‘অঙ্কুরোদগম’-এর নবীন প্রজন্মের সৃজনশীলতার সম্ভারে পুষ্ট ‘ক্যাম্পাস অঙ্কুরোদগম’। ওরা আগামী ‘অঙ্কুরোদগম’। বাংলার ইতিহাস, বাঙালিত্বের গৌরব, ওদের মধ্যেই বেঁচে থাকছে। ওরা বহু যত্নে লালন করছে বাংলাকে, ওদের অন্তরে সজীব  বাংলাভাষা। এক সমৃদ্ধ চেতনার দায়িত্ব আজ তাদের কাঁধে।  ‘অঙ্কুরোদগম’ এই নবীন প্রজন্মকে শিকড়ের সন্ধান দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।  এখানে কচি প্রাণগুলি তাদের মতো করে মত বিনিময় করতে পারে,  চিন্তা-ভাবনা আদান-প্রদান করতে পারে সহজেই।  শত ব্যস্ততার মধ্যেও তারা নিজেরাই হয়ে ওঠে আয়োজক, কবি ও শিল্পী। ওদের নেতৃত্বে মেলে দক্ষতার স্বাক্ষর । অহরহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে সৃজনশীলতাকে বাঁচিয়ে রাখতে শিখছে। ‘ক্যাম্পাস অঙ্কুরোদগম’-এর নবীন প্রজন্ম চায় সত্য, সুন্দর ও স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠা করতে। শুধু সৃষ্টির আলো দিয়েই সম্ভব অন্ধকার সরিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপন করা। তবেই বাঙালি হবে গৌরবোজ্জ্বল, বাংলা ভাষা পাবে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ।
আমাদের অঙ্কুরোদগমের ‘আগামী প্রজন্ম’ নিঃসন্দেহে অঙ্গীকারবদ্ধ।

কবিতা

সোমনাথ চক্রবর্তী

অনিক দেবনাথ

দেবন্বীতা চক্রবর্তী

সুস্থিতা দেব

সম্প্রীতি দে

অভীপ্সা মজুমদার ঘোষাল

শ্যাম মালাকার

অনন্যা দাস

অমর্ত্য বিশ্বাস

প্রিয়াঙ্কা চক্রবর্তী

ধ্রুব বিকাশ মাইতি

শুভ্রজিৎ মণ্ডল

 

গল্প 

সূর্য ডুবি : আমিয় নস্কর

ঝাল থেকে মিষ্টি : অনিন্দিতা দে

 

পেন্টিং

অঙ্কিতা মুখার্জী

দাক্ষী সরকার

 

ভিডিও

দেবাশিস মুখার্জী

দেবন্বীতা চক্রবর্তী

রাত্রি দাস

আমার দুগ্গা দিদি হারিয়ে গেছে,

কাশের বনের বাঁকে

কত খুঁজেছিকত ডেকেছি,

কেন যে সে চুপটি করে থাকে ?

 

আমার দুগ্গা দিদি আর আসেনা

দেখাতে রেলগাড়ি,

আমি এখনও ছোট্ট ভীষণ

একা কি আমি চলতে পারি ?

 

আমার দুগ্গা দিদি ভীষণ ব্যস্ত

ল্যাপটপ,  ফোন যেন চোখে হারায়

টিভির পর্দায় আমার একাকীত্ব

রেলগাড়িকে আর খুঁজে না পায়।

 

শৈশবের সেই ছুটে চলা

কাশের বনহারিয়ে গেছে কোথায়

ছোটবেলার ছোট্ট ছোট্ট খুশি

বন্দী আজ স্মৃতির পাতায়।

কত শহর ছেড়ে গ্রামের দিকেহেঁটে গেছে পা,

এত সহজ নয় বিচারমানুষের মন মাপা।

 

অন্তঃসার দিগন্তবহু দূর এক রাস্তার খোঁজে,

কেউ চায় না বিশদে,মানুষ তোমায় বোঝে।

 

কিচ্ছু জানা নেই যাঁরতারও নিন্দে ভরা এক তরী,

সময় দেখে নিতে জানেনিয়মের হাতে রাখা ঘড়ি।

 

নিরুপায় চোখ বন্ধ রাখা দায় ভীষণই,

 মিথ্যে উত্তর লিখে গেছে,তোমার ভাগ্যে শনি।

 

ভেতরে ভেতরে প্রবেশ দরজায় তছরুপ,

আমরা যাঁকে চিনি সেও কোথাও ভুল খুব।

 

 ইতিহাস শুধু চাপা পড়ে যায় গতির আড়ালে,

 মানুষের কথা বলে আকাশ,মাঝ রাতে একা দাঁড়ালে।

 

এক নিঝুম মনকেমনের আড়াল থেকে

বেরোনো হয়নি আমার…

ছোট একটি বেলার প্রস্তুতি নিতে নিতে

কেটে গেছে অজস্র আলোকবর্ষ ।

পুরোনো ভালোলাগা আর,

সুন্দর গান ক্ষণিকের অতিথি;

তাও পরিযায়ী প্রেমে মাতোয়ারা

আমার জল নূপুরের তান…

বৃষ্টি বানে অনুরণন তোলে সেই

ক্ষীণ সংলাপের যোগাযোগ ।

এলোমেলো ভাবনা ও শব্দ নিয়ে

তৈরী আমার তাসের মঞ্জিল….

ক্রমশ ভুলে যাই যতসব

গোপন রাখার অনুরোধ…

নিঃশ্বাস বয়ে আনে বিষের শিহরণ

প্রতিবর্তক্রিয়া হয়ে ওঠে

অসহায় প্রেমের আর্তি….

তবুও রাত্রি যাপনের চোরাবালি স্রোতে,

শিল্পের ছোঁয়া লেগে হয়ে উঠি জীবনপ্রতিমা

যৌবন যুদ্ধের চির বিজয়ীর ভূষণ,

তাই করুণার স্থান পেল মাটি..

আর আমি পেলাম

অজানা অধ্যায়ের আকুতি।

এই ধুলি ধূসরিত কৃত্রিম ইঁট কাঠ বালির জগতে

আমি অবাঞ্ছিত

একজন,

আমি এক বহু প্রাচীন জীর্ণ বৃক্ষ।

আমার রঙ বিবর্ণ

আমার কন্ঠ অবরুদ্ধ,

আমার প্রাণ উঠেছে হাঁপিয়ে।

 

তবু আমি বেঁচে আছি,

কুৎসিত আবর্জনার মাঝে

অবহেলিতঅসহায়

নিশ্চলনিশ্চুপ –

করছি অপেক্ষা প্রতিক্ষণ

কবে পাবো মৃত্যুর শান্ত আলিঙ্গন।

 

আমি হয়তো হারিয়ে যাব এই পৃথিবী থেকে,

তবু আমার সন্তানেরা রইবে তোমাদের জন্য,

তারা দেবে তোমাদের

জীবন ধারণের অমূল্য সম্পদ,

এনে দেবে আকাশের মেঘ থেকে শীতল বারিধারা,

এনে দেবে খাদ্যদেবে সৌন্দর্য

ভরিয়ে দেবে তোমাদের ক্লান্ত জীবন সবুজ শোভায়।

 

তবে যদি তোমরা চাও !

মুখ থেকে এত কথা ফুটছে কেন ?

আহ্। বড়োরা কথা বলছে তো।

চুপ করে শোনো ওদের কথা।

কি চাও তুমি উড়তে ?

কিন্তু পৈতৃক ডানা দুটো,

তোমার ভাইয়ের জন্যে তোলা আছে।

ওকেও তো উড়তে হবে,

তোমাকে শুধুই পুড়তে হবে।

তোমায় বরং,

একটা বালির ঘরে বিয়ে দেব,নদীর ধারে,

যেখানে থাকে মুক্ত,নদীর বালুচরে।

মুক্তি পেয়েছো বলেই নিজেকে মুক্ত ভেবোনা।

কি ভাবছো ?

মুক্ত পরে সাজলেই বুঝি,

সাগর কন্যারা তোমাকে খেলতে নেবে ?

ওরা আলাদাওরা জানে,

তোমায় ওরা ওদের দলে নেবেনা।

তোমায় সেই খেলতে হবে একা একাই,

বালির পরে,বালির ঘরে।

বালির ঝড় আসলে কি করবে ?

কি আবার করবে ?

পিঠ দিয়ে ঘর আগলাবে।

সবটা ঝড় নিজের কাঁধে নেবে,

সাগর কন্যারা তো নিজেরাই,

মুক্তি ছিনিয়ে নিয়েছে,

তাই ওরা আজ মুক্ত।

ওদের সাথে তোমার তুলনা ?

হ্যাঁমানলাম তুমিও সেই ছোট্ট বেলায়,

চেয়েছিলে এক জোড়া ডানা,

কিন্তু তুমি তো আর অবাধ্য নও।

আকাশে কত মেঘ বালিকা ভেসে বেড়াচ্ছে।

ওরা কিন্তু সেই রাত্রেই সিন্দুক থেকে,

ডানা জোড়া চুরি করেছিল।

তুমি যে লক্ষী হয়ে মুক্তোর ফাঁস গলায় বেঁধেছ,

ভেবেছো এই হলো মুক্তি,

এখন আর এসব ভেবে কি হবে ?

তোমার বালির ঘর যে টলোমলো,

সাগর কন্যাদের পাখনার ঝাপটায়,

ভেঙে পড়ছে তোমার ঘর,

বালির ঘরও তো ভাঙারই ছিল।

তুমি আজ হয়েছ এক সামান্য নুড়ি পাথর,

নির্জীবপ্রাণহীনস্বপ্নহীন।

তোমার কি আর,

ওই বালির ঘর বাঁচানোর সাধ্য আছে ?

বড্ড ব্যর্থ তুমি জানো!

মেঘ বালিকারা ভেসে বেড়ায়,

সাগর কন্যারা সাঁতরে বেড়ায়,

তোমার ভাই কে দেখো,

কি সুন্দর গাছের ডালে ঘর বেঁধেছে,

উড়ে উড়ে কাঠ কুটো জোগাড় করে আনে,

খাবার জোগাড় করে আনে,

ভাই কে দেখে কিছুই শিখতে পারলে না ?

ঘর ভেঙেছেকি আর করবে ?

ওই মস্ত বাসার এক কোণে,

নুড়ি পাথর হয়ে পড়ে থাকো।

তোমার শহরে হেঁটে চলছি একলাই

এ শহরের পথগুলো শাখাপ্রশাখা হয়ে অলিতে- গলিতে আরো বিস্তারলাভ করেছে !

পথ যেন শেষ-ই হতে চায় না ।

পায়ের দৌর্বল্য বিষ হয়ে কাঁটার মত বিঁধছে শরীরে

বিষকে সতেজ করতে আরো বিষ ঢেলে দিল ,

তোমার শহরে কি ঠিক এইভাবেই শুশ্রূষা হয় ?

এই শহরের দিন-রাতের মধ্যে চরা পার্থক্য

পক-প্রণালীর মতন কেউ যেন বারংবার বিচ্ছিন্ন করে দেয় 

মহানগরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ !

