্জন পথে

 

খাড়াই ও নিচু সবটাই তো আশ্চর্য আলাদিন

ফুলছাপ প্লাজো থেকে

অবশেষে মিলেছে সম্মতি

ছিলো বকুল বিছানো পথ

অনতি দূরেই বনমালী

 

ফুলছাপ প্লাজো থেকে

ঝরে পড়া বরষামঞ্জরী

তেতলার রৌদ্র তাকে

মেলেছে আকাশপটে

 

ফুলছাপ প্লাজো থেকে

অবশেষে মিলেছে সম্মতি

পীরিতির কুহুতানে আজ

ষোড়শোপচারখানি একা

যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছি

হঠাৎ হঠাৎ করে আমিও নিজের সাথে একলা হয়ে যাই

পরিত্যক্ত বাড়ি ও তালগাছ যেমন একলা একলা।

দূরে দাঁড়িয়ে কদম পলাশ

তার ছায়ায় আনন্দ মাখানো রাইকিশোরী

আলগোছে ভেসে থাকা রোদ

পাশে ক্লান্তিহীন ইছামতী

আর কানে কানে কথাবলা কোপাই বাতাস

 

এই নির্জনতা যেন একান্ত আমার…….

 

হঠাৎ হঠাৎ করে আমিও নিজের সাথে একলা হয়ে যাই

মাঝসমুদ্রের ডাকে উড়ে চলা গাঙচিল যেমন

একা একা ভেসে যায় বেহুলা মান্দাসে

দিক থেকে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ছে যে শরীরহীন শরীর

যেখানে আালো আর আঁধারের বন্দীশ বাজে একটানা

কবিতার পোষাক বদলানোর মতো

আমিও শরীর পাল্টাতে থাকি

 

এই নির্জনতা একান্তই আমার…….

কবিতায় আগুন থাকে

আর কবিতায় থাকে একটি শোয়ার খাট

গণিত জানেনা তাই

এইভাবে এলোমেলো সম্পর্ক

কোমর থেকে সামান্য নীচে কিছু অঘটনায়

কবিতা স্থির যুবতী থেকে যেতে পারে

আবার একই ঘটনার প্রার্থনার জন্য

সমগ্র অক্ষরমালার আত্মহত্যা,দেখি–

ভুবনপারের হাঁটু থেকে প্রেম আলগা হয়ে যায়

১. পূর্বাভাসে আত্মহারা হয় …..

 

নিস্তব্ধ হালকা আলোয়

বেশ বুঝতে পারি প্রকৃত সূর্যাস্ত কাল ! পূর্বাভাসে আত্মহারা হয় অন্যতম ছায়ারা ……

 

কেঁপেওঠে  সফলতা। স্রোতধারা।  স্মৃতি-স্নান। কবির-কূজন!

 

বসে থাকা ভুলগুলো

আলোক রেখায় উড়ে এসে বসে

প্রভূত অনুশোচনার আগুন বুকে করে

 

আমি দেখি আমার কবিতায় সম্পর্ক গড়া শেষের কদিন  ……

 

অথচ-তোমার শরীরের সুগন্ধ ভাসে আকাশে!

 

২.  ঘনিষ্ঠ কিছু অক্ষর …..

 

ঢেলে সাজিয়েছো অঙ্গপট। বিবর্ণ দূরত্বকে মাথায় নিয়েছো বিভ্রন্ত সাধনায়!

 

মুছে যায় ঘনিষ্ঠ কিছু অক্ষর

কতো বকুল সময়  ……

 

তুমি থাকো একলা-বোধে।  একলা-বিশ্বাসে! মাথায় থাকে চাঁদের তৃতীয়া। অন্তরঙ্গ মায়া

 

অগোছালো মাঠে ভরে নিই বুক আর বুকের ভাসান …….

 

এখন ফিরে যাবো যেখানে আমার

নদীটি কল্লোলে!

আকাশের কাছে বাঁশি রেখে গেছে শৈশব !

বাঁশির ভেতরে আকাশ ভরেছে শৈশব ! 

বাকি জীবন শুধু শূণ্যতা ও সুর !

