আমরা চাই সাহিত্য সংস্কৃতির দুনিয়ায় একটি একত্রিত অঙ্গন। প্রথম থেকেই তাই অঙ্কুরোদ্গম সবাইকে বেঁধে বেঁধে থাকার কথা বলে আসছে। জলপাইগুড়ি অঙ্কুরোদ্গম-এর দায়িত্বে থেকে এর প্রয়োজনীয়তাকে বিশেষ ভাবে অনুভব করছি। অন্তত এই অঙ্গনে যাঁরা বুক উঁচু করে বেড়াচ্ছেন তাঁদের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব আরও বেশি করে বর্তায়। নাহলে এক অন্তরসার শূন্যতা শুধুমাত্র খালি কলসির মতো আওয়াজ হয়ে থাকবে। অঙ্কুরোদ্গম-এর মঞ্চ থেকে আমরা বলি, জেলার ধ্রুপদী ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সবাই আসুন এক সঙ্গে হাত মেলাই।
একটা ছোট্টো উদাহরণ দিয়ে বলি, আমাদের গর্বের রবীন্দ্রভবনকে এখন কেমন লাগে তা আর কারুর অজানা নয়। এর জীর্ণতা আমাদের লজ্জা। এভাবেই কার্যত ভুতুড়ে হয়ে উঠছে একসময় জলপাইগুড়ির সাহিত্য সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্রগুলি। এসবের পুনোরুদ্ধারের জন্য কেন আমরা এক জায়গায় আসতে পারছি না, তা বড়োই রহস্যের। এমন তো নয়, আমরা শক্তিহীন। যে কলরব উঠেছিল সার্কিটবেঞ্চ নিয়ে, কোথায় গেল সেই যৌথ শক্তি ? আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আসুন সবাই, একযোগে আমাদের ঐতিহ্য পুনোরুদ্ধারে নামি। ভুলে গেলে চলবে না, কলকাতার সমসাময়িক এখানকার নাট্যচর্চা। অথচ উপযুক্ত প্রেক্ষাগৃহের অভাবে তার উজ্জ্বলতা এখন তলানিতে। আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির অভাব ছিল না কোনোদিন। এই অঙ্গনে বহু যশস্বীকে পেয়েছি আমরা। তার উত্তরাধিকার আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
আমরা চাই, বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির মূলস্রোতে জলপাইগুড়ির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে। তাই জলপাগুড়ি অঙ্কুরোদ্গম জেলার সমস্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগীদের কাছে আমাদের আন্তরিক আহ্বান, আসুন, একসঙ্গে এগিয়ে চলি। বাংলার সমৃদ্ধ সম্পদ নিয়ে গর্ব করি।

লেখা

উমেশ শর্মা

পূর্ণ প্রভা বর্মন

মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

গৌতম গুহ রায়

তনুশ্রী পাল

অরুণ কুমার

রেবা সরকার

নির্মাল্য ঘোষ

রঙ্গন রায়

জিকেল দে

পার্থসারথী লাহিড়ী

প্রশান্ত নাথ চৌধুরী

সবিতা সরকার

সঞ্চালী রায়

পারমিতা কর বিশ্বাস

মাধবী তালুকদার

প্রসুন মজুমদার

শৈবাল সরকার

সুশান্ত দাশ

প্রসেনজিৎ চৌধুরী

প্রসেনজিৎ রায়

তপু দেব সাহা

শ্রীরাজীব

মিতা ভৌমিক

সীমা সাহা

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

দীপালি সাহা

শান্তা চ্যাটার্জি

তন্দ্রা চক্রবর্তী

দিলীপ রায়

অভ্র সরকার

শিখা বসু পাল

স্বপন দাস

সমীরণ চৌধুরী

শশাঙ্কশেখর পাল

কমল ভট্টাচার্য

শেখর কর

দেবযানী সেনগুপ্ত

গীতা রায় সরকার

মুনমুন ভৌমিক দাম

 

ভিডিও

শৌর্যা সাহা

অভিনন্দন বোস

ঈশিতা লাহিড়ী

তমজিৎ দেবনাথ

গীতা মুখার্জী

তিলাঞ্জলি ব্যানার্জী

মৌসুমী সরকার

স্বস্তিকা হাজরা

দীপালি সেন

কণিকা দেবনাথ

মিঠু বসু

নির্মল কুমার ঘোষ

মধুস্মিতা সরকার

আরতি রায় 

প্রমীলা চ্যাটার্জী

রাজবাড়িতে কম্মো আমার রাজার ঘরে চিলতে ঘরে টেবিল পাতা অনাদরে টেবিল বাতির আলোর নিচে ডাই করা হিসেবি খাতা স্তুপাকারে আলো গেলে বসে থাকি নিকষকালো অন্ধকারে ‌মশার বসা টের পাই কানেপিঠেনাকেঘাড়ে সব কথাতে মাথা নেড়ে যুক্তি বোঝাই শরীরটারে ‌

    রাজা তো নেই রাজবাড়িতেমন্ত্রী উজির চাকর বাকর রাজার ব্যবসা নেইচাকরি নেইজমানো নেই অনেক টাকাদিনে দিনে দিন গুজরানকেবল আশা নিয়ে বেঁচে থাকা আকাশ জুড়ে স্মৃতির হানায় সকালসন্ধে মহা ফাঁপর রাজার ঘরের বংশধররা শুকনো নদীর বালি পাথর

     ইতিহাসটা লিখবো বলে আজ বসেছি কলম হাতে ‌রাজার ঘরে গল্প শুনি দিনে রাতে চাটা পেলে চাকুম চুকুম দেঁতো হাসি গপ্পে পেলে কলম তুলে কাশতে থাকি বিষম কাশি আমাকে হাসতে দেখে তখন তিনি থাকেন খলবলাতে বলেন আসবে সুদিন নেই বেশিদিনএই হেমন্তে

       সেদিন বললেন লিখছেন কেমন আনুন দেখি খাতাখানি দেখিকার কথা লিখেছেন বসেজন আছেন রাজা রানী ও মা এ যে দেখছি শুধু তথ্য কথাতত্ত্ব কথা দেয়ালে কান পাতলে শুনতে পান না কি হাজারো দুঃখ ব্যথা রাজার খাটে শুয়ে আছেন কোন রমণী দেখে তো মনে হয় উনি নন রাজ ঘরনী

      বললেম আমি, রাজার খাটে ঘুমিয়ে থাকেন দেশের রাজা অন্য নারীর ওই খাটেতে ঘুমানোটা নয়কো সোজা রাজা যাবেন ঘুরে ঘুরে এ ঘর ও ঘর কতো এভাবেই তো বংশধররা জন্মাবেন কতো শত রাজার খাট তো ফাঁকাই থাকেসোনার পালঙ্ক সোনার খাঁচা ভয়ে ভয়ে দিন গুজরান ভয়কে নিয়ে বেঁচে থাকা

   রাজবাড়িতে কম্মো আমার রাজার ঘরে নিজের ঘরে বৌটি হাঁপায় কঠিন জ্বরে ছোট ছেলে গেল চলে ওষুধ নেইপথ্য নেই ইতিহাস লিখছি বসে রাজামশায়ের সন্নিকটেই রাজার ছেলে পয়সা পেলে ব্যবসা ধরে ঘরে বসে ফরসা হাতে কালো চায়ের প্যাকেট করে

     পুজো পার্বণকেত্তন ভজন মাঝে মধ্যেই রাজবাড়িতে চালেডালে খিচুড়ি ফোটে রাজহাড়িতে ধর্মে কর্মে মতি বেশিএতে যদি ভাগ্য ফেরে জমি জিরেত সব কিছুই তো সরকারে নিয়েছে কেড়ে আমি ভাবি লিখবো সে সব আমার খাতায় মিথ আর ঘটনার সত্য মিথ্যে পাতায় পাতায়

       আমার ব্যথাআমার কথা সব হারাদের মাঝে তাদের ছবি পাই না খুঁজি কথায় কাজে সুইচ জ্বেলেও এমন তথ্য পাই না খুঁজে রাজবাড়িতে কম্মো করা নয়কো সোজা আমার কাছে ঘাম ঝরিয়ে নিত্যদিন মাথা নিচু সবার কাছে

উনবিংশ শতাব্দীর শেষে

বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে

নবীন সভ্যতা উদিত হলভারতের ভূমিতে

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে

পাশ্চাত্য নারীরা মত্ত মনোহরণে

ভালোবাসার ইন্দ্রজালে

ভারতের নারীদের কত সম্মান

সতীত্ব ও মাতৃত্ব বোধে

তাই পুজিত হন ঘরে ঘরে

 

কত যুগ ধরে এভাবেই এসেছে চলি

সত্যত্রেতাদ্বাপরকলি

রামচন্দ্র রঘুকুলপতির,সীতাদেবী আদর্শ ঘরনি

শ্রীকৃষ্ণ আর রাধিকার পাই

অলৌকিক মিলনবার্তার কাহিনি

 

বুদ্ধদেব আর যশোধরা

শ্রীচৈতন্য আর বিষ্ণুপ্রিয়া

শ্রীরামকৃষ্ণ করেছেন কত আরাধনা

ব্রহ্মরূপিনী আদ্যাশক্তি থাকতে পারে না

ওম নিলেন তাই মা সারদা

 

শ্রী মা সারদা দুহিতা ভগিনী বধুপত্নী

সতী স্বাদ্ধী গৃহিনী

ঘরে ঘরে পুজিতা হন মাতৃজননী

 

জয়রাম বাটির কি মহিমা

নব সভ্যতাও যায় নি দেখা

ক্ষুদ্রপল্লীটি আজ পীঠস্থান

কেমনে বুঝিব ইহার মহিমা

 

শ্রীকৃষ্ণ জন্ম কংস কারাগারে

বাল্যকাল কেটেছে গোপ জন মাঝে

যীশু খৃষ্টের প্রথম কান্না

ঝংকারিত হল অশ্বালয়ে

সুত্রধর গৃহ হলেন পালিত

একদিন ব‍্যবহৃত হতে হতে বাতাবির গাছে শুকনো পাতায়

দোয়েল হব। নেমে যাবে ঈশ্বরের সিঁড়ি ধরে বিন্দু জল…

ধারাভাষ‍্য জীবনের মুছে নিয়ে দুরন্ত সকাল দুপুরের দিকে

হেঁটে যায় রথ। ঘর্ঘর শব্দ ওঠে পাতার ভিতর

অন্তমিলে কবিতা নির্যাস আর সুরটুকু মেখে নিয়ে

পাতার কম্পন ওঠে শরীরী বিলাসে। পদপেষণের শব্দ

শুনিগভীর গম্ভীর ছায়া বাকি জীবন। আমার ই বদল

ভিতরে চুরমুড় ভাঙার শব্দ। পঞ্জরে অস্থি আলোড়ন

গোপনেউৎসব ভীড়ে একা এবং একা হতে হতে

নি:শ্বাস শব্দের কাছে ধীর নদী প্রবাহে নৌকো

এখনো দোলে। ভরা হল শূন‍্য কলস বুকের বায়োস্কোপে

চিতার আগুনে আমি দেখি আমার

ঝলসে যাওয়া জিহ্বার রস,

সেই লালা রসে নিভন্ত আগুন

আর পুড়ে যাওয়া অস্থি ভষ্মর সাদা

বাতাসে ভাসতে ভাসতে

আমার মিথ্যা যাপনের কালো অক্ষরগুলো

গিলে নিচ্ছে

সাদা ও কালো সেই মেঘ মেঘ বাতাসে

আমার সঙ্গেই আমার দ্বিতীয় মোলাকাত

 

চিতাকাঠের থেকে কিছুটা দূরে পড়েছিলো

আমারই অব্যবহৃত সবুজ পাতার মুকুট

একটা বরফ মাখা হিংস্র জুতো

সেগুলো নিয়ে খেলতে খেলতে

আকাশে ছুড়ে দিলে

দেখিআমারই অব্যবহৃত মাথাটা

শূন্যে থেকে নেমে আসছে

 

পতনের কোনো গান হয়না,

কেবল মিথ্যা শব্দ শোনা যায়

কাছে যেতে

উঠোন পেরোতে হয়

আমি তো এজন্মে পারিনি !

নেশাখোর গোলাম এমন

তর্জনী নির্দেশে চলে

ফুরিয়েছে আয়ুর আয়োজনএখন দুহাত পেতে দাঁড়িয়েছি বৃক্ষটির তলে 

অন্ধচোখকাজলের মায়া নেই  শুধু দ্যাখো

অমাবস্যা আঁকা !

সুর নেইলয় নেইস্বরহীন কবন্ধ জিরাফ

আমার উঠোন নেইদিগন্তে দেওয়াল

তবু্ও তো যেতে চাই !

যেতেও পারছি না

অবশেষে অসীমানন্দ শুরু করে লিখেই ফেললেন

একটা মানুষকে কেন্দ্র করে তাঁর প্রভাবব্যক্তি সমাজ রাজনীতি সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কি পড়তে পারে তার ওপর ভিত্তি করে আস্ত একটা স্পষ্ট ছবি।

তার আগে একটু বলে রাখি এই অসীমানন্দ হল আমাদের সমাজের এক চলন্ত নারদরূপী এক তীক্ষ্ণ বিচক্ষণধারী এক মসীধারী বা সাংবাদিক। অনেক কিছু তার দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। তিনি তার প্রতিবেদনে জনৈক ব্যক্তি প্রকাশিত বই এর বিষয় কে নিয়ে একটি সমালোচনামূলক লেখা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। রয়েছে নানান কিছু ঘটনাবলিকিছু তথ্য আর কিছু রসাত্মক কথামালা যেগুলোকে গেঁথে একটি পুষ্প মালতিকার রূপ দিয়েছেন অসীমানন্দজি। বলতে গেলে একটি ভিন্নধর্মী চরিত্রসেই চরিত্রের সামাজিক গতিবিধি তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি সাহিত্যিক অবদান এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশিত গ্রন্থের সমালোচনা। আর এইগুলো কে কেন্দ্র করে এই লেখার প্রেক্ষাপট মাত্র। সবগুলোই কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই যদি কোথাও মিলি থেকে থাকে তাহলে সেটা হবে নিতান্তই কাকতালীয়।

এবার চলুন যাওয়া যাক মূল প্রসঙ্গে। যারা একটু আধটু খোঁজখবর রাখেন সমাজের, বিভিন্ন মানুষ সম্পর্কে তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ  নানান খুঁটিনাটি দিক আলোচনা বিশ্লেষণ ভালো-মন্দ সবকিছু জানার চেষ্টা করেন। এরকমই আমাদের এক চরিত্র  হলো- এই পাড়ার ভাগ্নে রামকানাইয়ের মামা  ঢিপলচন যারা এই মামা ঢিপলচন সম্পর্কে একটু খোঁজখবর রাখেন তারা যথারীতি এনার সম্পর্কেও খোঁজখবর রেখে বিচার-বিশ্লেষণর কিছু কথা কিছু দিক তুলে ধরেছেন। তাহলে চলুন এবার একে একে দেখে নেইসেই ছবির বিভিন্ন কোলাজ।

পাড়ার যোগেনদার চায়ের দোকানে সকাল কিংবা সান্ধ্য আসরে যখন  কেউ এই রামকানাইয়ের মামা ঢিপলচন সম্পর্কে জানতে চায় ঠিক তখনই প্রভাতী ও সান্ধ্য বাসরের অন্যতম প্রধান মোড়ল লোহা চক্রবর্তীর ফোঁস করে বলে উঠবেন, ‘ওরে বাবারে উনি তো আজকের যুগের তিন মুখো সাপ। গাছেরও খাবেতলারও কুড়োবে আবার শাল বাকলাগুলো ছাড়বে নাসবকটাই হজম করে অবশেষে বিদেশি কোমডে বিষ্ঠা ত্যাগ করে জীবন ধন্য করব‘- এই  গোছের একটা জলজ্যান্ত নিদর্শন ব্যক্তি এই মামা ঢিপলচন। কথায় বলে না কয়লা তোকে ধুলেও না যায় ময়লা। এনার ক্ষেত্রেও হয়েছে  সেরকমটাই। এরকম দিয়েই শুরু তারপর…

মানুষের প্রশংসা ভালো কাজের স্বীকৃতি বা কারো কোন ভালো খবর সকাল সকাল জানতে পারলে শুনতে পারলে সেগুলোর রিয়াকশনটা বলতে গেলে গোবর জল মাটি করে দিয়ে একটা বিশেষ ভঙ্গিমায় ডিমোটিভেট করে দেওয়াটা এই মামার অন্যতম মহান কর্মপদ্ধতির অংশ বিশেষ আর এধরনের ব্যতিক্রমী এক চরিত্রকে কলম বন্দি করার সুযোগ হাতছাড়া না করে অধম অসীমানন্দজী বসে পড়েছেন সেই কাজে।

আসলে যে ঢিপলচন মামার স্বভাবটাই ঠিক এরকম। কি বলবেন জানিনা জ্যোতিষীরা হিসেব মেলাতে পারেন না তারা এই স্বভাবের মানুষরা এদের কোনও লক্ষ্য বা কাজের পথে যদি কেউ বাধার সৃষ্টি করে তা কোনও ভাবেই মনে নিতে পারেন না। এঁদের চরিত্রের বিশেষ গুণাবলী হলকোনও পরিস্থিতিতে এঁরা নিজেদের স্বভাব পরিবর্তন করেন না। এঁরা চান তাঁদের সঙ্গে সকলে মানিয়ে চলুনকিন্তু এঁরা কোনও ভাবেই মানিয়ে চলতে পছন্দ করেন না। একমাত্র যদি কোনও পরিস্থিতে মানিয়ে নিলে এঁদের লাভ হয় তবে এঁরা নিজেদের পরিবর্তন করার কথা ভাবেন। অন্য মানুষের যতই অসুবিধা হোকএঁরা কখনই কোনও পরিস্থিতে আপস করেন না। একই সঙ্গে এঁদের মেজাজও সব সময় সপ্তমে চড়ে থাকে। আর তাই ঢিপলচন মামার  পরিচিত বন্ধুবান্ধবরা সব সময় আড়ালে-আবডালে এ কথা বলে থাকেন এই লোকটার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির আগে বুঝে শুনে করুন।

এবার একটু গভীরে যাওয়া যাক। এই ঢিপলচন মামার বাড়িতে যখন কেউ যায় তখন তার আলমারি ভর্তি নানান লেখকের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বইমহাপুরুষদের ছবিঘরভর্তি আসবাবপত্র এবং কলিন স্প্রে সুগন্ধির ফলে মনে হবে এই ভদ্রলোককে দেখে ভীষণ বন্ধুত্বপূর্ণপাণ্ডিত্য ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মনের মানুষ বলে ভ্রম হতে পারেকিন্তু বাস্তবে  একেবারেই তা নয়। একেবারে উলটো সম্পূর্ণরূপে।

এই চাকচিক্য বইপত্র মহাপুরুষের ছবি দেখে অনেক মাটির মানুষ ঘোল খেয়ে গিয়েছেন। পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন ও বুঝেছেন এই আসল মহাপুরুষকে। সামনের ব্যক্তির প্রতি কোনও রকম সহানুভূতি প্রকাশ করতে চান না।

যেকোনো বিষয়ে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হলে তার সমাধানের লক্ষ্যে যদি কেউ তার কাছে যায় তাহলে তাকে হতে হয় চরম হতাশ এটাও একটা মস্ত বড় দিক এই মামার চরিত্রে অপরদিকে এ কথা বলতে হয়যারা সব বিষয়ে অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ এবং সেনসিটিভ হন, বাইরের চাকচিক্য ব্যবহার মিষ্টি হাসি দেখে সহজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেন তাদের কপালে জোটে মহাদুর্ভোগ। অন্য দিকেএই ঢিপলচন মামার মাথায় কী চলছে তা বোঝা দুঃসাধ্য। কিন্তু এঁরা কিছু মানুষ আশা করেন যে না বলতেই এঁদের মনের কথা সকলে বুঝবেন এবং এঁদের সঙ্গে মানিয়ে নেবেন।

সত্যি কথা বলতে কি এই মামা ঢিপলচন কথায় কথায় ভীষণ ভাবে অন্যের সমালোচনা করতে ভালোবাসেন। একই সঙ্গে এঁদের মুখে কোনও আগল থাকে নাযার ফলে সামনের ব্যক্তিকে কী বলছেন তার উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অধিকাংশ সময় কথার আঘাতে অন্যদের জর্জরিত করে এঁরা আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। এঁদের সামনে মনের কথা বলেও শান্তি পাবেন না। সব ক্ষেত্রে এঁরা ভীষণ জাজমেন্টাল। অন্যের খুঁত ধরতে ভীষণ ভালোবাসেন  এই মামা ঢিপলচন

মানুষকে হীন প্রতিপন্ন করে তাঁদের সামনে এঁরা নিজেদের সুপিরিয়র প্রমাণ করতে যা খুশি তাই করতে পারেন। মামা ঢিপলচন  সব সময় তর্ত-বিতর্কঝগড়া বা মনোমালিন্যের খোঁজে থাকেন। সুযোগ বুঝে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করেন না। এঁরা অন্য কারও সম্পর্কে বিশেষ চিন্তাভাবনা করেন না কারণ এঁদের কাছে সব সময় তাঁদের নিজেদের স্বার্থ প্রাধান্য পায়। এঁদের কোনও কাজে ধৈর্য নেই। কিন্তু বার বার ভুল করা সত্ত্বেও নিজেদের ভুলের কথা কখনও স্বীকার করেন না। অজুহাত সব সময় এঁদের ঠোঁঠের ডগায় থাকে। একই সঙ্গে দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে এঁদের জুড়ি নেই।

 

মামা ঢিপলচনের ভীষণ ভাবে অন্যদের অ্যাটেনশন শিকার করতে পছন্দ করতে ভালো লাগে ও অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য প্রবল ভাবে নাটক করতে পারেন। কখনও আঘাতেরকখনও মনোকষ্ট কখনও বা শারীরিক অসুস্থতার ভান করে মানুষের মনোযোগ নিজের দিকে টানতে চান। এটা করে এঁরা নিজেদের দোষ ঢাকতে চেষ্টা করেন সব সময়। কিন্তু এঁদের মনোযোগ ধরে রাখা ততটাই কঠিন। এঁরা সব সময় নিত্য নতুন জিনিস নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন। কোনও এক বিষয়ে এঁদের মতি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। কিন্তু ভুল করেও কখনও এ কথা তাঁদের বলে ফেললে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়তে পারেন। এঁরা আপনার জীবন নরক করে তুলতে পারেন।

পাড়ায় অফিসে ও বিভিন্ন জায়গায় যারা এই মামা  ঢিপলচনের সংস্পর্শে এসেছেন তারা হাড়ে হাড়ে টের পান যেই লোকটি আদলে কি পদার্থ দিয়ে তৈরি। আপনি যত খুশি চেষ্টা করে নিনকিছু মানুষ আছে যাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা বা যাঁদের সঙ্গে মানিয়ে চলা খুব কষ্টসাধ্য হয়। তা সে পরিবারের কোনও সদস্য হোনকোনও বন্ধু হোন বা কোনও

সহকর্মী। তাঁদের স্বভাব এবং সিন ক্রিয়েট করার মনোভাব চিরকাল একই রকম বিদ্যমান থাকে। সঙ্গে মানিয়ে চলা খুব কঠিন এঁদের শুধু নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন নয়এঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাও বেশ কষ্টসাধ্য। তবে এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিকে দোষারোপ করে কোনও লাভ নেই। তার শিক্ষা সংস্কার এবং কর্মকাণ্ড এসবের ওপর অনেক কিছু উপর নির্ভর করে ।

এদিকে এই ঢিপলচন মামা ব্যক্তিটি  অনেক দিন ধরেই স্বপ্ন দেখছিলেন তাঁর একটা বই প্রকাশিত হবে যেখানে শুধু ডায়লগ কথা বা সংলাপ থাকবে আর এগুলোকে কেন্দ্র করে তিনি তাঁর বই ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছেন।

এই বই দোকান থেকে পৌঁছে গিয়েছে বিভিন্ন মানুষের কাছে। পাঠক শুভানুধ্যায়ী আত্মীয়-স্বজন সকলে এই সুযোগে তাদের ভালোলাগা ভালোবাসা শুভেচ্ছা অভিনন্দনের ডালি নিয়ে ইতিমধ্যেই তার কাছে পৌঁছে গিয়েছেন মামা

ঢিপলচনের বাড়ি আর এদিকে সেই বইয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে অসীমানন্দ ও নেমে পড়েছেন।

স্বাভাবিক  নিয়ম অনুসারে চলতে চলতে উঠে এসেছে অনেক কথাসমালোচনা। যেগুলি ফুটে উঠেছে পরবর্তীতে  অসীমানন্দের লেখায়।এরপর কি লিখলেন তিনি তিনি লিখলেন, এবার এই বিশিষ্ট রম্য কথা সাহিত্যিক ঢিপলচন গুপ্ত একটি রম্য উপন্যাস লিখেছেন।

কিছু কিছু সিরিয়াস পাঠক এই সংলাপ নামাটি পড়তে পড়তে যত এগিয়েছে ততই অভিভূত হয়েছে ও অপার বিস্ময়ে ভেবেছে যেকি করে এই লেখকের পক্ষে  সম্পূর্ণরূপে মনুষ্য-চরিত্র বর্জিত এমন এক উপভোগ্য,  কৌতূহলোদ্দীপক  সংলাপ মুখী রম্য উপন্যাস রচনা করা সম্ভব হল কি ভাবে ঢিপলচন গুপ্ত বলেই কি ?

এ তো যেন এক ধুরন্ধর চালবাজ নামাত্যানদড়বাজ মানুষের কথা। কোনরকম রাখঢাক না করেই একথা বললেন অসীমানন্দ জি। তারপর তিনি একে একে লিখেছিলেন এই কথাগুলি…..

রাজনৈতিক  বা অরাজনৈতিক বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের সমালোচনা করাই উনার অন্যতম প্রধান কাজ।

এই উপন্যাসের  মূল চরিত্ররাই হল কিছু সারমেয়কিছু বায়সকিছু বরাহ ও কিছু শাখামৃগযারা কিনা মনুষ্য জাতির দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। আর আছে কিছু অসহায় মানুষ। বলা যায়, এরাই হল মূল চরিত্র অর্থাৎ এই উপন্যাসের নায়ক– নায়িকাতারাই প্রেমিক–প্রেমিকাতারাই সব তারও বর্ণনা এই উপন্যাসে পাওয়া যায়।

এই রম্য উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রকে যখন বিশ্লেষণ করলেওইসব চরিত্র মনুষ্য-চরিত্রের সাথে হুবহু মিলে যায়যার বেশ কিছু দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরছেন অসীমানন্দজী। তিনি ক্রমশই লিখে চলেছেন তাঁর সমালোচনায়,

“মঙ্গলা- সুন্দরী ” ও ” মুকুন্দ -কানুবালা “পল্লী বাংলার কথায় উঠে এসেছে সত্তরের দশকের শেষের দিকে উত্তরবঙ্গের একটি গ্রামের আধিয়ার-জোতদার সম্পর্কের একটি যন্ত্রণাদায়ক বেদনাদায়ক দিক। যেখানে জমিকে কেন্দ্র করে আধিয়ার পত্নী সুন্দরী বালার স্বামী মঙ্গলাকে ভূমিচ্যুত করা হয় মিথ্যে এক অভিযোগ দিয়ে। আবার অন্য এক ভাগ চাষী মুকুন্দর বিধবা স্ত্রী কানুবালাকেও উনি তাই করেন। অর্থাৎ একটা অমানবিক ছবি কাহিনী কে তিনি তুলে ধরে দাবি করেন এই দুই আধিহারের অকাল মৃত্যুকে নিজের কেরামতি বলে। অদ্ভুত এক মানসিকতা। এক ধরনের অসুস্থ অনধিকাম্ম প্রেক্ষাপট এটা। তেমনি অপর দিকে সাধারণ পাঠক পাঠিকার শুভানুধ্যায়ীদের প্রশ্ন যেখানে তিনি তার বাড়িতে এত সুন্দর সুন্দর ভালো ভালো বই রচনাবলীমহাপুরুষদের জীবনাবলী সহ পরমপুরুষ সহ বিভিন্ন মানুষের ছবি শোভিত করে রেখেছেন তাঁর চিন্তা ভাবনার মধ্যে দিয়ে এহেন চরিত্রের অকাল মৃত্যুর ছবি কি করে ফুটে উঠল ?