দৈত্যাকার শরীর জুড়ে প্রতিক্ষণে কত যে গড়ে উঠছে বিলাসী আস্তানা-

তাদের খবর কি তুমি রাখছো ?

শহরের জঠরে জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার শহর।

একদিন নয় দুদিন নয় প্রতিদিন জন্মায়।

রাখো তাদের খবর ?

এত কোলাহলে মাঝে মাঝে মনে হয় যেন বিয়েবাড়িতে নহবত বসেছে ।

দাদরা তালে ঢাঁই-ধপাধপ্ তবলা বাজছে ।

তুমি শুনতে পাচ্ছো ?

শুনতে পাচ্ছো কি এত কোলাহলের মাঝে কোনো একজন চিৎকার করে

তোমায় ডেকেই চলেছে !

একদিন নয় দুদিন নয় প্রতিদিন ডাকে ।

পাও শুনতে ?

এদিক-ওদিক ছুটে তোমাকে ফিরে পাওয়ার ব্যর্থ আশায়-

দেওয়ালে দেওয়ালে নিখোঁজের বিজ্ঞপ্তি আঁটছে,

কত চৌমাথার ট্রাফিকজ্যামে খুঁজছে,

কত বেনামী গলি পেরিয়ে মাথা খুঁড়ে মরছে পাঁচমাথার মোড়ে।

তুমি কি দেখতে পাচ্ছো ?

একদিন নয়দুদিন নয়প্রতিদিন মরছে।

পাও দেখতে ?

তুমি কি অর্বাচীন ?

ছককষা শহরে দুপুরগুলো কিলো কিলো মাথাব্যথা কেনে

কোনো একটা দুপুর তো আলাদা হতে পারতো !

হ্যাঁ হতেই পারে অবশ্য –

মনের ভিতরে নিঃশুল্কে গল্প লেখা যায় স্বেচ্ছায়।

সেই বিশেষ দুপুরে ধরো যদি ঝিমুনি আসে দুচোখ ভরে ,

ধরো যদি অলসতায় জড়ানো দুটো পা এলোমেলো হেঁটে চলে ,

ধরো যদি আমার আড়ষ্ট শরীর পিসার হেলানো মিনার,

আর ঠিক এমন একটা মুহূর্তে সামনাসামনি তুমি-আমি !

তারপর ……….?

এই দেখো কলমের কালি শেষ !

এরপরের গল্পটা না হয় লিখবো আবার অন্য কোনো জন্মে।

ততদিন গলে গলে পড়তে থাকুক শুকনো খটখটে হৃদয়টা থেকে রক্ত,

চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসুক রাশি রাশি লাল গোলাপ।

শরীরে বিঁধুক লাল গোলাপের কাঁটা !

আজ কলা কাটা অমাবস্যা,

     পিতৃপক্ষের অন্তিম রাত। 

রাত পোহালেই ভোরের আলোতে-

      আলোকিত হবে  বাংলার মাঠ ঘাট।

শিউলির সুবাসে ধেয়ে আসবে-

        মহালয়ার আগমনী সুর।

দেবীপক্ষ নয়কো আর বহুদূর,

    কাশের বন পথ এঁকেছে-

দূর্বা ঘাসে শিশির পড়েছে।

        শত শত মৃন্ময়ী প্রতিমা-

সেজে উঠেছে চিন্ময়ী রুপে।

      শত চিত্র আলোকচিত্রের স্তুপে,

শিল্পী তুলেছে ধরে দেবী দূর্গার রুপে।

       বন্দনা হবে নারী শক্তির।

                  উচ্চারিত হবে-

শক্তিরুপেণ – কন্যারুপণেচ’’

     এ যেন সাগরে শিশির পড়া।

সমাজের বুকে নিদারুণ এক উৎসব গড়া।

        এ বন্দনা এক অছিলা।

নারী  কে যদি পূজা কর দেবী রুপে।

       তাহলে কেন কামায়িত হও-

    রক্তে  মাংসে গড়া দেবীর রুপে ?

তাহলে কেন ধর্ষিত হয়  শত দেবী ?

     বলো উত্তর দাও।

তাহলে কেন নেই তার স্বাধীনতা ?

       সমাজ কেনো প্রশ্ন তোলে এই বলে

তাকেই বা কে দিল এত স্বাধীনতা”

ধর্ষকেরা পায়না শাস্তি,

       পায়না তারা ধরা।

এ যেন সাগরে শিশির পড়া।

          কন্যা জন্ম নিলে পরে,

শ্বশুর যেন অসুর রুপে।

      সন্ততি কে রক্ষার তরে-

জননী এসে পায়ে ধরে।

   শোনে না শ্বশুর জননীর কথা,

বোঝেনা সে মায়ের ব্যথা।

        শ্বশুরের চাই বংশের বাতি।

শ্বশুর বলে কন্যা হলো বংশের বুকে

           যেন  কোন কালরাত্রি।

মাতৃ জঠরেই করো শেষ।

   নইলে কষ্ট তোমার ভাগ্যে বেশ।

অসহায় জননী এবার রুদ্রাণী রুপে,

     এ যেন মহাকালের তান্ডব-

শ্মশান শবের ছাই- এর স্তুপে।

     আজ এক জননী রুদ্রাণী রুপে।

খুঁজে দেখো পাবে তুমি –

   শত জননী অসহায় রূপে।

সবাই বলে আজ নারী দক্ষ।

       কে বলেছে ?

খোঁজ নিয়ে দেখো এখনো,

      আসেনি সেই –

              দেবীপক্ষ।

চায়ের গ্লাস অথবা সিগারেটের এক টানে,

পিএনপিসি কিংবা রাইমস্যেটাতে আড্ডা জমে।

রাজনীতি অর্থনীতিবিষয় হলেই হল,

বাঙালি বাঙালি হলেআড্ডা আরো জমে গেলো।

অফিস বা ব্যবসাদিনকার যাবতীয় ক্লান্তির পরে,

হাজির সকলেই ঘড়ির কাঁটাযেই সন্ধ্যে সাতটার ঘরে।

 

চায়ের দোকান বা মোড়ের মাথায়,

আড্ডা জমে ওঠে কথায় কথায়।।

দেশের যত খবরবিষয়ের ধারা,

আড্ডাটা জমে না  রাজনীতি ছাড়া।

বিপ্লবী অথবা দেশদ্রোহী,

আড্ডার গণনায় তারা বিদ্রোহী।

সাদা কালো পর্দায়ব্লাউজের হুক খোলা,

বারে বারে  আড্ডায়সেই কথা তোলা।

তাসের আসর জমেসাথে ছাইপাশের গ্লাস,

বিরোধিতা করে বলেনিউজে দেখায় কেন যুবতীর নগ্ন  লাশ।

নিউজ চ্যানেল অথবা খবরের পাতায়,

শিরোনামে তর্ক-বিতর্ক কথায় কথায়।

আমার জন্য কাঁদবে না কেউ।

দেওয়াল ঘরের বাতি জ্বেলে স্বপ্ন এবার

ভাঙ্গার পালা

 

দশ পাঁচটা কান্নাকাটির

ভেঁপু বাঁশির চিড়িয়াখানায়

আমার জন্য হারবে না কেউ

 

চিবিয়ে খাওয়া কাব্যগুলো

শেষ যাত্রায় সঙ্গী হলে ,

আমার জন্য এই টুকু থাক।

 

আমার জন্য ভাববে না কেউ।

সময় পেলে গুছিয়ে রেখো হঠাৎ

জমা সর্দি কাশি

 

জিভের ডগায় স্বাদের খোরাক

পোষ মানিয়ে রাখছি বরং,

আমার জন্য থাকবে না কেউ

 

আলতা সিঁদুর হলুদ বাতির

চকমকি হার বাঁচিয়ে রাখার…

সেদিন রাতে হঠাৎ করেই

        চোখ পড়লো সেই নীলচে খামে।

রংটা আজ হয়েছে একটু ফিকে      

নামটা লিখেছিলি তুই      খামের ঠিক  মাঝখানেতে।

                 সেদিন আমি ভীষন অভিমানী।                                                                     মান ভাঙ্গাতে লিখেছিলি ছোট চিঠিখানি।

বসে ছিলাম তোরই অপেক্ষাতে       

কৃষ্ণচূড়ার তলায় সেই পুরনো বেঞ্চটাতে

                সূর্য তখন অস্তে পাড়ি দিল

মনের মধ্যে কেমন যেন    জোয়ার খেলে গেল।

        ঠিক আছে তো কোন বিপদ হলো না তো ?

   না নাব্যস্ত আছে তাই আসতে পারছে না হয় তো।

অবশেষে নিরাশ হয়ে যেই বাড়ালাম বাড়ির দিকে পা

       ছোট চিনির হাতে পাঠিয়ে ছিলি এই সে চিঠিটা।

রাগ করিস না কাজের চাপে    পারলাম না আজ যেতে।               

কথা দিলাম পরের দিনে ঘুরতে যাব বাগবাজারের ঘাটে।

তোমাকে মনে করলে—

দুঃখ আমায় আনায়াসে চিনে ফেলে,

তবু আমি দুঃখকেই ভালোবাসি।

বুকের ভেতর ভীষণ মেঘ

দিব্যি তারা পা বাড়িয়ে ঘুমায়

প্রথম আমি হাত বাড়িয়ে ডাকি,

তখন থেকে চলি তার ভাড়ায়।

যা কিছু ছিল কিংবা হবে

সবটাই কিন্তু দুঃখ দিয়ে কেনা

দুঃখ ছাড়া কিছুই নেই চাওয়ার

তাকে পড়তে হয়সামনে রেখে তার আয়না।

তুমি যতই দূরত্বেই থাকো

আমি থাকি সেই আগুন দামে,

নতুন করে কিছুই বলার নেই

দুঃখকে জিজ্ঞেস করোও কিন্তু সব জানে।

 

ছোট্ট রিক্সায় শহরের গলি ধরে চলি — আজকাল ;

পথের দুপাশে পড়ে থাকে অগণিত জীর্ণ দেয়াল!

শতাব্দী প্রাচীন ইটের বুকে সঞ্চিত দীর্ঘশ্বাস–

তারা মুক্তি চায় কিন্তু পাহারায় থাকে বরকন্দাজ ;

শরীর থেকে খসে পড়েছে চুন-সুড়কির কারুকাজ।

উঁকি দেয় গভীর আক্ষেপে ধূর্ত চক্রান্তের ইতিহাস।

 

শৃঙ্খলের মুখোশে ঢাকা বেড়িনেই কোন ফাঁক!

কতবার ওদের বুক হয়েছে লাল-

              লেগে আছে নির্মম রক্তের দাগ!

কখনো নীল – সবুজ আবীর খেলায়-

                         ঢেকেছে বাঁচার পথ।

কখনো আবার গেরুয়া – গোলাপে হয়েছে বিলীন!