পথভুলে চলে আসা নিঃশ্বাস এখনো থেকে গেছে।

ফোটানো জলের হুংকার তাকে মৃত করতে চেয়ে,

বাষ্প থেকে আরো বাষ্পের মজলিশে ঢুকে পড়েছে।

মুখের ব্ল্যাক পয়েন্ট

ভাষার অন্তরঙ্গতায় পরিপাটি,

অথচ দধীচি বুকের যন্ত্রণা গোলাপেরও অজানা,

তাই কুমকুম চোখ উড়তে থাকা মেঘেই আটকে।

যদি কিছু ফানুষ শব্দে ফুলে ওঠে শিরা-উপশিরা

জেনো সেটুকু বেসহারা ধূমকেতু রাত।

কখনো সংবিধান মুছে ফেলা পাখির বিলুপ্ত কলারটিউন শোনানোর দায়িত্ব নেয়নি।

কাঠদেহ জুড়ে স্লিম বাতাস বাঁচার উপায় জানায়নি,

যেটুকু প্রাণবায়ু বাইরে থেকে এসেছে

তাকে প্যাকেটে ভরে তুলে রেখেছি আলমারিতে।

 

এটুকু অহংকার বরফ থেকে জল হবে না

যতই উষ্ণতা তোমার হৃদয়কে পড়ে ফেলুক  আত্মজীবনীর আদি পর্বের শেষ বিকেলে।

মাটির ভেতর লুকিয়ে রয়েছে সহস্র লাল শস্যের কণা।

মানুষের মৃত নরম অস্হি।

অসহিষ্ণু ছায়া দীর্ঘায়িত হলে বিবেকের চকচকে দরজা কেমন ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

তখন হিমোগ্লোবিন মুখে নিয়ে প্রবেশ করে

নশ্বর ডুমো মাছি ও ক্ষয়ে যাওয়া এপিটাফ।

সে যেন এক অস্হির দৃশ্যায়ন।

প্রলেপ দেওয়া হাজার বছরের মমি।

তবুও আমরা ছুটে যাই হলুদ সন্তের দেশ

মুখে জল নিয়ে বাঁচা সবুজ জলের বাড়ি।

যেখানে আজও অপেক্ষা করে থালা

যেখানে আজও লেগে থাকে লাল পায়ের বিষন্ন ছাপ।

হয়তো কোনদিন তাকে আর বলা হবে না ।

যে ছেলেটা পা ঘষটে ঘষটে প্রায় গড়িয়ে হাঁটে

শূণ্যে পা তোলার আনন্দ তার মেরুদন্ড বুঝবে না ।

সে উত্তর দিত কিংবা দিত না

রাতের ট্রেন ভোঁ বাজিয়ে পেরিয়ে যেত ছোট্ট ষ্টেশন

নিভে থাকা কোন বাতিস্তম্ভ আলো হয়ে জ্বলত কিছুক্ষণ ।

এখনও কপালে ঝোলে দ্বাদশ শ্রেণী বিকাল

ক্লাসরুমের জিভে ছুটির ঘন্টা

খোলা কোমরে সরস্বতী বন্য শকুন্তলা…

জল টানছে জঙ্গল — জীবন টানছে জোয়ার

চরের মাটি ক্রমশঃ ডুবুরি হয়ে নামছে সাগরে

মাটির তলায় ঘুমিয়ে কাঁদছে

কোন এক জীবিত শহর ।

চিরুনির দাতে পা রেখে রেখে চুল চলে যাচ্ছে দোলনার মতো

মানুষ মানুষের শত্রু হয়েই যায়

পড়শির জন্য এত করলাম এত করলাম

আর একদিনের খারাপ আচরণকে মাথায় রেখে দূরের করে নিলো নিজেকে

পড়শিরা এমনই করে

পাশাপাশি থাকতে থাকতে একদিন না একদিন খারাপ ব্যবহার হয়েই যায়

আর খারাপ ব্যবহারটাকেই মনে নিয়ে…

পাশাপাশি থাকতে থাকতে শেষ পর্যন্ত পড়শিরা পড়শির শত্রুই হয়ে যায়।

 