এইরূপ আরও বিভিন্ন প্রকার চারিত্রিক উপস্থিতি এই সংলাপরূপী উপন্যাসে পাওয়া যাবে এবং এইসব চরিত্রের সাথে আমাদের সমাজে বিরাজমান মানুষের আশ্চর্য রকমের মিলও খুঁজে পাওয়া যাবে। এই উপন্যাসটি পড়লেই পাঠকগণ সেই সব চরিত্রের সাথে পরিচিত হবেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সব মিলিয়ে ঢিপলচনবাবুর এই রম্য উপন্যাসটি প্রথম থেকেই এত আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে যেএকবার পড়া শুরু করলে আর থামা যায় না। কেবলই মনে কৌতূহল জাগে– এরপর কি… এরপর কি এটাও একটা পরম সত্য। এই সমস্ত নানান প্রশ্নের যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায়যখন অসীমানন্দ আগাগোড়া বিশ্লেষণ করার পর আমাদের সকলের প্রতি  জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দেন, “তোমরা নাকি দুনিয়ার সেরা জীব ! খুবই নাকি বুদ্ধি তোমাদের ! এত শিক্ষাধর্ম আচরণবিভিন্ন জ্ঞানীগুণী মানুষ সাথে উঠাবসাতাহলে কেন এহেন বে-মানসিকবে-সামাজিক মানসিকতা তাহলে সমাজটাকে   শ্মশান বানাবার জন্যই কি ওই ধরনের পাহাড় প্রমাণ মুখোশ পরিয়ে  দিয়ে পাঠিয়েছে তোমাদের দেবতারা ?……”  

শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি রয়েছে আরও নানান ঘটনা নানান চরিত্র। যেখানে রয়েছে সংলাপের পর সংলাপ। মন্ত্রীর সাথে সংলাপনেতার সঙ্গে তাঁর সাগরেদের সংলাপকুকুর বেড়ালের সাথে সংলাপপাড়ার কুয়োতলা মহিলাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের হওয়া সংলাপবেইমান অসৎ লোকের সাথে সংলাপ এসব কেন্দ্র করেই একটার পর একটা কথা লিপিবদ্ধ করে মামা ঢিপলচন যখন তার সংলাপরুপী এই উপন্যাস প্রকাশ করলেন তখন তিনি কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এত লোক ফুলের তোড়া মিষ্টি ফল মুল নিয়ে হাজির হচ্ছেন কিন্তু সেখানে তার পুত্র কন্যা বা পুত্রবধূ কিংবা জামাতা এঁরা কেউই ছিলেন না অথচ উনারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত পিএইচডি উপাধিপ্রাপ্ত।

এরপর হয়তো কিছু কিছু অতি উৎসাহী পাঠক এই প্রশ্ন তুলবেন–  না হয় একটা রম্য উপন্যাস লিখেছেকিছু মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার ব্যবহার করেছেতিনি অনেক সাধু সন্ন্যাসীদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেনহিমালয়ের পথে পথেএ রাজ্য থেকেও রাজ্যে তীর্থ ভ্রমণ করেছেনমন্দিরে থাকা বসে থাকা ভিক্ষুকদের ফলমূল দান করে পুণ্য অর্জনের চেষ্টা করেছেনকিছু কিছু মানুষের কাছে গিয়ে পাঁচশ- হাজার টাকা দান ধ্যান তো করেছেননা হয় ভাইদের বিরুদ্ধে মামলাপৈত্রিক ও মাতৃ সূত্রে প্রাপ্ত বোনেদের জমি সুকৌশলে হাতিয়ে নেওয়াভাগ্নে-ভাগ্নিদের মিষ্টি কথা বলে নাড়ু পিঠে পুলি ও কালিয়া পোলাও খাইয়ে প্রাপ্য জমি অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেআধিয়ার রমনীকে জমির মধ্যে নিগৃহীত করে যে অন্যায় অবিচার তিনি অতীতের দিনগুলিতে করে গিয়েছেন সেগুলি কি হবে ?

এসব সমালোচনার উত্তরে হয়তো কেউ বলবেঅত শত বিচার করলে চলে না হয় একটু একটু রাগের মাথায় এসব করে ফেলেছে বৈকিতাছাড়া পূণ্যের কাজ ও তো করেছে। ওসব বিচার করতে নেই। ও তাই নাকি ?

তাহলে বাকি রেখেছেটা কি মাঝে মাঝে ধান দান করা লোকদেখানো ভড়ং বাজিতীর্থযাত্রা করে পাপ হরণ করার চেষ্টা নেতা নেত্রীদের সাথে উঠবস করাসাধু সন্ন্যাসীদের সাথে মিলেমিশে নিজেকে সৎ মহাপুরুষ বলে তুলে ধরা যে তুমি সঠিকবাকি সবাই বেঠিক তুমি শ্রেষ্ঠবাকিরা সকলে নিকৃষ্ট ?

এই কৌশল যে খাটে না আজকের অতি শিক্ষিত সচেতন ডিজিটাল যুগের মানুষের কাছে, এটা কি বোঝার সামর্থ্য নেই ওনার অর্থাৎ মামা ঢিপলচন গুপ্তের এই প্রশ্নটাই ক্রমশ উঠে এসেছে বারে বারে কয়েক কোটি টাকার প্রশ্ন ?

ঢিপলচন গুপ্তের সংলাপনামা‘ উপন্যাসকে এক ধুরন্ধর চালবাজনামা,ত্যানদড়বাজ মানুষের উপাখ্যান বলতে বলে অভিহিত করতে পিছপা হচ্ছে না সমালোচকরা যার মধ্যে যোগেনদার চায়ের দোকানের প্রবীন সদস্য লোহা চক্রবর্তীর মতো লোকও রয়েছেন। তিনিও সমবেত রমারামাবাদল বাবু সহ সকলকে একথা হলপ করে বলেছেন, ‘যেখানে এত বড় বড় আলমারি ভর্তি বই মহাভারত রামায়ণ গীতা পুরাণছাড়াও রাজনীতি বিপ্লব কূটনীতিন হন্যতেসহ বিভিন্ন মহা পুরুষের ছবি টাঙ্গানো বাড়িতে। সব কিছু মিথ্যেনিজেকে অথেন্টিক সৎ ভদ্রলোক অবতার বলে ঢাকঢোল পেটানো।

সমালোচনার ইতি রেখা টানতে গিয়ে অসীমানন্দজী লিখেছেনদক্ষিণ ভারতে বেড়াতে গিয়ে স্টেশন চত্বরে

গন্ডগোল করেছিলমন্দিরে মন্দিরে দান ধ্যান করেছিলহিমালয়ের পথে পথে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গাস্নান করেছিল বলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে একটু না হয় গন্ডগোল করেছিল এসব ধরতে নেই ক্ষমা করে দিতে হয়।

আর মানুষের সাথে দুর্ব্যবহারমিথ্যা অভিযোগে মামলা দেওয়ানতুন প্রজন্মকে বিপথে পরিচালিত করা-এসবের ক্ষমা হয় না। এসব অন্যায়ের ক্ষমা হয় না। ক্ষমা নেই।

সংলাপ নির্ভর এই রম্য উপন্যাসের প্রকাশিত হওয়ার পর পরবর্তী সময়ে হয়তো ডিজিটাল ক্যাসেটডকুমেন্টারি সহ এরকম আরো অনেক কীর্তি মামা ঢিপলচনের সাতকাহন চলে আসবে একে একে। অবশেষে একথা বলতে হয় অসীমানন্দজী একজন অতি সাধারণসহজসরল শ্রোতা দর্শক ও পাঠক সেই অর্থে এই উপন্যাসের সমালোচনা করার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি যেএই উপন্যাসটি পড়ে অসীমানন্দজীর যা উপলব্ধিসেটাই ব্যক্ত করেছেন। বাকি কথা বুঝে নিতে হবে সচেতন পাঠককে।

*নাম ও এই চরিত্র কাল্পনিক বাস্তবের সমাজে এইধরনের চরিত্রের সাথে যদি কারো সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে তা হবে কাকতালীয়।

স্মৃতি বহন করে যাই

মৃত্যুর পরে ফিরব না

 

ভালো ছিল ঘরে আলো

সংসারে ছিল সুখ

 

আজ শক্ত দিন শুধু ঋণ

বড্ড এলোমেলো ভাবনা

 

পরিচিত তুমি আজও খুব

আমার চোখের কুয়াশায়  জমা

 

একা একা ভালো লাগে না

বেদনায় ঘর সাদা আলপনা

নীতার ছায়া সারা পৃথিবীতে শুয়ে আছে যেন

নির্জন চাঁদনী রাতে একটুকরো অপার স্তব্ধতার কলোনীতে নীতা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে

চারিদিকে কারো চিহ্ন নেই

শুধু নীতার মায়া মমতা মাখা শান্ত ছায়া পরিব্যাপ্ত

আমার পুরুষ জরায়ুতে তখন সমাজ ভাঙার বিপ্লব বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে …

নীতার অপলক চোখে আমার তৃষ্ণার্ত চোখ রেখে..

এই ঘরে ঢুকলে সমস্ত মানচিত্র খুলে পড়ে

তারপর তারা আমার নাম থেকে

‘ খুলে নেয়

‘ খুলে নেয়

কেউ কেউ ‘ঙ্গ‘ কে ধরে টানাটানি করে

আলাদা করে সকল সত্তা

আমি পদবী জাপটে ধরি

তারপর মানচিত্র ছিড়তে থাকে

আর আমি কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে

চায়ের দোকানে বসে

জমিদারির গল্প বলি

জানি সে হারাবে ভোরের আলোতে

তবুও স্বপ্ন আসে

না বলা কথা হয়ে যায় বলা

মৃদু হেসে বসে পাশে।

 

এর পর কত গল্পগুজব

হাতটা ছোঁয়াই হাতে

অতঃপর তুমি হেঁটে চলে যাও

দাঁড়ি টেনে সাক্ষাতে।

 

বারবার ভাঙে তবু পুষে রাখি

তোমাকে না পাওয়ার ক্ষত

স্বপ্নের কোনো যতি থাকে না

সে যে বৃত্তের মত।

সবটাই শরীর অথচ শারীরিক হয়ে উঠছে না

বরং একাকার হয়ে যাচ্ছে পরস্পর 

স্বপ্ন ষ্টেশন থেকে নীল বরফিলি আগ্নেয়গিরি

বলছে, “অনুভব কর“।

কাছাকাছি স্বর্গ এলে 

কেন বলে If Will Come Tomorrow …

সামুদ্রিক ছুঁয়ে ছুঁয়ে অশান্ত পিয়ানোপাখি

আদুরে আদুরে ছাতা, জিমন্যাস্টের শরীর নামছে,

নামাগুলো এক একটা নোটেশন 

নোটেশন নামছে 

মরগ্যানিয় Melancholy  …

মানে, এক প্রকার গোলাপি বৃষ্টি

.

ট্রম্বন বাজবে,

ভায়োলিন থেকে ঝরবে এক পৃথিবী মায়া

নীল নীল শীতে পড়িয়ে দেওয়া হবে নিজস্ব উষ্ণতা

উপত্যকা পাড়ি দেবে চাঁদ, Sacred River

সেও নীল রঙের, স্মুদ অ্যান্ড সিল্কি 

পর্দা সরিয়ে রাতের ওপারের ট্যাংগো।  

লিবাড়ির পথে দেখা হয়ে গেল শ্রীর সঙ্গে। বলেছিলাম ‘কি খবর দেখা নেই কেন’? ঠান্ডা ভাষাহীন চোখ তুলে, ঠোঁটে খুব সামান্য হাসি বিলিয়ে হনহন করে চলে গেল। রাস্তায় এমনিতে আমি যেচে কথা বলি না, এজন্য কেউ কেউ বলে আমি নাকি ফালতু ঘ্যাম নিয়ে থাকি

তবে শ্রীর এমন পাশ কাটানো আমার পছন্দ হয়নি। শ্রী আমার থেকে অনেকটাই ছোট। আমাদের এনজিও-তে মেয়েটি নিয়মিত আসে। ইংরেজী মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টার দিয়ে এল। নাম ওর শ্রীরাধা। উজ্জল শ্যামবর্ণা, মিষ্টি মুখের দীর্ঘাঙ্গী মেয়ে। মনে হবে সাজ নেই কিন্তু যতটুকু মেকআপ প্রয়োজন সেটা নিখুঁত ভাবে সেরেই বাইরে বের হয়।

দিন কয়েক পর রেডক্রস ভবনে একটা আলোচনা সভায়  দোতলায় উঠতে গিয়ে সিড়িঁতেই শ্রীর সঙ্গে দেখা। পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলাম, ও হাত টেনে ধরেছিল।

বলল, রেগে আছো তো ? আমি ভাবলেশহীন। 

আবার বলেছিল, সভা শেষ হলে সিসিডি-তে কফি খাব

হল থেকে বের হতেই আবার থমথমে মুখ। এই ছোট শহরে সিসিডি নতুন সংযোজন। ভিড় কম, হৈচৈ নেই, অনেকটা সময় নিয়ে আড্ডা মারা যায়। খাবারের দাম কিছুটা বেশী। দু- সিটের টেবিলে বসলাম। বরাবর ও নিজেই পছন্দের খাবার অর্ডার করে আর দাম আমাকে মেটাতে হয়। সেদিন শুধুই কফি অর্ডার করেছিল।

‘জানি তুমি আমার ব্যবহারে অসন্তুষ্ট’ শ্রী বলতে শুরু করল।

–  সবটা শুনলে তুমি কিছুতেই আমার উপর রাগ করতে পারবে না

 জানি ও এবার লাটাই থেকে নিপুণ ভাবে সূতো ছাড়তে শুরু করবে। আমাকেও অসীম ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে, সবটা শুনতেই হবে।

শ্রীর মাসতুতো দিদি ঝিমির বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল শিলিগুড়িতে। জায়গাটা শিলিগুড়ির কাছে ওদের নিজেদের চা বাগান রিদিম টি এস্টেটে। চা বাগানের ওরাই মালিক। ওই পরিবারের সঙ্গেও আমার যথেষ্ট পরিচয়, চা বাগানেও গেছি।  চা কোম্পানি আমাদের এনজিও-কে অর্থ সাহায্য করেছে দু-একবার। ব্রিটিশদের তৈরী বিশাল কাঠের বাংলো, চারদিকে গাঢ় সবুজ চা বাগান মাঝে মাঝে ঝাঁকড়া মাথার ছায়া বৃক্ষ বাউন্ডারি বোগেনভেলিয়া দিয়ে ঘেরা, কিনারা দিয়ে মরশুমী ফুলের বাগান। সামনে বিস্তির্ণ সবুজ লন বাংলোর বারান্দায় ডজন খানেক সাদা রং করা বেতের চেয়ার। অসম্ভব অবাস্তব নির্জনতা সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে রঙ্গিন গ্লাস হাতে নিয়ে কাছেই কালচে নীল পাহাড়ে বিন্দু বিন্দু আলো ফুটে ওঠার দৃশ্য  আর শ্রমিক বস্তি থেকা আসা মাদলের আওয়াজ ভোলা যায় না। এমন পরিবেশে বারান্দায় আর লনে সবাই মিলে চুটিয়ে আড্ডা, গান আর লাগাতার একে ওকে লেগ পুলিং চলছিল। বিয়ে বাড়ির আত্মীয় সমাগমে সাত দশ দিন আগেই বাংলো সরগরম।

বিয়ে বাড়িতে অনেকের মাঝে একটা ফর্সা লম্বা ছেলে চেহারায়, কথাবার্তায়, ব্যবহারে সবার মনজয় করে নিয়েছিল। অনাত্মীয়া তরুণীদের হার্ট থ্রব একেবারে। যাদবপুরের মেকানিকাল ইঞ্জিনীয়ার রেলে চাকরি করে আদ্রায় পোস্টং। নাম ছেলেটির বিতান রায়। ঘনিষ্টরা ওকে বিতু বলে ডাকছিল। ঠোঁটে একটা আলগা হাসি, অল্প অনুরোধেই দু চার খানা গান শুনিয়ে দেয়। ছেলেটির সাথে ওর মা এসেছিলেন। চা বাগানের হুড খোলা জীপ গাড়িটি এখন বিতানের দখলে। প্রতিদিন ব্রেকফাস্টের পর বিতান চার পাঁচ জনকে জীপে তুলে কাছাকাছি বেড়ানোর জায়গাগুলো দেখতে বেড়িয়ে পড়ে দলটি ফিরে এলে দুধিয়া, রোহিনী, সেভক ভ্রমনের জোরদার আলোচনা চলত  শ্রী ওদের দলে ভেড়েনি। ও  তার দিদি ঝিমিকে নানা কাজে সব সময় সাহায্য করতো।

বিতানের মার সঙ্গে শ্রীর বেশ ভাব হয়ে গেল। অন্য সবার মত মহিলাকে বড় মাসীমা ডেকেছিল শ্রী। অল্প বয়সের বৈধব্য মহিলাকে বাস্তববাদী করে তুলেছিল। ছয় বছরের শিশুপুত্রের হাত ধরে শ্বশুরের ভিটেতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গয়না বিক্রি করে একটা সেলাই মেশিন কিনে জীবিকা অর্জনের লড়াই  শুরু করেছিলেন। সকাল বিকেল বাচ্চাদের যত্ন করে টিউশন দিতেন। শৈশবে বিতান দু বেলাই মায়ের কাছেই পড়াশুনো করতো। পরর্বর্তীতে বিতানের মায়ের কাছে আরও তিনটি মেয়ে কাজ পেয়েছিল একচালা একখানা ঘরে চার খানা মেসিনের আওয়াজ ছিল তার আত্মনির্ভরতার প্রেরনা উনি বলতেন সেটাই তার কারখানা কারখানায় এখনও চারখানা মেসিন চলে। 

চাকরি পাওয়ার পর বিতান মাকে নিয়ে আসে আদ্রাতে।  বৃটিশ আমলের সেই বিশাল বাংলোতে বড় মাসিমার সময় মোটেই কাটতে চায় না তাই এখন নাকি তেড়েফুড়ে কিচেন গার্ডেন তৈরীর কাজে লেগে পড়েছেন।

বিয়ের ঠিক দুদিন আগে লনে ক্রিকেট খেলার সময় বিতানের পা মচকে গেল। বিতানকে সহ খেলোয়াড়রা  ধরে ঘরে পৌছে দিল। ব্যথায় তখন বিতান ছটপট করছিল। চা বাগানের ডাক্তারবাবু দেখে গেলেন। বললেন ‘মনে হচ্ছে মেজর কোন সমস্যা হয়নি’ দুদিন পূর্ণ বিশ্রামের নিদান দিলেন, সঙ্গে ব্যথা কমানোর ওষুধ বিতানের মা চুন-হলুদ গরম করে আনলেন, ছেলের পা অতি সন্তর্পনে তিনি কোলে তুলে ধরে রাখলেনশ্রীকে বললেন গরম চুন হলুদ বিতানের পায়ে লাগেয়ে দিতে। বিতান মাথা নেড়ে নিষেধ করেছিল পায়ে হাত দিতে। শ্রীই চুন হলুদ লাগিয়ে দিয়েছিল। সন্ধ্যায় বিতানের ভাবভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ব্যথা কিছুটা কম।

ক্রিকেট দল ট্যুর শেষ করে ফিরে এসে বিতানের পেছনে লাগতে শুরু করল, ‘বিতু তুই এখন থেকে লুডো খেলবি মহিলাদের সাথে, আউটডোর গেমস তোর দ্বারা হবে না’

বিতানও ছাড়ার পাত্র নয়, বলেছিল ‘সাতপাকে ঘোরানর সময় আমি পিড়িঁ না ধরলে ঝিমি বিয়েই করবে না বলেছে দেখিস কালকের মধ্যে আমি ফিট হয়ে যাব’

মাসিমা বিতানকে একেবারে শিশুর মত সেবা করছিলেন। রাতে অনেকটা সময় শুধু শ্রী আর বিতান দুজনে ঘরে ছিল।  বিতান ওর পড়াশুনো, বাবা মা, বন্ধু বান্ধবদের কথা জানতে চাইছিল। যদিও শুনছিল বেশী, বলছিল কম। ওর মতো শ্রোতা সত্যি কম পাওয়া যায়। বিতানের ফোনে শ্রীর মোবাইল ফোন আর বাড়ির ল্যান্ড লাইন নম্বর ততক্ষণে আশ্রয় নিয়েছে। বিয়ে বাড়িতেও যখন তখন বিতান ফোন করে ডাকছে

বিয়ের দিন বিকেলে একটা ছোট্ট এস এম এস ‘কবে তুমি আমাদের বাড়ি চিরদিনের জন্য আসবে’ ? উত্তরে শ্রী লিখেছি ‘লাখ কথা না হলে কিছুই হবে না’

বর কনে সহ বরযাত্রীদের সঙ্গে বিতান ফিরে গেল। ওর ছুটি শেষ হয়ে আসছিল। কনে যাত্রার সময় শ্রীর খুব কান্না পেয়েছিল। বড় মাসিমা সস্নেহে  চোখ মুছিয়ে বললেন, ‘কার জন্য এত চোখের জল ফেলছিস’ ? শ্রী দোপাট্টায় মুখ ঢেকেছিল। তাও শ্রী স্টেশনে গিয়েছিল।

শ্রী বলেছিল ‘বাড়ি ফিরে এসে শুনলাম বড় মাসিমা আমার বাবাকে ফোন করে জানিয়েছেন তিনি আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে পেতে চান। আমাদের বাড়ির মতামত জানতে চেয়েছিলেন। মা সঙ্গেও উনি কথা বলেন। বিতান প্রতিদিন কয়েকবার করে ফোন করে মাসির সঙ্গেও ফোনে যথেষ্ট কথা হয়েছে।

হঠাৎ করে একদিন বিতানের ফোন আসা বন্ধ হলো। তিন দিন পর বড়মাসিমা ফোনে জানালেন বিতানের এই বিয়েতে মত নেই। আমার কাছে পৃথিবীটাই এক লহমায় বিবর্ণ হয়ে গেল। শিলিগুড়ি থেকে মাসি ছুটে এলো। বিতান

আমাদের বাড়ির কারও ফোন ধরছিল না। একমাসের মধ্যে কি এমন ঘটনা ঘটল শ্রী ভেবেই পেল না। শ্রীকে সবাই প্রশ্ন করেছে ওর সঙ্গে বিতানের ঝগড়া হয়েছে কি ? ও বারবার বলেছে, বিতান ঝগড়া করার মত মানুষই নয়’

মাসী মেসো ছুটলেন আদ্রায়। সকাল আটটা নাগাদ ওদের বাড়ি গিয়ে বড় মাসিমাকে বললেন ‘বিতানের সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলেই আমরা চলে যাব। ওকে ডেকে দাও’

বড় মাসিমা বললেন, ‘সেকি হয় নাকি, সারা রাত ট্রেনে ছিলে, হাত মুখ ধোও। চা খাও তারপর কথা হবে’

মাসি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, ‘তোমরা বিনা কারনে আমার বোনঝির বিয়ে ভেঙে দিয়েছ, পরিবারকে চূড়ান্ত অপমান করেছ। তোমাদের বাড়িতে জলও খেতে পারব না। তুমি বিতানকে ডেকে দাও’

পর্দা সরিয়ে ঘরে এলো বিতান। সরাসরি বলেছিল, ‘ শ্রীরাধাকে বিয়ে করব এমন কথা কি আমি দিয়েছি ? আপনারা আমার মাকে কথা শোনাচ্ছেন কেন’ ?

মাসি তখন রাগে ফুঁসছে, বলেছিল, ‘তুমি রাজী হলেও এখানে শ্রীর বিয়ে হবে না। আমাদের জানার ইচ্ছে দুই পরিবারের মধ্যে এতটা ঘনিষ্টতার পরেও কেন বিয়েটা ভেঙে গেল ? শ্রী আর ওর মায়ের অমন কান্নাকাটি, অমন অপমান আমরা সহ্য করতে পারছি না। তাহলে কি আমরা সবাই মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম’?

বড় মাসীমা এবার রহস্য ফাঁস করলেন, ‘তোমরা বোধহয় জান না শ্রীরাধার সাথে ওর ইউনিভার্সিটির এক বন্ধুর গভীর সম্পর্ক আছে। ওরা একসঙ্গে শিলং বেড়াতেও গেছে’

মাসি এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, ‘অসম্ভব মিথ্যা কথা। শ্রীর জীবনে এমন কোন কথা নেই যা ওর মা বা আমি জানি না। আপনারা বোধহয় ওর ক্লাস মেট অংশুমানের কথা বলছেন। অংশুর সঙ্গে শ্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত পবিত্র, শুধুমাত্র ভাই বোনের সম্পর্কের সাথেই তার তুলনা চলে বিয়ে ফেরত সুমিত বোধহয় ট্রেনে এসব আজগুবি গল্প বলেছে’ 

এবার মাসী একটু চেষ্টা করেই অংশুকে মোবাইলে ধরে ফেলেছিল। সবার সামনেই ঘটনাটা জানিয়ে বলেছিল ‘ অংশু তুই একবার বিতানের সাথে কথা বল ’

বিতান ও অংশু তিন চার মিনিট পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছিল।  কথা শেষ করেই বিতান মাসির হাত জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘খুব ভুল করে ফেলেছি মাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিন’ সেই মুহুর্ত্তে মা ফোন করেছিল মাসীকে, মাসী মাকে বলেছিল ‘দিদি তুই বিতানের সঙ্গে কথা বল’

শুরুতেই বলেছিল ‘আমাকে ক্ষমা করে দিন’ তারপর অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। এবার বিতান বলছিল ‘ শ্রীর সাথে কথা বলব একটু, ওকে দিন না মাসিমা’

ততক্ষণে সব অভিমান গলে জল হয়ে গিয়েছিল। খাবার ঘরে বড়মার অতিথি আপ্যায়নে তখন ফুলকো লুচির ফুলঝুড়ি গম্ভীর মুখে বিতান ঘরে ঢুকে মাসিকে ফোন ফেরৎ দিয়ে বলেছিল ‘ অনেক বলার পরও শ্রী কথাই বলেনি। ক্ষমা করাতো দূরের কথা’

মাসী বলেছিল, সুমিত বড্ড ভাল ছেলে তবে ওর তিলকে তাল করার দোষ আছে সুমিত, অংশু ও শ্রী ইউনিভার্সিটির বন্ধু। ঝিমির বিয়েতে অংশুর কথা বলতে বলতে সুমিত স্বভাব দোষেই একটু বাড়াবাড়ি করে ফিলেছিল।

সি.সি.ডি.-র আড্ডা প্রায় শেষ খানিকটা পরে শ্রী জানিয়েছিল, ‘ডুয়ার্সের একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পরের মাসের এক তারিখে জয়েন করব। স্কুলেই থাকার ব্যবস্থা আছে নেট-এর পরীক্ষা ভালই হয়েছে, পুনে ইউনিভার্সিটিতে বাংলা নাটকে ইংরাজি সাহিত্যের প্রভাব বিষয়ে গবেষণার ভাবনা আছে’  

আমি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলেছিলাম, ‘এ বছর ২৭ শে ডিসেম্বর থেকে পাঁচ দি কিশোর কিশোরীদের প্রকৃতি পাঠ শিবির হবে পাহাড় আর জঙ্গল ঘেরা পাথরঝোরাতে। ২৫ শে ডিসেম্বর আমার বাড়িতে ফাইনাল মিটিং, তুমি অবশ্যই  আসবে’

শ্রীর মুখটা এবার হালকা খুশীতে উজ্জল দেখা গিয়েছিল। ও প্রতি বছর শিবিরে আসে দারুণ উপভোগ করে আর কি যে পরিশ্রম করে বলে বোঝান যাবে না। এবার একটু ম্রিয়মান কিন্তু মিটিং-এ এসে দু-চারটে মতামত দিয়েছিল। এরমাঝে আমি বিতানের সঙ্গে তিনবার অনেকটা সময় কথা বলেছিলাম ও ২৬ তারিখ ক্যাম্পে এসে অ্যাডভান্স টিমের সঙ্গে যোগ দেবে কথা দিয়েছিল।

২৭ তারিখ সকাল সাড়ে সাতটায় বাসে রওনা দিয়ে গজলডোবা, ওদলাবাড়ি হয়ে সাড়ে নটায় শ্রী তার দলবল নিয়ে ক্যাম্পে পৌছে গেল।  শ্রীসে  সময়  দক্ষ নেত্রী। নদীর ধার ঘেসে টেন্ট। একটু পরে বনদপ্তরের কনজারভেটার পৌছবেন ক্যাম্প উদ্বোধনে। নদী বর্ষায় খরস্রোতা, শীতে শুকনো।

ব্যস্ততার মাঝে শ্রীকে জিজ্ঞেস করি, জায়গাটা কেমন ?

ও বলেছিল ‘ অসম্ভব রোমান্টিক’

উদ্বোধন পর্ব শেষে যে যেমন পারে গান গাইছিল। একজন গিটারে সুর তুলেছিল। শ্রী তার ঢাউস ক্যামেরায় ছবি ধরে রাখছিল। আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বিতান একটা পুরনো গান ধরেছিল ‘ জীবন খাতার প্রতি পাতায় যতই লেখ…’

শ্রী ধীর পায়ে নদীর বুকে বড় একটা পাথরের আড়ালে দুচোখে জল  নিয়ে নিজেকে যেন লুকিয়ে ফেলেছিল ওকে দেখা যাচ্ছিল না বিতানকে ইশারা করেছিলাম। শীতকাল ঝুপ করে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছিল। বিতান এসে শ্রীর পাশে দাড়ায় শনশন হাওয়া কাঁপুনি ধরিয়ে  দিচ্ছিল। শুধু লক্ষ্য করেছিলাম কিছুক্ষন  পরে দুটো ছায়া  শ্রীর ছোট্ট তাঁবুতে প্রবেশ করেছিল। এরপর আর কিছু বলার বাকি থাকে না।

কতশত  প্রাণ নবনব সাজে

     আসে যায় দেখ এই ধরামঝে,

নবোদিত হয় সূর্য কিরণ,

   শঙ্খ ধ্বনিতে হয় যে বরণ,

ভীরু অসহায় কম্পিতবুকে

    নবীন নতুন আবেশে ;

অনাগত দিনের ইতিহাস রচে

    আবার মিলায়ে যায়

 

ঋতদীপ” আমি এসেছি এ ভবে

      গাহিতে নতুন গান,

আকাশ বাতাস মুখরিত করে

    তুলিব নতুন তান

প্রীতির কোমল পরশে আবেশে

      ন্যায়ের পতাকা হাতে,

মুছে দেব শত বেদনার রাশি

       সত্যরে নিয়ে সাথে

 

হিংসা ও দ্বেষ পায়েতে দলিয়া

    স্বার্থের ধার কভু না ধারিয়া,

বৃহতের ডাকে এগিয়ে যে যাব

       জাগাতে ভূমন্ডল

 

শতাব্দী সেরা শাশ্বত বানী

    রচে যাব অবশেষে

নব প্রভাতের অরুন উদয়ে

    দেব গো পথের দিশে

পড়ন্ত পৌষে  আসন্ন হেমন্তে

কুয়াশার জালিকাটা রোদ্দুরে

ডুবে আছে চরাচর

হিমেল হাওয়ার কামড়

শৈত্যের শীতল চাদর

ঘিরে রাখে নগরজীবন

 

বাতাসে ভেসে আসে

পরমান্নের মাতাল সুঘ্রাণ

চোখে ভাসে কবেকার

উনুনের পাশে বসা

সুখী পরিবার

গনগনে আগুনের আঁচে লাল

মায়ের তৃপ্ত মুখ

ছেলে মেয়ে ওৎ পেতে থাকা

মায়ের কোলের কাছে

পাটিসাপ্টার আস্বাদনে

অধীর আগ্রহে বসা

 

হারিয়ে গেছে সেই ছবি

শুধু রেখে গেছে ছায়া

পৌষপার্বণের জন্য

আমাদের হৃদয়ে

এখনও বড়ো মায়া

কবিতা লিখতে পারি না আর

আমার চারিদিকে প্রেমহীন

গদ্যময় নীরবতা

অভিনয় ও মুখোশের নির্মম আড়ালে

কবিতারা ধূসরগতিহীন

 

অতল জলের হৃদয় জুড়ে

অশ্রুমতি মুক্তদের নীরব উপাখ্যান

কবিতা হতে পারেনি কখনও

অবসর বলতে সাধারণত বুঝি কর্ম থেকে বিরতিএখন প্রশ্ন থেকে যায় কোন কর্মকি কর্ম ?