ওদের আত্মবিশ্বাসে অন্ধকার ঢেলে-

অবলীলায় এসেছে কত রংবাহারি প্রত্যাশার দিন।

তবু ওদের ঘুমহীন– এখনো কেটে যায় বিবর্ণ রাত;

বয়ে চলে দ্বিধাহীন রৌদ্র মাথায়তুফান – সংঘাত।

সেই মানুষটার সাথে হঠাৎ সেদিন দেখা হয়েছিল। দেখা হয়েছিল শহরের সেই রাজপথেঅনমনীয় জেদ ও জীবন পিপাসার টানে যে পথ ভরেছিল লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের গ্রামে নিজের ভিটেভূমিতে ফেরার এবং বেঁচে থাকার তাগিদে। আমিও সামিল হয়েছিলাম সেই নতুন সূর্যোদয়ের আশায়।

                 আচ্ছা যার কথা শুরু করেছি তাই বলি। মানুষটার নাম ধীরেন বিশ্বাস। কাজের খোঁজে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন এবং একটা কাজ পেয়েছিলেনযা দিয়ে খেয়ে মেখে চালিয়ে নিতে পারতেন স্ত্রী এবং ছোটো ছোটো দুই মেয়ে কে নিয়ে। আমার পাশেই হাঁটছিলেন তখন ওনার বিবর্ণ মুখকাঁধে ছোটো মেয়ে। সাথেই ছিল স্ত্রী এবং বড়ো মেয়েতবে সেটা অনুমান করেছিলাম কারণ ওনার হাত ধরেই হাঁটছিলেন মহিলা। আমি কৌতূহল বসত জিজ্ঞাসা করিদাদা আপনার নাম কিবাড়ি কতদূরসাথে কি পরিবার আছে?   তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন- “আমার নাম ধীরেন বিশ্বাস গ্রামের নাম পলাশপুরএখনও প্রায় হাজার কিলোমিটার কিংবা তার বেশি হাঁটতে হবে তবে পৌঁছাতে পারবো। ” আমি আরও কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছিলাম তখনই ধীরেন বাবু বলে উঠলেন -“ভাইরাসের করাল থাবা আমার পরিবার কে শেষ করে দিচ্ছিলো.! কাজ বন্ধদিন খাটি দিন খাইএতদিন কোনো রোজগার নেইচারটে মানুষ কি খেয়ে বেঁচে থাকবো..! তার ওপর ঘর ভাড়া। তাই ভাবলাম কষ্টে-শিষ্ঠে গ্রামে ফিরে গেলে নুন ভাত খেয়ে অন্তত বেঁচে থাকা যাবেতাই এই পদক্ষেপ.। আপনি কি একা হাঁটছেন? ” আমি বললাম হ্যাঁ একাই।

            তারপর অনেকটা পথ আমরা নিজেদের ব্যাক্তিগত কথাবার্তা আলোচনা করতে করতে এগোচ্ছিলাম। আমার বাড়ি ও গ্রামে তাই একই সাথে হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে কেটে গেলো আরও একটা দিন। ধীরেন বাবু অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন -“নাম কিকি করা হয়বিয়ে-থা করেছেন? ” আমি বললামআমার নাম নাজিম,, ওই একটা চামড়া কারখানায় কাজ করতামবিয়ে-সাদি করিনি এখনও। উনি সবটা শুনে বললেন-“ও আচ্ছা আচ্ছা । ” তারপর আবার সন্ধ্যা নামে পরিযায়ী বুকেওনার স্ত্রী ক্লান্ত হয়ে বলে -“এখানেই বসে রাতটা কাটিয়ে নিই চলো। আমি আর হাঁটতে পারছিনা। ” দেখলাম বড়ো মেয়েটা কাঁদছে বোধহয় খিদের জ্বালায়.! ছোটো মেয়েটা তখন ঘুমিয়ে পড়েছে বাবার কোলে। ভিতরে ভিতরে আমার একটা চাপা কষ্ট হচ্ছিল তাই থাকতে না পেরে বলি ধীরেন বাবু আপনি ওদেরকে নিয়ে এখানেই বসুন দেখি কিছু খাবার আনতে পারি কি..! তারপর পাশের একটা দোকান দেখি বন্ধ,, আরও কয়েকটা দেখি সেগুলো ও বন্ধ। বাধ্য হয়ে পাশের একজনের বাড়ি থেকে সাতটা বিস্কুট চেয়ে এনেছিলামসেই বিস্কুট কটা দুই বোন খেলো। আমি বললাম আপনার এখানেই আজ রাতটা থাকুন। আমি আসছিধীরেন বাবু বলেন আবার দেখা হবে,,ভালো থেকো। আমি ক্লান্ত নই তাই আমি আবার হাঁটতে শুরু করি প্রায় দশ দিন পরে বাড়ি ফিরি,, এবং খুব আনন্দ হচ্ছিল শেষমেশ আমি বাড়ি ফিরতে পেরেছি। পরেরদিন সকালে সংবাদপত্রে দেখি রেলে কাটা পড়েছে ধীরেন বাবুর পরিবার। আমি নিশ্চুপ হয়ে যাই,, ভাবলাম জয়ের সূর্যোদয় হয়নি।

দু বছর ধরে একই কলেজএকই কোচিং;  তবুও রেহানের মাইনাস সিক্স পাওয়ারের পুরু চশমার আড়ালের চোখ আর ততোধিক ঘোলাটে মন পড়ে উঠতে পারলো না মেঘা! ডানাকাটা পরী হওয়ার সুবাদে মেঘা কলেজের সব ছেলের ক্রাশশুধু এই বইমুখোবোবা ছেলেটা কোনোদিন ওর দিকে ফিরেও তাকায় না। মেঘা পড়ার হেল্প চাওয়ার বাহানায় আলাপ জমাতে গিয়ে দেখেছেপড়াশুনার কথা শেষ হলেই উদাসী চোখে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। হুম আর হাসির ইমোজির থেকে বেশী কিছু রিপ্লাই দিতে জানে না মেসেজে। অসহ্য!

মেঘারও জেদ চেপে গেছেএই হরপ্পার শিলালিপির মত মনটার পাঠোদ্ধার করতেই হবেযে করেই হোক।

সেদিন ডাইনোসরের পৃথিবীতে ফিরে আসার থেকেও আশ্চর্য একটা ঘটনা ঘটলো– কোচিং শেষে রেহান পাশের ফুচকাকাকুর দোকানে লাইন দিল! শান্তশিষ্ট ছেলেরা বেশী ঝাল খেতে পারে নাবলাই বাহুল্য। একটু পরেই রেহানের দু চোখ দিয়ে গঙ্গা যমুনা বইতে শুরু করলো।

মেঘার মনের মধ্যে তখন ২০০ আলোকবর্ষ/ঘন্টা গতিবেগে স্পেসশিপ চলছে !  “সরফরোশী কি তমান্না অব হামারে দিল মে হ্যায়” গাইতে গাইতে দুঃসাহসী মেঘা রেহানের কাছে গিয়ে বলেই ফেললো–

ইয়েতোমার যা অবস্থাএকটা আইসক্রিম না খেলে ঠিক হবে না মনেহয়।”

পাশেই একটা আইসক্রিম পার্লারওরা দুজনে গিয়ে দুটো বাটার স্কচ অর্ডার দিল।

এরপর থেকে কোচিং এর পর ওদের ফুচকা খাওয়াটা রুটিন হয়ে গেল। ফুচকা কাকুর ঝাল দেওয়ার পরিমাণটাও কিভাবে যেন বেড়েই চললোঅগত্যা গন্তব্য সেই আইসক্রিম পার্লার।

 

তারপর যা হয় তাই হলআলাপ-প্রলাপ শুরু হলআর ওদের প্রেমটাও আইসক্রিমের মতোই জমে গেল।

বছর চারেক পর রেহান মেঘাকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করলে মেঘা আমতা আমতা করে বললো–

ইয়ে মানেআমার কিছু কনফেস করার আছে! ফুচকা কাকুকে আমিই বলতাম বেশী করে লঙ্কাগুঁড়ো মেশাতেআর ঘুষ হিসেবে কাকুকে ক্যাডবেরিও দিতাম।”

রেহান গম্ভীর মুখে বললো–

” অত ঝাল খেয়ে যদি আমার কিছু একটা হয়ে যেতগর্হিত অপরাধ। Attempt to murder এর চার্জ আনা যেতে পারে।”

অপরাধ করলে শাস্তি তো পেতেই হয়। শাস্তি হিসেবে ফুচকা কাকুকে সপরিবারে ওদের বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হলআর হানিমুনে রেহান মেঘাকে রাইন নদীর তীরে আইসক্রিম খাওয়াতে নিয়ে গেল।

এরপর কেটে গেছে আরো বছর পাঁচেক। রেহান- মেঘার যমজ ছেলে মেয়ে হয়েছে। ছেলের ডাক নাম বাটার স্কচমেয়ের নাম ভ্যানিলা। ফুচকা কাকু ব্যবসায়ী বুদ্ধি খাটিয়ে ফুচকা আর আইসক্রিমের জোড়া স্টল খুলেছেনাম দিয়েছে– “ঝাল থেকে মিষ্টি!”

সম্পাদকের কথা

ক্যাম্পাস অঙ্কুরোদগম‘— ‘অঙ্কুরোদ্গম‘-বিশ্ববঙ্গ সাহিত্য সংস্কৃতি সমন্বয় মঞ্চের নবীন প্রজন্মের কলাকুশলী-সমৃদ্ধ একটি শাখা। এরাই বাংলার আগামী। বড় যত্নে অঙ্কুরোদগম‘-এর চারাগাছটিকে এরা লালন করে। সেই যত্নের অপর নাম আত্মসক্রিয়তার অভিযোজন–যার মাধ্যমে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণসমৃদ্ধিকরণ ও সঞ্চালন সম্ভব। সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মানুষের আচার-আচরণপারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক এবং জীবন ধারায় পরিবর্তন আসে। প্রগতিশীল জীবনে সংস্কৃতির অনুশীলন ব্যক্তিকে মুক্ত চিন্তাভাবনার শরিক করে। তার ফলে সে প্রাণবন্ত নতুন সৃষ্টি সৃজনে উদ্বুদ্ধ হয়। ঠিক এই ভাবনাতেই এখানে নতুন প্রজন্ম উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত। এখানে প্রতিটি মুহুর্তে নতুন প্রাণগুলি সাহিত্যে আবহমানকালের সম্প্রীতিপ্রান্তিক জীবনাচার এবং লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরে ।  প্রজন্মটি সত্যকে গ্রহণ করার জন্য চিন্তার পরিবর্তন আনে,  বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে। সংবেদনশীল মনগুলি নিজেদের অভ্যন্তরীণ শক্তি দিয়ে সৃজনশীল হয়ে ওঠে। আত্মপ্রত্যয় ও ইচ্ছাশক্তির বলে বলীয়ান

নবীন প্রজন্ম এখানে শুধু অন্বেষণকারী নয়প্রদানকারীও বটে। সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানপারস্পরিক মতবিনিময় এবং পাঠাভ্যাসে ক্যাম্পাস অঙ্কুরোদগম‘-এর এই শাখা সমৃদ্ধ।