মনের ভিতর গ্রাম আ৺কতে গিয়ে দেখেছি

আমার বাড়ির চারপাশে আমার পড়শিদের বাড়ি

মায়ের হাতে মাখা চুলগন্ধ চিরুনির চিটচিটে তৈলচিত্রে দেখেছি

আম জাম কা৺ঠালের পড়শিঘেরা হয়ে থাকি

এই যা,, ভুলেই গেছি

আমিও তো কারোর না কারোর পড়শি হয়ে আছি।

হাত দিয়ে ভাত মেখে খাওয়ার মতো মা আমাদের দৈনন্দিন মেখে দিতেন বর্ণপরিচয়

আমরা তাই নিয়ে উড়ে যেতাম দিগন্তের ওপারে

যেখানে গোপাল ও রাখালের সঙ্গে মিশে থাকতো বোধোদয়ের গান ও বালিকার বিমর্ষ মুখ !

ভরা শ্রাবণ এলে আমরা গেয়ে উঠতাম বর্ষামঙ্গল

বালিকা বধূ, ত্রয়োদশী মায়ের চোখে  তখন পুতুল পুতুল সুগন্ধ,

হাই তোলা বৈকালিক আলস্যে ভরা ৪র্থ শ্রেণীর ক্লাস।

 

প্রণম্য বিদ্যাসাগরমশাই বলতে পারেন আর কতদূর হেঁটে গেলে আমরা পৌঁছতে পারি সেই আলোসঙ্গে

যেখানে বিমূর্ত হবে মরমী নারীত্বপরমানন্দ মৌসম

রাজা আমাকে খায়প্রজাও। ঘর বাহির তো আছেই !

বিকেলগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে পরে অনাদরেঅছিলায় গোপন কুঠুরি জুড়ে হাহাকারনীরবে ভেজে শাক্তপদ  আর গোছানো সংসারসেতো অমরাবতীর অন্য নাম

সেখানেও কি কখনো আমি আমার-ই !

নাঈশ্বর নির্দেশিত কোন ভোগরাজের নবীন আহূতি।

 

ভাবতে ভাবতে অনির্দেশক ভেসে যাই অলকনন্দার সুরে,

তরঙ্গময় ভেসে থাকে বালিকাবেলার নিঃস্ব সংগীত।

আমাদের উঠোনে রাত্রি চাষ হয়

নটে শাকের মাথায় নামে নরম বাতাস

চারিদিকে গোল হয়ে বসে আছে পাড়া

অঙ্কুরিত চাঁদের মুখে উড়ছে খই

 

প্রস্তরিত ছায়া চিরে এগিয়েছি এতকাল

আর কতটা সম্ভ্রমমেঘ বুকে নিলে

শেকড়ের জল জ্যোৎস্না হয়ে ফোটে পাতায়

আর টুপটাপ ঝরে পড়া রাঙাফুল দিকে

 

পায়ে পায়ে বৃষ্টি বেঁধে নেয় নূপুর

উদাস মায়ায় চোখ পেতে রাখি

উঠোনে আ-জন্ম ঋণ এক দীর্ঘ জ্যোৎস্না

এক পাতা এক বৃক্ষ

যেন রাত্রির সম্পর্ক ধরে থাকা

বন্ধু সেজে যারা পাশে এসে বসে

তারা কোনোদিন আমার বন্ধু হবে না জেনেও

ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে ওদের

ফুল মিস্টি দিয়ে আপন করে নিই …

 

ওদের কোমরে লুকোনো ছুরি,

আঙ্গুলে বাঘনখ আছে জেনেও

সময় পেরিয়ে আড্ডা দিই,

গীতা থেকে গীতবিতান – এর

চুলচেরা বিশ্লেষণ করি ….