নিজেকে বোঝালামঅবসরে চারদিকে শুধু শান্তিচারপাশটা বড় শান্তমন চল শান্তিওম ব্রহ্মের খোঁজে 

মস্তিষ্ক বলে উঠলতোমাকে শান্তি দেবার কাজটা তো আমি করিআমার কিন্তু অবসর নেই

চোখ বলে উঠলোচলো যাইযা এতদিন ভালো করে দেখোনিঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটেছো

প্রাণভরে তোমার চারপাশটা তোমাকে দেখাই

নদী থেকে সাগরপাহাড় থেকে মালভূমিনদী উৎস থেকে মোহনাকতকিছু তুমি দেখনি 

শুধু কি তাই ! তুমি তো তোমাকেও ভালো করে দেখোনি

আমি তোমাকে নতুন করে দেখতে শেখাবোআমারও অবসর নেই

কান বললতুমি কি কখনো শুনেছো তাদের ডাক ? যারা প্রভাত সময় থেকে তোমাকে ডেকে ডেকে সুপ্রভাত বলে

আকাশ কালো করে বৃষ্টি যখন ঝরেছে,

নানা শব্দেনানা ছন্দেতোমার শোনার সময় ছিলনাছিল বিরক্তি

তোমার মাথার ওপর দিয়ে বাতাস বয়ে গেছে,

নানা শব্দ করেদমকা বাতাসে পাতা উড়ে গেছেডাল ভেঙে পড়েছেতোমার শোনার অবকাশ ছিল না

তুমি ডুবেছিলে তোমার বই খাতা আর হিসেবে 

তোমাকে শোনাবো সমুদ্রের গর্জনবাতাসের শো শোবিদ্যুতের কড়্ কড়্

তোমাকে শোনাব কিচিরমিচিরতোমাকে শোনাবো টিটিআর তোমাকে শোনাবো বকম্বকম্

তাই আমারও অবসর নেই

হৃদয় বললতুমি তো নিজের হৃদ্স্পন্দন কে কখনো শোনার চেষ্টা করনি,

তোমার অবসরে তুমি একবার মনে করোতোমার ভালোলাগাভালোবাসাসে সব কথা তুলে রেখেছো

তোমার বন্ধক রাখা ভালোলাগা দের নামাও টেনেতোমার ভীষণ কাছে আনো তাদের

সেই যে একবার বাসে করে ফেরার সময় আকাশটা সূর্যাস্তের লালহলুদে ঢেকে মেঘকে দেখে

মনটা গেয়ে উঠেছিল — “ওগো সিঁদুর রাঙা মেঘ

তখন ভেবেছিলে আর মনে মনে বলেছিলেএকটা ভাল ক্যামেরা কিনব আর পাহাড়সমুদ্র বনগ্রাম সহ সব কিছু ছবি তুলে নেবোসাজিয়ে নেবো আর মনটা ভরিয়ে তুলবো — হয়নি

একবার এটাও মনে হয়েছিলছাত্রীদের পড়াশোনার সাথে কত জীবনের ওঠাপড়া,

কত ঈর্ষা – হিংসা – প্রতিকুলতাসবকিছুকে জয় করে লক্ষ্যে পৌঁছানো তাতেও সব পাওয়া নয়

উচ্চশিক্ষার প্রতিকূলতাএকটা ভালো কাজের জন্য কত প্রতিযোগিতাএদেরই সুখ দুঃখ নিয়ে একটা ফিল্ম বানাবো — সেটাও তো হয়ে ওঠেনি

তাই ভালো করে ভেবে দেখো – যেটুকু কাজ করেছো বাকি আছে তার চেয়ে অনেক বেশী কাজ 

আমার চারপাশটা কেঁপে উঠলমনটা বিদ্রোহ করে বলে উঠল,

এতদিন পরে চাওয়াপাওয়ার হিসেব মেলাতে চাইছো ?

সবার কাছে ভালো হতে চেয়েছ,

নিজের শরীর যন্ত্রটাকে ভেঙেছ,

মনের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে পিষে মেরেছ,

কি খেতে ভালোবাসো সেটাও তো ভুলেছ,

কি রং তোমার পছন্দ সেটাও তো বিস্মৃত,

ভূতের মতন দিন থেকে রাত আর রাত থেকে দিন,

এভাবেই বছরের পর বছর পার করেছো

এখন কি আছে তোমার চাইবার ?

সেই অভ্যাসও তো শেষ হয়েছে বারবার

নিজেই আমি যেন নিজের কাছে আজ অপরাধী

আমি আমাকে ঠকিয়েছি

আমাকে অভুক্ত রেখেছি

আমার ইচ্ছার টুটি টিপেছি

আমার হাতেপায়ের শিকল কাটতে বিদ্রোহ করতে পারেনি

সুন্দর সকাল গুলোকে দুশ্চিন্তা দূর ভাবনায় ভরেছি

সকলের কাছে ভালো হওয়ার চেষ্টা করেছি

বারবার আঘাত প্রত্যাঘাতে হেরেছি

নিজের দুঃখে নিজেই কেঁদে উঠেছি

চোয়াল শক্ত করে নিজেই নিজেকে বোঝাই আর তখনই —

হাতদুটি বলে উঠল আমরা আছি

পাদুটি বলে উঠল আমরাও আছি

হৃদয় বলল প্রাণভরে চারপাশটা দেখো

তোমার প্রতিটি দিন হোক নতুন উদ্যোগের দিন

প্রতিদিন হোক তোমার নবনব জন্মদিন

আমি আর আমার হৃদয়

দেহ আর গেহ

আমাদের বন্ধুত্ব বড়ই গভীর

আর আমাদের সাথে লেপটে আছে

আট কুঠুরি নয় দরজা

 

সমাজ গরিলারা পোলার বিয়ারের নজরে

পাঠাতে চায় বরফের বাগানে

আমরা অট্টহাস্য হাসি

ওরা শোনে ভূতের বাঁশী

আমাদের রক্ত লাভার উদগীরণ ওরা দেখেনি কখনও

 

পাখির মত ঘোড়ার মত উড়ুক্কু লাফ লাফাই

আকাশগঙ্গা পবিত্র জল ঝরায়

আমরা ভাসি ডুবি আবার ভাসি  আর

আট কুঠুরি নয় দরজার ভুলভুলাইয়ায় বন্ধখোলা খোলাবন্ধের খেলা খেলি

সে খেলা ভীষণ রকম হার্দিক সাপের মত শারীরিক

আমাদের ভাত কাপড়ের ভাবনায় তুড়ি মেরে বলি

সে এক প্রাগৈতিহাসিক আটপৌরে গতানুগতিক দার্শনিক

 

আমাদের পেট পিত্যেশ তলপেটে গেছে হজমে

লাজলজ্জা ভয়ডর

সব গেছে মরে মরমে

উড়ন্ত বলাকার মতো উড়ছে মন ঘূর্ণিপথে,

সে কোন ঝড় নয়চঞ্চল গতিময় তোমার জন্য

সাতখেয়ালে আঁকছি আল্পনা কত,

জ্বলন্ত প্রেমের শিখা অন্য আকাশে অনন্ত আপন ভোলা

সিঁড়ি সিঁড়ি গড়েছো কত ধাপে ধাপে,

চলে এসেছি সেই পথ দীর্ঘ দিন হতে

অমর আমি নই,তুমিও নয় তা,

অমর মহাকাব্য লিখা হবে আমাদের প্রেমে

স্পর্শ সুখ জগৎ জাগতিক,স্বর্গীয় হৃদয়ের অনুভব,

এ খেলা চির লীলাপূর্ণতাই ভরে ভরে থাকঅন্তর মন সব

মনে পড়ে তোর ? গত শ্রাবণের রাতে,

     কথা দিয়েছিলি, ইনিয়ে বিনিয়ে লাজে I

আসবি আবার আমার কাছে ফিরে,

     বৃষ্টি স্নাতা এক এক শ্রাবণের সাঁঝে II        

 

পাগলা হাওয়া বইছে এলো মেলো ,

       লুটোপুটি খায় কদম ফুলের  দল I

মাতাল করা এমন শ্রাবণ সাঁঝে

      আজকে আবার আসবি কিনা বল  ?

 

 রজনীগন্ধা নাই বা থাকুক আজ

         তুই চলে আয় বাতাস এলো চুলে I

  নতুন করে সাজিয়ে তুলবো তোকে                                                                                                                           বৃষ্টি ভেজা প্রথম কদম ফুলে I I

 

 ফিরবে ঘরে বুনো ময়নার দল

           ওদের ডানায় আধাঁর আসবে নেমে I

 সাঁঝবাতি ছাড়া জানবেনা কেউ আর

        এসেছিলি তুই আমার পাহাড়ি গ্রামে II

 

উঠোন তখন শ্রাবণ দখল নেবে

      পাইনের দল বাতাসে উঠবে দুলে I

হবেলালি গুরাসের নেশায় দুচোখ লাল

        কৃত্রিমতার মুখোশ রাখবো খুলে II

 

কথোপকথন চলবে চোখে চোখে

       ভ্রুপল্লবের ডাকে হারিয়ে যাবো I

জমে থাকা সব মান অভিমান গুলো

       শ্রাবণ ধারায় সে রাতে ধুয়িয়ে দেবো II

 

দেখ পাগলী, কেমন বেহায়া আমি

        আমি, ছন্নছাড়া আজও বাউন্ডুলে I

 ফিরবিনা জানি, তবুও খুঁজেই ফিরি

          কবিতা লিখিহঠাৎ কান্না পেলে II

ঘুম পলকে স্বপ্ন ছবি নাস্তানাবুদ —

আলোআঁধারি তুলকালাম কর্নিয়ার পাড়ায় রাত শেষে সকাল রং ছড়ায়বুঝি ‘টিন পাড়া‘-তেও গোলাপের ব্যবসা হয়

 

তোমায় ছুলে বা তোমার সাথে শুলে… আমি খারাপ !

 অথচ কারো সাথে কেউ শুয়েই তো আমি এসেছিমনের প্রান্তদেশে সহস্ত্র ঘটনা কোলাজ…

প্রজাপতি হাসছে রঙিন পাখনায়

 

উপাধ্যায়ের মেয়েকে আমি ভালোবাসি 

ওর ১৬ আমার ১৯জীবনবিজ্ঞান একসাথে পড়ি !

 উপাধ্যায়ের মেয়েকে আমি ভালোবাসি বলিনি বলবো না কোনদিন

 ওর আত্মীয়রা পৈতে পূজারী,

আর আমরা কোরআনজীবিটুপি ধাড়ি

 

 এসো আলো

প্রদীপ জ্বালো –

এস বিষ

ধানের শীষ –

এসো তুমি

ওষ্ঠ চুমি ,

 

পাশের বাড়ির কাকু পড়াতে পড়াতে হাতে দাঁত বসিয়ে ছিল,

যন্ত্রনা না ভালোবাসাভালোলাগা বলিনি কাউকে কোনদিন

কাকু এখন অন্যলোকে

 

 আমার প্রথম ভালোবাসা

এমন শুকান দিনচরচর করি ঠোঁট ফাঁটে

কথা কইতে কথা আউলি যায়

মোর ঠাঁটের জনম বালুশা মাটিত মিশে

গড়ামড়ি খায়শোক ছিটায়

ফির ভৈভৈ করি ধুলা ওড়ে দাঁত খ্যাঁকটে হাসে

একনা পাতা দুকনা পাতা সৌগ ঝরি যায়….

 

কাহো কয় শুঁকি গেইছেকাহো কয় মরি গেইছে

কাহো কয় ঠলঠলিয়া নাইগছেকাটায় খাইবে

শুকান টুঁটিত জল বান্দে বিষের মতন !

মনটা কয় তামোন গোঁমা সাপের বিষ দেহাত মাখোং

গাওখান সেঁকি সেঁকি কুরুশ্ বানাইম মুই

চন্ডাল হইমরুদ্রাক্ষ ধারণ করিমমরা সাপ

গালাত পোল্টে চিল্লাইম…. মহাকালমহাকাল!

রবিশশিমিতালী কোথায় তোরা ?

চল খেলতে যাই,

বিকেলের সেই দিগন্ত জোড়া মাঠ

খোলা আকাশ আর আমাদের ছেলেবেলা।

এক্কাদোক্কাগোল্লাছুট আরো কত খেলা

বিকেল গড়িয়ে হতো সন্ধ‍্যা।

 

এখন মাঠগুলো বড্ড উদাসীন

পুরোনো খেলাগুলিও মলিন

ছেলেবেলা আর নেই তো ছেলেবেলা

সব-ই যেন বড়বেলা।

 

সবুজ ঘাসে গড়িয়ে

সমস্ত শরীর হতো সবুজ

মুক্ত বাতাসে মনে লাগত দোলা।

এখন বাতাসে বিষ,

জানালার গরাদে হাত দিয়ে

কাটে ছেলেবেলা।

 

এখানে এসে মিশে গেছে সবুজের কথা সবুজে

মরা তিস্তা তিস্তা ছাড়িয়ে জলঢাকা তারপর

শুধু সবুজ আর সবুজে সমগ্র ডুয়ার্স যেন মেতে উঠেছে

গয়েরকাঁটাহাসিমারাকালচিনি ছাড়িয়ে নিঃসঙ্গ “দমনপুরে

এখানে সবুজ মিশেছে সোনালী ধানে আর নিঃসঙ্গতা মিশেছে

নীরবতা বিচ্ছুরিত সালিনতায় ভরপুর নোনাইয়ের অবিন্যস্ত চরে

এখানে ঝিঁ ঝিঁ পোকারা ডেকে যায় অবিরত সুরে

একটানা অভিযোগ আর বিদ্রোহের সবুজ সংকেত দিতে দিতে;

সরল খেটে খাওয়া মানুষ গুলো ছন্দেছন্দে মিশে যায়

গহীন দমনপুরের রূপের অলক্ষ্যে ঘুমিয়ে থাকা

কালকূটসিকিয়াঝোরাগরমবস্তীরাজাভাতখাওয়া আর মাঝেরডাবরিতে

এরা সরল স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে খুঁজে নেয়

বেঁচে থাকার রসদ শালগামারসেগুন আর কদমে

এখানে এসেই থমকে দাঁড়িয়ে স্মৃতি যেন পারি দেয় তোমার শহরে

যেখানে ইটকাঠপাথর আর জীবনের ইঁদুর দৌঁড়ে হাঁপিয়ে উঠে

তুমি ভুলে যাও সব গুলো বিকেল সবগুলো সন্ধ্যেআর

তোমার প্রতীক্ষায় বসে থাকা জয়ন্তীর দীর্ঘ নীরবতাকে 

অনাদিকালে সৃষ্টির প্রাক্কালে

বিধাতার দ্বারা সৃষ্ট প্রাণগুলির মধ্যে

তকমাআঁটা এক প্রজাতি আমিনাম “ নারী

একতাল কাদার প্রলেপে বিধাতা গড়েছেন

আমার নরম তনুযাকে ইচ্ছে মতো ভেঙেচুরে

গড়ে নেওয়া যায়

মমতাময়ী এক মনের সাথে দিয়েছেন

অপরিসীম ধৈর্য্য আর কষ্ট সইবার

বাঁধহীন শক্তি

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আমার কোমল শরীরে হানে লোভনীয় দৃষ্টি,

আমার সহ্যশক্তির ক্ষমতাকে বারে বারে

ভুল করে আমার দুর্বলতা ভেবে

তবুও এই সমাজই আমাকে উপহার দেয়

জাঁকজমকময় একটি সমারোহপূর্ণ  দিবস

আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে অনুরণিত হতে থাকে,

আজ আমার মান রাখবার দিন,আজ আমার বড্ড

সম্মানের দিন….. আজ যে নারীদের স্বাধীনতার দিন

 

প্রতিনিয়ত সমাজসংসারের কাছে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে দিন কাটে যার,

তার জন্য নাকি রাখা আছে বিশেষ একটি দিবস!

অপরের খুশীতে নিজের সকল ইচ্ছেকে বিসর্জন 

দিতে হয় যার,

তার খুশীর জন্যও নাকি বরাদ্দ আছে

একটি খুশীর দিবস!

সে নাকি “নারী দিবস”!!

 

বাপের ঘরের লক্ষী আমি,

শ্বশুর ঘরে ছাপ্পা লাগে অলক্ষী

পাপ নিবারণে আমাকে সমর্পিত হতে হয়

অগ্নিদেবতার পদতলে

তখন কোথায় থাকে এই নারীবাদী সমাজের নারীদিবস ?

নারী গর্ভে পুত্রের বদলে যদি আসতে চায়

আরেক নারী,তবে আজও কেনো নিপীড়িত হয়

নারীমাতাকে ?

নিপীড়কেরা কেনো ভুলে যায় তার গর্ভধারণী মায়ের নারীত্বকে ?

 

পণ্যের মতো নারীকে বারে বারে বিকিয়ে যেতে এঘর থেকে ওঘরে !

তরলের ন্যায় বারে বারে বদলে দিতে হয় আকারকে !

 

আমি নারী …আমি শিক্ষিত হই বা অশিক্ষিত,

আমায় হতে নেই বীরাঙ্গনা

এক লালিত্যমাখা ভদ্রতার চাদরেই

আমাকে বিছিয়ে রাখতে চায় সমাজ

সমাজের কোনো নিয়ম ভাঙবার

অধিকার নেই আমার,তবে ইচ্ছে করলেই

সমাজ তার নিয়ম ভেঙে আমায় করতে পারে পদাঘাত

 

আজ একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতার জৌলুষতায় দাঁড়িয়ে,সমাজের কাছে আমার বিশেষ পাওনা

একটি নাটকীয় দিবসের

মঞ্চের পর মঞ্চ সাজিয়ে আমাকে নিয়ে ওঠে

বক্তৃতার ঝড়

নারীকে যারা ভোগ্য মনে করে,

যাদের কাছে নারীর আশ্রয় পদযুগলের নীচতলায়,

তারাও আজ বড্ড উচ্চস্বরে গেয়ে ওঠে

নারীকুলের জয়ধ্বনি

আমার গলায় বরণমালা সাজিয়ে

পালন করে আমার স্বীকৃতির দিবস

সে নাকি “নারী দিবস

 

নোংরা সমাজের কলুষিত দৃষ্টিতে

হতে পারি ভোগ্যপণ্য,

তবুও বিশ্বের দরবারে আমি এক মাতৃসত্ত্বা

আদি অনাদিকাল হতে আমার বক্ষে লালিত হয়েছে

সুরাসুরেরা

সুরের দিয়েছে যতই সুখ,

অজ্ঞনতার প্রলেপ মেখে

অসুরেরা হেনেছে ততই দুখ

বহূবার  পিষ্ট করেছে আমায় পদতলে

আমি নারী…..তাইতো বিধাতার প্রদেয়

নিজ গুণে ,নিজ ধর্মে

বারে বারে ভালোবেসেছি প্রতিটি প্রাণকে

জয় করেছি সকল বাধা সকল প্রতিকূলতাকে

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পায়ে পা মিলিয়ে

উঠতে শিখেছি উচ্চশিখরে

তীব্র ঝড়ের মুখে বিরাট মহীরুহ হয়ে

বাঁচিয়েছি আমার আশ্রিতকে

উদ্দাম স্রোতের মুখে নাও বেয়ে

পার হয়েছি খরস্রোতা নদী

আমি নারীতাইতো আমিই পেরেছি

সকল কষ্ট সহ্য করে,

দুঃখকে অতিক্রম করে,

জগৎকে শান্ত রাখতে

সুশৃঙ্খলতার বাঁধনে বেঁধে

শৃঙ্খলতার আগল আঁটতে

মনোরমা দেবী আজ খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে মন্দিরে যাবার জন্য সেজেগুজে প্রস্তুত পরিমল বাবুর প্রতিদিনের মতো আজও সকালে ঘুম ভাঙে কিন্তু আজ দেখেন বিছানায় গিন্নি নেইভাবলেন বাথরুমে গেছে বুঝিবাথরুম যেতে দেখেন গিন্নি সেজেগুজে কোথাও যাবার জন্য প্রস্তুত তিনি তো অবাকএত বছর বিবাহিত জীবনে এত সকালে গিন্নি কে এই সাজে দেখেননিতিনি অবাক হয়ে ডাকলেন কিগো মনা তুমি এত সকালে সেজেগুজে কোথায় চললে গিন্নি হাসতে হাসতে বললকেনো তোমার মনে নেই আজকে কোনদিন গিন্নির  মুখে হাসি দেখে পরিমলবাবু ভাবলেন এতো ঝড়ের পূর্বাভাসআমতা আমতা করে বলেন না মনে নেই গিন্নি রেগেজানতাম তোমার মনে থাকবে না হতো সবিতার জন্মদিনতাহলে মনে থাকতো পরিমলবাবুহ্যা হ্যা আজ তো তোমার জন্মদিন তোমায় সারপ্রাইজ দেবো বলে কাল থেকে ভেবে রেখেছি গিন্নি চুপ আবার মিথ্যে কথাআজ আমার জন্মদিন বেশ রাগত স্বরে বলল,মনে কর,মনে কর দেখো কি অনর্থ করি পরিমলবাবু তাড়াতাড়ি বলল হ্যা হ্যা মনে পড়েছেআজ আমার  জন্মদিনতা বলোনা ঠাকুরের কাছে আমার জন্য কি প্রার্থনা করবে গিন্নি চুপ কি শখআহ্লাদ দেখোওনার জন্মদিনআমি নাকি ভোরবেলায় মন্দিরে যাব কেনো যাবো__? আরও জোরে চিৎকারশোন ওসব অজুহাত চলবে না বললেই হোল মনে নেই সারাদিন সবিতা কে নিয়েই তোমার ভাবনা আমাকে নিয়ে তোমার ভাবার সময় কোথায়আমি কোনো কথাই শুনব না এই আমি চললাম মন্দিরে এসে চাজলখাবার সব ঠিকঠাক থাকে যেনো আর হ্যা গোপনের মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিও পরিমল বাবু বাড়ি পাঠিয়ে দিলে ঘরের কাজরান্না কে করবে গিন্নিরান্না করতে হবে না ঘরের কাজ যেটুকুতুমি করে রাখবে পরিমলবাবু আমি করব রান্না হবে না আমি অফিস যাব না আমরা খাব না গিন্নি দেখো কি ক্যাবলা, হ্যাবলা, এখনও যদি মনে পড়ে আজ আমাদের বিয়ের ২৫বছর পূরন হলো এসে জলখাবার খেয়ে আমরা কোথাও বেড়িয়ে পড়ব সেখানেই দুপুরে খেয়ে নিব আজ অফিস যাওয়া চলবে না অফিসে ফোনে জানিয়ে দাও এবার গদগদ স্বরে গিন্নি পরিমলবাবু কে বলেসেনকোগোল্ডে একটি হীরের হার দেখে এসেছিওটা কিন্তু আজ কিনে দেবে সংগে এটিএম কার্ড টা নিয়ে নিওএই বলে মনোরমা দেবী বেড়িয়ে গেল পরিমলবাবু সোফার উপরে বসে পড়ে জোরে চিৎকার করে বলেনতোমার ঠাকুর কে বলোহীরের হার কিনবার মতো টাকা যেন ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেয়

কখনো কখনো ছায়ারাও সঙ্গ ছাড়তে চায়

যাপন পথ ঘোলাটে হলে আলোআঁধারীর ছায়াপথও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে

 

নাম না যানা রূপকথার গল্পের শিরোনামহীন কাহিনির

চিত্রপট রচিত হয়

 

সেই কবে থেকে আমার পথচলা

জানা অজানার সীমানা ছাড়িয়ে আজও

সমানে চলেছে আমার অন্বেষণ

 

কখনো কখনো নিজের অশরীরী ছায়া অস্পষ্ট চাহনিতে চেয়ে থাকে

নির্বাক তার দৃষ্টিতে

নিবিড় হয় অটুট বন্ধন

আমাজনের দাবানলের মতো

ধ্বংসলীলায় মাতে উত্তাল নৃত্য

মহাবিশ্বের মহাকাশে সৃষ্টির প্রথমতম

সূর্যের প্রাণময় জন্মমুহূর্ত থেকে

প্রবল উত্তাপে উন্মত্ততায়

জীবনের কত সহায়তায়

প্রচন্ড শৈত্যতায় দেয় উষ্ণতার পরশ

উৎসবাগ্নি বনফায়ারের চারপাশে

উৎসবে মেতে ওঠে

চিতার আগুনের কাছে

শোকে আচ্ছন্ন থাকে

দুষিত বস্তুর কালো ধোঁয়া

দুষণ ছড়ায় চারিদিকে

মারনরোগ আর ধ্বংসের পথে

এগিয়ে চলেছে পৃথিবী

প্রজ্জ্বলিত কর্পূরের মতো

সুগন্ধ ছড়াবে একদিন

আলোর দিশারী নিয়ে জ্বলে উঠুক

প্রদীপের অগ্রে শুভ অগ্নিশিখা

ভুবন থেকে জীবন

সর্বত্রই হোক দীপান্বিতা

পাখি তুই ভাঙরে খাঁচা

শিকল ছিঁড়ে যা উড়ে যা আকাশ পারে

যেথায় কেবল মেঘের খেলা, সারাবেলা

কি খুশিতে ওই দুখানি পাখনা মেলা

কিসের আশায় লোহার খাঁচায়

বন্দী হয়ে থাকিস

 

পাখি তুই ভাঙরে খাঁচাশিকল ছিঁড়ে যানা উড়ে আকাশ পারে

 

রোদের আলোয় সারাবেলা

ভেসে বেড়ায় মেঘের ভেলা

এসব ছেড়ে কিসের আশায় বন্দী হয়ে থাকিস ?

 

এখানে তো সবই মেকি

জীবন যেন শুধুই ফাঁকি

তবুও তো বেঁচে থাকি

কিসের আশায়কিসের মায়ায়

শুধুই বেঁধে রাখিস

 

পাখি তুই ভাঙরে খাঁচা

শিকল ছিঁড়ে যানা উড়ে আকাশ পারে

একটু সর

নয়তো আমার হাতটা ধর

কতদিন ধরে দাঁড়িয়ে আছিস এক জায়গায়

আমিও প্রতিদিন যাই সেই জায়গায়।

ওখানে দাঁড়িয়ে কি করিস ?

আমার কথাই কি ভাবিস ?

আমার বাড়ি তো সাঁকোর ও প্রান্তে

আয় না চলে পার হয়ে এ প্রান্তে……

সাহস আছে তোর ?