এখানে যান্ত্রিক কোন আওয়াজ পাওয়া যায় নাশুধু নবীনপ্রাণগুলির সৃষ্টি এবং সৃজনশীলতার মধ্যে  প্রকৃতজ সৌন্দর্য হাতছানি দেয়।

কবিতা

অমর্ত্য বিশ্বাস

জয়দৃতা সরকার

দেবন্বীতা চক্রবর্তী

সম্প্রীতি দে

আরাধনা মাহাতো

গায়ত্রী গঙ্গোত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

সুস্থিতা দেব

 

নিবন্ধ

কোভিড মোকাবিলায় বিজ্ঞান সোমনাথ চক্রবর্তী

 

 

পেন্টিংস

 

অঙ্কিতা মুখার্জী

দেবন্বীতা চক্রবর্তী

ঐশানী রায়

স্নেহা চক্রবর্তী

দাক্ষী সরকার

 

ভিডিও

দেবলীনা পাল
গায়ত্রী গঙ্গোত্রী মুখার্জি
দাক্ষী সরকার
আরাধনা মাহাতো
দীপান্বিতা রায়
কঙ্কনা পাল

রেল লাইনেই আমাদের প্রথম আলাপ।

ক্যামেরার ফোকাসে কাঁচা রক্তের স্রোত

সেদিন মরিয়া হয়ে চায়

বছরের শেষ ষড়যন্ত্রের দিকে

 

আগেও তাদের দেখেছি,

প্রাণপণে হুইসেল দিয়ে যেতে

 

ঘরশুদ্ধ উপরি আয়ের উদযাপনে

আমাদের চাতালে বমি উঠে আসে।

গতরাতের শুকনো পান্তা ভবিষ্যৎ হয়ে যায়

 

ওরা কে ?

কেন ওদের জন্ম হয় ?

গা ঘেঁষা স্বরচিত কোন আশ্রয়

জানা নেই তাই

যে কোনো পাড়াতেই তারা থেকে যেতে পারে

 

তালকানা সব মামলা শুরু হলে

ছ্যাঁচড়ার দল ভিড় করে কোর্ট মোড়ে

 

প্রমোশন বন্ধ হয়ে গেলেও একবার

আমিও হুইসেল দিয়ে যাব,

লাইন পাড়ের কাটা বুকের ধারে

 

একটি কবিতা লেখা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ে,

যখন সাইরেন আর অ্যাম্বুলেন্স এর আওয়াজ অভ্যাসে পরিণত হয়।

যখন‌ প্রকৃতির মাঝে ক্লান্ত চোখ বুজে আসে,

আর দেখা হয়না মাছরাঙার শিকার।

তখন চিত্রকল্প ধীরে আবছা হয়ে যায় —

পাশাপাশি চিতার আগুনের ছবি

দৈনিক কাগজের প্রথম পাতায় থাকলে,

শব্দরা আড়ষ্ট হয়ে আসে।

গুলির ক্রমাগত প্রতিধ্বনিতে আহত হয় ছন্দবৃত্ত।

তবুএই পৃথিবীতে কবিতা বাঁচে।

যতদিন এই পৃথিবী একটি হলেও সবুজ পাতার জন্ম দেবেততদিন কবিতা লেখা হবে।

এ জীবনের ঘূর্ণাবর্তে কিছু মানুষ এখনো হাল ধরে;

 তাই এখনো  কিছু মানুষ বন্দুকের সামনে কবিতা বলতে পারে,

জেলের অন্ধকারে কবিতা লিখতে পারে।

 

তখন ও মুখ ঢাকতে হয়নি আমাদের..

মানবমতে বেচেঁ থাকার দিনগুলো

নিতান্ত সরল।

যে আবেগে পৌঁছোলে কবিতা আসে

তার সিকি মাত্র লাভ …

তাতেই দিন গুজরান,

অনায়াসে ভেসে যাওয়া যেত জনসমুদ্রে,

নাহ! গন্তব্য সেদিন ও ছিল না কিছুই …

এক পুকুর নীল পদ্মের মাঝে ডুব !

ঘড়ির কাঁটার গতি রোধ করে

কেটে গেছে কত অচেনা প্রহর,

দূরের মাঠঘাটপাথরের দিকে

জ্বালাময় চোখ রেখে খুঁজে ফেরা নিজেদেরআশ্লেষে

প্রসন্নতা মেখে যে দেহপটে রঙের আঁকিবুকি ….

তার অস্তিত্ব ক্ষণিকের..

তা সম্পূর্ণ করতে পেরোতে হয় তেপান্তর

প্রস্তাবিত লেখনীর চল সেখানে নেই।

আজকাল দিনের শেষে অভিমানেরা বাসায় ফেরেনা।

কোনো এক অজানা কারণে চাঁদের গায়ে কলঙ্ক টাও আর চোখে পরেনা।

পরিপাটি হওয়ার ভিড়ে কালকের ঝরে পড়া শুকনো পাতাটা,

কেউ এসে ঝাঁট দিয়ে ফেলে দেয়।

আর সব শেষে রাত গুলো,

অতর্কিতেই কান্না ভেজা বাক্য গুলো গিলে খায়।

 

এই ভাবেই রোজ ঘুম থেকে ওঠায় একটা নাক উঁচু বাতানকুলের হাওয়া।

জানলা দিয়ে যে মিষ্টি আলো এসে চোখে পড়ে,

তাকে বাধা দেয়ার জন্যেও তৈরি থাকে সফিস্টিকেশনের ছোঁয়া ।

প্রেম রা উজ্জ্বল হয়ে বুক ফুলিয়ে হেটে  চলে বেড়ায় মাল্টিপ্লেক্সে।

ভালোবাসারা শুধু কেঁদেই মরে ভোরের ফোঁটা ফোঁটা লুপ্তপ্রায় শিশির বিন্দুর সাথে।

ক্রমাগত আছড়ে পড়া উদাসীন ধাক্কা জটিল ও লোহময়,

বয়স বাড়তেই বুঝে ফেললাম জীবনটা তেমন সহজ নয়।

 

ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে যায় কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ ছাড়া,

হাজার ডাকলেও ফেরেনা স্মৃতিদেয়না কোনো সাড়া।

 

সৌখিনতার আঁচে ঝলসে গেছে এক চিলতে শহর,

মেঘের কল্পনায় বৃষ্টিও অক্ষম মাপতে অভিমানের দর।

 

তারায় তারায় রটানো আছে জোনাকীর ভরা শোক,

নীলাভ আঁচে আবছা হয়েই বেঁচে থাকে আমার দু চোখ।

 

তুমি অচেনা গলি পেরিয়ে হারিয়ে গেছো বহু আগে,

আগলে রাখি ফুরিয়ে যাওয়া গল্পদের ভীষন অনুরাগে।

 

ফিরতি পথের বাঁকে এগোলে আটকে পড়ি স্বভাবতই,

দেওয়ালের বিষন্নতার সংসারেই যেন আমি মানানসই।

 

কারোর ক্ষতে প্রয়োজনের হিসাব সাজানো সারি সারি,

দিনের শেষে গল্প বলা মানুষের অভাবে কেউবা ভিখারী।

চাই না আমি সাগর হতে,

চাই না ব্যাপ্তি বিশালাকার

মরুভূমিতে নদী হবো,

আশার আলো বেঁচে থাকার।

 

সাগর তলে মুক্ত – প্রবাল

ধারণ করার ক্ষমতা কই !

নদী গর্ভে কাঁকড় – বালি,

পলি যে তার গাছের সই।

 

সাগর বক্ষে মিশবে নদী

করবে ধারণ নোনার ধারা,

তখন নদী আবেগ প্রবণ —-

সাগর প্রেমী পাগল পারা !

বহন করে পাথর খন্ড,

আছড়ে পরে ঝর্না ধারা

তটিনী তখন খরস্রোতা,

নিজের গতে আপনহারা।

ওই যে শিশুটি দাঁড়িয়ে আছে পথের ধারে,
এলো গা, খালি পা
ভিক্ষার থালা হাতে,

প্রতিদিনই এমনি করে
দাঁড়িয়ে থাকে সে,
ব্যস্ত মানুষের ভিড়ের দিকে
হতাশ চোখে তাকিয়ে ।

কেউ হয়ত দয়া করে
দেয় দু এক টাকা
দিনের শেষে,
সে বোঝার আগেই
থালা হয়ে যায় ফাঁকা ।

অভাব, অবহেলা, লাঞ্ছনা
এসব তার নয় অজানা।


ব্যথিত শৈশব, আহত শৈশব
এটাই কি তার পাওনা ?

বাল্য, কৈশোর হয়ত এইভাবেই কাটবে,

ছোট্ট শিশুটি তা জানে না।

একটা প্রচলিত কথা আছে “শত্রু যখন অদৃশ্যতখন নিজেকে লুকিয়ে ফেলাই শ্রেয়”। এবং বিশ্ব জুড়ে অতিমারী যার ফলস্বরূপ সারা বিশ্ব তথা ভারত জুড়ে লকডাউন। কিন্তু এই লকডাউন বিশ্ব জুড়ে অতিমারীর স্থায়ী সমাধান নয়। একমাত্র বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা এবং সঠিক ঔষধই পারে এই রোগকে ঠেকিয়ে রাখতে বা নির্মূল করতে। এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণার জন্য দরকার প্রচুর সময় যা বর্তমান পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে বড্ড অপ্রতুল। তার মধ্যে বিশ্ব জুড়ে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলা মৃত্যু মিছিলবিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া শৈশবএবং অত্যাধিক বেকারত্বসময় অপ্রতুলতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখানো যেতে পারে।

 

করোনা মহামারীর উৎপত্তি

 

এ ব্যাপারে কথা বলতে প্রথমেই তলিয়ে গিয়ে দেখতে হবে সমস্যার উৎস বা উৎপত্তি। বর্তমানে সারা বিশ্বে বেড়ে চলা মূর্তিমান বিভীষিকা করোণা ভাইরাসের উপদ্রব। বর্তমান ভাইরাসটির উৎপত্তি নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে নানা রকম তথ্য উঠে আসছে।

               এক্ষেত্রে বলা ভালো একদল বৈজ্ঞানিকের মত করোনা ভাইরাসের প্রধান উৎস চীন দেশের “উহান” শহরের একটি গবেষণাগার থেকে গত ৩১শে ডিসেম্বর ২০২০ সালে। এবং তাদের ধারণা এই ভাইরাস গবেষণার সময় বাদুরের দেহ থেকে মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়েছে।

              আবারএবিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি জরিপ বলছে উহান শহরে করোনার প্রথম প্রকোপ ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়ে তাদের যুক্তির স্বপক্ষে উহান শহরের কয়েক মাসের উপগ্রহ চিত্রহাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের রোগের ধরন ইত্যাদি প্রসঙ্গ সামনে এনেছে।