 

একদিন তারা ছুরি আর বাঘনখ নদীতে ফেলে

যদি আমার সত্যিকারের বন্ধু হয়ে যায়

সেই অপেক্ষায় …

—-মরদ হয়েছিস বটে ।দিনভর হেডিযা খেছিস ?এক বাটি দানাও পেটে পড়ে না।আর কে দিবেশিবু মুন্ডার বেটি ছাড়া সারাদিন আমি কাঁকড়া ধৈরে দিন কাটাই।

—– তা বুলেছিস বটে। মাগির মুখ ফুটেইছে।

—- তুই আমাকে কিট অ দিবি আর মন্দা বাজারে মরদ হঁইযে ঘরে বঁইসে মদটো খাঁইযে গালি দিস। ভাত টো ত পাবি লাই ?

    ছোটোখাটো খুনসুটি ওদের মধ্যে লেগেই থাকে। নদীর পাড়ে বাড়ি। নৌকা যায়। পাল তোলা নৌকার যাত্রীরা যায় ওদের খুনসুটি শুনতে শুনতে।ওরাও দেখতে দেখতেপরস্পরে অভ্যস্ত।নদীর পাড়  বেয়ে কুলবধূর মতো ঘোমটা ঢাকা বানিখয়রাকালোবাইনকেয়াকেওড়াবাইনদুধিলতার সবুজ বনানী। হডকোচহেঁতালাহোগলার চির ঝোপ। সেই ঝোপের পাশে পাশে ওদের দৈনন্দিন জীবন।সামান্য কিছু টাকা ট্যাঁকে গুঁজে মরদ লুকিয়ে পাড়ি দিয়েছিল কতদিন আগে। কে জানত মাগি বাঁজা। ওর তাই মনে হয়। শিবু মুন্ডার বেটি শিবানী সোরেনের কি নেই। পীনোন্নত বুক। ভরা যৌবনে কি ধরে রাখা সম্ভব ?  ব্রা   ব্লাউজ সব লাগে। হাওয়া বয় —-  বইছে  কিন্তু মানুষের চোখ ই খারাপ। মেয়ে মানুষের সাথে পুরুষ মানুষ না থাকলে  টোন টিপ্পনী শুনতেই হয়। শিবানী তাতে তুচ্ছ অনুভব করে। অনিচ্ছাকৃতভাবে থুতু ফেলে। ইচ্ছে করলে ঢলে পড়তে পারে । কিন্তু তা করে না।  কারণ মরদ তার বেঁচে আছে। প্রতি রাতে শুকনো আদর দেয়। সোহাগ করে চুমু খায়। গায়ে মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে ভালোবাসার পাহাড়ে চড়ে দূর দ্বীপান্তরে যায়। সেখানে জড়িয়ে থাকে প্রজাপতির মতো। হুল ফুটিয়ে মধু আহরণ করে। তখনও ফুলের দলমন্ডলগুলো জাপটে ধরে রাখে প্রজাপতিকে। ফুলেল শোভা রাতের অন্ধকার ভেদ করে মনের বারান্দায় যে দিন শুরুর আলো পড়ে তা মেখে উভয়েই তৃপ্ত হয়। তাদের প্রেম পায়সের মতো।  বাদাম চাল নারকেল গুড় কিশমিশ আরও অন্য অনেক কিছুর মিশ্রিত ভোগ্য। এই উপভোগ্যতায কে কাকে ছাড়াবে।  শিবানীকে এক পুরুষে তৃপ্তি দিয়ে পারবে না। মরদ উপেনের তেজ অতি তুচ্ছ। তা বলে তো দ্বিচারিতা হতে পারে না।

    কাঠ কুড়ানির ঘরে জন্ম শিবানী। বাপে জানত সাপ ধরতে। যে শ্বাস বোঝে তাকে সাপে কাটার পর মা বেদেনি ব্যবসায়  আত্ম নিয়োগ করে।সারাদিন বেরিয়ে যা পেত তা দিয়ে শিবানীর একাকীত্বের সম্বল পেত না। যে সম্বলকে অবলম্বন করে সময় কাটত তা হলো উপেনের যৌবন দীপ্ত মন মুগ্ধকর শরীর। পিয়াল বনে বসে বনপলাশের রঙিন ফুল মাথায় গুঁজে গল্পে গল্পে সময় যেত চলে। সে ছিল রঙিন বাহারী ঝলমলে অতীত দিন।যে দিনে দাহ হয় প্রতিটি মানুষ । ওরাও মানুষ। এলোকেশী আঁধার নেমে আসার আগে কোনও গোধূলির আবেশ মাখা হলুদ বিকেলে দু জনে হাত ধরে চলে আসে লবণাক্ত নদী -খাল -বিলে ভরা ভিন্ন জাতের গ্রামের আঙিনায়। পাখপাখালি সবুজ বনানী ভরা এই গ্রাম।