না থাকলে কেটে পড়।

মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখি তোকে,

ভাবি, কিছু বলবি কি আমাকে……

মন শিহরিত হয়

পুলকিত হয় হৃদয়।

শুধু তোর কাছে গিয়ে একগোছা ফুল নিয়ে

হাতটা দিই বাড়িয়ে,

ফুলটা দিই এগিয়ে-

চোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করি……

তোর দিক থেকে সাড়া না পেয়ে

চোখটা ফেলি খুলে

তাকয়ে আমি স্তব্ধ-

হতবাক হয়ে দেখি

তুই যে অন্ধ।

সাংবাদিক সাংবাদিক

নেই কোন তার দিক বে-দিক ।

সকাল থেকেই রাত,

শুধুই শুধু খবরের নেশায় কুপোকাত।

বাড়ি থেকে বের হই রোজ মুঠো ভাত খেয়ে,

জানে না সে আজ আবার কখন সে খাবে।

অফিসে থাকেন বস চেয়ার-গুণে,

কত যে খবর করিদিতে হয় দেখেশুনে।

বাড়ি থেকে ফোন করে বউওখানে খেয়েছো কি কিছু,

অফিস থেকে তখনই ফোন করেন বসমিস করলে নাকি কিছু।

আমরা যারা সাংবাদিকতা করিতারাই শুধু খবরের চক্রাকারে ঘুরি,

অন্যের কোন অসুবিধা হলেতখনি কলম ধরি।

নিজের ঘরে এত সমস্যা তা কি কখনো কাউকে বলি,

বলিনা বলেই তো আমরা সবাই শান্ত ভাবে চলি।

বাড়ি থেকে যখন বের হইঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি,

সারাদিন আমি যেন ভাল ভাবে চলি।

আমাদের মাস মাইনা হয়তোতেমন কিছু না,

কিন্তু আমি যে সাংবাদিক হয়তো অনেকেই বোঝে না।

আমরা যখন কষ্ঠ করে খবর করি রোদ বৃষ্টি ঝড়ে,

ওই সময়ে অনেক মানুষ খবর দেখে বসে ঘরে।

আমরা সাংবাদিক ভারতের সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ জানি,

খবর করতে গেলে আবার কোথাও কোথাও হই হয়রানি।

অনেক খবর করতে গিয়ে আঘাত আসে জানি,

এর পরও খবর করতে আমাদের কেউ হাল ছাড়েনি ।

এত কিছু শুনেও প্রসাশন তবু অবুঝ

এরই মাঝে খবর করে বেঁচে থাকবো সাংবাদিক চির সবুজ।

হাই রূপস,

       কেমন আছিস বল এই ডিজিটাল যুগে হাতে লেখা চিঠি অবাক হচ্ছিস না রে ইচ্ছে হলো  সেই কবে তোকে লিখেছিলাম সেটা পড়ে খুব হেসেছিলাম দুজনে ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম তুই দিসনি জানিস রূপা সরি রূপস এই নামেই তো আমি ডাকতাম যাক গে যেটা বলছিলাম কয়েকদিন থেকে তোকে খুব মনে পড়ছে বেশী বেশী করে প্রতিদিনই পড়ে সকাল থেকে রাত তবু এখন অনেক বেশী মনে আছে তোর ? first year এ ভর্তি হতে এসে আমি যেচে গিয়ে আলাপ করেছিলাম তুই একটু বোধহয় বিরক্ত হয়েছিলি বিশ্বাস কর আমি ঐ প্রথম নিজেকে আটকাতে পারিনি তোর ঐ দাঁত চেপে হাসি আমার এখনো মনে আছে কোন ছেলে তোর সাথে  কথা বলতে এলে আমি কি করতাম!! তোদের মাঝখানে অযাচিতভাবে ঢুকে পড়তাম কেউ তোকে দেখলে আমি কিছু বলার জন্য এগিয়ে যেতাম আর তুই আমায় টেনে আনতি রেগে গিয়ে বলতি যে বিয়ের পর আমি যেন তোকে শো কেসে রেখে দি আসলে আজ বলতে অসুবিধা নেই যে আমি তোকে এতটাই ভালোবাসতাম যে তোকে সবসময় হারানোর ভয় পেতাম তুই সেই সময় বলতি যে ভালোবাসা হবে খোলা আকাশের মতোনদীর মত আমি তখন মনে করতাম ভালোবাসা তো চঞ্চল হবার কথা নয় সে হবে স্থির শান্ত দীঘির মতো দেখ সেই হারিয়ে ফেললাম তোকে তুই ঠিকই বলতি আমাদের দুজনের ভালোবাসার ধরণ নাকি আলাদা হয়ত তাই তবে আমার ভালোবাসা তো আমার মতোনই হবে তুই এখনো পলাশশিউলি এগুলো ভালোবাসিস গান করিস ?  আবৃত্তি তুই এগুলো খুব ভালো করতি মনে আছে তুই মডেল হবি বলে হঠাৎ করে খুব উদ্যোগী হলি আমি বারণ করায় ভুল বুঝলি তারপর ছমাস কথা বন্ধ তুই ভেবেছিলি আমি জেলাস করছিলাম না রেতা কেন করবো আমি ! সেটা আমার চরম শত্রু ও বিশ্বাস করবে না আমি তোকে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম তোর গায়ে যেন পাঁক না লাগে সেটাই ভেবেছিলাম অবশ্য তুই বলবি, অন্যের জন্য কেন নিজের জন্য বাঁচবো তা হয়ত ঠিক তবে শুধু নিজের জন্য বাঁচলে একটা সময় খুব একা হয়ে যেতে হয় তুই নিশ্চয় এখন রান্নায় আরো পটু হয়েছিস তোর হাতে জাদু ছিল আসলে আমার প্রফেশনটা সে সময় কেউ মেনে নিতে পারেনি তুইও না তুই বলেছিলি জীবন একটাই বাঁচলে সেভাবেই বাঁচবো তোর জীবিকার থেকে এটা তো….  বলে থেমে গেছিলি নিজের অপদার্থতা আরেকবার প্রমাণ হয়েছিল আমি গিয়েছিলাম তোর বিয়েতে কার্ড দিয়ে নেমন্তন্ন করেছিলি কিন্তু ঢুকতে পারিনি কে যেন পায়ে পেরেক গেঁথে দিয়েছিল ভীষণ রাগ হয়েছিল নিজের ওপর বাড়ি চলে আসি খেতে পারিনি অবাক কান্ড মাও খেতে সাধেনি শুধু নিঃশব্দে মাথায় হাতটা রেখেছিল ঐ দেখ যেটা স্বেচ্ছায় ফেলে গেছিস সেটা আবার মনে করাচ্ছি সত্যিই মুহূর্তগুলো কখন স্মৃতি হয়ে যায় তারপর হঠাৎ করে মাও চলে গেলেন আরো একা হয়ে গেলাম তবে তোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ তুই শিখিয়েছিস যে কাছের মানুষভালোবাসার মানুষকে কিভাবে ভুলে থাকা যায় আর কোন মেয়েকে এরপর থেকে বিশ্বাস করতে পারিনা তাই আর ও পথ মাড়াইনি সেদিন রাস্তায় অনুপম আর প্রিয়ার সাথে দেখা হলো ওরা ভালো আছে ওরা কথা রেখেছে কথা প্রসঙ্গে তোর কথা উঠল বলল তোর কলোনিতেই নাকি ওরা ফ্লাট কিনেছে আমি ঠিকানা নিলাম ওরা ভাবলো আমি যাবো বলল, তোর ওখানে যাবার আগে যেন ওদের ওখানে যাই আমি হেসেছিলাম ওরা বলল, তোদের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে খুব তোড়জোড় দিয়ে সংসার করছিস খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল অন্তত দুর থেকে হলেও দেখে আসি পারিনি ইগো নাকি নিজের অবস্থান যাকে সুন্দর ভাবে ছেঁটে ফেলেছিস যাকে কেউ দেখলে বা সে অন্যকে দেখছে তাতে ঈর্ষাতে ফেটে পাড়তাম আর অন্য কেউ স্পর্শ…… থাক আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম তার আগেই প্রিয়া বলল জানো অনীক রূপার কাছে ওর হাজবেন্ড কিন্তু হিরো ও দিগন্ত কে নিয়ে মানে ওর স্বামীকে নিয়ে প্রচুর লেখা লিখেছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকাতে ওর লেখার হাত তো খুব ভালো তুমি তো জানোই প্রিয়া হয়ত বুঝতে পেরেছিল যে আবার আমার কোন দুর্বলতা প্রকাশ হতে পারে বলেছিল আমার মোবাইল নম্বরটা দিতে লেখা গুলো পাঠিয়ে দেবে আমি বললাম যে আমার মোবাইল ফোন নেই একটু অবাক হয়ে ওরা চলে গেল ভালো লাগলো খুব ভালো লাগলো তুমি ভালো আছো ভালোবাসার মানুষ নাকি ভালো থাকলেই ভালো তা তাকে অন্য এর কাছে সঁপে দিলেও জানিনা, এ কেমন ভালোবাসা বদলাইনি জীবিকার মতো মনটাও যে ছোট যাকগে বাদ দে শুধু একটা উত্তর জানার খুব ইচ্ছে থাকল যে এই ক বছরে তোর কি এক মুহুর্তের জন্যও মনে পড়েনি যোগাযোগ করার ইচ্ছে করেনি মনে হয় করেনি না হলে এত নির্লিপ্ত থাকলি কি করে আবার দেখ মিডিয়ার মত ডিশিসন জানিয়ে দিলাম যাক গে আমার ঠিকানা পাবিনা জানি যোগাযোগও করবিনা না দোষারোপ করিনি ভুল বুঝিস না মনের অব্যক্ত কথাগুলো বললাম এই কারণে যে এবার হয়ত তোর মত আমিও ভুলতে পারবো জানি না কী হবে ! দিগন্তকে খুব ভালোবাসিস তাই না আর হয়ত কোনদিন দেখা হবে না এটাই আমার তরফ থেকে শেষ যোগাযোগ সবশেষে বলব ভালো থাকিস 

                                                                                        অনীক

সবুজ বনের বন্য বাসর ডুয়ার্স তোমার মান,

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ পাটের  দৃশ্য

ডুয়ার্স তুমি দর্শী মেয়ে ডুয়ার্স তুমি শান্ত,

নীল আকাশের রুপোলী মেঘ অমল শুভ্রকান্ত গুঞ্জন

আর পাখির কুঞ্জন ডুয়ার্স তুমি বেশ

আকাশ বাতাস বলছে ডুয়ার্স বন সবুজের দেশ,

ছোট্ট নদীর এঁকেবেঁকে গাহিছে কোন গান,

দূর পাহাড়ের নীলের আভাস হাতের মুঠোয় বিশ্ব

মন মাতানো মাদল সুরে উদাস করে চিত্ত

জিতিয়া করম পরব শেষে ঝুমুর তালে নৃত্য|

ডুয়ার্স তোমার স্নিগ্ধ বায়ু শীতল তোমার স্পর্শ

পাহাড়চূড়ায় একফালি রোদে জানায় তাদের হর্ষ

ডুয়ার্স তুমি স্বপ্ন সবার মনের রঙ্গীন আশা

ডুয়ার্স তুমি ফোটাও কবির ছন্দ লেখার ভাষা

স্বপ্ন যখন হাতের মুঠোয় হয়না কোনো শেষ

চাবাগানের মিষ্টি আলোয় ডুয়ার্স তুমি বেশ

রাত্রির কোষে – কোষে

রাত্রি ঘোরাফেরা করে

পোষিত অন্ধকার

দুলে – দুলে ওঠে

নিঃশব্দ পদচারণে

চুম্বনে চুম্বনে

তরল হয়ে আসে

সাবেকি দ্বন্দ্ব

বাতাস চুঁইয়ে – চুঁইয়ে

কত মরমী কথা

ভীড় করে আসে

খোলা জানালার পাশে

জড়িয়ে আসে

ব্যাকুল মনের ভেজা পথ

তবু জীবন শুধুই

জীবনেরই খোঁজ করে

রাত্রির কোষেকোষে

কেবল

রাত্রিই ঘোরাফেরা করে

এই যে মোদের সোনার তরী

বসে আছি বৈঠা ধরি,

তুমি যখন চলতে বললে

দেখি পালে বাতাস ভারী

আপন মনে জল ঠেলে যাই

পথ হারিয়ে কিনারা না 

অমনি তুমি ত্রাতা হয়ে

দেখাও মোরে পারি

তুমি বা কে আমিই বা কে

ভাবতে ভাবতে জীবন যায় যে,

বুঝতে পারি তোমার আমি

তুমি ছাড়া আছেই বা কে ?

তবু আমি দিশে হারা

প্রবৃত্তি মোর দেয় যে তাড়া

আমি তখন পাগল পারা

জানি আমি তুমি হারা

তরী যখন ডুবন্ত প্রায়

ত্রাহিত্রাহি ডাক ছাড়ি হায়,

বললে ওরে অবুঝ নাইয়া

বেহুঁশ হয়ে চললে বাইয়া !

কোথায় গেল এখন তারা

নিত্য মত্ত সঙ্গী যারা ?

নভঃতল ঐ শশী হারা

নয়নে বয় বারি ধারা

একটা শুকনো বীজ দিয়ে গেল পাখি

তখন ভোরভোর

                   ঘুমভাঙানিয়ার সাদা ছায়া

                   এই নাও ম্যানড্রেকের যাদুকাঠি

 

মাটি রেখো

একটু জল

অঙ্কুরোদগম হলে মাঝে মাঝেই দিও অণুখাদ্য

 

গাছ

একদিন ছায়া দেবে

                 অম্লজান

পৃথিবী জয় করার ছাড়পত্র

গোপন আক্রমনের জন্য চাঁদ উঠল

অন্ধকারের সঙ্গে লড়াই জমে উঠবে

 

সন্ধ্যা ঘন হচ্ছে রাত্রির রঙে

মেঘেরা দাঁড়িয়ে গেল

                চাঁদের মুখোমুখি

 

অন্ধকারের ঘন ছায়ায় চাঁদ দেখা যাচ্ছে না

যুদ্ধ হয়নি

অন্ধকারের রক্ত পেলাম না কোথাও

 

কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে কত

তকমাফলক পুষ্ট আড়ম্বরে

লিখে ফেললেই কবিতা হয়না

বুঝেছি অনেক পরে

 

কথার ফোয়ারা ছুটিয়ে অনর্গল

আড্ডায় প্রেমে  সেমিনারে

শব্দমুখর জয়োল্লাসের শেষে

হেরেছি অনুচ্চারে

শুনশান নিস্তব্ধ অন্ধকারে –

চারিদিকে যতোদূর তাকাও –

উত্তার সমুদ্রের ঢেউ আর গর্জন !

মাঝে একাকী দাঁড়িয়ে –

তুমি লাইটহাউস !

দূরাগত জাহাজ কে দেখাচ্ছো

পথের নিশানা।

সার্চলাইটের আলো ঘুরছে-

জলের উপর এদিক- সেদিক,

তোমার দেখানো পথে –

জাহাজের মিছিল –

চলে যায় দূর হতে দূরে-

তোমাকে একলা রেখে !

লাক্ষাদ্বীপের প্রবালে প্রবালে-

তোমার আলোর ঝলকানি,

মিনিকয় থেকে কাভারত্তি হয়ে-

কালপেনির লেগুনের কোরালে !

নিরালা সাগরবেলায় দাঁড়িয়ে –

ঘরে ফেরার গান গাইছো-

তুমিএকাকী লাইটহাউস ! 

একটা নারী সে যেন বহু রূপে বহুরূপী 

কখন সে জায়া প্রেমময়ী সাহধর্মি,

কখন সে পিতা মাতার স্নেহ ধন্যা কন্যা,

সন্তান কামনার তৃপ্তি দানে ধন্যা

কখনো সেই পুত্র কন্যার স্নেহময়ী জননী

সংসার সুখের হয় যদি থাকে ঘরনী

নারী বিনা সংসার আসে বি শিঙ্খল,

নারীর পরসেই আসে সংসারে সুশিঙ্খলা,

এত গুণন্ধিতা রমণী,

পুরুষ তারে ভাবে ভগ্য সামগ্রী

যে নারী কখন তোমার জননী,

কখনো স্নেনময়ী ভগিনী,

কখনো বা তোমার মনরঞ্জনকারী,

পুরুষের ভগ্য সামগ্রী নয় নারী

পুরুষের শত চেষ্টাও হতো যে বিফল,

ধরনী হতো নারীবিহীন বন্ধ্যা,

এত রূপে রূপময়ী নারীরে পুরুষ করো না লাঞ্ছনা

দাও নারীরে পুরুষ যোগ্য স্থানতবেই পুরুষ পাবে তুমি সন্মান

তোমার গহীনে যে  অরণ্য আছে 

তার নাম বৃক্ষরোপণ

 

তুমি এবার প্রার্থনার সকাল হও

আমি রাত্রি উড়াই 

 

অন্ধকারে নিহিত আনন্দেই  ঢলে পড়া চাঁদ

দ্বিতীয়  অধ্যায় খোঁজে 

তুমি  কি জানো তোমার ফেলে আসা পায়ের ছাপে

আমি খরস্রোতা নদী হই

 

তুমি জল ফোঁটা গায়ে

ভিজে সকাল হয়ে  এসো

গা বেয়ে জলজ কথা 

 

আমি মেঘ আলনায় সুখ শুকতে দি…. 

দেখো যেন রোদ না ওঠে..  

সম্পাদকের কথা

 

পরিস্থিতি ফের বিরূপ না হলে খুব শিগগিরি আমরা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছি। আবার আমরা প্রকাশ্যে মুখোমুখি হতে পারবো। সেই আশায় দিন গুনছি। তার জন্য নানান পরিকল্পনা চলছে। প্রায় বছর দুয়েক কার্যত হাত বেঁধে বসে থাকতে হয়েছে আমাদের। যদিও এর মধ্যে অন্তর্জালে আমরা সক্রিয় থেকেছি। বিভিন্ন জেলাকে নিয়ে অঙ্কুরোদ্গম লাগাতার অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে। তার অংশীদার জলপাইগুড়ি অঙ্কুরোদ্গমও। কিন্তু প্রকাশ্যে না আসতে পারায় ভিতরে ভিতরে যে একটা অনাস্বাদ বাসা বেঁধেছে তা বলাইবাহুল্য। তবে সুদিন এলো বলে জলপাইগুড়ির এই অন্তর্জাল পত্রিকায় সেই আশার আলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আগস্ট সংখ্যা করতে গিয়ে যে বিপুল সাড়া মিলেছে তাতে আমরা নিশ্চিত আগামী দিনে জলপাইগুড়ি অঙ্কুরোদ্গম আরও জোরদার হবে। আমাদের দৈনন্দিন কর্মসূচিও স্বাভাবিক হবে। এই সংখ্যায় আমরা প্রচুর ভালো লেখা পেয়েছি। ভিডিওর মাধ্যমে পেয়েছি অঙ্কুরোদ্গমের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদের নানান স্বাদের উপস্থাপনা। সব মিলিয়ে জলপাইগুড়ি অঙ্কুরোদ্গম-এর আগস্ট সংখ্যার ওয়েব ম্যাগভিস্যুয়াল অবশ্যই সকলের কাছে আকর্ষণী হবে। সবাই ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।

 

মুনমুন ভৌমিক দাম

সম্পাদক জলপাইগুড়ি অঙ্কুরোদ্গম

কবিতা

কমল ভট্টাচার্য

মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

শেখর কর

সপ্তাশ্ব ভৌমিক

গৌতম গুহরায়

কৌশিক চক্রবর্তী(জলপাইগুড়ি)

তপেস দাশগুপ্ত

প্রসূন মজুমদার

নির্মল কুমার ঘোষ

শশাঙ্কশেখর পাল

প্রসেনজিৎ চৌধুরী

রাজীব ভট্টাচার্য

রেবা সরকার

বিউটি আইচ মিত্র

সঞ্চালী রায়

রঙ্গন রায়

হরিপদ দাস

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

মিনতী রায়

সু্শীল রুদ্র

বিনীতা সরকার

তরুণ চক্রবর্তী

দীপালি সাহা

অসীম কুমার রাহুত

প্রদীপ সরকার

সোমনাথ গুহ

তপন চক্রবর্তী

মমতা সাহা

গীতা রায় সরকার

 

গল্প

পারমিতা কর বিশ্বাস

নির্মাল্য ঘোষ

জিকেল দে

সীমা সাহা

এ সরকার

 

নিবন্ধ

অরুণ কুমার

সবিতা সরকার

ভিডিও

নিরুপম ভট্টাচার্য
স্বস্তিকা হাজরা
প্রমীলা চক্রবর্তী
রঞ্জনা সাহা
পিনাকী সেনগুপ্ত
পুষ্পিতা ভট্টাচার্য
সৌর্য সাহা
তিলাঞ্জলি ব্যানার্জী
পায়েলিয়া নৃত্যালয়

 

অনুষ্ঠান সূচি ঘোষনা করল মুনমুন

আমার কবিতা কোথায় যে পড়ব

এগুলো কবিতা নয় শব্দের ঐক্যবদ্ধ মিছিল

 

অনুশাসন আছে    ছন্দ নেই

বর্গাকার উদাসীন ভেঙে পড়ে

শূন্য দৃষ্টিতে কবিতার ক-ও থাকে না

 

একটা লেখা পড়লাম মিছিলের গন্ধ নিয়ে

১.

ভিতরে জমানো ক্ষত থেকে টুপটাপ

নামে রক্তকথা।

সত‍্যি সম্পর্কগুলো

দূরে আরও দূরে হাঁটে নিভৃত কোন

বাণপ্রস্থের দিকে

 

২.

ভাবনাগুলো কখন টুকরো মেঘ। দূরে

আরো দূর কোন স্কন্দাবার অথবা বাথানে

জমে জল আশা নামের গাছের শিকড়ে

সবুজ ক্লোরোফিল ক্রমশ ভিজতে ভিজতে…

স্কেলিটন।

 

৩.

কখনো ভাবিনি বিচ্ছিন্নতাকখনো স্বার্থ…

নিজস্ব রক্ত মাংসে আলাদা নিবিড়

স্বপক্ষ টান দূর গন্ডি টেনে রাখাভাবিনি

এ আঙুল এ কন্ঠস্বর কোন প্রয়োজনে হেঁটে

এসে উদ্বেগ জানাবেজানাতেই হবে…

 

৪.

এখন সময় এমনইটুকটাক কলম অক্ষর

থেকে ডিজিট‍্যাল…শুধু কথন আমায়

দেখদেখে নাও শিঘ্রি।‘ কোথাও বসাও

দুরন্ত শীর্ষ মুকুট আমাকে পরাওনির্বিশেষ

সৌন্দর্য তোমাকেই দিলাম…

 

৫.

তখন শাখায় শাখায় বিন্দু জল

টুপটাপ কথা। ফিস ফিস সুর…অগাধ

সে গান। তখনও বিনম্র উদ্ভাস জল আর

জলে.. টিনের চাল আর ধাতব বালতির

নিবিড় সংযোগ

 

৬.

স্তব্ধতার রাস্তা জুড়ে মাথা তুলে থাকে

পাহাড়। পাহাড়ের শরীরে সবুজপাতাদের

গান প্রতিধ্বনি হয়ে নামে। গলানো

বাষ্পে মুক্তো হয়ে ফাটে ঝর্ণা…

দাঁড়িয়ে আছি জলকুচি ছোঁবো বলে

 

৭.

এখনও ছুঁইনি কিছুই। ক্রমশ ফাঁক ক্রমশ

শূন‍্য সম্পর্ক। সময় কারো নয়। সে নদীর

সঙ্গে হাঁটেমুখ থুবড়ে পড়ে মহাপ্রস্থানের

পথে যেতে যেতে অসংখ‍্য মূল‍্যহীন কিংবা

মূল‍্যবান মুখ… শরীরে তখন ঝর্ণার কুচি

সাদাটে নীলচে জলে প্রাণ হয়ে বাঁচে

সবটুকু সময়

 

৮.

আধো অন্ধকারে দাঁড়াতে ভালো লাগে

বিষন্ন মুখ আলোহীন।আবছায়া বাকি

সময় কেটে যাবে ঠিক দূর প্রদেশের দিকে

নরক দর্শন করব ই জানিস্বর্গদ্বার খোলা থাকলেও…

যাব যাব বলেও যাওয়া হয়নি

প্রশ্বাসের কাছাকাছি

স্বপ্নের নতিস্বীকার

যাপনচিত্র বদলে দেয় সময়

#

যাব যাব বলেও যাওয়া হয় না

ঠিকানা খুঁজে ফেরা বাউন্ডুলে

এভাবেই হারিয়ে যায়

অন্যজন্মের ছায়াপথে…

যমরাজের কোভিড-19 লটারি,

কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।

সপ্তাহমাস পেরিয়ে

বছর  অতিক্রান্ত।

 

100 টিকিটের সিরিজে

দুএকজনের স্বর্গপ্রাপ্তি সুনিশ্চিত।

 

বিক্রেতা অদৃশ্যক্রেতা সন্ত্রস্ত

কিন্তু টিকিটের বিলিবণ্টন

চলছে তো চলছেই!

 

অদ্ভুত অন্ধকার সুড়ঙ্গে

ঢুকে পড়েছে পৃথিবী,

কোথায় শেষ কবে শেষ

কেউ জানে না।

সদর দড়জায় তালা দিয়ে কুয়োতলার রক্ত ধুতে ধুতে

একটা  মুছে যাওয়া কামড়ের দাগ ফুটে ওঠে,

বলোদাঁতের ক্ষত চিহ্নই কি আধিপত্য?

বলোখুনি দস্তানার সাদাই কি তবে আদিগ্রন্থ?

 

পার্সেল ভ্যান থেকে একটা নীরব কান্না ফিরে এলে

ভষ্ম মেখে সীমান্তের শুন্য মুখ তোমার নিজস্ব হয়ে যায়

জানি নিরবিচ্ছিন্ন ক্লান্তি

জানি ঘন দীর্ঘশ্বাস যাপন

জানা গণ্ডীর সীমানা গেছে ফুরিয়ে

ক্ষুদ্র হয়েছে পণ।

 

আমি তোমাকেই খুঁজে ফিরি তবু….

 

বলয় অন্তে আস্তিনে লাগে টান

স্বপ্নেরা খোঁজে হারানো ঘুমের দেশ

একেকটা দিন সাপের মত চলে

নেই গন্তব্যের শেষ।

 

আমি তোমাকেই খুঁজে ফিরি তবু….

 

রাত আসে না রাতের মত সেজে

চারিদিকে শুধু দিগভ্রান্ত দাবানল

পথের দাবী পথেই যাবে থেমে

চুলার বড্ড আকাল।

 

আমি তোমাকেই খুঁজে ফিরি তবু…..

 

জানিকুয়াশার শেষে আছো তুমি

পথ যদিও অনন্ত মনে হয়

চক্রব্যূহের মধ্যিখানে আছি

স্মৃতির সীমানায়।

 

আমি তোমাকেই খুঁজে ফিরি তবু…..

আমি তোমাকেই খুঁজে ফিরি তবু……।।

দরজা খটখটিয়েছি

তাও রয়েসয়ে

ভাঙা যেত

জানলা দিয়ে দেখা যেত ঘুলঘুলি দিয়ে ঢোকা যেত

দরজা খটখটিয়ে গেছি তাও রয়ে সয়ে

খুলবে কি খুলবে না…

বুঝতেই

নইলে ছায়ার মতো ঘুরে ঘুরেই বেড়াতাম

আশপাশ দিয়ে

একটাই বড় পাওয়া.. কড়া নাড়তে নাড়তে

ভিতরে ছায়ার শব্দ শুনতে পাই

কত শত শত শব্দবীজ ,

রোপিত হওয়ার আশায় প্রতিক্ষারত !

 

অথচ এ জীবন মাটির দেহভূমি ,

এখনও বন্ধ্যা জমি !

মস্তিষ্ক ধোঁয়াটে !

পাঠাতে পারে না নির্দিষ্ট কোন নির্দেশ !

হাত চলে না হাতের মত !

পা চলে না পায়ের মত !

কর্ণকুহরে ঢোকে না শব্দ !

মুখ ভাষাহীন !

পিচুটি পড়া ঘোলাটে চোখের নজর এলোমেলো !

শুধু গ্রাসাচ্ছদন আর বর্জন চলে নিয়মিত !

 

তাই …….

 

চাই  দামাল বলদ ,

চাই  দৃঢ লাঙলের তীক্ষ্ণ ফলা ,

চাই  লাঙলের বাঁটে ধরা মোষের মত-

প্রবল পরিশ্রমীর শিরা-উপশিরা ওঠা কর্কশ পাঞ্জার শক্ত মুঠি,

আর চাইবৃষ্টি বিন্দুর মত অবিরাম ঝরে পড়া ঘাম,

আর্দ্র হবে নম্র মাটি !

 

তারপর,

শব্দ বীজের বপন রোপন,

পোয়াতি হবে এ দেহ জমি,

তারপরআরও প্রতীক্ষা …

 

হবে,

শব্দবীজের “অঙ্কুরোদ্গম”

 

তারপরশব্দ-চারার খুনসুটি দুরন্ত !

তারপরএ জীবন জমিতে শাখা-প্রশাখায়,

বৃক্ষ-লতা-গুল্ম – সম কাব্যলতার উছল বাড়বাড়ন্ত !

বাংলার গ্রাম-গঞ্জে ডাঙ্গা ফসলহীন জমিতে,

দীর্ঘদিন অনাবাদী।

কয়েক হাজার জমি ধু-ধু মাঠ,

বাংলাকে শস্য-শ্যামলা করতে  সেচ-ব্যবস্হা,

এগিয়ে এসেছে কারিগরী প্রযুক্তি,

প্রত্যন্ত গ্রামে নদীর পাড়ে,

শ্মশান ঘাট বা গোরস্থানে,

দাঁড়িয়ে রয়েছে দানবীয়  মেশিন,

গাছ নেইছায়া নেই,

আশে-পাশে  কোন ঘর-বাড়ি ও নেই,

খোলা আকাশের নিচে,

একদিকে দানবীয় মেশিনের বিকট আওয়াজ,

অন্যদিকে শবদেহ আগুনের দাবানলে দাহ হচ্ছে,

চৈত্রের খরতাপে পশ্চিমের হাওয়ায় দোল খাচ্ছে,

এইরূপ প্রতিকূল আবহাওয়ায়  মাঝে,

কাজ করে ওরা ?

ওরা করা?

ওরা আপনাদের মতো  খেটে-খাওয়া মানুষ,

মাটির মানুষ  বলেই কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে,

মাঠে-ঘাটে ওরা কাজ করে,

বাংলাকে শস্য শ্যামলা  ভরপুর করতে,

সবুজ বিপ্লবের এক একজন অস্র বিহীন সৈনিক।

টেনশন একটি ছড়

            বেহালার তার ছুঁয়ে পরিপূর্ণ ভালোবাসা

            একটা সাংসারিক ঢেউ

            এইতো আছিস রঙতুলির ভিতর

 

তার ও ছড় যখন বসে বসে গল্প জোড়ে

একটি বাঁশের সাঁকো

আঁকাবাঁকা গাঁয়ের ছোট নদী

ইজেলে নীকন্ঠ অনুভূতি তখন চ‌ওড়া আকাশ

 

তুই জলের আয়নায় সাঁতারু মাছ

চোরাবালির চাদরে হারিয়ে যাস

                             শুধু হারিয়ে যাস..

 

প্রতি‌ ক্ষণেই এই যে এতো যুদ্ধ

তোর জন্য‌ই দেওয়ালে টাঙাই রংবেরঙের বিজয়াদশমী

একুশ বছর থেকে খুঁজে চলেছি তোমাকে

সমগ্র ডুয়ার্স জুড়ে যত গাছ যত ঝোড়া

যত গ্রাম যত মহল্লা যত নদী যত পথ

সব খুঁজতে খুঁজতে পেরিয়ে গেছে একুশ বছর।

অথচ এই ডুয়ার্সেই তোমাকে প্রথম দেখা,

তখন সূর্যস্নাত বিকেলে তুমি ছিলে একা

জয়ন্তীর পথ আগলে দাঁড়িয়ে আনমনে ;

আর আমি DSLR এ বন্দি করছিলেম তোমাকে।

একবারও ঠোঁট কাপেনি একবারও বিরক্ত হও নি

নোনাইয়ের নীরবতায় থমকে থাকা এই নির্জনে।

অথচ একুশ বছর ধরে খুঁজে চলেছি তোমাকে

কত পথ পেরিয়ে কখনও সাকাম কখনোবা

লালঝামেলা ছাড়িয়ে নিমতিঝোড়ায়,

কিন্তু তোমাকে পায়নি কোন দিন কোথাও।

অথচ ডুয়ার্সের নীরবতা ও স্নিগ্ধতায়

আমি কখনও অনুভব করেছি তোমার শহরের চিৎকার

রাতের অন্ধকারে মানুষ খেকোর দল খুবলে খাচ্ছে

নিষ্পাপ তরুণীর উলঙ্গ দেহকে !

শুনেছি প্রতিবাদ ধ্বনিত হয় নি কখনও,

শুধু মোমবাতির ক্ষীণ আলোর প্রতিবাদের পরিহাস

উড়ে এসে নিজেই বলে গেছে ক্লান্ত বকের দল।

অথচ একুশ বছর কম নয় কিন্তু !