              আবার কিছু শ্রেণীর মানুষের ধারণা চীনের “ওয়ান নেশন” আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিপত্তি এবং রাজনৈতিক সুবিধা ও বানিজ্যিক সুবিধা লাভের জন্য চীন উহানের ল্যাবে কৃত্রিম গবেষণা করে করোনা ভাইরাস তৈরী করেছে এবং সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি নিজের কব্জায় করতেই এই জৈবিক হাতিয়ার(Biological weapon) তৈরী করিয়েছে। যদিও এই বিষয়ে পোক্ত কোনও প্রমান পাওয়া যায়নি।

                  আবার কিছু মানুষের ধারণা উহানের একটি বাজার থেকে এই ভাইরাস খাদ্যের মাধ্যমে প্রাণীদেহে ছড়িয়ে পড়ে। এবং প্রথম দিকে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার খবর বিশ্বের কাছে গোপন করে চীন সমগ্র বিশ্ববাসীকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অনুমান করা হয় এবং এর জন্য চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিংপিং অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই বিষয়েও কোনও ভারি যুক্ত খাড়া করা যায় নি।

              তবে এই বিষয়ে উল্লেখ্যভাইরাস গবেষণার ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বা প্রাণী সর্বপ্রথম আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর খোঁজ পেলে গবেষণা অনেক ক্ষেত্রে সহজ হয়। এই প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তিকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় “জিরো পেশেন্ট”(zero Patient) বলা হয়। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রথম করোনা আক্রান্ত এই জিরো পেশেন্টের খোঁজ মেলেনি।

 

 

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিজ্ঞান

 

          করোনা ভাইরাসের বাড়াবাড়ি ঠেকাতে সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিক মহল প্রথম দিন থেকেই প্রতিষেধক তৈরীতে উঠে পড়ে লেগে গিয়েছিল। এর সাথে ছিল আপামর জনসাধারণকে রোগ থেকে সচেতন করার কাজ। প্রথমেই এ বিষয়ে যে নির্দেশিকা পাওয়া গেল তা খানিকটা এইরকম – বারবার হাত সাবান দিয়ে ভাল করে ধুতে হবেকমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড সময় ধরে। এবং হাত ধোয়ার বিভিন্ন ভঙ্গি মানুষের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হল। যেহেতু করোনা ভাইরাস হাঁচিকাশিএবং স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় তাইকথা বলার সময় মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হল এবং অন্তত ২ফুট বা ৬গজের দূরত্ব মানতে বলা হল। যে স্থান সকলে স্পর্শ করেযেমন দরজা হাতলপাবলিক টয়লেটের কলটিভির রিমোটসেগুলি যথাসম্ভব স্পর্শ কমিয়ে ফেলা হল বা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেগুলি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হল। সামাজিকধর্মীয়রাজনৈতিক সভা সমাবেশ যেখানে অনেক মানুষের সমাগম হয় তার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হল। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এবং গরম খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হল। যেখানে হাত ধোয়ার সুযোগ নেই সেখানে ৭০শতাংশ অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইসার ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছিল। এবং সাথে ছিল করোনা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন। প্রথম দিকে এভাবেই করোনা মোকাবিলা করা শুরু হয়েছিল। দিন গড়াবার সাথে সাথে বিশ্বের সমস্ত দেশের সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) র যৌথ প্রচেষ্টায় বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনার ভ্যাক্সিন এবং ঔষধ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। সব থেকে চ্যালেঞ্জ ছিল কোভিড ভাইরাসের জেনেটিক সিকোএন্সিং তৈরী করা। কারণ কোভিড ভাইরাস যার বিজ্ঞান সন্মত নাম SARS-CoV-2 দীর্ঘ গবেষণা ট্রায়াল ও পরিক্ষা নিরিক্ষা এবং পরিসংখ্যান গবেষণার পর সব শেষে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে মোট ২১টি ভ্যাক্সিন ১৯২টি দেশে একাধিক ট্রায়ালের মাধ্যমে মানুষের ব্যাবহারের জন্য ছাড়পত্র পেয়েছে(সোর্স – কোভিড 19 ভ্যাক্সিন ট্রাকার ওয়েবসাইটইন্টারনেট)।

            এবার আসি আপাতত সারা বিশ্বে বহুল ব্যবহৃত কিছু ভ্যাক্সিন ও তাদের গঠন প্রণালী সম্পর্কে।

 

কোভ্যক্সিন

 

বিশ্বের সব ভ্যাক্সিনের মধ্যে ভারতের ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থা গুলির মধ্যে ভারত বায়োটেকের কোভ্যক্সিন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। যা নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের প্রতিরূপ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। এই ভ্যাক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে ভাইরাসের অনুরূপ দেখে আমাদের রক্তের শ্বেত রক্ত কণিকা সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আসল ভাইরাসের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এবং কোষের “T” cell এই প্রতিরোধের স্মৃতি বহন করে এবং ভবিষ্যতে আমাদের রোগ আক্রান্ত হওয়ার থেকে বাঁচায়। কোভ্যক্সিনের মোট তিনটি ফেজে ট্রায়ালের হয়েছিল আমাদের দেশে। প্রথম ফেজ জুলাই ২০২০তে ২টি ট্রায়ালফেজ ২তে ৩টি ট্রায়াল এবং ফেজ ৩তে ২টি ট্রায়ালে মোট ২৭,২০৪ জনের উপর ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে বাজারে সর্বসাধারণের জন্য উপলব্ধ করা হয় এই ভ্যাক্সিন(সোর্স – vaccin tracker website, Internet) এই ভ্যাক্সিন ভারতমেক্সিকোনেপাল ফিলিপিন্সজিম্বাবোয়ে সহ মোট ৯টি দেশে স্বীকৃত।

           

কোভিশিল্ড

 

   অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রোজেনেকা ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুত কোভিশিল্ড যেটি একটি নন রেপলিকেটিং ভাইরাল ভেক্টর পদ্ধতিতে তৈরী একটি ভ্যাক্সিন। কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিন প্রথম ফেজে জাপানআরবকেনিয়া সহ মোট ৭টি জায়গায় ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে। দ্বিতীয় ফেজে বিভিন্ন দেশে ১৯টি ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে বিশ্বের মোট ১২১ দেশে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এছাড়াও ভারতের ঔষধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ডের ফর্মুলায় ঔষধ তৈরী করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ট্রায়ালে মোট ২টি ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে ৪৫টি দেশে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

 

              এছাড়াও বিভিন্ন দেশের প্রস্তুত করা ভ্যাক্সিন গুলির মধ্যে রাশিয়া র প্রস্তুত স্পুটনিক ভি(Sputnik V and Sputnik Lite) যেটি একটি RNA পদ্ধতিতে তৈরী ভ্যাক্সিনজনসন অ্যান্ড জনসন এর জ্যানসিয়েন(Janssen), কাজাকাস্তান এর কোয়াজভ্যাক(QazVac) যেটি আসল ভাইরাসের প্রতিরূপ নিষ্ক্রিয় ভাইরাস পদ্ধতিতে তৈরী করা হয়েছেমডার্না(Moderna যার বিজ্ঞান সন্মত নাম mRNA1273) এই ভ্যাক্সিনটিও RNA পদ্ধতিতে তৈরী একটি ভ্যাক্সিনফাইজার ভ্যাক্সিন(Pfizer যার বিজ্ঞান সন্মত নাম BNT162b2) এটিও একটি RNA পদ্ধতিতে তৈরী ভ্যাক্সিন। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

               এছাড়াও প্রকোপের প্রথমদিকে রেমডিসিভির এর মত ঔষধ কিছুটা ফলপ্রসূ হলেও বর্তমানে করোনার ন্যাসাল অর্থাৎ নাক থেকে গ্রহণ করার মত ঔষধ ন্যাসাল ভ্যাক্সিন তৈরী করার চেষ্টা চলছে আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধরে। এছাড়াও ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ককটেল ভ্যাক্সিন ডোসেজ এর ট্রায়াল চলছে। যেখানে ভ্যাক্সিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজে দুটি ভিন্ন কোম্পানির দুটি ভিন্ন পদ্ধতিতে তৈরী ভ্যাক্সিনের ডোজ দেওয়া হবে যাতে দেহে দুই ধরনের ইমিউনিটি তৈরী হয় এবং কোষে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির স্মৃতি কোষ “T” সেলের ক্ষমতার আধিক্য বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ দীর্ঘস্থায়ী করার প্রচেষ্টা চলছে। এ সবই চলছে বর্তমান বিজ্ঞানের উন্নত গবেষণার ফলে। এবং অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে আমাদের হাতে শিশুদের কোভিড ভ্যাক্সিন চলে আসবে যার ট্রায়াল ইতিমধ্যেই ভারত সহ বিভিন্ন দেশে শুরু হয়ে গিয়েছে। এবং খুব শিগগির আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধরে বাজারে আসতে চলেছে সিঙ্গেল ডোজের কোভিড ভ্যাক্সিন। এইসবই ঘটছে আধুনিক বিজ্ঞানের সার্বিক উন্নয়নের উপর ভিত্তি করে।

         সর্বোপরি বলা যায়চিকিৎসা বিজ্ঞানযন্ত্রাংশ গবেষণাজেনেটিক সায়েন্স সহ সমস্ত বিজ্ঞানের শাখার সার্বিক উন্নয়নের উপর ভিত্তি করেই বিশ্ব জুড়ে অতিমারীর প্রকোপ ঠেকানো যাচ্ছে। কিন্তু আজও ভারতপাকিস্তানবাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিপুল জনসংখ্যাপরিকাঠামোর অভাবআর্থিক সমস্যাকম স্বাক্ষরতার হারকুসংস্কার কিছু মানুষকে ভ্যাক্সিনের থেকে বিমুখ করে দিচ্ছে। পাশাপাশি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “জুতা আবিষ্কার” কবিতার বিষয়বস্তুর মত সারা বিশ্বের চিন্তা না করে প্রতিজন যদি নিজের স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে তবেই এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে।

 

বিশেষ নিবন্ধ

মল্ল যুগের মালুটী  :  দেবন্বিতা চক্রবর্তী

অনুশীলন সমিতি  :  স্বপ্নীল বিশ্বাস

 

কবিতা

ক্যাকটাস  :  জয়দৃতা সরকার

আর কতদিন  :  সুস্থিতা দেব।

কবিতা হতে চাওনি  :  সোমনাথ চক্রবর্তী

অ্যাকোরিয়াম  :  সম্প্রীতি দে

নিষিদ্ধ  :  অমর্ত্য বিশ্বাস

 

ভিডিও

দাক্ষী সরকার

মৃগাক্ষী সরকার

পিয়ালী মন্ডল

পূজা পাল

 

পেন্টিং

দেবন্বিতা চক্রবর্তী

জয়দৃতা সরকার

সোমনাথ চক্রবর্তী

দাক্ষী সরকার

শর্মিষ্ঠা দাস

স্নেহা চক্রবর্তী

কথায় আছে বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। তাই বাঙালীর ভ্রমনের ব্যাপারে সর্বদায় উৎসাহী কিন্তু আমাদের বাংলার মধ্যে ও আশেপাশে অনেক সুন্দর ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান থাকা সত্ত্বেও আমরা তার বিশেষ খবর রাখিনা।  অজন্তা ইলোরার গুহা চিত্রে প্রাচীন ভারতের শিল্পের নিদর্শন যেমন দেখা যায় তেমনি ঐতিহাসিক যুগের জগৎ বিখ্যাত বাংলার নিজস্ব শিল্প টেরাকোটার অসাধারন কিন্তু অতি প্রাচীন নিদর্শন দেখতে গেলে চলে আসতে হবে মালুটী যার পোশাকী নাম মল্লহাটি।

 

রামপুরহাট স্টেশনে নেমে যেকোনো একটি গাড়ি ভাড়া করে দুমকা দেওঘর যাওয়ার হাইওয়ে ধরে ১৪ কিমি গেলেই বর্তমান ঝাড়খন্ডের ” মল্লহাটি ” বা “মালুটী” গ্রাম। চলে যাওয়া যাক ইতিহাসের  পাতায় ….

বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজাদের অঞ্চল মল্লহাটি হিসেবে মালুটী নাম হয়েছে। বাঁকুড়াবর্ধমানমেদিনীপুরউত্তরে পাকুড় এবং ছোট নাগপুর মালভূমির কিছু অংশ নিয়ে মল্লভূম হিসেবে পরিচিত ছিল মল্ল রাজ সাম্রাজ্য।

মালুটী গ্রামে বর্তমানে ৭২ টি মন্দির আছে। অতীতে নানকর রাজারা এখানে ১০৮ টি মন্দির নির্মান করে ছিল বলা হয়কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এগুলির রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করেফলত ৩৬ টি মন্দির ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়যা অত্যন্ত মর্মান্তিক । মন্দিরগুলিতে নির্দিষ্ট শিল্পরীতির বদলে দ্রাবিড়নাগারা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির মিশ্র শিল্পকর্মের ছাপ পাওয়া যায়। মূলত এগুলি শিবদূর্গাবিষ্ণু ও কালী মন্দির। মন্দিরগাত্রে পোড়ামাটির তথা টেরাকোটার কাজে হিন্দু পুরাণ রামায়নমহাভারতের কাহিনী চিত্রায়িত আছে। দেখে শুনে চোখ মন জুড়িয়ে যাবেই … আঙুলের স্পর্শ নিয়ে ফেরা যায় অতি প্রাচীনতার।

এখানকার অন্যতম আকর্ষণ বড়মা …অর্থাৎ মৌলাক্ষ্যি কালি মায়ের মন্দির। প্রায় ২৫০ বছর পুরোণ এই মন্দির তৈরী হয় রাজ বাহাদুর বসন্ত সিংহ রায়ের সময় যিনি ছিলেন বর্ধমানের নায়েব  স্বয়ং সাধক বামাক্ষ্যাপা ( যিনি এখানে বামদেব নামে পরিচিত) এখানে প্রথমে বাগান পরিচর্যা ও পরে পৌরহিত্য করতেন। তিনি তারাপীঠ প্রস্থানের আগে এখানে দীক্ষিত ও হন ও এই মা মৌলাক্ষ্যিকে কে তিনি বড়মা বলে ডাকেন ….। তাই বিশেষ বিশেষ উৎসবের আগে মা মৌলাক্ষ্যি কালির পুজোর পর তারাপীঠের পুজো শুরু হয়।

 

অন্য একটি তথ্য …..

বিশ্বভারতীর আর্কিওলজির অধ্যাপক শ্রী গোপালদাস মুখোপাধ্যায়ের নিজস্ব বাসভবনের নিজস্ব সংগ্রহ হিসাবে আছে প্রাচীন কিছু মুদ্রা ও লিপি। অধ্যাপকের মৃত্যুর পর ঝাড়খন্ড সরকার সেটি সংগ্রহশালা তৈরীর উদ্যোগ করছেন। তৈরী হয়ে গেলে সেটিও একটি দর্শনীয় স্থান হবে  নিঃসন্দেহে।

 

আকালীভদ্রপুর

 

রামপুরহাট থেকে NH31 ও হাইওয়ের রাস্তা দিয়ে সোজা  নলহাটি হয়ে সাঁওতাল গঞ্জ আকালিভদ্রপুর এছাড়া ও যাওয়া যায় নর্থ বেঙ্গলের যেকোনো বাসে।

আকালিভদ্রপুরের গ্রামের সৌন্দর্যে মন শান্ত হয়ে যাবে। মাঠের মধ্যে ছোট ছোট কুঁড়ে ঘরের সারির মাঝে সাঁওতালিদের দৈনন্দিন কাজের দৃশ্য ছবির মতো সুন্দর লাগবে। গ্রামের মধ্যে দিয়ে  ৩ কিমি গেলে পড়বে মহারাজ নন্দ কুমারের নিজের তৈরী ডাকাতে কালির মন্দির ….। নন্দকুমার ছিলেন ব্রিটিশ যুগের সর্বপ্রথম ফাঁসির আসামী যিনি স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিস্ংসের সাথে টক্কর নেওয়ার সাহস করেছিলেন। শ্মশানের ধারে ব্রাহ্মণী নদীর জলে স্নান সেরে এই ডাকাতে কালির পুজো দিলে মনের পাপ যায় কিনা জানা নেই তবে মন শান্ত হয় এটুকু বলা যায়।

 

শাল মহুয়া পলাশে ঘেরা সাঁওতাল পরগনায় মন মাদলের তালে তালে একটা গোটা দিন কেটে যাবে হুহু করে। সাথে ছুঁয়ে আসা হবে একটি প্রাচীন কারুকার্যময় ইতিহাস …. 

ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক ধারা ছিল। দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি গান্ধীজীর নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেসের অহিংসা আন্দোলন। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন কোনায় আমরা প্রচুর বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল বলে জানি কিন্তু আমরা এটাও দেখেছি যে এই সংগঠনগুলি স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের ইতিহাস চর্চায় প্রায়শই অবহেলিত হয়েছে। চলুন আজ জানা যাক আমাদের বঙ্গজননীর কোলে জন্ম নেওয়া এক সংগ্রামী সংগঠন এর ইতিহাস।

 

বাংলার জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে প্রতিষ্ঠিত হয় এক সমিতিযে এক বিস্ময়কর নবযুগের সূচনা করেছিল জন্মভূমির মুক্তিকল্পে। এই সমিতি বাংলার যুবসমাজকে পূর্ণ মনুষত্ব লাভের অভূতপূর্ব প্রেরণা ও নির্দেশ দিয়েছিল। এই সমিতির স্বতন্ত্র চিন্তাধারানিজস্ব কর্মপদ্ধতি পরবর্তীকালে সমগ্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ সুগম করেছিল ও স্বাধীনতা লাভের এক সম্ভাব্য লক্ষ্য সে প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমরা বাঙালিরা ঋষি অরবিন্দ ঘোষবিপিনচন্দ্র পালপুলিনবিহারী দাসমাস্টারদা সূর্য সেনের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম করে বেশ অনেকটা গর্ব অনুভব করি। তাই আমাদের জানা উচিত যে এই যুগ পুরুষদের বটবৃক্ষের শক্তিশালী শিকড় হলো শ্রী সতীশ চন্দ্র বসু ও শ্রী প্রমোদ মিত্রের দ্বারা স্থাপিত বাংলার অগ্নিযুগের সমিতি— “অনুশীলন সমিতি”—

 

ঋষি বঙ্কিম চন্দ্রের অনুশীলন তত্ত্বে শারীরিক,মানসিকনৈতিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সমন্বিত আদর্শ মানব গঠনের যে নির্দেশ আছে সেটাই হলো অনুশীলন সমিতির ভিত্তি। বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্মতত্ত্বের শেষ উপদেশ,” সকল ধর্মের উপর স্বদেশপ্রীতিইহা বিস্মৃত হইও না”—যা সমিতির মূল প্রেরণা যুগিয়েছিল।

 

১৯০২ সালে দোল পূর্ণিমার দিন সোমবার কলকাতায় প্রথম অনুশীলন সমিতি স্থাপিত হয়। রিদুয়ান নিকটবর্তী ২১ নম্বর মদন মিত্র লেনে ইহার ব্যান ক্ষেত্র এবং তার সন্নিকটে একটি ছোট বাড়িতে সমিতির কার্যালয় ছিল। পরের ১৯০৫ সালে ওই দপ্তর ৪৯ নং কর্নওয়ালিস স্ট্রীটে স্থানান্তরিত হয়।

 

তখনকার পটভূমিকায় দেখা যায় সমগ্র জাতি বৈদেশিক শাসনের নিষ্পেষণে মৃতপ্রায়ভারতীয় কৃষ্টি ও সভ্যতা বিনষ্টপ্রায়জাতীয় সত্তা লুপ্তপ্রায়। এই বিরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে অনুশীলন সমিতি কংসের কারাগারে দেবকী নন্দন এর মত বৃদ্ধি পেতে লাগল। প্রত্যেক সভায় গীতার সেই চিরন্তন ভগবত বাক্য স্মরণ করত এবং অধিবেশন সমূহে সমবেতভাবে চন্ডীমন্ত্র আবৃত্তি করা হতো। সমিতি ভাবতো ভারতীয় কৃষির চরম সামাজিক আদর্শ এক ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠা। শ্রীকৃষ্ণঅশোকশিবাজী প্রভৃতি আমাদের পূর্বপুরুষের প্রদর্শিত পথে বাঙালি তার স্বাধীনতার প্রেরণা পেয়েছিল। সদস্যদের একমাত্র তপস্যা ছিল,”হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যোমে মহীম্।”

 

১৯০৫ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট বাঙালি জাতির অসাধারণ সংগঠন শক্তিও প্রতিভা বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বঙ্গদেশকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব করলো। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ব্রিটিশের এই ভয়ের মূল কারণ ছিল এই সমিতি।

 

১৯০৫ সালের মাঝামাঝি সমিতির খিদিরপুর সরকার প্রধান শিক্ষাব্রতী আশুতোষ ঘোষ প্রতাপাদিত্য উৎসব উপলক্ষে সর্বপ্রথম বন্দেমাতরম ধনী প্রচার করেন এবং তারপর থেকেই সমগ্র জাতি এবং দেশ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়।

 

এটাও উল্লেখযোগ্য যেঅনুশীলন সমিতিি কলকাতায় সর্বপ্রথম সার্বজনীন দুর্গাপূজা প্রবর্তন করে। এই সমিতির বিস্মৃত ইতিহাস এখানে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই সংক্ষেপে যেটুকু পারলাম সেইটুকুই আপনাদের কাছে উপস্থাপন করলাম। শেষে বঙ্গদেশে বিপ্লববাদ এর প্রথম ও প্রধান প্রতিষ্ঠান অনুশীলন সমিতির এক অক্ষয় মন্ত্র আপনাদের কাছে প্রেরণ করলাম—

                          —”জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী”—

আমার পাশের ফ্ল্যাটের জানালায়

একটা ছোট ক্যাকটাস রাখা আছে।

রোজ সকালে দুটো হাত ওকে আদর করে ।

কেন জানিনা আমার মনে হয় ,

গল্পও করে বোধহয় খানিক—

আমি মুখ দেখতে পারিনা

কল্পনা করি মাত্র।

বিকেল হলেই ওই ঘরের আলো জ্বলে ওঠে ;

আমার মেঘলা-মনখারাপ করা অন্ধকার সন্ধ্যায়

ওরা জোনাকি।

আমি ভালোবেসে ফেলি কল্পনাকে —

এবারের পুজোর ছুটি কাটিয়ে এসে দেখি

ক্যাকটাসটা নেই ।

আলো জ্বলে না রোজ বিকেলে;

শুধু কাঁটাগুলো আর আমি পড়ে আছি…

কত দিন সে দেয়নি সাড়া

 খোলা মাঠের সবুজ ডাকে,

কত দিন সে পায়নি দেখা

 চেনা বন্ধুর পথের বাঁকে ।

   

কতদিন সে যায়নি স্কুলে

       গায় নি গান প্রার্থনাতে,

কতদিন সে ছুটির পরে

 দোলেনি প্রিয় দোলনাটাতে।     

 

কতদিন সে থাকবে আর

 ছোট্ট একটা ঘরের কোনে ?