    মোড়ল বসে হুঁকোর নল মুখে নিয়ে সুখটান দিচ্ছে।উপেন প্রথম দিন এসে বলেছিলবাবু গ  শাল পিয়ালের দেশে মুদের ভিটে মাটি লাই গ। লদীর করাল গ্রাসে সব বরবাদ হয়ে গেছে।তা লাগি মুদের মাথা গুঁজবার ঠাঁই যদি উই লদীর পাড়ে বাঁধিক্ষেতি কি বাবু  দয়া কইরবেন বাবু।

     পনের বছর আগের সেই দিনের কথা মনে পড়ে। প্রথম প্রথম জ্যোৎস্না রাতে নদীর পাড়ে হেঁতালের শুকনো পাতায় শুয়ে অনিদ্রায় দিন গুজরান হয়েছে।

আজ আর তা নেই। তাপ্পি দেওয়া কাপড় নেই। জংলী ছিটের শাড়ি পরনেলাল -আবির রঙের ফিতে খোঁপায বাঁধানাকে নোলক পরে মরদের সামনে ঘুরঘুর করে।যা দেবার তা দিয়েও আগামী দীপ অর্থাৎ সন্তান দাম্পত্য জীবনে পরম চাওয়া স্বপ্নের নিরসন যদি না হয় —শিবানীর অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা মনের আনাচে কানাচে লোভী হুলো বেড়ালের মতো লাগে। কেন মনে হয় তার মরদ ভালো নয়। নড়বড়ে অকেজো স্থিতিশীল। নাড়ালে নড়ে নয়তো নয়।সময়ের দিনমণি নিভে যাবে। সন্ধ্যা নামলেই ফিরে যাবে যৌবনের নগ্ন উদ্দীপনা আর রহস্যময় সৃষ্টির অবগুণ্ঠনমালা ।

—–আর খাসনি তুই। আমায় লিয়ে চলে এলি ,মায়ের কথা ভাবতে সুযোগ দিলিক না। তুই মানুষ হবি কবে বটেক। শুধু শুধু হেডিযা খেছিস ?

 বলে নাক চোখের জল মুছতে ভারি পাছায় বেড় দেওয়া শাড়ির আঁচল টেনে নিল। ক্ষুদ্র উঠানে অভিমানিনী ঝাঁটা নিয়ে ঝাঁটাতে লাগলো।  মনে দুঃখ আসলে তাকে মেঘলা দিনের মতো লাগে।

—-কাঁদিস কেনে ?  তুকে সুখ দিতে পারলম লয়রে —ভালোবেসেই গেলম।  আমি মরেই যাব। তু আমার কথা ভুলতে লারবি ??  তুকে আমার ভালয় লাগে —লিয়ে সংসার করলু বটে। কিন্তুক যা লিয়ে তু গরব করবি হাসবি খেলবি গাইবি তা তো দিতে পারলম লয়রে। বলে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল। মদে মত্ত মাতাল।

পুরুষ্টু চুলের কিছুটা কপাল ঝাঁপিয়ে আছে। মাথা তুলতে পারছে না। কুচকুচে কালো মহিষ বর্ণ শরীর স্বাস্থ্য ও বেশ।

   ——পাটে গ্যাছে বেলা।সুরুয্ আমার শরীল পুড়েছে সারাদিন —,তারপর রাইতে আবার হায়নার মত মোকে খাবি —তার আগে তুকে গেরাস দিতে হবে –বনের লাকড়ি পুইডে।

আমি মানুষ লয় ?  জল জঙ্গলে আমার রূপ যৈবন খাবার লেগে কত লোক হাঁ করে থাকে। সঙ্গেও গেলি না !! পাঁকে পাঁকে হাঁটতে পা লেঠেই গেছে।