কত ঝরে উত্তাল হয়েছে পৃথিবী বার-বার

আর আমি এক যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়েও

ফিরে এসে তোমাকে খুঁজেছি একুশ বছর ধরে

কখনও চালসা কখনও মেটেলি কখনো বা

হাতিপোতার নির্জনতায় শাল-শিমুল আর জারুলের বনে।

বৃষ্টির কবিতা কি করে লিখি

মাঠে মাঠে পোকামাকড়

খেয়ে নিচ্ছে ফসল।

 

সরকারের খাতায় ঋণ

যে দুমুঠো ধান হবে

খাব  না বেচব

শোধ হবে কি ভাবে ঋণ।

 

আদর্শ কৃষকের  মাথায় সরলতার ঘুম

দুহাতে জিহাদ ঘোষনা কৃষক হতে চাই।

 

আমার কৃষক আকাশ দেখে

আবহাওয়াবিদের কথায় রোদের কথা ভাবে।

বৃষ্টি  আর বন্যায় নদীর গতিপ্রবাহ

দুরন্তপনায় আসুক বায়ু

 কচি বীজে  হোক ধান

রোদে বসে ভাত খাব পেট ভরে।

গভীর রাতের অন্ধকারে

     পেয়েছিলাম ভালোবাসার মানুষটিকে

দিনের আলো ফুটতেই হঠাৎ

        হারিয়ে গেলো মনের গভীর থেকে…

সত্যিই কি সারারাত  নিয়ন আলোয়

       তাকে স্পর্শ করতে পেরেছিলাম?

নাকি সব শোষণ করেছে বিশুষ্ক প্রাণ?

       নিরাসক্ত ঊষর জমি টেনে নিয়েছে

দৃপ্ত জলজ বেঁচে থাকা নৈতিকতা-

       ভালে বাসা আজও আছে হৃদয়ের কোণে।

আকাশটা আজ কি ফুস্ মন্তরে

ছড়িয়ে দিল নীলের ছোঁওয়া অন্তরে

গোমড়া  মুখো সকালটা

হঠাৎ করে বদলে গেল

সেজে উঠল ঝলমলে।

 

সবুজ পাতার ভাঁজে ভাঁজে

শিউলি কুঁড়ি চোখটি বুজে

ভাবছে কবে আসবে সেদিন

যেদিন তারা উঠবে সেজে।

 

পদ্মগুলো জলের নীচে

লুকিয়ে আছে মনের দুখে

ভাবল এবার আসবে সুদিন

দেখবে এবার সোনায় রাঙা সকালটাকে

নাচবে দুলে মনের সুখে।

 

পথের ধারে নয়ানজুলি

বুকটা তাদের বড্ড খালি

এবার তারাও ভাবছে বসে

নাচবে তাদের পাশেপাশে

সাদা কাশের গুচ্ছ গুলি।

 

মেঘগুলি আজ পেয়েছে ছুটি

ভেসে বেড়ায় সবাই জুটি

সোনার আলোর পরশ পেয়ে

খুশি তাদের নাই আর ধরে।

 

কিন্তু এই আনন্দ টা

আছে শুধু প্রকৃতিতেই

আমরা যারা সারা বছর

এই দিনটির প্রস্তুতিতে

নেচে উঠি উৎসবেতে

বুকের মধ‍্যে ভয় নিয়ে আজ

দমচাপা এক আশঙ্কাতে

মরণ নিয়ে ভাবছি শুধু

পারছি নাতো  মাততে তাতে।

রবি ঠাকুরের গানের কাছে এসে মাতালেরা অ্যাশট্রে ঝেড়ে ফেললে

 রাস্তায় হাঁটা মাতালের পুরোনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে  ;

কী তফাৎ দুজনের ভেতরকী তফাৎ ওদের সাথে আমার ?

রোজ রাতে ক্রমশ ঘোরের মধ্যে চলে যাই ছাই পড়ে থাকে লেখার খাতায় –

কেন এখনো প্রতিটি পুরুষ কাঁদতে এত লজ্জা পায়?

কেন এখনো রাত সাড়ে দশটায় মোবাইল খুলে বসে থাকি রোজ !

প্রেম তো বুঝে গেছি নিজের মত করে আর কিসের প্রয়োজন হে! 

কিসেরই বা অপেক্ষা!

অভ্যাস বশে কেউ  বৃষ্টির রাস্তায় নৌকা ভাসিয়ে দিলে কেন এখনো

আমার উঠোনে জল দাঁড়িয়ে যায়?

 

হিন্দুবৌদ্ধশিখমুসলিমখ্রিষ্টান

আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান

হিন্দুদের মন্দিরে মন্দিরে বাজে ঘণ্টা

মুসলিম ভাইদের মসজিদে দেয় আজান

আমরা সবাই বহু নামে ডাকি

ঈশ্বর তো একজন

শিখ ভাই বোনেরা গুরুদ্বারে করে প্রার্থনা ।

খ্রিষ্টান ভাই বোনেরা চার্চে করে প্রার্থনা

গড ইজ গুড

আমরা সবাই ডাকি একজনকে

এখানে নেই কোনো ভেদাভেদ

পূজা পার্বণে মিলে সবাই

কত রকম সাজে

কারো গলায় নামাবলী

কারো মাথায় তাজ ।

নাই কোনো ভেদাভেদ

হিন্দুরা করে দুর্গাপূজা

প্রসাদ নিতে যাই

ঈদের পরে মুসলিম ভাইয়েরা

খাওয়ায়  সে সেমাই

মিলে মিশে থাকি আমরা

নেই কোনো জাত

হিন্দুবৌদ্ধশিখমুসলিমখ্রিষ্টান

আমরা সবাই ঈশ্বরের সন্তান

এক মন এক প্রাণ

এই তো আমাদের পরিচয় ।

হ্যাঁ গো,  আমি বাতাস বলছি,   বাতাস,

আমাকে  চিনতে  বোধ হয়  ভুল করছ,

আমিই  তোমাদের  শরীরে প্রাণ বায়ু,

জননীর  গর্ভজাত  সন্তানের প্রাণের স্পন্দন ?

তাও   আমি।

শত চেষ্টাতেও আমি বুঝলাম  না আমার দোষত্রুটিঅপরাধ।

 

আমি বাতাস বলছি গো বাতাস

কাজের বোঝা পিঠে নিয়ে ছুটেই  চলেছি,

ছুটছিছুটছি, …. আর ছুটছি।

ক্লান্তিহীন এই ছুটে চলার সেই  পথের,

আদি নেইঅন্ত নেইঅতীত নেই

ভবিষ্যত শুধুই চলা আর চলা।

আমি  শুধুই আমি ছুটে চলেছি

অজানাঅদেখাভবিষ্যতের দিকে চেয়ে।

বিশ্বাস করো  আর না করোআমি কখনোকারো ক্ষতি করিনিতাই….

প্রাণ ভরে শ্বাস নেও ,  প্রাণ ভরে বাঁচো।

শরতের খেলাকরা মেঘলা আকাশ

দায়িত্ব নিয়েছে আগমনির বার্তা বয়ে আনার

 বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুল গুলো

শুরু করেছে মায়ের আরাধনা ।

একে একে সব হবে নিয়মনীতি মেনে

শুধু পুরাতন বিশ্বাস থাকবে না,

পূজো নিয়ে কত মাতামাতি

রয়ে যাবে তবু অচেনা ।

কাছাকাছি হয়েও অজানা আশঙ্কে

অবিশ্বাসের মেলামেশা,

অনভ্যাসের দুরত্বে,

হয়তো বা ভাগ হবে ভালোবাসা  ।

 

তবু ঢাকের তালে,ধুনুচি নাচে

মায়ের চরণে জমায়েত হবে ফুল-বেলপাতা

অফুরন্ত অবসরে সারাদিন মান

অজস্র মানুষ নোয়াবে মাথা।

চেনা অচেনার ভীরে

অনুভুত অন্তর করে প্রত্যাশা ,

অসীম আগ্রহে. মাস্ক পরা মানুষটি

পাবে বেঁচে থাকার আশা ।

পৃথিবীজুড়ে চারদিকে ঝড় উঠেছে

জীবন মৃত্যু বেঁচে থাকার ভয়

হাওয়ায় বাতাসেনিঃশ্বাসে

মৃত্যুর ভয়।

লক ডাউনউঠেছে নিরপব রব

পৃথিবী জুড়ে কোরোনায় ধরছে সব

ধোনি দরিদ্রের হিংসা

ছুতে আসছে ঝড় মৃত্যুর পিপাসা।

মুখ নাক ঢেকে কাপড়ের মাস্ক

সামাজিক দূরত্বে দাঁড়িয়ে জনগণকে দাও ফুল মাস্ক।

কাজ কর্ম ফেলে লাইনে দাঁড়িয়ে দাও ভ্যাকসিন

হোক যতই কো-ভ্যাকসিনকেভিসিল্ড

মাঝে মাঝে লক ডাউন

খেয়ে দেয়ে সটান দাও ডাউন।

সঠিক পথ চিনতে গিয়ে

বার বার মুছে ফেলছি

লিখে ফেলা পথ

পথে নেমেও ফিরে আসছি গৃহে

খুলে ফেলছি পুরনো বর্ম

রোদে পোড়া শরীরের দাগ

ক্ষয়াটে ইটের স্তুপ

শরীর জুড়ে জ্বর

সর্দি-কাশির অভিশাপ

ক্রমে লাল হয়ে উঠছে অভিশপ্ত সময়

ক্লান্ত হয়ে পড়ছি ভেতর ভেতর

নিস্তরঙ্গ সময়জুড়ে বিষন্নতা চাপ চাপ

তবু পথের টানে পথের মায়ায়

দোষ ভুল সব দূরে সরিয়ে

নিজেকে অজান্তেই দাঁড়িয়ে পড়ছি পথে

অজানা এক গন্তব্যের সন্ধানে

চিনে নিতে সঠিক পথ

খুঁড়ে চলেছি নিজেকেই নিরন্তর

তিস্তা পাড়ের গোপাল বাবুর,মস্ত বড় টাক।

তারি মাঝে তিনটি চুলএকটিতে ধরেছে পাক।

 

তিনটি চুলের বেজায় আদরযত্ন ক্ষনে ক্ষনে।

সুগন্ধি তেল মেখে মেখেচিরুনি আপন মনে।

 

চলতে গেলেহাওয়ায় দোলে টেকো মাথার কেশ।

আলতো হাতে হাতরে দেখেমন ফুরফুরে বেশ।

 

সেলুনে বসে বলেন হেঁকে,শুনরে নাপিত ভাই।

চুলগুলোতে লাগাতে হবে লাল বর্ণের কাই।

 

নাপিত হেসেবলে কেশেশুনুন গোপাল কাকা।

তিনটি কেশ,রঙিন করতে লাগবে পাঁচশো টাকা।

 

বাবু রেগে বলেন ঝেঁকে তুলে লম্বা ঢেকুর।

পুরো ঝকঝক হওয়া চাই সাধের তিন চিকুর।

 

কখনো সামনে কখনো পেছনে,টাকে চুল সাজান।

বারেবারে আয়নায় দেখে আহ্লাদে বুক ভরান।

 

একদিন দুপুরে পাড়ার লালু করছিল মর্দন টাক।

গোপাল বাবু খুব আরামে গভীর নিদ্রায় কাত।

 

বখাটে লালু এই সুযোগে দিল হ‍্যাঁচকা টান।

উপড়ে এলোলালুর হাতেবাবুর শখের তিন নিশান।

 

গোপাল বাবু চেতন পেয়ে দিলেন মাথায় হাত।

ভীষন রাগেকাঁপতে কাঁপতে চেয়ার কুপোকাত।

 

তড়াক করে উঠেই তার বজ্রনিনাদ হাঁক।

লালু তখন অনেক দুরেরইল বাবুর টাক।

একটা আদরের আহ্বান জানিয়ে

মেঘ বলে আকাশকে

তুমিতো ছিলে আমার খুব কাছের

কালের গতিতে নেই পরস্পরের মেশামেশি।

আমার হৃদয়ের বিষন্নতা নিয়ে

দুর থেকে বলিকেমন আছো তুমি?

সারা শরীর বেয়ে নেমে আসে স্মৃতির পটরেখা।

মনে পড়ে মেয়ে বেলার কথা।

অনেক  দুরে থেকেও

মেঘের সাথে সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল নদীর

মধ‍্যস্ততা করেছিল বৃষ্টি।

আকাশ থেকে জমা মেঘ বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে।

সৃষ্টি হয় নদীর –

বয়ে নিয়ে যায় সাগরে দুর থেকে বহু দুরে।

এতো নিবিড় সম্পর্ক ছিল বলেই তো

গড়ে উঠেছিল তাদের প্রেম- ভালোবাসা।

আকাশ জুড়ে মেঘ করেছেঝড় উঠেছে ইশান  কোণে

ভীতআতঙ্কিত  সবাই মনে মনে,

বাইরে ঝড়,অন্তরে ভয়,

কি জানি কি হয় ! না জানি কি হয় !

 

ফেসবুকে দেখলাম দক্ষিণে একটি প্রাণীও বেঁচে নেই।

একি সত্যি পরে শুনলাম সবটাই গুজব 

তাই সতর্ক করি সবাইকে –

গুজবে কান দিও নাআতঙ্কিত হয়ো না,

উঠে দাঁড়াও লইতে হবে একসাথে,

তবে সমবেত ভাবে নয়। একা একা আপন ঘরেতে।

আঁতকে উঠো নাএকা মানে একা নয়,

এক এক করে জুড়ে যাবে একসূত্রে বিশ্বভ্রাতৃত্বে।

 

কিন্তু ভুলে যেও নাভুলো  না ওদের কথা,

করোনা যুদ্ধে সামনে দাঁড়িয়ে লড়ছে যারা –

নিজের জীবনকে বাজী রেখে মানুষের সেবা করছে তারা

          তোমাদের সামনে নামিয়ে উষ্ণীষ,

হে বীর যোদ্ধাতোমাদের জানাই কুর্নিশ ।

 

এই যুদ্ধে আমরা করব লড়াই,

শেষ পর্যন্ত আমারা যুদ্ধে জিতবই,

এক আকাশের নীচেমঙ্গলদ্বীপ আমারা জ্বালবই

ঝড় থেমে যাবে একদিনবিজয়পতাকা আমারা ওড়াবই।

১.

অন্তরঙ্গতা বুঝিনি,

রাতবাতির ব্যাকরণে আদর বন্ধক রেখে

এগিয়ে যাই পালঙ্ক পথে,

মশারির বুনট জানে,

হৃদয়ের সাথে বালিশের

সবসময় সখ্যতা থাকেনা ।

২.

সুতোয় জড়িয়ে ভালবাসা ,

আকাশ ছুঁয়ে ইচ্ছে না – ইচ্ছের সমাস বিধি,

অনেক কিছুই এখনও করা হল না,

সুতোর টানে হাঁটছি,

সময় হলে আকাশ দিও আমায়।

৩.

বারান্দার  ফুলবাহার ,

জল আর আলোর নিজস্ব গণিত গল্প,,

আগল খুলে বাইরে এলে,

আঁচলে বেঁধে রাখা রজনীগন্ধার কলি খুলে রাখ,

আর সময় হলে জলবালতিতে আবছা অতীত ফুটে ওঠে।

৪.

আর দেরি নেই,

সময় হলেই তোর কপাল ছোঁব,

আর দেরি নেই,

দেরির শেষও নেই,

পুরনো অাধুলি অযত্নে গড়িয়ে গেলে বুঝি…..

এবার,

আমার আর সময় নেই

আমার ভালোবাসা ছেড়ে এসেছি

এক গভীর অরণ্যে

হাতি,বাঘ,ভাল্লুক সকলে জানে

প্রকৃতির ছায়ায় প্রকৃতির মায়ায়

কত ভালোবাসা এই কোমল মনে

আমার ভালোবাসা ছেড়ে এসেছি

এক গভীর অরণ্যে।

হটাৎ একদিন প্রথম রাতে

এসেছিল একদিন ভালোবাসা জানাতে

আমিও গিয়েছিলাম স্নেহের টানে

মায়ের কোলে শহরের কোনে

পেটের পীড়ায়

দেখা হয়নি সেদিন রাতে

শুধু রেখে গেল ভালোবাসার চিহ্ন

মনের অভিমানে

আমার ভালোবাসা ছেড়ে এসেছি

এক গভীর অরণ্যে।

কখনও কখনও শুধু একটা মুখ

ভালবাসার অতল গভীর থেকে উঁকি দেয়

শীতল স্রোত যা ভেদ করে আসমুদ্র হৃদয়

কখনও একটা মুখ এত কাছে এত কাছে চলে আসে

চাঁদ দেখা হয় না

নীল চাঁদ

 

কোনরকমে দুঃখ সাদা বেড়ালের মতো কোলে এসে  

জড়িয়ে ধরে আশ্রয় চায় 

হাত বোলাতে বোলাতে অতীত গলে যায় আঙুলের ফাঁকে 

দেখা হয় না ঘুম কিংবা ঘুমের ভেতর কোন স্বপ্ন

যা কিছু আমার বলে ভুল হত

আমি বলে ভুল হত

আজ ঝড়ের রাতে সব দুয়ার চৌচির হয়ে গেছে

কোষেরা শক্তিতৈরি করে ফিরে আসবে

আয়নায় এবারে ভুল করে আঁকা হবে না কোন ছবি

শুধু একটা মুখ থাকবে জানি

মেদেনীর ‘ পরে ঈশ্বর এলো ঠাকুর ঘরে ,

দাদার কথায় বাছুর এঁরে।

যাবার সময় বাবার সাথে কলকাতাতে

সংখ্যা শেখেন মাইল স্টোনের ইংরেজিতে।

ভরতি হলেন ‘ কলির স্কুলে

বাড়ির কাজে খেলা ভুলে ;

বাটনা বাটা কাপড় কাঁচা রান্না

পড়ার সময় মোটেই তিনি পাননা।

বাবার বেতন মাত্র দশ

জেদী ছেলেটার ছড়ায় জশ।

টাকা ও সময় কম ছিল ঠিকই

রাস্তার আলোয় পড়তে খুঁটিতে বাঁধেন টিকি।

বিদ্যায় তিনি সাগর সম বাইরে

ভোজবাজিতেইসন্দেহ হয় তাইরে

দামোদরের উত্তাল ঢেউ হার মানে তার কাছে

মায়ের ডাকে সাড়া দিতে ঝাপায় নদের মাঝে।

খেতেদে ঈশ্বরঅভুক্ত উঠোনে যা ছিল দেয় ঘরে

গরীবের দয়ার সাগর নামকি শুধুই ধরে?

বিদ্রোহের ভয়ে ব্রিটিশ দেয়না সমর্থন

বিধবা বিবাহ করলেন পাশ না করে তৈল মর্দন।

নারী জাতিকে আনতে আলোয় শিক্ষার

বেপরোয়া তিনি সমাজ দিলযে ধিক্কার

পন্ডিত ও সমাজের ঘোর বিরোধীতায়,

বেচেঁ থাকো বিদ্যাসাগর বিদ্রুপ শাড়ির পাড়ে রয়।

যেতেছিল ভেসে মধু এনেছো ফিরায়ে,

বাংলা ভাষা ধনী হলো অমিত্রাক্ষর পেয়ে।

মানের বদলে মান হার মানে গোঁড়া;

এখন কেমন আছোজিজ্ঞাসিছো মরি লাজে মোরা

কিলবিল কীট সাথে জলা পুঁতি গন্ধময়,

এসে নাশো কলুষতা এখন যে বড়োই দুঃসময়।

মেঘ পাহাড়ের দেশ

যার রূপের নাকো শেষ।

যেখানে সাদা মেঘের ছেঁড়া- ছেঁড়া চিঠি,

নীল আকাশের ঠিকানায় উড়ে যায় ভেসে,

আবার কালচে মেঘের দল

ধেয়ে চলে তার পিছন পিছন

মনে হয় যেন তার ক্রোধ হয়েছে ভীষণ।

আবার কখনো মনে হয়,

মেঘ ভেজা বৃষ্টি এসে

ধুয়ে দিয়ে যায় মন-প্রাণ।

যেখানে দুটি পাতার ভাঁজে

একটি কুড়ি এসে মেশে,

দূর থেকে দেখে মনে হয়

মখমলি কালচে সবুজ কার্পেটে

সাজিয়ে রেখেছে তার বাড়ি।

আবার কখনো চলছে মেঘ-রোদ্দুরের খেলা,

তার ই মাঝে ঝড়ছে বৃষ্টির ঝরঝর ধারা।

এ যেন কোনো অচেনা দক্ষ শিল্পীর তুলির টানে,

প্রকৃতির অপরূপ ছবি ভেসে উঠছে,

আর মন তাই বারবার প্রকৃতির প্রেমে পড়ছে।

কালের ভালে  শুভ্রতীলক তাজমহল

যমুনা নদীতীরে প্রেমের সমাধিস্থল

প্রিয়তমা পত্নি মমতাজের স্মৃতিসৌধ,

নির্মানকালে তাজমহল ছিল যমুনা বিধৌত।

শাহজাহান অত্যন্ত সৌন্দর্য প্রিয়

প্রিয় বেগমের মৃত্যুতে জাগে তার মনে বিরহ

প্রেমের বিরহেই জাগে তার মনে এই আশ্চর্য সৃষ্টি

নশ্বর মানুষ রয়না হেথা চিরকাল থাকে তার কীর্ত্তি।

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের এক অনবদ্য আশ্চর্য

বিশ্বের সৌন্দর্য পিপাসুরা ছুটে আসে দেখতে এই আশ্চর্য

তাজমহল  সত্যিই শিল্পির এক আশ্চর্য শিল্প,

ধন্য শিল্পী তুমিও বেঁচে আছ আজও নিয়ে তোমার শিল্প

শাহজাহান মমতাজ পাশাপাশি আজ আছে শায়িত

তাজমহলের কবরে বাদশা,  বেগম রয়েছে চির নিদ্রিত।

তাজমহল সৌন্দর্য পিপাসুদের মেটায় সৌন্দর্যের পিপাসা

সৌন্দর্য সৌধ বিভিন্ন সময়ে  নয়নগোচর হয় নানা রংয়ে রঞ্জিতা।

শাহজাহান নেই মমতাজ নেই দুজনেই শায়িত

শাহজাহানের সৌন্দর্য সৌধ আজও রয়েছে অবিকৃত।

ধন্য শাহজাহান তোমার সৌন্দর্য প্রিয়তা

যা দেখে বিশ্ববাসী মেটায় তাদের সৌন্দর্য পিপাসা।

জীবনের আলো আঁধারি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে পড়লাম। আর এক পাও এগোতে পারছি না। ঘন কুয়াশা। Helen Keller এর ভাষায়, ‘ tangible white darkness’. মাঝে মাঝে এভাবেই আবিষ্টতায় বিবস হই। পার্থিব আলোয় অপার্থিব রূপকথারা আপন মনে গান গায়। কিছু অভিমান মিশে থাকে ভিজে কুয়াশায়তবু ঝাপসা দৃষ্টি খুঁজে ফেরে আলোপ্রেমভালোবাসা । হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরি নিজেকে উজাড় করে দেবার মত গভীর আশ্রয়।

আমার মার মুখে শোনা আমার ছোটো বেলার একটা মজার গল্প মনে পড়ে গেলো। তখন আমার বয়স বছর দুয়েক হবে। বর্ষা কালসারাদিন বৃষ্টি হয়ে সন্ধ্যে বেলা আকাশটা একটু ধরেছে। মা পুজোর ঘরেআমি মার পাশে বসে আছি। মা প্রদীপ জ্বালতে গিয়ে কিছুতেই পারছে না। দেশলাই বাক্সে damp, বর্ষা কালে যা হয়। মার কাছে শুনেছিআমি ছোট বেলায় খুব কম কথা বলতাম। খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতাম না। মা দেখতে পেলো আমি চুপচাপ উঠে কোথাও গেলাম। একটু পরেই মা দেখতে পেলো আমার দাদুর পেল্লাই একখানা torch নিয়ে আমি হাজির। মাকে torch টা হতে দিয়ে ইশারায় আলো জ্বালতে বললাম। ঘটনাটা বলে মা আমায় বলেছিলো, ‘ আমার যে কি হাসি পেয়েছিলো তখন।‘ সেই বয়সে আমি আলো তো চিনেছিলামকিন্তু আগুন চিনিনি। স্নেহের উষ্ণতার আড়ালে সে খোঁজ তখন অধরা। পরে বুঝেছিলাম আলোর  উৎসই আগুনবুঝেছিলাম আগুনের কতটা কাছে এলে ও কতটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলে পথ চলা সহজ হয়। পথ চলতে চলতে যখন আলো বন্ধু হয়ে যায়যখন আলোয় সাজিয়ে তুলতে শিখি পথতখন ভালোবাসা খুঁজে পায় হৃদয়। হৃদয়ের সাথে পথের বন্ধুত্ব বহুকালের। তাইকুয়াশায়অন্ধকারে হোঁচট খেলেওভেসে যেতে শিখে যাই ভালোবাসায়।

 

নম্রতা হল বাবার পাঁচ মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।কিন্তু  পড়াশুনো গান আবৃত্তি সবেতেই সে খুব  ভাল। বাবা ছিলেন দর্জি। কষ্ট করে মেয়েদের মানুষ করেন। নম্রতা সরকারি অফিসে চাকুরি পায়কিন্তুকন্যা দায়গ্রস্থ পিতা সম্পূর্ণ নম্রতার অমতে নম্রতাকে এমন একজনের সঙ্গে  বিয়ে দিলেনযে কিনা  শিক্ষা সংস্কৃতি কোনো দিক দিয়েই নম্রতার যোগ্যতার ধারে কাছে নাএমনকি বয়সেও অনেক বড়। নম্রতা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুক ফেটে গেলেও চুপচাপ সব মেনে নিল। 

নম্রতার মেয়ে হয়। মেয়ে মায়ের  মতই গুনসম্পন্না হয় । নম্রতার  বর কিন্তু নম্রতা অফিস আর বাড়ি ছাড়া অন্যকিছু করুক এটা কখনই চাইত না। গান আবৃত্তি এসব করতে গেলে সে ক্ষেপে যেতমারধর পর্যন্ত করত। মেয়ে মায়ের দুর্দশা দেখে কষ্ট পেত আর নম্রতা সংসার টিঁকিয়ে রাখার জন্য সবকিছু সহ্য করত। নম্রতা প্রকৃতই নম্র ছিল তার স্বভাবে।

একদিন নম্রতার বরের হাতে ইনফেকশন হয়। প্রথমে অবহেলা করলেও পরে এমন অবস্থা দাঁড়ালো যে হাত কেটে না ফেললে ইনফেকশন আরো বিস্তৃত হতে পারে- সেই সম্ভাবনা দেখা দিল। তাড়াতাড়ি শিলিগুড়ি থেকে কোলকাতা নিয়ে যাওয়া হল। দিশেহারা নম্রতা সঙ্গে  নিল তার অফিসের সহকর্মী ও সহমর্মী বাদলকে। মেয়ে থাকল নম্রতার দিদির বাড়িতে।

কিন্তু বরের হাত কাটা গেল না – কারননম্রতার অক্লান্ত সেবা শুশ্রুষা আর বাদলের চিকিৎসার কাজে  নিস্বার্থ সহায়তার জন্য। নম্রতার বর সুস্থ হয়েই ফিরল শিলিগুড়ি। 

এবার শুরু হল নম্রতার ওপর তার স্বল্প শিক্ষিতঅসংস্কৃতি পুষ্ট মানসিকতার ধারক তার বরের  নতুন অত্যাচার। কারননম্রতার বর্বর বর সন্দেহ করল যে তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে নম্রতা বাদলের সঙ্গে  কোলকাতায় সহবাস করেছে। কথাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে এরকম অযৌক্তিক সন্দেহই করেছিল তার বর। মানসিক নির্যাতন এমন জায়গায় গেল যে নম্রতার মত অসীম সহনশীলতা সম্পন্না  মেয়েও ডিভোর্স চাইলআর নম্রতার একমাত্র মেয়ে যে কিনা আর তিন বছর পর প্রাপ্তবয়স্কা হবে এবং মায়ের ওপর বাবার অত্যাচারের একমাত্র সাক্ষীসে নম্রতাকে পূর্ণ সমর্থন করল।

কিন্তু বেঁকে বসল সেই বর্বর বর। সে নম্রতাকে ডিভোর্সও দেবে নাঅথচ শারিরীক কিম্বা মানসিক অত্যাচারও করবে।  শেষ পর্যন্ত অবশ্য  বিস্তর লড়াই আর কাঠখড় পুড়িয়ে নম্রতা ডিভোর্স পেয়ে গেল । মেয়েকে নিয়ে ট্রান্স্ফার হয়ে চলে গেল সে  কোলকাতা। কারণকোর্টে জজ সাহেবকে মেয়ে জানিয়েছিল যে সে মায়ের সঙ্গে থাকতে চায়বাবার সঙ্গে নয়।

অথচআশ্চর্যের বিষয় হল,  সমাজ এখন নম্রতাকে খুব  খারাপ  চোখে দেখে – অফিসের সবাই অবজ্ঞা করে – কারনডিভোর্স চেয়েছিল নম্রতাওর বর নয়। এটাই সত্যি – কারণ ঘটনাটি মিথ্যে নয়। একবিংশ শতাব্দীতেও আমাদের সমাজ খাতায় কলমে আধুনিক – বাস্তব মানসিকতায় নয়।

মেয়েটি গল্প পড়েকবিতা পড়ে। দশ বাই দশ ফুটের ছোট্ট ঘরের কোনে টেবিলের উপর রাখা সারি সারি শারদীয়া সংখ্যা। অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম- “তুমি কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়েছো সেটা কিন্তু জানা হয়নি। “

– “আমি! আমি তখন নবম। বেণীমাধব পড়েছেন?”

– “পড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে অন্যের মুখে কবিতাটি শুনেছি।

চেয়ার ছেড়ে উঠে বসলো শ্রী। শ্রী নামটা আমারই রাখা। টেবিলের থেকে একখানি বই এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। উপরে লেখা জয় গোস্বামী কবিতা সংগ্রহ।

-“পড়ে দেখবেন। শোনার চেয়ে ভালো লাগবে।”

মোবাইলের দিকে নজর পড়ল। দশটা বেজে গেছে। বই হাতে নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।

-“উঠলেন যেআজও কি শুধু গল্প করেই যাবেননাকি আজ ইচ্ছে নেই। আপনি তো মশাই জীবনানন্দ হয়ে পড়লেন।”

-“জীবনানন্দমানে জীবনানন্দ দাশ?”