অতিমারী চোখ রাঙিয়ে

 আর কতদিন থাকবে মনে?

 

লুকোচুরিলাটাইসুতো

   আর কতদিন থাকবে দূরে ?

শিশু মহারাজ ক্লান্ত খুবই,

     থাকবে না সে অন্তঃপুরে।

 

রাজত্ব তার জগৎ জোড়া,

    সুর ভরা ওই নতুন প্রাণে ।

  মাতাতে ভুবন চায় সে রোজ,

   নিজের কথানিজের গানে।

 

আসুক ফিরে সুস্থ সকাল,

   ফিরুক শিশু শৈশবে।

বিশ্বজুড়ে ছড়াক হাসি,

    নব কিশলয়ের কল্লোলে।

তুমি মুছে যাওয়া কবির

চুয়াল্লিশতম প্রেম।

তবুও তোমার লজ্জা করে না।

কারণতুমি কবিকে নয়

ভালবেসেছিলে তার কবিতাকে।

তুমি তার কাছে তার প্রেমিকা নয়,

তুমি তার কাছে তার উপন্যাস হতে চেয়েছো,

 

তুমি তার কাছে

রক্ত মাংসের নারী হতে চাওনি,

তুমি তার কাছে হতে চেয়েছো

কাটখোট্টাগোদা ভাষার পংক্তি।

 

তুমি কবির হাতে তোমার অষ্টাদশী নরম পিঠে

কয়েকটি বর্ণমালার বাক্য লিখতে চাওনি।

তুমি বারবার কবির শক্ত বাক্যের

বলিষ্ঠ আঁচড়ে তার কাছে তার উপন্যাস হতে চেয়েছো।

 

তুমি কখনওই কবির কাছে

তার কবিতা হতে চাওনি।

তুমি তার কাছে বরাবর তার জীবনের

উত্থান পতনের উপন্যাস হতে চেয়েছো।

কারণ কবির জীবনে হাজারো প্রেম আসে।

বসন্তও আসে সহস্র।

চলেও যায় নিমেষে

কিন্তু উপন্যাস?

তারা থেকে যায় বরাবর।

এক টুকরো সমাজ,

একটা ছোট অ্যাকোরিয়ামের মতো।

সোনালীলাল নীল সব মাছ,

ঘুরে বেড়ায় যত।

সুন্দরমনোহর।

টলটলে স্বচ্ছ জল,

কিছুটা স্বপ্নের মতো।

যেন স্বপ্ন পুরী থেকে উঠে এসেছে।

রোজ সে জল বদলানো হয়।

মাছেরা তাতে আয়েশ করে,

স্বাস নেই প্রাণ ভরে।

স্বচ্ছ কাচের বাইরের জগৎটা তারা দেখে,

রঙিন আবেগে,

কাচের বাইরে থেকে ছুটে আসা প্রশংসা মেখে।

রোজ বাড়ির ছেলেটা ছুটে আসে,

মাছ গুলোর পাশে বসে।

এক এক জনের নামে,

তাদের ভালোবাসা বোনা।

তুই নীলাতুই পলাশতুই হলি সোনা।

এক টুকরো এই স্বপ্নপুরীর দেয়ালের ভেতর,

তাদের যেন স্বর্গীয় সুখের আনাগোনা।

অ্যাকোরিয়ামের পাশেই একটা কাঠের তাক,

একদিন ছেলেটা বাজার থেকে,

তাদের জন্যে এক নতুন সঙ্গী আনে।

তার জায়গা হয় সেই তাকের ওপর।

সামান্য জলে খাবি খাচ্ছে সে,

তার আকৃতি বিশাল।

নীলাপলাশসোনা একেবারে মুগ্ধ।

তার বিশালত্ব দেখে তারা বাক রুদ্ধ।

সোনা তো বলেই ফেলে,

“তোমাকে দেখে হিংসা হচ্ছে।

কি ভাগ্য করেই না তুমি এসেছো।”

বড় মাছটা হেসে বলে,

“তোমরা যে মূর্খের স্বর্গে বাস করছো।”

“আমার সাথে তোমাদের ভাগ্যের তুলনা?

তোমরা যেই এক টুকরো সমাজে বাস করো,

তার চার দেয়ালের বাইরে,

একটা বীভৎ সমাজ আছে।

প্রানের বুভুক্ষু।

সেই বিশাল সমাজটার পদে পদে আছে কাঁটা।

বিঁধে গেলেই রক্তা রক্তি।”

নীলা,পলাশ,সোনা,

সেই বিশাল মাছের কথা ঠিক বোঝেনা।

হুঁশ ফেরে,

যখন খাবার টেবিলে ভাতের পাতে,

সেই বিশাল শরীরটা নিথর হয়ে পড়ে থাকে,

এক বাটি ঝোল,

আর সাঁতরে ফেরা কয়েক টুকরো আলুর সাথে।

আর সেই আদরের ডাকনাম দেওয়া ছেলেটা!

সে তো এখন খাওয়ায় মজে,

দ্বিপ্রহরের ভুঁড়ি ভোজে।

আমাদের সমাজটাও এইরকম।

কিছু মানুষ চোখ বন্ধ করে,

বসে আছে তাদের মিথ্যে দিয়ে বোনা,

চার দেয়ালের ভেতর।

স্বচ্ছ কাচের দেয়াল।

বাইরের ভয়াবহতার সামান্য আঁচ যদি তারা পেত,

তাহলে বুঝতো,

তাদের ক্ষুদ্র চার দেয়ালের বাইরেও আছে একটা সমাজ,

একটা বিশাল সমাজ।

যেখানে বেঁচে থাকা রীতিমতো একটা লড়াই।

কাচের ভেতর থেকে দেখতে পাওয়া,

ওই সুন্দর লাল আবির,

আদতে হয়তো রক্ত।

কে বলতে পারে?

পর্দাটা একটু আড়াল কোরো

নিশীথে

চাঁদের আলোয় ভরবে যেখানে পূর্ণিমা

 

অমাবস্যা গ্রাস করা শরীরে

গাঢ়ো কালো অন্ধকারের ঝাঁ

 

ঝিঁ ঝিঁ অসংখ্য ঝিঁ ঝিঁ…

নিষিদ্ধ মনে কাটেনি তবু সিক্ততা ,

কুৎসা আর সনার কোলাজে

 

পর্দাটা একটু আড়াল কোরো

নিশীথে

বাতিল নোট এখনো যেখানে সচল ।

 

পুতুল সাজে অস্পষ্ট শরীরী ঘা ,

ঘুঙুরের আর্তনাদ…

 

ভীষণ ব্যস্ত শহর

নিংড়ে ফেলেছে নেশা

নিষিদ্ধ পাড়ার নিষিদ্ধ বাড়ির আলোয় ,

 

পর্দাটা একটু আড়াল কোরো

নিশীথে

যেখানে আজও পুলিশি শাসন চলে…

কবিতা 

জয়দৃতা সরকার

সোমনাথ চক্রবর্তী

দেবন্বীতা চক্রবর্তী

 সম্প্রীতি দে

সুস্থিতা দেব

 

মুক্তগদ্য

মাথা মোটার দল-  অন্বেষা

 

চিত্র

সুদর্শনা হালদার

সৌমিলী প্রামানিক

স্নেহা চক্রবর্তী

হিমোলী হাজরা

দাক্ষী সরকার

দেবম্বীতা চক্রবর্তী

 

ভিডিও

শ্রেয়সী ভৌমিক

চান্দ্রেয়ী মুখার্জী

অঙ্কিতা চ্যাটার্জী

অপরাজিতা মুখার্জী

দেবলীনা পাল

শর্মিষ্ঠা দাস

ওই সেই একটাই পথএকটাই গতি ।

কিছু ভুল থেকে যায়যাতায়াতের পথে।

কিছু ফুল চোখে পড়ে না।

ঝরে পড়া পাতায় নজর দিতে গিয়ে,

পায়ের তলে পিষে যায় কিছু ঘাস।

এতে দুঃখের তো কিছু নেই ,

ওদের জন্ম তো এই কারণেই।

দীর্ঘশ্বাসসান্তনা শুধু।

তারপর হঠাৎ একটা বাঁক আসে,

এখানে রাস্তা কঠিন-কংক্রিট।

কিন্তু ভুল থেকেই যায়।

ঠেকে যাই কততবু শিখি না কিছুই।

পথ এগিয়ে যায় আমিও এগোই।

তবুও একদিন পথ শেষ হয়সামনেই খাদ।

পা থেমে যায়পিছনে তাকাই,

ভুলগুলো বলেমনে পড়ে সেদিন ?

একটা গলি ছিল বাঁদিকে,চোখে পড়েনি।

একটা বেগুনি ফুল ছিল,চোখে পড়েনি।

কী জানি হয়তো কিছু মানুষও ছিল,শুধু চোখে পড়েনি।

আলসে দুপুর একটু উপুর,

একটু গরম তাপ…

চল বন্ধু ছাদের কোনে,

নিশ্চুপে আলাপ…

 

ভর দুপুরে বন্ধু পাশে,

হরেক রকম গান…

বন্ধু আমার গোধূলি বেলায়,

আবির মেঘে স্নান…

 

খুনসুটি আর ঝগড়াঝাঁটি,

চলতে থাকে মাঠে…

কান্নাকাটি রান্না-বাটি

সূয্যি বসে পাটে….

 

সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে,

মন কেমনের গান,

ছুট্টে যাব তোর কুটিরে,

ভালোবাসার টান…

 

সেসব অনেক আগের কথা,

গল্প আছে কত….

এপার-ওপার পাড় ভেঙেছে!