  ——আমি ত চাই শিবানী। আমার মতোন অকম্মার ঢেঁকিকে ফেইলে তু যা  একটা ব্যাটা কোলে লিতে। লোকে বাঁজা বলে তুকে ভুল করে। ডাক্তার বলেছে তর দোষ লয়রে —-আমারআমার –আমি তো চেইপে গেছি সত্যি কথাট। তুযর কাছে বলি লাই।

    গ্রীষ্মের দাবদাহে লকলকে জিভ বের করে কুত্তারা ঘোরে। পথে প্রান্তরে আনাচে কানাচে। রতন ও সেভাবে ঘোরে পাড়ায পাডায। সাজিয়ে রাখা ফুলদানি র মতো নরম তুলতুলে কচি কুমারী সুন্দরী ছাড়া বিবাহিতার দিকেও নজর পড়ে।

  ওদের সুখের ছোট্ট সংসারে নাক গলাতে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনেছে। কেয়া ঝোপ টপকে এসে উপেনকে সে বললমাল তুমি খাওনি মাল তুমাকে খাইছে দা। তা দাভাই একটা বিডি  লুব দাঁড়াও দাঁড়াও আমি ধরি দেইটি।

     উভয় বিডিতে আগুন দিয়ে সুখটান দিতে দিতে বলল  সৌ কথা ভাবিটি। তুমি তো আগে ওঁরকু থাইলনিহঁ একটা বাচ্চা নাই হৈলে মাথার বিরেন ঠিক রইবে কাইনু ডাক্তার দেখাও নি দা ভাই তুমার দোষ না বৌর ?

—–আমার। আমার দ্বারাই হবেক লয়রে ভাই। তু পারবি রতন আমার বৌর প্যাটে বাচ্চা দিতে যা না লেইগে পড়। সে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল।

    এ যেন প্লেটের রসগোল্লা চামচে তুলে ভালোবেসে কাউকে জোর জবরদস্তি করে খাইয়ে দেওয়া। রতন আহ্লাদে আটখানা। রক্ত টগবগ করে ফুটছে। স্বামীর স্বীকারোক্তির সামনে উন্মুক্ত দ্বারে না প্রবেশ করে পারা যায় । মাতাল স্বামীর কথায় কান না দিয়ে শিবানী শুনেও না শোনার ভান করল। উপেন বাংলা বোতল থেকে এক গ্লাস মদ ঢেলে দিলে রতন ঢকঢক করে গলার নীচে ফেলল।

    সন্ধ্যা অবকাশে পূর্ণিমার চাঁদ পুব দিগন্তে আপন আলোর জাল বুনে বনরাজিতে রূপালী রঙে তুলির টান দিতে ব্যস্ত। স্তব্ধতা চারিদিকে। জোনাকির দল এসে উপেনকে দেখে সন্ধ্যারতি করতেও ব্যস্ত।

   লাচের দলে নামট লিখায় এবার সুখী হবি

কোলে লিবি সোনার পুতুল আমোদ আদর করবি

সোঁদর বনের আদিবাসী জল জঙ্গলে কাটাই

কাছিম কাঁকড়া কাঠ কুড়াই পেটের জ্বালা মিটাই

ভাঙা ঘরে চাঁদের আলোয় কাটাই বুকের যন্ত্রণা

হাতের মুঠোয় সুখের সাগর চিরকালের পূর্ণিমা

আসবে এবার আমার ঘরে কান্না হাসির গান

বুকের বেদন জুড়বে ইবার আহ্লাদে আটখান 

   উঠানে শীতল পাটিতে শুয়ে শুয়ে সে এভাবে কাব্যিক ব্যঞ্জনায় মাতাল সুরে বলছে।সন্ধ্যার হিমেল হাওয়ায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছে শিবানী জানে না। কিছুক্ষণ পরে অ্যালুমিনিয়মের থালায় গরম ভাত আর সমুদ্র কাঁকড়ার ঝাল চচ্চড়ি এনে শীতল পাটিতে দিয়ে গেল।