-“হ্যাঁপড়েন নি বনলতা সেনআমার কি মনে হয় জানেনবনলতা সেন আসলে আমাদেরই মত কেউ। দু দণ্ডের শান্তি দেয় আপনাদের আর মুখোমুখি থাকে অন্ধকার।”

ব্যাখ্যা শুনে অবাক হলাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম শ্রীর দিকে।

– “কি ভাবছেন?”

শ্রীর কথায় চমক ভাঙল। পকেটে হাত বাড়ালাম টাকার জন্য। বাধা দিল শ্রী।

– “ওটা থাক। কিছুই তো করলেন না। এমনি এমনি কি পয়সা নিতে পারি?”

শ্রীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিবিড় দৃষ্টি দিলাম ওর মুখে। গাঢ় ঠোঁটে কোনো কৃত্রিম উজ্জ্বলতা নেই। সাদামাটা মুখ আর সকল মেয়েদের মতোই। মন্ত্র মুগ্ধের মত বললাম- “আচ্ছা শ্রী তুমি নিজে কিছু লেখো না কেন? “

শ্রী দীর্ঘ নিঃস্বাস ছেড়ে বলল- “আমি লিখবো আর পাঠকেরা মজা তুলবেন হাসবেন।”

– ‘তা কেনযদি তুমি মুক্তি পাও। আমি ছাপাবো তোমার লেখা আমার কাগজে।”

 শ্রীর শান্ত দুটো চোখ যেন জ্বলে উঠলো। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল- “মুক্তিকিসের মুক্তিআপনি আশ্রয় দেবেন আমায় দেবেন দুবেলার ভাত কাপড়? “

নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলাম। সত্যি কোনো জবাব নেই আমার কাছে। দূরে সরে দাঁড়াল শ্রী- “লিখছিনিজের কথাই লিখছি। শুরুটা ভাবা হয়নি। তবে উপসংহারটা  ভেবে রেখেছি।  শুনবেন শেষ কথাটি?”

পুতুলের মত মুখ নেড়ে বললাম- “শোনাও।”

শ্রীর ঠোঁটে বাঁকা হাসি। বলল- “জীবন আসলে পাকস্থলীতেই বাঁধা। “

গরমের ছুটিতে ঝিমলীপাপাইতুহিন উওর বঙ্গের জঙ্গলে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ওদের বাবামায়ের কাছে বায়না ধরল। গরমের ছুটি শুরু হয়ে গেল। ওরা বাবামায়ের সাথে উত্তর বঙ্গ এক্সপ্রেস করে রাজাভাতখাওয়া” চলে এল। সেখানে থেকে বক্সার জঙ্গলজয়ন্তী পাহাড়ঘুরে বেড়াবেবন্য পশু দেখবে ভেবেই ওরা আনন্দে আত্মহারা। বন বাংলো বুকিং  করেই এসেছে। বিকেল চারটার সময় ওরা পৌছল। বন বাংলো থেকে গাড়ি ষ্টেশনে ওনাদের আনতে গিয়েছিল। চলে এলো বাংলোতে। খুব সুন্দর পরিবেশ। চারিদিকে বন দিয়ে ঘেরা। কাঠের তৈরি বাংলো। ভিতরে ছোট খেলার মাঠসুইমিং পুলবাহারি রঙের ফুল দিয়ে সাজানো বাগান। বাচ্চারা বাংলোতে ঢুকেই দৌড়াদৌড়িছুটোছুটি করতে লাগলো। কেয়ারটেকার ওনাদের নির্দিষ্ট ঘরে পৌঁছে দিয়ে সন্ধ্যার টিফিনের অর্ডার নিয়ে গেলযাবার সময় বলে গেল বাচ্চাদের সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেড়োতে বারন করে গেল। এরপর ওরা একটু বিশ্রাম নিয়ে কাছাকাছি একটু বেড়িয়ে এলোরাতের খাবার ঠিক আটটায় দিয়ে গেল। রাতের খাবার খেয়ে সবাই শুয়ে পড়লেন। খুব ভোরে জঙ্গল সাফারি বের হতে হবে।

সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েছেঝিমলীপাপাইতুহিন ওরা তখনও ঘুমোয় নিকেয়ারটেকারের ঘর থেকে বাইরে যেতে বারন শুনে ওদের মনে তখন থেকেই কৌতূহল বেড়ে গেছে। ওরা তিনজন চুপিচুপি ঘরের বাইরে বেড়িয়ে পড়ল। চাঁদের আলো পড়ে চারিদিক আরও সুন্দর স্বপ্নপুরীর মতো লাগছে। কোথাও কেউ জেগে নেই। ওরা ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে মাঠে চলে এলো। হাঠাৎ ঝিমলীপাপাই কারও স্পর্শ অনুভব করল,পেছন ফিরে দেখল ওদের মতোই আরও তিনজন বাচ্চা। ওরা বলল তোমরা ঝিমলীপাপাইতুহিন আমরা শুভমিমিবাবলুচলো আমরা মাঠে একসাথে খেলি। ওরাও বলল চলোভালোই হলো আমরা মাঠে একসাথে খেলব কোনো ভয় নেই। এতো সুন্দর জ্যোৎস্নার আলো পড়ে মায়া মাখানো রাতে ওরা সবাই ছুটোছুটি করে খেলায় মেতে ওঠলো।খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে কখন যেন ওরা মাঠের ঘাসের উপরে ঘুমিয়ে পড়ল। ভোর হয়ে এলোবাংলোর কাজের ছেলেরামালী ওরা জেগে ওঠে দেখে মাঠের মাঝখানে বাচ্চা তিনজন শুয়ে আছে দেখে দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখে সেই বাচ্চারা যারা গতকাল বিকেলে এখানে এসেছে। একজন দৌড়ে গেল ওদের বাবামাকে ডাকার জন্যবাকিরা ওদের ঘুম থেকে জাগনোর চেষ্টা করতে লাগল। খবর পেয়ে দৌড়ে এসে ওদের বাচ্চাদের কোলে তুলে ঘরে নিয়ে এলো। ততক্ষণে ম্যানেজার ও খবর পেয়ে চলে এলো। জলের ঝাপটাঅনেক ডাকাডাকির পর ওরা আস্তে আস্তে চোখ খুলল। তবে একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছেকথা বলতে পারছে নাওদের গরম দুধ এনে খাওয়ানো  হলো। আস্তে আস্তে ওদের ঘোর কাটলো। ওদের জিঙ্গাসা করা হলো কি হয়েছিল। ধীরে ধীরে রাতের সব গল্প  বলল। বাংলোর ছেলেরা সবাই অবাক হয়ে বলল কালকে ওরা ছাড়া আর কোন বাচ্চা এখানে আসেনি। চৌকিদারমালী রাম নাম জপ করতে লাগল। বাংলোর ম্যানেজার শুধু বলল ওরা ঘরের ভেতর থাকলে কিছু হতো না। তুহিন ঝিমলীপাপাই ওদের বাবামায়েরা আর দেরি করে নি। তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে বাংলো ছেড়ে বেড়িয়ে গেল।

সন্ধ্যা তখন ছটা হবে। অক্টোবর মাসের শেষ। শীতের একটা আমেজ ছড়িয়ে দিয়েছে চারপাশে। দুর্গা পুজোর হইহুল্লোড় শেষ। মাধবী বিকেলের জলখাবার তৈরি করছিলেন। হঠাৎ মলয় বাইরে থেকে চিকার করে ডাকতে ডাকতে বাড়ীর ভিতর ঢুকছিল। ওর ডাকে বুকটা কেঁপে উঠেছিল মুহূর্তের জন্য। 

  “কিরে এরকম চিৎকার করে ডাকছিস কেনকি হয়েছে? “

মা…..মা আমি state level এ সিলেক্ট হয়েছি। আমার এত দিনের স্বপ্ন সার্থক। তোমার ছেলে একদিন দেশের হয়েও খেলবে। ওর কথা শুনে মাধবী আর কোন কথা বলতে পারছিলেন না। এটাই যে ওদের সবার স্বপ্ন। শুধু বললেন যা বাবার ছবিতে একটা প্রণাম করে আয়। বলতে গিয়ে কখন যে চোখটা ভিজে গেল আর চশমার কাঁচটা ঘষা কাঁচের মত ঘোলাটে হয়ে গেল। সুবোধ থাকলে খুব খুশি হতো। একটা চাপা নিশ্বাস বেরিয়ে এল। আস্তে আস্তে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। মলয়ের বিকেলের খাবার বানানো সম্পূর্ণ হয়নি এখনো।

        এই মাধবী আর সুবোধ বাবু একই অফিসে চাকরী করতেন। নিজেদের পছন্দে বিয়ে এবং মলয়ের আগমন। ওদের তিনজনের মানসিক ভাবে এত মিল ছিল যেটা এখন সত্যিই খুব বিরল। ওরা সবাই প্রানখোলা স্বভাবের মানুষ। প্রকৃতি খুব ভালো বাসে। খোলামেলামুক্ত আকাশবুকভরা বাতাস এগুলোই ওদের পছন্দ। তাই এই যুগেও ছেলের নাম মলয়। তাই যখন বাড়ী বানানো হয়েছিল মলয় ওর বাবাকে বলেছিল – বাড়ী হবে একতলা। বিশাল বড় একটা ছাদ থাকবে। তাতে সে বিভিন্ন গাছ লাগবে। পাখিরা আসবেআর ওপরে বিরাট আকাশটা থাকবে। ছেলের কথা শুনে সুবোধ বাবু তাই করেছিলেন। বাড়ী শেষ করার কিছু দিনের মধ্যে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে উনি মারা যান। সেই সময়টা ওদের জীবনের সব থেকে খারাপ সময় গেছে। মলয় এতটাই আপসেট হয়েছিল যে ওর কথা বলাই বন্ধ হয়ে গেছিল। সেই সময় মাধবী শক্ত হাতে হাল না ধরলে  মলয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব হত না। এখন ও অনেকটাই স্বাভাবিক।সময়ও অনেকটা পেড়িয়ে গেছে। মলয় দিনের অনেকটা সময় এই ছাদটাতে কাটায়। এখানে বাবার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আর আছে আকাশ। যাকে সব বলা যায়। মলয় ওর অনুশীলন মাঠে খুব একটা করেনা। ও নদীর স্পারে প্রকৃতির কোলে চলে যায়। ওর ভালো লাগে।এত সবুজের সমারোহ ওখানে। মন ভালো হবেই। এগুলো সব ওর বাবার কাছ থেকে পাওয়া। ওর অবশ্য এখন নদীকেও স্বার্থপর মনে হয়। কারনবেশী মানুষের সংস্পর্শে এসে নদী বদলে গেছে। কারন এখন নদীর স্বার্থগুলো মনে হয় চরের আকারে বেরিয়ে আসছে। তবু ওর মনে হয় আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রকৃতি বদলায় না। মানুষ বদলে দেয়।

        এই মলয় আজ ক্রিকেটে State level এ মনোনীত হয়েছে। এই দিনটি ওর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ন। ওর বাবা ওকে বলেছিলেন পরিশ্রম আর লক্ষ্য এই দুই থাকলে সাফল্য আসবে। কোনদিন নিজেকে নামিও না। ওরও আজ ঘুরে ফিরে বাবাকে মনে পড়ছে। আনন্দের মধ্যেও বিষাদ ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল কাল অনেক কাজ আছে কাগজপত্র জোগার করতে হবে। ও মাকে বলল যে আজ ও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বে। সকালে অনেক কাজ আছে। দশটার মধ্যে ও শুয়ে পড়ল।

      ঠিক সাড়ে চারটায় এলার্ম বেজে উঠল। মলয় তড়াক্ করে উঠে বসল। রেডি হতে হবে। কিন্তু ঘরটা এত অন্ধকার কেনলোডশেডি়ংনা তাহলে তো ইনভারটার আছে। ও মাকে ডাকতে গেল। কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলোনা। সারা ঘরে চাপ চাপ অন্ধকার। বাইরের কোন আলোও দেখতে পাচ্ছে না। ওর দমবন্ধ হয়ে আসছে। একবার ভাবলো চোখ খুলেছে তো?  নাহ্ চোখতো খোলাই। হাত লাগিয়ে দেখল। এত অন্ধকার ও আগে কখনো দেখেনি। ও বিছানা থেকে নামতে পারছে না। গলার কাছটা শুকিয়ে যাচ্ছে।  নাঃ ওর দেরী হয়ে যাচ্ছে। মা আসছে না কেন আলো নিয়েমা ভালো মত জানে যে ও অন্ধকার খুব ভয় পায়। মলয় ভাবলো ও দেখতে পাচ্ছে না কেন?  ও অন্ধ হয়ে যায়নি তোভাবা মাত্রই ওর সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কি হবে এখন???ও ভাবতে লাগল সিলেকশনের সময় বল লাগেনি তো চোখে?  না,  লাগেনি তো। ও কি সত্যিই অন্ধ হয়ে গেলহাতটা চোখের সামনে নিয়ে এসে দেখল দেখা যাচ্ছে নাকি। না। চারিদিক শুধু অন্ধকার। ওর কেরিয়ারওর প্রিয় খেলামাঠনদীফুলগাছকরলা গাছে একটা ছোট্ট করলা ধরেছে বাবার বসার জায়গামা…. ও আর কোনদিন কিছু দেখতে পাবে না!! কাউকে দেখতে পাবেনা?? ওর খেলাস্টেডিয়াম ভর্তি লোকের হাততালিআর কোনদিন…. ও আর ভাবতে পারছে না। ওর কান্না পেয়ে গেল। ওর হাতের মধ্যে নোনতা জল গুলো টপটপ করে পড়ছিল। ওর আর স্বপ্ন পূরন হলোনা। শুরুতেই শেষ হয়ে গেল সব। কেন এমন হল???  ও তো ওর মতো একটু ভালো থাকতে চেয়েছিল। খেলতে চেয়েছিল। ও চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। কিন্তু কান্নাটাও ঠিক মত বের হচ্ছিল না। বুকের কাছে দলা পাকিয়ে দমটা বন্ধ হয়ে আসছিল।

        হঠাৎ  টের পেল ওর মা ওকে ডাকছে আর বলছে কিরে ওমন করে গোঙাচ্ছিস কেনমলয়..  এই মলয় তোর বলে অনেক কাজ। মলয় ধড়মড় করে উঠে বসে দেখল ওর মা চোখে অনেক প্রশ্ন নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।

এই শতাব্দীতে  পৃথিবীর সবচেয়ে বহুল উচ্চারিত শব্দ জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর নিকটতম শব্দ দুর্যোগ। এই দুর্যোগের বৃহত্তর পরিসরকে মহামারি বলা হয়। যত সম্ভাবনা ও আশা নিয়ে ২০২০ সাল শুরু হয়েছিলতা আমূল পাল্টে গিয়ে মহামারির মতো একটি দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এখন আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব।

করোনার প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় পর এবার আসন্ন তৃতীয় ঢেউ এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ সর্তকতা অবলম্বন করেছে। তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় নানান প্রস্তুতি নিয়েছে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের ভারত প্রস্তুতি নিয়েছে বলা যায়।

ইতিমধ্যে ডেল্টা  ভারিয়ান্ট সক্রিয় হওয়ার ফলে আবার মানুষ সতর্ক হয়ে উঠেছে। এটি সত্যিই উদ্বেগজনক কিন্তু সেইসঙ্গে ভ্যাকসিন প্রতিরোধ দেওয়ার কাজে চলেছে সমানতালে।

এদিকে জানা গিয়েছে,ইতিমধ্যে প্রায় একশো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার ডেল্টা প্রজাতি । যাকে ঘিরে এবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (W H O) অতিমারির এটি খুব ভয়ঙ্কর পর্যায় বলে জানিয়েছেন হু প্রধান। তিনি আরও বলেছেনভারতে উৎপত্তি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখনও অভিযোজিত হচ্ছে। অনেক দেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে এই ভাইরাস।

আর তাই বিশ্বজুড়ে সর্বত্র এই অতিমারির অবসান না ঘটা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে।

হু প্রধানের মতেকেবল টিকাকরণই  এই ভয়ঙ্কর পর্যায় কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায়।

তিনি বলেছেনপ্রত্যেক দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশকেই টিকা দেওয়া হয়েছে। সকল দেশে টিকা প্রেরণ সুনিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের কয়েকটি দেশের মিলিত প্রচেষ্টাতেই তা সম্ভব। ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে ৩ বিলিয়ন ভ্যাকসিনের ডোজ বিতরণ সম্ভব হয়েছে। এটা হল বর্তমান চিত্র।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে–এ জাতীয় সংকট দেখেনি। 2019এর আগে কেউ ভাবতেও পারেনি এমনটি ঘটতে পারে।

সমাজবিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম বলেছিলেন যে অভূতপূর্ব পরিবর্তনের সময় অ্যানোমি ঘটে। ‘অ্যানোমি’ হলো আদর্শহীনতা ও লক্ষ্য-স্বল্পতার পরিস্থিতি। ডুর্খেইমের মতেদ্রুত সামাজিক ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের সময় আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়। ডুর্খেইমের কাছে আত্মহত্যা সামাজিক অস্থিরতার উদাহরণ ছিল। করোনার এ সময়টিকে একটি অ্যানোমি পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ভয়অনিশ্চয়তামানসিক চাপ একং আর্থিক কষ্ট সমাজকে গ্রাস করেছে এবং করতে থাকবে। জার্মানির এক মন্ত্রী এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আত্মহত্যা করেছেন।

যেভাবে অর্থমন্ত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তা দেখে শঙ্কিত জার্মানির প্রশাসন। চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বুফিয়ার বলেন, “এখন আমরা বুঝতে পারছি যে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়া নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত ছিলেন”।

আমাদের দেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ ভারতে প্রথম অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায় পঞ্চাশোর্ধ 1 প্রবীণ নাগরিক বাধ্য হন পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আত্মহননের পথ বেছে নিতে। বিষয়টি সে সময়ে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পরবর্তীতে আত্মহত্যার ঘটনা ডাক্তার পুলিশ ও অন্যান্যদের মধ্যে ঘটেছিল।

এই করোণা আবহাওয়া কালে,ইতিমধ্যে বেশ কিছু মানুষ করোনার দরিদ্র্যতার কারণে আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পারিবারিক সহিংসতা বিশ্বের অনেক জায়গায় করোনাভাইরাস সংকটের পর বেড়েছে বলে জানা গেছে। এবিষয়ে খুব কম সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে সেই সময়ে।

বিভিন্ন ঘটনার গতি-প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করতে হয় যে,এই  করোনা ভাইরাস বিশ্বজুড়ে সামাজিকরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেছে। মহামারিতে বিশ্বের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা লাফিয়ে ওঠার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এটি সামাজিক ভাঙন এবং রাজনৈতিক বিভাজনও ঘটবে। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কোনো অস্থায়ী ব্যবস্থা নয়। এটি অভিবাসী বিরোধী মনোভাবের ফলস্বরূপ হতে পারে। সুতরাং এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যত্নশীলউদ্ভাবনী এবং চিন্তাশীল সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রয়োজন।তা না হলেভাইরাস সংকটের সঙ্গে যুক্ত অর্থনৈতিক পরিণতি সামাজিক অস্থিরতার মাত্রা বাড়িয়ে দেবে।

বর্তমান বিশ্বে করোনা এক মহামারীর চেহারা নিয়েছে। পৃথিবীর সবকটি মহাদেশে এবং প্রায় দুশোটি দেশে এই মারণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে মারা গেছে লক্ষাধিক মানুষ। স্বাস্থ্য ও আর্থিক পরিকাঠামোয় উন্নত ইউরোপীয় দেশগুলি এবং আমেরিকাও করোনার মৃত্যুমিছিল সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। ভারতবর্ষও করোনা মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে লকডাউন শুরু করে দিয়েছে। এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা। আমাদের দৈনন্দিন রুটিনটাই এখন আমূল পালটে গেছে। প্রতিদিনের অভ্যস্ত বহির্মুখী আমাদের যাপন এখন ঘরের চার দেওয়ালে বন্দি। ব্যবসা-বাণিজ্যঅফিস-আদালতদোকান-বাজারপাড়া-প্রতিবেশীবন্ধু-বান্ধব সমন্বিত আমাদের যে জীবনযাপন তা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত কিংবা একেবারে বন্ধ। বন্ধ সিনেমা হলবন্ধ ঝাঁ-চকচকে মলবন্ধ খেলার মাঠবন্ধ কফিশপ বা চায়ের দোকান। এমনকি টিভি খুললে এখন পুরানো অনুষ্ঠানের কিংবা সিরিয়ালের সম্প্রচার। জীবনটা এতোদিন বন্ধুর বিয়ের বাজনার মতো সুরে বাজছিল এখন সহসা তাল গেছে কেটে। মসৃণ গতিতে এগিয়ে চলেছিল জীবন-গাড়ীর চাকাএখন আচমকা ব্রেক। কিংবা এ যেন তুমুল এক আলো-উৎসবআনন্দ আয়োজন থেকে সরাসরি নিক্ষিপ্ত হওয়া অন্ধকূপে। নিজেকে ক্রমাগতই বহির্মুখী করে তোলার শিক্ষাপ্রাপ্ত মানুষ আমরা এখন নতুন করে শিখছি নিভৃত গৃহকোণও জীবনরক্ষার জন্য কতটা জরুরি।

মানসিক অবসাদ তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক এই পরিস্থিতিতে। জীবনকে যেভাবে এতোদিন ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে উপভোগ করে এসেছি আমরা সহসা এক ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সবকিছু। ভাইরাসের মৃত্যুভয় যেমন একদিকে জাঁকিয়ে বসছেসেইসঙ্গে যাপনের এই অনভ্যস্ত দায়ভার আমাদের ক্লান্ত করে তুলছে আরও বেশি। ফেসবুক বা যে কোনও সোশাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই বোঝা যাচ্ছে চারপাশের বেশিরভাগ মানুষই লকডাউনের এই গৃহবাসের দিনগুলিকে বন্দিদশার সঙ্গেই তুলনা করছেন। করোনাপূর্ব দিনগুলির স্মৃতিভারে তারা আচ্ছন্ন। কিন্তু বাড়িতে থাকার এই দিনগুলোকে কি শুধু বন্দিত্বের সঙ্গেই তুলনা করা চলে?

একটু অন্যভাবেও তো অনুভব করা যায় এই দিনগুলোকে। এমনভাবে কাটানো যায় যাতে করোনার আতঙ্কও মনের উপর জেঁকে বসতে না পারে। কাদের সঙ্গে কাটাচ্ছি আমরা এই দিনগুলোবাবা-মা-ভাই-বোন-স্বামী-স্ত্রী-সন্তান-দাদু-ঠাকুমা –এদের সঙ্গেই তো! এরাই তো আমার পরিবার। আমার সবচেয়ে আপনজন। এদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারিনা বলেই তো করোনা-পূর্ব দিনগুলিতে আমরা আক্ষেপ করতামমনখারাপ করতাম। তাহলে এই প্রিয়জনদের সঙ্গে এই সময়টুকু তো আমরা উপভোগ করেই কাটিয়ে দিতে পারি। একটু ভেবে দেখতে পারি আমরা। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততাপ্রতিযোগিতাইঁদুর দৌড় –এসবের মধ্যে আমরা বোধহয় সবচেয়ে বেশি উপেক্ষা করে এসেছি এই প্রিয়-মানুষগুলোকেই। পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ভেবে নিয়ে এই সম্পর্কগুলোও যে আমাদের মনোযোগ দাবি করেসময় দাবি করে সে কথা ভুলতে বসেছি। সবাই মনে করে দেখি তো শেষ কতদিন আগে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে একটা গোটা বেলা নির্ভেজাল আড্ডা দিয়ে কাটাতে পেরেছি। কোনও রেস্টুরেন্টে কৃত্রিম আলোয় নয়কোথাও বেড়াতে গিয়ে নয়নিজের বাড়িতেনিজের বিছানায় নিজেদের সুখ-দুঃখের কথাছোটোবেলার কথা নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে কেটে গেছে অনেকটা সময়। তারপর আচমকা হয়তো মা বলে উঠেছেন যে এতো বেলা হয়ে গেলভাত বসানো হলো না। দাদুর ঘরের দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে –শরীর ঠিক আছে কি না জিগ্যেস করা ছাড়াও আরও কত কিছু নিয়ে কথা বলা যেত একসময় মনে পড়েমনে পড়ে সুনীল গাভাসকার বড় ব্যাটসমান না শচীন তেন্ডুলকর এই নিয়ে খুব তর্ক হতো তোমার দাদুর সঙ্গে। শেষ কবে ঠাকুমার বয়সের ভারী শীর্ণ মুখের বলিরেখাগুলোয় শান্তভাবে হাত বুলিয়েছি –মনে পড়েযে ভাই বা দাদার সঙ্গে বর্তমানে স্বার্থবুদ্ধি পরিচালিত আমাদের এতো সংঘাতযার সংস্পর্শ এড়াতে হয়তো বা কেউ কেউ উঠে এসেছি স্বামী-স্ত্রী আর অ্যালসেশিয়ানের শোভিত ফ্ল্যাটে –সত্যি কি মনে পড়ে না তার সঙ্গে কাটানো শৈশব ও কৈশোরের সেই সব প্রথম সবকিছু। হাতে এখন অনেক সময়। ফোন করা যায় তাকে একটাছোট হয়ে যাবোনা একেবারেই না বরং ভেঙে যাওয়া সেতুটা আবার গড়েও উঠতে পারে। 

আসলে আধুনিক এই যন্ত্রসভ্যতায় হাজার মাইল দূরের স্বল্প-পরিচিত ব্যক্তিকে আমরা অনায়াসে আপন করে নিই ভার্চুয়ালিকিন্তু নিজের বাড়ির আরশিনগরের বাসিন্দার খবর রাখিনা। এটাই আমাদের বাস্তব। আমাদের নিউক্লিয়ার সন্ধ্যায় তাই শুধুই মনখারাপের রাগিণী বেজে চলে। লকডাউনে কাছের মানুষদের মাঝে বসেও নিজেদের বিষাদগ্রস্ত বলে মনে হয়। উপেন্দ্রকিশোরের রচনাসমগ্রটা টেনে বের করে এনে ছেলেমেয়েকে পড়ে শোনাই আসুন রামায়ণ কিংবা মহাভারতের কাহিনি অথবা টুনটুনির গল্প। স্বামী-স্ত্রী যে যার ফোনে অনাবশ্যক সোশাল মিডিয়ায় স্ক্রল না করে দেখি ফেলি পুরানো কিংবা নতুন কিছু সিনেমা।

বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো থাকার যে অভ্যাস আধুনিকতা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে – করোনার দিনগুলিতে সেই নিয়ম ভেঙে একটু বের হয়ে আসি। আমাদের মধ্যবিত্ত মন আর মননের পুরানো মেজাজটা ফিরিয়ে আনি। নিজের ভয়গুলোসমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করি পরস্পরের সঙ্গে। তুমি ওসব বুঝবে না বলে মা-কে দূরে সরিয়ে না দিয়ে কাছে গিয়ে বসি। গল্প করি সবার সঙ্গে। নিজেকে প্রকাশ করি। অন্যের প্রকাশকে গুরুত্ব দিই। পরিবার মধ্যবিত্ত মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই শক্তির যাদু আমরা চর্চা আর মনোযোগের অভাবে হারাতে বসেছি। বাইরের পৃথিবী বিধ্বস্ত হচ্ছে।

বাড়িতে আইসোলেশনে বসে থাকা ছাড়া এখন আমাদের কিছুই করার নেই। করোনা-যুদ্ধে এটাই আমাদের একমাত্র অস্ত্র। সেই অবসরে আমাদের অন্দরমহলটিকে এখন আমরা আবার রঙচঙে করিয়ে নিতে পারি। সম্পর্কের রেখাগুলোর উপর জমতে থাকা ধুলো উড়িয়ে দিতে পারি সহজেই। আর তা পারলেই ঘরে থাকার এই দিনগুলো আর বন্দিদশা বলে মনে হবে না। বাইরের আলো যখন নিভে এলো তখন ভিতরের আলো জ্বালিয়ে রাখাই দরকার। সেই আলোর জোরেই আমারা উঠে দাঁড়াতে পারবো। একসময় করোনা মহামারী নিশ্চয়ই কেটে যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অভিমত আমাদের সামজিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে এই ভাইরাস-হানার এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব দীর্ঘদিন বজায় থাকবে। বিশ্বব্যাপী মন্দা গ্রাস করবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি খোয়াবে। দরিদ্ররা হারাবে তাদের শেষ সম্বলটুকু। কিসের জোরে আমরা সেই দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ে নামবএই প্রিয় মানুষেরাআত্মার আত্মজনেরাই সেই লড়াইয়ে আমাদের শক্তি জোগাবে। আমরা শক্তি জোগাবো তাদের।

এই পরিস্থিতিতে সচেতনতাবোধ এই উপলব্ধি এখন আমাদের নিজেদের স্বভাব প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হতে হবে।

 

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে অবশ্যই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জোরদার করতে হলে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবেকমাতে হবে দুর্নীতি। সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন ও শক্তিশালী হওয়া দরকার। নিম্ন আয়ের সব লোককে আয়ের সহায়তা দেওয়া উচিত। করোনাভাইরাস নিয়ে সব স্টিগমার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। স্কুলগুলো সচল রাখতে এবং বাসা থেকে কাজ করার জন্য আইটি সামর্থ্য এবং প্রাপ্যতার অনেক বেশি বাড়াতে হবে। মহামারি বা মহামারিকালীন একটি যুগোপযোগী ও বিস্তৃত আইনিকাঠামো বেশ প্রয়োজন।

রাষ্ট্রনায়কদের পাশাপাশি যারা সমাজে দায়বদ্ধশীল পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন ,  সময় এসেছে

এই মারন অতিমারী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি এর সামাজিকঅর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিণতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ।

সংবাদমাধ্যমকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা সবাই একসঙ্গে এই সংকটে আছি। দৃঢ়তার বন্ধনে আমরা এগিয়ে যাব একই সুরের বাঁধনে। মোকাবিলা করবো মহামারি করোনা সময়ের সব সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আর একসঙ্গে আমরা জয়ী হতে পারবো আমরা। আর তা যদি করতে না পারি তাহলে আর কবে সচেতন হবো আমরাএই প্রশ্ন যেমন আজকের প্রেক্ষাপটের প্রাসঙ্গিক তেমনি আগামী প্রজন্মের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কি উত্তর রেখে যাব আমরা ?