দিন গিয়েছে যত…

 

দিন ঠেকেছে কৈশোরে,

বেড়েছে মাথার চাপ…

উথাল পাথাল বন্ধুত্ব,

আজ হারিয়েছে উত্তাপ…

 

সাদা-কালোয় দিন চলে যায়,

একলা শুয়ে থাকি খাটে…

ঘুম উড়ে যায় শুধু মনে হয় যদি ফিরতে পারি

 সেই ছোট্ট বেলার মাঠে…..

কোনো একদিন হবে এমন ,

বসবে পাখির সারি দূরের নীল রঙ

গাছের শাখায়

বসে থাকা নির্জনেদুকূল উপচে পড়া ঢেউ এর তরঙ্গে অতিবাহিত

 এক নিঃসঙ্গতা ।

পৃথিবী থাকবে এক কোণে

আর তার যত কোলাহল

তুচ্ছ কাজের বেড়াজাল পেরিয়ে

ঝরে পড়া পাতা আর সমুদ্র গর্জনে

সময় চিরস্থির ।

আত্মগোপনে আমন্ত্রণ জানাকপ্রকৃতির শোভা

আর মোলায়েম স্পর্শে ভাসা ভাসা দৃষ্টির মাঝে

অতল এক গভীর তার বহিঃপ্রকাশ,

দুর্লভ প্রেমের মগ্নতায়

হবে সৃষ্টিকর্তার প্রসাদ,

দুটি মনের মিলনে সাক্ষ্য বহুক

নীলিমার নীল ।

সোনার হরিণ হাতছানি দেয়,গন্ডি পেরোনো মানা,

তৃষ্ণার্ত মহিরুহে মরীচিকার আনাগোনা।

সৌন্দর্যে মত্ত যুগেকাচ দামি বেশি হায়!

বেলা পরে আসে,কয়লার অভাবে কচি পেট কেঁদে যায়।

চাঁদের রূপে অপূর্ব ওই কলঙ্কের ছোঁয়া,

ভালো লাগে কৃষ্ণকলির কাজল কোলের মায়া!

কোনো এক ভোরে হঠাৎ দেখবো চোখ মেলে,

কয়লার চেয়ে হীরে দামি যাবেই সবাই ভুলে।

বাক্স ভরা হীরে গুলো কয়লা হয় জ্বলবে উঠে,

সেই আগুনে হাড়ি চেপে দু মুঠো ভাত পড়বে পেটে।

 

সেদিন সোনায় মোড়া সংসার হবে,সোনায় ভরা নয়!

প্রাচুর্যে আর চাপা পড়বেনা শত কান্নার দায়!

অর্থ যেদিন ফিকে হয় গরীব মেধার পাশে,

সেদিন কর্মজীবী মানুষরাই শেষ হাসি হাসে!

রইলাম আজ থেকে এক নতুন শুরুর অপেক্ষায়,

প্রকৃত অর্থে দূষণ মুক্ত এক সমাজের অধ্যায়!

অলস আর কর্মঠদের ন্যায্য বিচার হবে।

থাকবেনা কোনো আজব প্রদীপ সমাজের অন্ধকূপে।

ভাঙবে প্রদীপ বেরোবেনা জিন,

কুঁড়ে আলাদিনরা ঠকবে সেদিন!

অশ্বত্থ গাছের মাথায় জোনাকিদের মেলা,

জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোয় হাসছে সকল ধরা,

আকাশের মেঘনদীতে ভাসছে এক তরণী,

মাঝি নেইপাল নেইউজ্জ্বল কনক – বরণি।

কী অপূর্ব সে দৃশ্য   নয়ন মনো-লোভা!

অসীম গগনে একা শশী বাড়িয়েছে রাতের শোভা। 

হাতে একটা স্মার্ট ফোন আর তাতেই এক মুঠোয় ধরে যায় গোটা পৃথিবী।আমাদের চেনা পরিচিত মিডিয়ার ঝলকানিতে পেয়েছি বারবার ডিজিটাল ইন্ডিয়ার হাত ধরে আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক হয়ে ওঠার ছাপ।আর সেই জমকালো অত্যাধুনিকতার অন্তরালেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপেক্ষিত দলের গল্পেরা,যারা সংখ্যায় বিপুল কিন্তু ক্ষমতার দ্বারা বঞ্চিত।আর যখন শিক্ষাযা আমাদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে তা হয়ে যায় মুষ্টিমেয় ক্ষমতার অধিকারতখন ব্যাপারটা ঠিক বর্তমানে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার মতো হয়ে দাঁড়ায়। আর যেখানেই হোক ভারতের মতো দেশে কি অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা সবার জন্য সম্ভবযে দেশে বেশীর ভাগ মানুষ ই দিন আনা দিনখাওয়া সেই দেশে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা কি সত্যিই সম্ভব!!

আচ্ছা এবার আমি আমার পুরনো স্কুল এর কথাই বলি। আমি টেন্থ স্ট্যান্ডার্ড পর্যন্ত যে স্কুল এ পড়তাম সেই স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রীরাই ক্লাস ফাইভ থেকে নিজেরটা নিজেরাই চালানোর চেষ্টা করতো। তাদের মধ্যে কেউ লোকের বাড়ির পরিচারিকার কাজকেউবা হস্তশিল্পের কাজ আবার কেউ কেউ সুপারি কাটার কাজ করে নিজের পড়াশোনাও চালাতো আবার সংসারেরও ঘানি টানতো। সরকারি স্কুলেই তো পড়তাম তাও বুকলিস্ট এর বাড়তি কয়েকটা বই কেনার সামর্থ পর্যন্ত ও তাদের ছিল না। স্কুলের টিচাররা প্রজেক্ট এর জন্যে কিংবা পড়াশোনার জন্য যখন নতুন নতুন সরঞ্জামজিনিসপত্র কিনতে বলতো তাদের মুখে চোখে আতঙ্ক ভর করতো। যারা দু বেলা দুমুঠো ভাত ই ঠিকঠাক জোগাড় করতে হিমশিম খায় তার ওপর বছর বছর এই খরচ করা তাদের কাছে দুঃসাধ্য ঠেকত। হ্যাঁ তাদের চোখে আমি শিক্ষা অর্জনের জন্য আনন্দ দেখি নি এই ভারী শিক্ষার নানারকম ডিমান্ড এর জন্য ভয় দেখেছি। ক্লাস ফাইভ এ যে বন্ধুর পাশে বসে ক্লাস করেছি ক্লাস সিক্স এ উঠে দেখেছি তাকে আমাদেরই স্কুল এ তার ঠাকুমার সাথে স্কুলের বাথরুম পরিষ্কারের কাজ করতে। আমার বন্ধু আমিমার চোখে জল দেখেছিযখন সে সারাদিন সুপারি কাটাতে কাটতে হাতের ছাল ছিলে যাওয়ার পর স্কুলে এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়তো আর সেই অপরাধে টিচার দের শাস্তি ভোগ করতো। আমার আরেক বন্ধু সহিদার চোখে দেখেছিলাম প্রবল জেদ পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছা। কিন্তু তাকেও ওই ছোট্ট বয়সে বিয়ে করতে হয়েছিল নাকি পারিবারিক অর্থনৈতিক চাপে। 

       বিশ্বাস করুন এরা সকলেই পড়তে চাইতো। পড়ার জন্য লড়তেও চেয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার ভার এতো যে তারা দুমড়ে মুচড়ে গেলোহাঁপিয়ে গেলো অবশেষে স্কুল ছেড়ে দিলো। আর তাতেই আমি আপনি সবাই ব্যঙ্গ করে বলে উঠি মাথা মোটার দল আর দেশ শুদ্দু সমস্ত সরকারি স্কুল গুলোর অবস্থাই হয়তো আমার স্কুল এ সমান। এই রকম অর্থনৈতিক  অবস্থায় বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী দের কাছে স্মার্ট ফোন তো দূরের কথা কালকের জন্যে পেটের ভাত জোগাড় করার ভাবনাই হয়ে ওঠে প্রধান। যেখানে বেশির ভাগ ছেলেমেয়েরা স্কুল এ আসে তাদের ভুক মেটানোর জন্য মিডডেমিল খেতেএমনকি তার কিছুটা তারা বাড়িতেও নিয়ে যায় হয়তো তার ছোট ভাই বোন কে খাওয়ানোর জন্য। সেই ভারতে দাঁড়িয়ে অনলাইন শিক্ষার আলো বাস্তবতার অনেক বাইরে। আমি মূলত বড় হয়েছি দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক মফরসলে। এই অঞ্চলের চারপাশে যে গ্রাম গুলো আছে সেখানে সত্যি এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা সবার পক্ষে ভোগ করার সুযোগ কম। আর এই দেশব্যাপী লক ডাউন এ তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো ভেঙ্গে পড়েছে। সম্পূর্ণ ত্রাণের ভরসায় যাহোক করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে । আর অনেকেই সেই লড়াই এ টিকতে না পেরে আত্মহত্যার ও শিকার হচ্ছে পরিবার কে নিয়ে। আর এই পরিবারের ছেলেমেয়েরাও স্কুলে পরে। জি ডি বিড়লাসেন্ট জেভিয়ার্স এর নবাব জাদাদের শিক্ষার অধিকারের থেকে এই সব খেটে খাওয়া বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অধিকার কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু এই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের থেকে শিক্ষার স্বপ্নকেই কেড়ে নিচ্ছে তা নয় স্কুলের গন্ডি পেরোনোর সুযোগকেও ধূলিসাৎ করছে।একের পর এক ছাত্র ছাত্রী রা বঞ্চনার ভারে আত্মহত্যা ও পর্যন্ত করছে। এই খবর আমরা পেয়েছি। এ আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। এক ভয়ংকর বিভেদ তৈরি হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা কে কেন্দ্র করে। এক চূড়ান্ত অসাম্যের মধ্যে দিয়ে চলেছে আমাদের প্রজন্ম। যেখানে শিক্ষার অধিকার একমাত্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে যার পকেটে পয়সা আছে তার। আর এই অনলাইন শিক্ষা সেই পথ কেই প্রশস্থ করছে। এমনকি এই অনলাইনের শিক্ষার মাধ্যমে  কিছুই শেখা যায় না। সেই পরিকাঠামো ও নেই। আর যদি থেকেও থাকে সেটা ওই সরকারি স্কুলের বেশির ভাগ খেটে খাওয়া বাড়ির ছেলেমেয়েদের আয়ত্তের বাইরে তার ফল ভোগ করা। ভুক্তভুগি হবে বেশির ভাগ গ্রামের গরিব ছেলেমেয়েরা। এই রকম অবস্থায় দাঁড়িয়ে অনলাইন শিক্ষা কখনোই বিকল্প হতে পারে না।

আর এইভাবেই বঞ্চনার ভার বাড়তে থাকবে,অসাম্য গাঢ় হতেই থাকবে।আমরা তো শুধুই ভুক্তভুগি নির্বাক জনতা মাত্র।