অঙ্কুরোদগমের আগস্ট সংখ্যা। তাই ভারতমাতার শৃঙ্খলমুক্তির মাসটিকে উপলক্ষ করে দু-কলম লেখার ধৃষ্টতা উপেক্ষা করতে পারলামনা।

     আগস্ট মানেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম মুক্তির জয়ধ্বজা উত্তোলনের দিন। আগস্ট মানেই দুশ বছরে শত সহস্র প্রাণের বলিদানের বিনিময়ে ভারতমাতার মুক্তির আস্বাদ পাবার দিন।আগস্ট মানে রক্তে রাঙনো কাঁকর বিছানো দীর্ঘ পথ অতিক্রান্ত করে একটি শ্বেতশুভ্র মসৃণ পথে ভারতমাতার নতুনভাবে পথ চলবার সূচনা।

        ভারতমাতার শৃঙ্গলমোচনের জন্য যেসকল বীরযোদ্ধারা যুগে যুগে আত্মাহূতি দিয়েছেন,তাদের জীবনযুদ্ধের রোমহর্ষক কাহিনী পড়লে বা শুনলে মনে হয় কোনো রূপকথার কল্পিত কাহিনী শুনছি। কিন্তু নিজের প্রাণকে উপেক্ষা করে,দেশমাতাকে ভালোবেসে যেসকল বীরশ্রেষ্ঠরা  প্রাণ দিয়েছেন ,তারা কোনো কল্পিত রূপকথার চরিত্র নয়,তারাই হলেন বাস্তব জীবনের আসল যোদ্ধা। ইতিহাসের পাতায় পাতায় তারা অমরগাঁথা হয়ে রইবেন সারাজীবন।

       ইতিহাস হলো বিজ্ঞান। আর বিজ্ঞানের কাজ হল সত্যকে উদঘাটন করা। আমাদের এই রাষ্ট্রীয় আন্দোলনের ইতিহাসও এমনটা হওয়া উচিত  যাতে কোনো কপটতা বা সত্যের নামে অসত্য প্রকট না হয়ে ওঠে। যেমনটা হয়ে উঠেছিলো দ্বিজাতি তত্ত্বের মিথ্যা বিশ্বাস।যে বিশ্বাসের রক্তাক্ত ছুরিতে ভাগ হয়ে গিয়েছিলো পদ্মা,মেঘনা,গঙ্গার উত্তাল ঢেউ।কাঁটাতারের বেড়ায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো বাংলার হৃদয়।

        “স্বাধীনতা” কথাটি শুধুমাত্র একটি প্রাণহীন শব্দ সমাহার নয়,অথবা একটি মাস বা দিনের উৎসবও নয় আবার এই শব্দটির বলিষ্ঠতা প্রমাণ করবার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনে বিপুল জনসমারোহের মাঝে জাঁকজমকপূর্ণতার সাথে পতাকা উত্তোলন করে দেশমাতৃকার বন্দনা করে স্লোগান দেওয়াও নয়।“স্বাধীনতা” কথাটির মাঝে লুকিয়ে আছে বহূ মায়ের হাহাকারে ভরা শূণ্য বক্ষ,শত শত রমণীর মলিন হয়ে যাওয়া শূণ্য সিঁথি। স্বাধীনতা মানে এক আলোকবর্ষ পরেও যাদের বীরত্ব ইতিহাসের পাতায় পাঠ করতে গিয়ে শিওরে ওঠে আমাদের হৃদয়। সেই সকল বীরদের চরম আত্মত্যাগের কাহিনী আমাদের অন্তরে বপন করে নিঃস্বার্থ দেশভক্তির বীজ। আমাদের সকলের উচিতস্বাধীনতা কথাটিকে শুধুমাত্র কয়েকটি অক্ষরের সমষ্টি বা একটি নির্দিষ্ট দিনে দেশমাতৃকার মুক্তিদিবস উৎযাপনের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে,বীরগণের বীরগাঁথা স্মরণ করে নিজেদের চিত্তকে অগ্নিস্নানে পরিশুদ্ধ করা,নিজেদের ভাবাবেগকে মহানতার মাঝে বিলিয়ে দেওয়া।

        “হে,বীর শ্রেষ্ঠগণ,হ্যাঁ তোমাদেরই বলছি মহান মানব যোদ্ধাগণ। আমরা আজও ভুলিনি তোমাদের নিঃস্বার্থ বলিদান। ভুলিনি ফাঁসিকাঠে ঝোলবার আগ মুহূর্তে তোমাদের অবিচলিত নির্ভীক মুখখানি।ভুলিনি একবুক জলে দাঁড়িয়ে সশস্ত্র ইংরেজবাহিনীর সামনে গুলিতে বিদ্ধ হবার ভয়কে উপেক্ষা করে বুক চিতিয়ে তোমাদের বন্দেমাতরম্ ধ্বনি। ভুলিনি জ্বলন্ত আগুনের গোলায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহূতি দেওয়া। ভুলিনি বদ্ধ কারাগারে ব্রিটিশ শাসকের নির্মম ক্রূরতা ও নির্দয়তার চিহ্নরূপে কারাগারের দেওয়ালে লেগে থাকা রক্তের ছোপগুলি। তোমাদের মধ্যে কত প্রাণ নির্মম অত্যাচারে প্রাণত্যাগ করেছে বন্ধ কুঠুরীতে। আবার কেউবা নিঃশেষ হয়ে আসা প্রদীপের শিখার মতো দিন গুনেছে কঠিন শাস্তির অপেক্ষায়। ভুলিনি আমরা তোমাদের,ভুলিনি বীরযোদ্ধাগণ।”

            ” হে নির্ভীকতার প্রতীক স্বরূপ মহান মানবগণ,তোমাদের প্রতিটি চরণধূলিকণা প্রণম্য ও প্রেরণাদায়ক।তোমাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে জেনেছি কিভাবে আদর্শ অনুরাগে দীক্ষিত হয়ে দেশের দশের সেবায় ব্রতী হয়ে ওঠা যায়।জেনেছি কেমন করে রাষ্ট্রহিতে,পরহিতে নিজেকে উৎসর্গ করতে হয়। 

      “ ১৫-ই আগস্ট”….বুক ফুলিয়ে গর্ব করে আমরা স্বাধীন ভারতের উদ্দ্যেশ্যে স্লোগান দিই ।বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মেতে উঠি দেশমাতৃকার বন্দনায়।সকল দেশবাসীগণ গলা মিলিয়ে বলে উঠি বন্দেমাতরম্। এই একটি স্বাধীন দিনের স্বপ্নকে রূপদান করতে গিয়ে ঝরে গেছে কতশত ক্ষুদিরাম,দীনেশ গুপ্তরা। কত সূর্যসেন,ভগৎ সিং,তারকেশ্বর দস্তিদারেরা ছাই হয়ে মিলিয়ে গেছে মাতৃভূমিতে। কত বিনয়,বাদল,দিনেশ দিয়েছে আত্মাহূতি।দেশমাতৃকাকে বন্দনার অপরাধে শত শত প্রীতিলতারাও মিলিয়ে গেছে অন্ধকারে।

        আর সেই সৌম্যকান্তি দিব্য পুরুষ….যিনি এক বৈভবপূর্ণ জীবনযাত্রার  প্রলোভনকে উপেক্ষা করে হাতে তুলে ধরেছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের জ্বলন্ত মশাল সেই রাজপুত্রকেও আমরা ভুলিনি।তার মশালের  উত্তাপ ছড়িয়ে দিতে তিনি ছুটেছেন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে,ছুটে গিয়েছেন বহির্বিশ্বেও। দৃঢকন্ঠে তিনি দেশবাসীকে আবেদন করেছিলেন  “ If you give me blood,I shall give you freedom ”তার কন্ঠের সেই অগ্নিময় বাণী আপামর ভারতবাসীর শিরা-উপশিরায় জাগিয়েছিল উত্তাপ ।অধিকৃত সাম্রাজ্যবাদের স্বর্ণসিংহাসনে শেষ পরাজয়ের পেরেকটি গেঁথে দেবার অপরাধে বিংশশতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ব্যাসকূটের শেষ পরিণতি আজও আমাদের অজানা।

     “হে অনন্য দেশপ্রেমের রাজপুত্র,মুক্তিপথের কান্ডারী,আজাদ-হিন্দ ফৌজের সর্বাধিনায়ক   ক্ষমা করো আমাদের। তোমার বীরত্বের স্মৃতিটুকু দীর্ঘ সময় ধরে আমরা বহন করে নিয়ে গেলেও তোমাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভূষিত করতে পারিনি আমরা। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও তোমার স্মৃতিকে অবলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র ব্যাথিত করে তোলে প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের হৃদয়। তবুও তোমার নিজহাতে গড়ে তোলা দেশভক্তির নিদর্শনের আলোক বলয়ে তুমি আজও আমাদের হৃদয়ে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র।

       “রাষ্ট্রকল্যাণ সর্বোপরি”এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে সাতলক্ষের বেশী পূজনীয়,বন্দনীয় বলিদানকারীরা এই রাষ্ট্রের বাগানে ফুল ফোটাতে চেয়েছেন নিজেদের রক্তের বিনিময়ে।আমাদর প্রত্যেকটি দেশবাসীর সম্মানময় স্লোগানে তাদের হৃদপিন্ডটা আরেকবার স্পন্দিত হয়ে উঠুক। আমাদের সশ্রদ্ধ  ভালোবাসার ছোঁয়ায় তারা আরেকবার ফিরে পাক প্রাণবায়ু ,এমুক্ত ভারতে। আর আমাদের এই প্রজন্মের হাওয়ায় ভেসে চলা তরুণ সম্প্রদায় ,তোমরা একবার তোমাদের দু-হাত শূণ্যে বাড়িয়ে ,মুক্ত বাতাসকে স্পর্শ করে অনুভব করো সেই সকল শাশ্বত আত্মাদের,যাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ তোমরা আজ স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করতে পারছো। গা-জোয়ারী স্রোতের উজানে নিজেদের না ভাসিয়ে ভেসে চলো মহাকালের সত্যতার ঢেউয়ের উজানে। তোমাদের ভাস্বরিত আলোতেই সার্থক হবে আমাদের দেশমাতৃকার মুক্তির স্বাদ। সফল হবে দেশভক্তির বলিদান।

        “স্বাধীনতা তুমি রক্তে রাঙানো

                আগুন ঝরা দিন,

          তোমার কন্ঠে বেজে ওঠে আজও

                করুণ সুরের বীণ।

          আমরা অধম তাইতো পারিনি

                 শোধিতে তোমার ঋণ।। ”

কবিতা

অমিত কুমার দে

তারাপদ গুহ

মাধবী তালুকদার

লক্ষ্মণ কর্মকার

রেবা সরকার

ডঃ শিলা দত্ত ঘটক

প্রসেনজিৎ রায়

অনিমেষ সরকার

প্রদীপ সরকার

দেবযানী সেনগুপ্ত

অমিত দে

শীলা ঘটক

গল্প

সীমা সাহা

বিপুল রায়

ভিডিও

কলস্বনা ব্যানার্জী

ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী

পারমিতা কর বিশ্বাস

নির্মল কুমার ঘোষ

তিলাঞ্জলি গাঙ্গুলী

স্বপ্নীল সরকার

তুমি একটা শূন্যে ঢুকে আছ

আমি আরেকটায়

আমাদের শূন্যের পরিসরও একইরকম

অথচ আমার শূন্য তোমার অজানা

তোমারটা আমি জানি না

তবু মনে হয়

আমাদের শূন্যের রঙ একইরকম

শূন্যের দেয়াল অভিন্ন মসৃণ

শূন্যকথায় আমাদের কথোপকথন

শূন্যের পাঠ নিতে একইভাবে

                        পদ্মাসনে বসি

 

আমরা আমাদের শূন্যকে

এসো আত্মীয়তায় বেঁধে নিয়ে

শূন্যের বিস্তৃত কোটরে ঢুকে পড়ি

পাখি হই, শূন্যউড়ান শিখে নিই যে যার মতো

বহু কিছু জড়িয়ে রাখা

            পড়ে থাকে সময়

পড়ে থাকে জীবনযাপনের বিছানা

খাট আলমারি চেয়ার টেবিল

ধুলোমাখা জুতো

ঝোপঝাড় অনাবাদি জমি

শান বাঁধানো ঘাট

কবিতার খাতার পাশে পড়ে থাকে

টুকরো-টাকরা গল্প

কিছুটা মলিন আকাশ

অবুঝ কিছু অভিমান

কিছু অচেনা ছোট ছোট অহংকার

পড়ে থাকে বিবাহ বার্ষিকী

মুখেভাত জন্মদিন

পড়ে থাকে মায়া হ্রদ

মোহ সংসার কূট জাল

 

তারপরেও পড়ে থাকে

 কিছু যেন আছড়ে  মারে

বিদ্ধ করে পুরনো ক্ষত

অসম্ভব তাজা উষ্ণতা

মৌন নামতে থাকে হৃদপিণ্ড

শহরতলী ডিঙিয়ে গ্রাম

ফেলে আসা সোনারোদ

মাটি জলে মাখা সোনার ধান

 

তার পাশে ভেসে যায়

জীবনের জপমালা

ফলকের পদ্ম ঘোড়া

নকশা আঁকা উলকি পদ……

আপন করে চাইলে পরেও

পাওয়া যায়না যে সব

সে এক অসম্ভব

মাঝপথে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তবু

গল্পের থাকে বাকি

স্বপ্ন সত্যি নাকি !

ভবিষ্যতের রসদ ঝাঁপিতে

দূঃখ জমানো ভালো

শূন্য ও জমকালো…

চাঁদের দেশে পা বাড়ালো

    গুটিকয়েক ময়না

নাকে নোলক, পায়ে বালা

    পড়েছে বহু গয়না।

 

উড়তে উড়তে চাঁদের এলো

       ময়না পাখির দল

চাঁদের বুকে নামার সাথে

      বাজে পায়ের মল।

 

খোলা আকাশ মুক্ত বাতাস

      ময়না ধরে গান

চাঁদের জলে গা ভিজিয়ে

      করছে ওরা স্নান।

 

থাকবে চাঁদে খাবে চাঁদে

     খুশীর সীমা নাই

মর্ত্যভূমে ভুলেও ওরা

   ফিরবে না আর ভাই।

ভালোবাসা ছিল ভালোবাসা যায়

নদীতীরে ভালোবাসা হলে

স্মৃতি যেন নীরবতা গায়।

 

উপহার  ছিল যেন কিছু

দেয়া নেয়া হল বুঝি আরও

মৃত্যু-দ্বারে যদি যেতে হয়

দেব উন্মাদ উপহার।

 

বুঝেশুনে ভাঙা যত সিঁড়ি

পৌঁছেছি ভোরের কুয়াশায়।

সিকিমের জানালায়

কুয়াশায়  ভালোবাসায়।

 

এখনও কী ভালোবাসা যায়

কী সুন্দর ভালোবেসেছিলাম।

অমাবস্যা রাতে কৃষ্ণ-কালো আকাশ জুড়ে

ক্ষণিক দীপালিকাসম শিহরিত সুখতারা

— মেঘ দোলনায় রঙিন-স্বপ্ন ঢেউ শুভ্রশঙ্খ -মালায় , মুক্ত-ঝরা দ্যুতি

প্রেম-সাগরের বুকে খোঁজে হাজারো প্রতিশ্রুতি—।

অনুরঞ্জিত মঙ্গলসত্তার আবির্ভাব সঙ্কেত বয়ে

ফাগুন-বাতাসের উদাসী পুষ্প- চন্দন সুবাসে

সাড়ম্বরঘন মানবতাবোধের রূপরেখায়

জীবনমরুতে শ্রীদ্বীপ জ্বালিয়ে

মিলন-প্রেমের রোশনি ছোঁয়ায়—

—– অপরূপ ছন্দোবন্ধে এক টুকরো সংলাপ।

অনুভব-স্পন্দিত তরঙ্গ দোলায় প্রেমের রাখিবন্ধন,

সুরেল দখনে-বাতাস পরশে হৃদয় তানপুরায়

আঁকে রবীন্দ্র-গানের পূজা স্বরলিপি

মায়াবী জ্যোৎস্নায় স্থায়ী-অন্তরার অন্তর জুড়ে

উদ্ভাসিত আবেগ জারিত অনুরাগের সুখ-চিহ্ন—-।

এই পথ কখনও শেষ হবার নয়

হয়তো চলতে চলতে একদিন শেষ হয়ে যাব আমি।

শান্ত হবে কলরব

নিঝুম শহরের গলিপথে তখন ঝাঁকিয়ে বসবে শীত,

আমি ক্লান্ত সরীসৃপের মতো গলা বাড়িয়ে দেব।

তুমি তো জানো, এ অভাব আমার ঘর

এ মহামারী আমার সংসার

অর্ধাঙ্গিনী কবজের সাথে শেষ কাকলির পর

তোমাকেও অবাক করে মিশে যাব

আলো থেকে অন্ধকারের গভীর কথোপকথনে….

১.প্রেম

প্রেমের কাছে কখনও কখনও রঙিন হয়ে আসি

সাদা কালো স্বভাব বদলে

বসন্ত দূরে সরে গেলে

চরিত্র ফিকে হয়ে আসে দুপুরের…

 

২. স্পর্শ

অনুভব থেকে তোমাকে ছুঁই

আমরা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে আসি

এসো ফুল তোমাকে বিষাদ চাপিয়ে দিই এই জংশনের…

 

৩.গোলাপ

ট্র্যাক রেকর্ড বদলে আরও নির্দিষ্ট দিনের কাছে আসি

ভুল করে ফেলি যা আমার নয়

আসলে লুকিয়ে ছাদ থেকে ফুল ছুঁড়ে দেওয়া

আমার প্রথম অভ্যাস , আরও ঘনিষ্ঠ হলে কথা বদলে ফেলে তার চরিত্র…

 

 

৪.বিকেল

প্রতিটি বসন্তের পর ডায়েরী লিখে রাখে গল্প

পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে কেউ,

অংশ লেগে থাকা কোণে

পাঁপড়ি মেলে অক্ষর…

    বসন্ত এসে গেছে

শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া

সেজেছে অপরূপ সাজে,

কোকিলের কুহুরব আসছে ভেসে

ঐ নীল  আকাশে রং লেগেছে

ফাগুনের দোলা লেগেছে বনে বনে।

 

মন যেতে চায় প্রিয়তমার কাছে

একটু ছোঁয়া একটু ভালোবাসা

     তোমার কাছে পেতে

           বসন্ত এসে গেছে।

 

ঝরা পাতায় নূপুর বাজে

শাল, সেগুনের দেশে,

ধামসা মাদলে নাচছে মেয়ে মরদ

    মহুয়ার রসে ধরেছে  নেশা

        লাল পাহাড়ের দেশে।

বহুযুগ পরে অনেক আলোকবর্ষ দূরে

অন্য কোনো জন্মে-

আমাদের দেখা হবে আলোকিত এক মাঠে।

মাথার উপর নক্ষত্রখচিত নীলাকাশ,

সবুজ মাঠের শেষে স্রোতস্বিনী নদী-

অবিরাম বয়ে চলে কিশোরীর মতো !

তার ওপারে ঘন জঙ্গলের হাতছানি।

অনেক দূরে পাহাড় কুয়াশা-চাদরে ঢাকা,

মাঠের মাঝে বিশাল অশত্থ গাছের পাতা-

তারাদের ঝিকিমিকি আলোয় কাঁপে !

গাছের কোটরে বসে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী-

রূপকথার গল্প শোনায় !

চাঁদের ছায়া নদীর জলে হেসে ওঠে।

রূপকথার দেশটা বই-এর পাতা থেকে-

উঠে আসে আমাদের সামনে।

আমরা সেই গাছের তলায় বসে-

দুজনে- দুজনের হাতে হাত রেখে-

ঐ নক্ষত্র আলোতে স্নান সেরে নিই!

তারপর হাতে হাত ধরে –

এখিয়ে চলি দূরে, আরো দূরে!

দূরে কোথাও, দূরে দূরে

সৃষ্টির রেখাজুড়ে শুধুই অবয়ব

ওপরে সাদা পাতার ফসিল-সমগ্র।

আঙুল ও চোখের দিক নির্দেশে

রহস্যময় জাল অভিধা খোঁজে

প্রার্থনা করে শাশ্বত পট

 

অক্ষর নিষ্পাপ,

রামধনুর কাছে তার কোনও অহং নেই

 

রেখার প্রান্তে শুধু বিরামহীন

উবে যাওয়ার একাকী তালিম

 

ক্রমে সেদিকেই দৃশ্যমান করে তুলি

                         নিজের শরীর

আগের মতন করি আতিত আর নিন ধরে না গৌতমোক। বিয়ার পর জীবন সুখের হয় নাই !  ভাল করি দুই বছর হয় নাই বিয়ার– তাতে উয়ার বনুষ হৈমন্তী ডিভোর্স পেপারোত সই নিয়া গেইসে !

          পরপর দুই আতি নিন না ধরাতে সেদিন সুরা পান করি খানেক নিন যাবার চেষ্টা করে গৌতম। সুরা পান করা উয়ার নিশা না হয়। কিন্তু দুশ্চিন্তার কবল থাকি খানেক মুক্তি পাবার বাদে এই প্রথম সুরা পান। হয়তো মানষি এংকরি একদিন-দুইদিন করিতে করিতে নিশায় অভ্যস্ত হয়।

          সুরা পান করাতে ঝিমঝিম করি নিশা হইতে হইতে একটা সমায় বমিও করে গৌতম। তারপর সেই নিশাতে হুশ হারে কতক্ষণ যে চোখু বন্ধ করিসে– সেই চোখু খুলিতে খুলিতে পরের দিন প্রায় সকাল দশটা বাজি গেইসে। উঠিয়া হাত-মুখ ধুইয়া ভাতের আকা ধরাইসে। বউ যেহেতু এলা নাই, সেহেতু বাড়ির যাবতীয় কাজ উয়াক নিজেকে করির নাগে।

          ভাতের আকা ধরে দিয়া মোবাইলটা খুলাইতে কালে দেখা পায় ৩৩ টা মিসকল। সাথে একটা ম্যাসেজ– ‘প্লিজ কল মি, মন্টির বাবা’। নাম্বারটা গৌতমের অচিনা। কিছুক্ষণ ভাবে– ‘মইধ্য আতিত কার এমন দরকার পড়িসে যে এতবার মিসকল করিসে!’ সাথ সাথে কল নাগায়। ওপাশ থাকি কলটা রিসিভ হয়। পাতলা গলার স্বর একটা মহিলা, কান্দো কান্দো ভাব। গৌতম কথা না কইতে চিনি ফেলাইসে এইটা ঠিক উয়ার বনুষ হৈমন্তীর গলার স্বর। শুনিয়ায় গৌতমের চোখুর জল ছলছল হয়া টোপটোপে মাটিত পড়ির ধরিল। এই দুঃখ শুনিবার মতন মানষি নাই উয়ার! অনেক কষ্টে কান্দন আটকে তাও কইল, ‘হ্যালো…’

          ওপাশ থাকিও একে কথা, ‘হ্যালো…’

          গৌতম পুছিল, ‘কায়?’

          কান্দ কান্দ স্বরে উত্তর আসিল, ‘মুই তোর হৈম, মন্টির বাবা।’… কথাটা শুনি গৌতমের ডুকুরি ডুকুরি কান্দন বিরাইল। এইবার আর কান্দন আটকের পাইল না উয়ায়!

          ‘আচ্ছা! তে এতো দিন পর কি মনে করি কল করিলু?’

          ‘কেনে! কল কি করা যাবে না?’

          ‘কেনে যাবে না! অবশ্যই যাবে। কিন্তু… আজি হঠাৎ কি মনে করি?’

          কান্দ কান্দ স্বরে হৈমন্তী কইল, ‘তুই মোক এটে থাকি ধরি যা, প্লিজ মন্টির বাবা। মুই আর এই নরকোত এক মুহুর্ত্ব থাকির চান্দাং না!’

          ‘সেইটা ক্যাংকরি সম্ভব হয় হৈম!’…কথাটা হৈমন্তী কাড়ি নিল।

          ‘প্লিজ, এমন কথা কইস না তুই। অন্ততপক্ষে মন্টির মুখের ভিত্তি দেখি এই কথাটা কইস না, প্লিজ।’

          ‘ডিভোর্স পেপারোত সই নেওয়ার সমায় ভালোবাসা জাগে নাই তোর! মুই তো সই দিবার চান্দাং নাই, জোর-জবরদস্তি তুই নিজে সই নিলু! আজি কি এলা ভালোবাসা উথুলি পড়েছে?’

          ‘প্লিজ মন্টির বাবা, প্লিজ। সেদিনকার কথা ভুলি যা। সেদিনও মুই ডিভোর্স পেপারোত সই নিবার চান্দাং নাই। কিন্তু বাইধ্য হয়া…’

          কথাটা গৌতম কাড়ি নিয়া কইল, ‘ঐন্য কথা থাকিলে কবার পারিস।’

          ‘প্লিজ মন্টির বাবা, প্লিজ তুই এমন করিস না!’

          গৌতম কলটা কাটি দিয়া ভাতের আকাত জল ঢালি দিয়া বাঁশ তলাত যায়া এক ধান্দারি বসি নইল। চোখুর জল কুনোমতেই আর আটক হয় না উয়ার। একের পর এক ফম পড়েছে পুরানা স্মৃতিগিলা।

          কিছুক্ষণ বাঁশ তলাতে বসি বিতি গেইল গৌতমের। হিদি ভোকের প্যাটোত অগুন জ্বলেছে, কিন্তু খাবার ইচ্ছা নাই। উয়ায় আরও কল করিল হৈমন্তিক। তাতে জানির পারে যে, উয়ার শাশুড়ি হৈমন্তীর আরও বিয়া ঠিক করিসে ঐন্যটে। আর মন্টিক নাকি কুনো একটা অনাথ আশ্রমোত দিয়া আসিবে। এই কথা শুনি গৌতমের মাথা ঠিক নাই, মানসিক অবস্থাও একে!

          গৌতম আর হৈমন্তীর ঝগড়াটা ডিভোর্স পর্যন্ত আগাইল না হয়। খুব সামাইন্য একটা পারিবারিক ঝগড়ার কারণে আজি এই পরিস্থিতি। সেদিন রাগের মাথায় গৌতম হৈমন্তীর গালোত একটা চড় কষে দিসে। তাতে ঠোঁট ফাটি রক্ত বিরাইসে উয়ার। একিনা কথা হৈমন্তীও খুব বড়োসড়ো করি বানেচানে উয়ার মা’ক কল করি জানে দিসে।

          ঘন্টা দুইয়ের মইধ্যে গৌতমের শাশুড়ি আসি উপস্থিত। আসিয়ায় যা শুরু করি দিসে তা গৌতম কল্পনাও করে নাই। গৌতমের কুনো কথাও শুনির চেষ্টা করিল না উয়ার শাশুড়ি! যেই শাশুড়িক উয়ায় নিজের মাওয়ের থাকি কুনো অংশে কম ভাবে না, সেই শাশুড়ি’ই আজি উয়ার সংসার ভাঙির বাদে তোরজোর করি নাগি পড়িসে! গৌতমের সাথে কুনো কথা না কয়া সোজাসুজি হৈমন্তীক কয়, ‘চলতো হৈম, তুই মোর সাথে চল। হাঁটেক। মুইও দ্যাখোং বেটার পাছিলাত কত ত্যাল হইসে!’

          গৌতম বাধা দিয়া কয়, ‘তোমরা কি নাগাইলেন মা! কিসের কি তোমরা সমস্যার সমাধান করি দিবেন, তা না করিয়া তোমরা আসি হৈমকে সায় দ্যাছেন!’

          ‘খবরদার মোক মাও কয়া ডেকাবেন না, চামারের বেটা!’

          এবারে গৌতমও উয়ার শাশুড়ির উপর রাগি যায়া কইল, ‘মোর পারমিশন ছাড়া এই বাড়ি ছাড়ি হৈম কুনোটে যাবে না। তোমার কি করির ক্ষমতা আছে, করো।’

          উয়ার শাশুড়ি উয়ার কথাত কান না দিয়া আরও হৈমন্তীক কয়, ‘তুই হাঁটতো হৈম, মুই আছোং কায় কি করে দ্যাখোং।’

          গৌতম এবার হৈমন্তীক কয়, ‘খালি এক পাও আগে বুঝেক তুই…’

          হৈমন্তীও উয়ার মাওয়ের পক্ষপাতি হয়া গৌতমোক কইল, ‘যাইম মুই। দম আছেতে আটক করি দেখা। আর আজি যুদি মুই এটে থাকি যাবার না পাং তে তুই মোর মরা মুখ দেখিবু– ছাওয়ার মাথাত হাত দিয়া কছোং।’… হৈমন্তী যেই অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় মাওয়ের হাত ধরি মন্টিক কোলাত নিয়া বিরি পড়িল বাড়ি ছাড়ি। আশ-পড়শীরও কুনো কথাত কান দিল না উয়ায়। গৌতমও আর কিছু কইল না। আটকেবারও চেষ্টা করিল না হৈমন্তীক– যেহেতু মন্টির মাথাত হাত দিয়া কিরা খাইসে উয়ায়। শাশুড়ির পাখে রক্তচোখু করি চায়া ভাবেছে– ‘দেউনিয়া শাশুড়ি থাকিলে বেটির সুখের সংসার ভাঙিতে আর কতক্ষণ!’

          সেদিন হৈমন্তী আর উয়ার মাও বাড়ি ফিরিবার আগোত থানা যায়া নারী নির্যাতনের কেজ করিসে গৌতমের নামে। স্বোয়ামীর কথা একবারের জইন্যেও ভাবিল না হৈমন্তী। উয়ার দেউনিয়া মাওয়ের সাথে একে সুরে তাল মিলাইল উয়ায়ও!… আর কি– এই তো অশান্তি শুরু!

          গৌতম কিন্তু থানা আর কেজের ব্যপারে একেবারেই অজানা। আতিতে একদল পুলিশ আসি খোঁজ করে গৌতমের। খাবার বসিসে মাত্র, এমন সমায় হিরহির করি পুলিশের দলটা উয়ার ঘর ঢুকিল। পুলিশোক দেখি তো গৌতম অবাক! হা করি চায়া নইল পুলিশের মুখের ভিত্তি। একজন পুলিশ জিজ্ঞাসা করিল, ‘তোমরা কি মিস্টার গৌতম?’

          গৌতম থোতবোত হয়া কইল, ‘হ্যাঁ, মুইয়ে গো..গৌতম। কেনে স্যার?’

          ‘খায়া ন্যাও আগোত, পরে শুনেন– কেনে?’

         ‘খাওয়া হয়া গেইসে।’… এই কথা শুনা মাত্র একজন পুলিশ লম্বা নাটিটা দিয়া পারাশ-পারাশ করি দুইটা মাইর বসে দিয়া গৌতমের জামার কলার ধরি ধ্যাদেরে টানি নিগাইল গাড়িখানের পাখে। গৌতম বিষের চোটে সোসাইতে সোসাইতে গাড়িত চড়ি বসিল।

          থানাত যায়া জানির পারে যে উয়ার বনুষ আর উয়ার শাশুড়ি নারী নির্যাতনের কেজ দিসে উয়ার নামে। গৌতমের মাথাত কিছুতেই খেলাইল না ব্যপারটা! ‘সামাইন্য একটা চড়ের বাদে নারী নির্যাতন কেজ! তাও আরও নিজের বনুষ এই কান্ড করে নাকি!’ থানা আসির আগোত যুদিও গৌতম ব্যপারটা নিয়া কিছু মনে করে নাই। ভাবিসে– রাগ করি আর কয়দিন বাপের বাড়িত থাকিবে হৈমন্তী। রাগ থামিলে আপনে বাড়ির ঘাটা ধরিবে। কিন্তু… হিতে বিপরীত হইল! যা কুনোদিন কল্পনাও করে না কুনো মানষি– তা’ই হইল!

          কয়েক মাস বিতি গেইল জেলের ভিতিরাত। ইয়ার মাঝোত হৈমন্তী কুনোদিন আসি একটা খবর করে নাই গৌতমের। 

          ছাড়া পাইল গৌতম। উয়ার দূর-সম্পর্কের কুনো এক উকিলা মামা জাবিন করি আনিসে। জেল থাকি বিরি উয়ায় সোজা হৈমন্তীক আনির ঘাটা ধরিল। যায়ায় হৈমন্তীর দেখা পায়া কয়, ‘চল, বাড়ি চল।’

          হৈমন্তীও গৌতমের কথা শুনি বাড়ি যাবার বাদে প্রস্তুত। এমন সমায় উয়ার শাশুড়ি ঘর থাকি বিরি আসি কইল, ‘হৈম আর কুনোদিন ওটে যাবে না।’

          গৌতমও রাগি যায়া কইল, ‘আটকেবার চেষ্টা করেন না মা। সংসারোত অগুন নাগেয়াও কি তোমার আত্মাটা শান্তি হয় নাই! হামার দুই জনের মাঝোত আসির চেষ্টা করেন না কয়া দিলুং।’

          হৈমন্তী উয়ার মা’ক কিছু কবার বারণ করে। উয়ার ভুলটা উয়ায় বুঝিসে। সবকিছু ভুলি যেহেতু উয়ার স্বোয়ামীও আরও উয়াক ফিরি নিগির আসিসে– কাজে উয়াও যাবার বাদে প্রস্তুত। কিন্তু হৈমন্তীর মাও আরও চ্যাঁচে উঠি কয়,‌‘হৈম আর যাবে না…’ কথাটা শ্যাষ হয় নাই। হয়তো আরও কিছু কইল হয়, তাতেই গৌতম ঠাস করি উয়ার শাশুড়ির গালোত একটা চড় কষে দিল। ঘটনটা আরও গরমাগরম পরিস্থিতির পাখে আগে গেইল।

          মাওয়ের গালোত চড় কষা দেখি হৈমন্তীও ক্ষেপি গেইল। উয়াও গৌতমোক ডাঙের বাদে হাত ওঠাইসে। কিন্তু হাতটা আরও নামায়। গৌতম মন্টিক কোলাত নিয়া হৈমন্তীর হাতটা ধরি কয়, ‘চল…’

          হৈমন্তী এক ঝটকায় হাতটা খুলি নিয়া কয়, ‘খবরদার। আর একটা কথাও তুই কবু না। মাওয়ের মতন শাশুড়ির গাত হাত তুলিস লইজ্জা নাগে না! জ্ঞান-কান্ড আছে তোর! য্যাংকরি আসিসিস, ত্যাংকরি ফিরি যা। এটে আর কুনোদিন আসির চেষ্টা করিস না তুই! ভাবি নিস মুই মরি গেসুং।’… গৌতম আর কিছু না কয়া সেলায় ফিরি আইসে।

          কিছুদিন পর সকাল সকাল হৈমন্তী মন্টিক ধরি ফিরি আসিল গৌতমের এটে। গৌতমও খুব খুশি হৈমন্তীক ফিরি আসির দেখি। পুরানা কথা যে মনত ধরি’ই থাকিবে– এমন মানষি না হয় উয়ায়। মন্টিক কোলাত নিয়া খুব আদর করে। মন্টিও ‘বাবা-মা’ করি ড্যাকের শিখিসে। বেটির মুখোত ‘বাবা’ কথাটা শুনি গৌতমের মরুভূমির মতন বুকখান যুনি কোনেক জলের নাগাল পাইল। বাপ-বেটির ভালোবাসা জুলজুল করি চায়া নইল হৈমন্তী। গৌতম পাড়ার একটা চেংড়াক দিয়া খাসির মসোং আনি ন্যায় বাজার থাকি। তারপর নিজে হাতে ভাত-শাকের আকা ধরায়।

          গৌতমের ছটফটি দেখি হৈমন্তী নিজে আগে যায়া কয়, ‘দে মুই আন্দোং, মন্টির বাবা।’

          গৌতম কয়, ‘ধুর। তুই বসি বসি আড়াম কর। এতখান ঘাটা আসিলু। মুই নিজে আন্দেছোং, তুই খায়া দ্যাখ মোর হাতের আন্দা ভাত-শাক ক্যামন মজা হয় এলা।’… হৈমন্তী একটা মুচকি হাসি দিয়া পিড়াখান নিয়া গৌতমের বগলোতে একপাখে বইসে। আকার পারত বসি কতদিনের কত দুঃখের গল্প ভাগবাটা হয় দুই জনেরে।

          দুপুরে খাওয়া-দাওয়া হয়। হৈমন্তী গৌতমের আন্দা ভাত-শাকের প্রশংসা করে। গৌতমও হাসি হাসি কয়, ‘আরে পাগলি, মুই তো এমনি মজাক করি কলুং। কালি থাকি না তুইয়ে আন্দিবু।’

          চোখুর জল ছলছল করি হৈমন্তী কয়, ‘সেইটা আর হবে না মন্টির বাবা।’ …কথাটা কয়া শাড়ির আঞ্চলখান দিয়া মুখ চিপি ধরি ডুকুরি ডুকুরি কান্দি উঠে হৈমন্তী।

          গৌতম কয়, ‘কেনে হবে না হৈম! পুরানা সবকিছু কি ভুলি যাবার পারিস না তুই?’… হৈমন্তী কিছু না কয়া ডিভোর্স পেপারখান নিকিলি গৌতমোক সই দিবার কয়।

          গৌতম আরও কয়, ‘তোর মাথা ঠিক আছে তো হৈম!’

          ‘মোক আর কিছু কইস না তুই, মন্টির বাবা। হয়তো ভগবান হামার এই সম্পর্কটা মানি ন্যায় নাই!’

          ‘ভগবান না হয় হৈম– ক বোলে তুই নিজে মানি নিবার পাছিস না!’

          ‘সইটা তাড়াতাড়ি দিলে মুইও তাড়াতাড়ি চলি যাবার পাং, মন্টির বাবা।’

          ‘ভালো করি ভাবিসিস তো হৈম?’

          ‘তুই সইটা কি দিবু?’… গৌতমও আর কিছু না কয়া সইটা দিয়া দ্যায়। তারপর মন্টিক বুকোত নিয়া আদরের চুমা দিয়া হৈমন্তীর কোলাত ফিরি দ্যায়। হৈমন্তীও মন্টিক কোলাত নিয়া চোখুর জল মুছিতে মুছিতে উয়ার দেউনিয়া মাওয়ের ওটে যাবার ঘাটা ধরিল আরও।

          ইয়ার পর প্রায় ছয়খান মাস বিতি গেইল। কুনোমতনে পাগলার মতন দিন যাপন করি চলেছে গৌতম। সদায় ফম পড়ে হৈম আর মন্টির কথা। কুনো কুনোদিন সারা আতি নিন ধরে না দুশ্চিন্তায়। এংকরি দিন কাটিলে একটা ভাল মানষিক পাগলা হইতে বেশিদিন সমায় নাগির না হয়।

          এই দুশ্চিন্তার কারণে পরপর দুই আতি নিন হয় নাই গৌতমের। কাজে সেদিন সুরা পান করি থাকিসে, আর হৈমন্তীও তাকেতালে সেদিনকেনায় কল করিসে উয়াক।

          হৈমন্তীও গৌতমোক কল করার পাছিলাত কারণ আছে। উয়ার দেউনিয়া মাও আরও ঐন্যটে বিয়া ঠিক করিসে উয়ার! আর মন্টিক নাকি একটা অনাথ আশ্রমোত দিয়া আসিবে। কিন্তু হৈমন্তী কুনোদিন সেইটা হবার দিবে না। বাপ-মাও থাকিতে ছাওয়াটা কেনে অনাথ আশ্রম যাবে!… এই কারণে উয়ায় গৌতমোক কল করি উয়াক আরও ফিরি নিগিবার আব্দার জানায়। গৌতমও রাগের মাথায় প্রথমে ‘না’ করি দিলেও কিন্তু কথাটা মন থাকি কয় নাই। কাজে কলটা কাটিয়া কিছুক্ষণ পরে আরও কল করে হৈমন্তীক। সেলা গৌতম কয়, ‘হামার তো ডিভোর্স পেপারোত সই হয়া গেইসে হৈম! কুন মুখখান ধরি, কুন সাহসে তোক আরও ফিরি আনির যাম মুই!’

          হৈমন্তী কয়, ‘ডিভোর্স পেপারোত খালি সই হইসে, মন্টির বাবা। এলাও ডিভোর্স হয় নাই। আরও অনেক কিছু নিয়ম-নীতি বাকি আছে। এলাও হামরা একসাথে সংসার করি খাবার পারি, মন্টির বাবা।’

          ‘সেইটায় যুদি হয়া থাকে, তাহলে মুই তোক এলায় যায়া ধরি আইসেছোং হৈম। কার হিম্মৎ আছে আটকায় মুইও দ্যাখোং।’

          সেলাও কান্দি কান্দি হৈমন্তী কয়, ‘তুই মোক ধরি যা, মন্টির বাবা।’

          গৌতম হৈমন্তীক সাহস দিয়া কয়, ‘তুই নিশ্চিন্তে থাক হৈম। কান্দিস না। মুই আছোং তো।’… আরও বহুক্ষণ কথা-বাত্রা হয় দুইজনেরে। গৌতমের প্যাটের ভোক ততক্ষণে ছাড়ি পালাইসে। বাঁশ তলা থাকি বাড়ি আসি ফটাফট সাজি-পাড়ি সোজা বিরি পরে হৈমন্তীক ফিরি আনির উদ্দেশ্যে।

          গৌতম ওটে পৌঁছির আগোতে হৈমন্তী সাজি-পাড়ি তৈয়ারি হয়া বসি আছে।  উয়ায় পৌঁছালে হৈমন্তী কাপড়ের ব্যাগ নিয়া স্বোয়ামীর হাত ধরি বাড়ির ঘাটা ধরে। উয়ার মাও আগে আসি বাধা দিলে হৈমন্তী কুনো বাধা শুনে না। বরঞ্চ স্বোয়ামীর হয়া সেলা উয়ার মাওয়ের মুখের উপুরা কয়, ‘মা– তুই এই “মা” কথাটার মর্ময় বুঝিস না। যুদি বুঝিলু হয়, তাহলে আজি নিজের বেটির সংসারটাত অগুন নাগের বুদ্ধি দিলু না হয়!’

           উয়ার মাও সেলাও বুঝির পারে নাই যে বেটির বাড়ির ছোট্ট একটা সাংসারিক ঝগড়া আজি একমাত্র উয়ার তানে ডিভোর্স পর্যন্ত আসি দাঁড়াইসে। সেলাও কয়, ‘তুই যাইস না হৈম। ঐ চামারের বেটার সাথে থাকিলে তুই কুনোদিন সুখি হবার পাবু না।’

          ‘সুখের মর্ম তুই আর কি বুঝিস মা! তোর মুখোত এই কথাটা মানায় না। স্বোয়ামী কাক কয়– যুদি বুঝিলু হয়, তাহলে হয়তো আজি বাবাও ছাড়ি গেইল না হয় মা।’… আর কিছু না কয়া হৈমন্তী গৌতমের হাত ধরি হিরহির করি বিরি আইসে ভাঙা সংসারটাক আর একবার নয়া করি জোড়া নাগেবার বাদে।

সব বন্ধ, গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে। সত্যেন জীবনও হয়েছে অতি মারিতে তছনছ।

সত্যেন টোটো চালাত। বৌ ললিতা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঠিকা কাজ করত। ছেলেটা রাজস্থানে পাথর কাটার কাজ করত। ছোট দুই মেয়ে পাড়ার প্রাইমারী স্কুলে পড়ে। ভালোই চলছিল সত্যেনের সংসার। ওদের পাড়ায় অনেকেরই জীবন যাপন এভাবেই মোটামুটি খেয়ে পরে ভালোই চলছিল। অতি মারিতে সব ওলটপালট হয়ে গেছে সবার পরিবারেই।

তিন মাস পর হঠাৎ দেখা সত্যেনের সাথে মহামায়ার। তুমি সত্যেন না? একি চেহারা হয়েছে তোর?  জিজ্ঞাসা করল মহামায়া। কাজের খোজে বেড়িয়েছি দিদি, যেকোনো কাজ। কেন, তোর টোটো কোথায়, বৌ কি করছে, কেমন আছে ও?”সত্যেনের চোখ জলে ভিজে গেল। কিরে কি হলো বল? ছেলে তো বুঝি বাড়ি ফিরে এসেছে? হ্যাঁ দিদি ‘ও’ বাড়ি চলে এসেছে। ওর কাজ নেই, মালিক ওদের একমাসের  বেতন দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। কবে যেতে হবে জানে না। আর ব উ? ‘ও’আর নেই দিদি। ওর করোনা হয়েছিল, চিকিৎসার এতটুকু অবহেলা করিনি দিদি। সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হচ্ছিলো না বলে ‘ওকে’ র্নাসিং হোমে ভর্তি করালাম। তখনই টোটো টা বিক্রি করে ওর চিকিৎসা করালাম, তবুও ওকে বাঁচাতে পারলাম না দিদি। বলেই হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলো।

মহামায়া ‘ওকে’সান্ত্বনা দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করল,কাঁদিস  না সত্যেন, এই অতি মারিতে এমন মৃত্যু অনেকের বাড়িতে ই হয়েছে, তোর মতো আঘাত অনেকেই পেয়েছে।

মহামায়া জিজ্ঞাসা করল, সরকারের দেওয়া রেশন কিছু পাচ্ছিস?মেয়েদের দেখে রাখিস। হ্যা দিদি এটাই তো এখন আমার বড় সমস্যা। সরকারের দেওয়া, বেসরকারি দেওয়া কিছু কিছু সাহায্য পাচ্ছি। তবুও তো টাকার দরকার, তাই কাজের খোজে বেরিয়েছি।মহামায়া বলল সত্যি চারিদিকে একটা ভয়াবহ অবস্থা চলছে। আমার ছেলেও একটা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করত। ‘ওর’ চাকরিটাও চলে গেছে। কোম্পানি গুলি অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য সব কর্মীদের চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। ওর মতো অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আজ কর্মহীন হয়ে পরেছে। দুঃখ করিস না, মনে সাহস রাখ, বিপদ যেমন এসেছে, এই বিপদ, এই সঙ্কট থেকে নিশ্চয়ই আমরা সবাই মুক্তি পাব।এই বলে মহামায়া ওর হাতে একটা দুই হাজার টাকার নোট দিয়ে বলল নে রাখ,কাজে লাগবে।এই বলে মহামায়া নিজের বাড়িতে চলে গেল। সত্যেন কিছুক্ষণ মহামায়া র দিকে তাকিয়ে থেকে আনমনে হাঁটতে লাগলো।

কবিতা

……………

প্রবীর রায়

কমল ভট্টাচার্য

শেখর কর

মুনমুন ভৌমিক দাম

সঞ্চালী রায়

মনোজ রায়

রঙ্গন রায়

সপ্তাশ্ব ভৌমিক

তপেশ দাশ গুপ্ত

পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়

অতীন্দ্র চৌধূরী

পারমিতা কর বিশ্বাস

শশাঙ্কশেখর পাল

সবিতা সরকার

তারাপদ গুহ

নির্মল কুমার ঘোষ

সুশান্ত দাস

রত্না সরকার


গল্প

 ……
অভ্র সরকার এবং জিকেল দে

তারা তোমার জন্যই ভাবছে

অনবরত মাঠে ময়দানে কঁকিয়ে উঠছে

খবরের কাগজ আর সংবাদ চ্যানেলগুলি তোমার গল্পই বলে

ভাষা জানো কিন্তু তাকে ভাঙতে জানো না

তাই হতবাক হয়ে আছো

পোস্টার ছিঁড়ল না ভেঙে দিল দেয়াল

ছেঁড়ার অপরাধ থেকে

বেঁচে গেল কিছু মানুষ

বেঁচে গেল মারামারির স্পষ্ট ছায়াছবি

আপন করে চাইলে পরেও

পাওয়া যায়না যে সব

সে এক অসম্ভব

মাঝপথে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তবু

গল্পের থাকে বাকি

স্বপ্ন সত্যি নাকি !

ভবিষ্যতের রসদ ঝাঁপিতে

দূঃখ জমানো ভালো

শূন্য ও জমকালো…

একুশ আমার

শহীদ মিছিল, ছায়া ঘেরা রোদ্দুর

একুশ আমার

স্তব্ধ ফাগুন, রক্ত রাঙা চিরকুট ৷

একুশ আমার

গহীন হৃদয়, জল জোছনার শব্দ

একুশ আমার

বর্ণমালা, হিন্দোলে নিস্তব্ধ ৷

একুশ আমার

টুকরো আকাশ, তারায় তারায় আঁকা

একুশ আমার

রন্ধ্রে রন্ধ্রে, আগুন সোহাগ মাখা ৷

একুশ আমার

চোখের পলক, রাখালিয়া বাঁশি

একুশ আমার

হৃদমাঝারে, জয়ের টুকরো হাসি ৷

শব্দহীন কথা

এক ছুটে রাস্তা পার হয়ে

চলে যেতে পারে কোনো বাইসন

অথবা দলছুট একাকী বিমর্ষ

প্রেমে পরাজিত গন্ডার এক

কেড়ে নেবে তোমাদের সব আকর্ষণ।

 

গাছে গাছে পাখিদের কতশত ডাক

কত রঙ কত মায়া সুর

ময়ূরেরা মগডালে কখনও বা রাস্তায়

কি যে শোভা কি যে অপরূপ।

 

ছায়া ছায়া আঁধা আলো

নিবিড় এই বন

শুকনো পাতাতে ছাওয়া

নেশা নেশা গন্ধমাখা

লাটাগুড়ির এই বনাঞ্চল।

 

যদি গেছো, জানো তুমি

এর কি অমোঘ আকর্ষণ

যাওনি যারা দেখে যাও তারা

আমাদের উত্তরের এই অপূর্ব সম্পদ।

নিঃসঙ্গতার সাথে শুয়ে আছি কয়েক শতাব্দী ধরে,

দুকূল ভেসে যাওয়া নদীর মত

ভাঙ্গা দরজার শব্দ নিয়ে

ভেসে আসে কিছু নিস্তব্ধ লেখা,

ধূলোপড়া পাণ্ডুলিপির স্বরে

একদিন বিকেলকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,

তুমি এত নীরব কেন?

বিকেল বলল–

রাত্রিটা যে অনেক অন্ধকার, তাই……


তারপর কত বিকেল হারালো রাত্রির অন্ধকারে….

স্ট্রিট লাইটের আলোয় পা মিলিয়ে

কত প্রেমিক হেঁটে গেল কুয়াশার ওপারে….

অথচ তুমি তখন ব্যস্ত ছিলে

আমার জন্য উলের সোয়েটার বুনতে,

আর আমি পাথরে পাথর ঠুকছিলাম

প্রস্তর যুগের ইতিহাসকে মনে করে।

প্রকৃত রোমান্সের ছোঁয়া পেলে আমি এখনো অজস্র

কবিতা লিখে ফেলতে পারি ,

যেভাবে তোমার হলুদ শাড়ির ভাঁজে অল্প একটু

শ্রাবন লেগে আছে নীল ব্লাউজের মত

ঘামে চকচক মুখ নিয়ে যতটা গান তুমি গেয়ে ওঠো

আর মঞ্চ থেকে নেমে আঁচলে মুছে ফেলো যাবতীয়

শিল্পের কণা , আমি তুচ্ছ করতে পারি নদীর মত বহমান

শ্রাবণ মাস , তুচ্ছ হতে পারে হঠাৎ চমকে ওঠা রাত্রি ,

চোখের পলক –

না , শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির স্বপ্ন দেখতে

হয় না

ওটা এমনিই নেমে আসে

জোছনার বয়স বুঝি নয়

রতন দুইয়ের কাছাকাছি

বাবা নিরুদ্দেশ

মা ঠিকা-মাসি


এঁটোকাটা খুঁটে খুঁটে

ভাইকে আগলে বুকে

পার হয় জোছনার নিরক্ষর দিন


হঠাৎ কাজের মেয়ে হয়ে

চলে গেল দূরের শহরে


রাত্রি নিঝুম হলে

কখনো ঘুমের ঘোরে

ফিরে আসে পরিচিত ঘরে

চাদর জড়িয়ে ধরে

ডেকে ওঠে রতন, রতন!

অনেক কিছু ধরে ধরে শেখার মতন

কাবলি চানা

অনেক কিছু ধরে ধরে না শেখার মতন

ছাদে বসে বসে ভেবে যাচ্ছি

চারিপাশে নারকেল সুপুরি আম গাছগুলি থেকে

তাদের ঝিরি ঝিরি নড়ে ওঠা

শেখানো বুলি গাইছে পাখিরা

না শেখার কাছে উড়ে উড়ে

মেয়েদের বিয়ের পণের টাকার জোগাড় করতে

ধানি জমি আর বিশেষ ছিলো না

বাগান বাড়ির সবজি বাগান টা ছিল ভারি সুন্দর

সবরকম সবজি-ই বাবা নিজের হাতে লাগাতেন।

কখনো কখনো নিজের হাতে

কেটে দিতেন বেগুন গাছের পাতা

পাতাকাটা বেগুনের নাকি এটাই নিয়ম।

গাছ যত হালকা হবে ততই ফলন বাড়বে।

জানতে চাইলে মোটা ফ্রেমের চশমার ভেতর থেকে

দুটো চোখ কথা বলত।

এর সাথে নাকি জীবন দর্শন এর মিল আছে।

বাবা সেকথা কখনো খোলসা করে বলেন নি।

কেবল “উত্তরণ” শব্দটা উচ্চারণ করতেন।

আজ জীবন সায়াহ্নে এসে বেশ বোধ করি,

উত্তরণ ঘটতে হলে হালকা হওয়া খুব জরুরি।

ফেলে আসা দিনের এক একটা শব্দ আড়াআড়ি

লম্বালম্বি এসে পথের সামনে এসে

পথ আগলে দাঁড়ায়।

জানি না উত্তরণ ঘটতে আর কতটা হালকা হতে হবে।

এই পৃথিবীটা যদি শুধু তোমার আমার হতো!

আমি নিজেকে বেঁধে রাখতাম তোমার ওড়না দিয়ে।

সকালে তোমার কপালে চুম্বন সেরে, দুপুরের স্নানের পর আমি পড়তাম হুমায়ুন আহমেদ,

আর তুমি পড়তে শরৎ কিংবা রবীন্দ্রনাথ।

বিকেলবেলা হেঁটে রাতের বেলায় বিছানায় হাত ধরে স্বপ্ন দেখতাম একসাথে।

আমার পেন্সিলে আঁকানো ছবিতে তুমি ছিটিয়ে দিতে জল রং,

অভিমান হলে আদর করতাম, ভালোবাসায় ফুটিয়ে তুলতাম মেঘ।

বৃষ্টি হলে ভিজে উঠতে ওই লাল শাড়িতে, চাঁদের আলোয় গল্প হতো তোমার আমার।

এই পৃথিবীটা সত্যিই যদি শুধু তোমার আমার হতো,

আক্ষেপগুলো বোধহয় মিটিয়ে নিতাম ।

তোমার আমার এই পৃথিবীটা যদি সত্যিই হতো

ভুলগুলোও শুধরে নিতাম তবে!

সেই কোন ভোর থেকে পাখিদের কিচমিচ ভৌভৌ ম‍্যাওম‍্যাও,

সারা পাড়া মেতে ওঠে প্রাণের উৎসবে।

এই সারল‍্যের কাছে কবিতারা ম্লান হয়ে যায়।

আর আমার কথারা নিশ্চিন্তে ঘুমায়

ভালোবাসায়।

কিছু স্বপ্ন বর্ষায় ভিজতে ভিজতে

কাগজের নৌকায় ভাসিয়ে দেয় মন

তোর আমার উল্টোবেলার সেসব তেপান্তর

ভেঙে গেছে জিয়নকাঠি

আগলে রাখা পাখ-পাখালি

বেখেয়ালে তুলে দিলি ফানুস পাখির খাঁচায়

বাঁধন হারা মেজাজি সে

উড়তে উড়তে মেঘের ঘরে বসে আছে পা ছড়িয়ে

মেঘ তো কখনো পাতলা হবে

ঘন হলে বৃষ্টি


আছড়েই ফিরে আসবো এই মাটির বুকে..

‘বর্ণ পরিচয়’ আমার হৃদয় বীণা তন্ত্রীকে,

অহরহ করে স্পন্দিত,

সেই স্পন্দনে তৈরি হয় সৃষ্টির আবেগ,

যে সৃষ্টি দিয়েই ছিন্ন করি,

সমাজের ক্ষুদ্রতা তুচ্ছতা,

গড়ে তুলি প্রতিবাদ প্রতিরোধ,

খুঁজে পাই শুভবুদ্ধি জাগরণের মন্ত্র,

শিল্প সুষমা মন্ডিত প্রাণসমৃদ্ধ।

মহৎ উপলব্ধিতে জীবনকে করে তুলি সার্থক।

ভাষার মধ্যেই খুঁজে পাই চিরন্তনের স্পর্শ,

পাই মহৎ চিন্তার নিবিড় সান্নিধ্য।

‘বর্ণমালার’র শব্দগুলো অহরহ জোট বাঁধে

সত্য, শিব, সুন্দরের সন্ধানে,

যে শান্তির অমৃতধারা হয়ে বয়ে যাবে

দেশ থেকে দেশান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে।

(প্রয়াত কবি অজিতেশ ভট্টাচার্য স্মরণে)

আমি একজন বৃক্ষ কে জানি

যে ধূপকাঠির মত পুড়তো নিঃশব্দ

বুকের ভেতর দুঃখের পাতা বুনতো

আর সুগন্ধ ছড়িয়ে নিজে ক্ষয় হয়ে যেতো

জানালার গ্রিলে লেগে থাকত তার উষ্ণতা

হাওয়ায় ভাসতো বাদামি পাতা

অলিতে গলিতে রাজপথে

মাঠের কিনারে বসে সে বাঁশি বাজাত

বুকের পাঁজরে যত সাধ


সে সুর ভালোবাসার নিঃস্ব হাহাকার

বাঁশ পাতায় মতন চিকন একাকী

পরিযায়ী পাখি

যেন ধীরে ধীরে উড়ে যাচ্ছে

তিস্তাপারের ঘন অরণ্য এর ভিতর দিয়ে

রাঙ্গামাটির দেশে

খোয়াইয়ের উপর দিয়ে ঘন কাশবনে

একটা শব্দ ছড়িয়ে যাচ্ছে

যেন পাখির ডানায় কবিতারা উড়ছে

একজন বৃক্ষ যদি দুঃখে কেঁপে উঠে

তার হাহাকার আজ

চিরদিন আলোড়িত করে .রাখবে….

প্রাণচঞ্চল,ছটফট মেয়েটি

বড় আশা ছিল,

মাতৃত্বের স্বপ্ন….

ঝড়ো হওয়ায় ঝাপটায়



তার স্বপ্নময় জীবনে ঘনিয়ে এলো অন্ধকার…..

নবজাতক জন্মের পর,

মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ।

অজানা দেশে চলে গেল….

ছোট আদরের বোন।

সবুজে মাখানো পাকদন্ডী পথ

ফুলেরা বসতি গড়েছে পথের পাশে।

তোমরা যাকে সিকিম বলে চেনো

আমি ঘর বেঁধেছি সেই যে সুখের দেশে।

 

কিশোরী তিস্তা শ্রাবণে বাঁধন হারা

তিস্তার টানে রঙ্গিত ছুটে আসে

চুপকথাগুলো পাহাড় জানে না আজও

তিস্তা, আসলে রঙ্গিত ভালোবাসে।

 

কুয়াশা মাখা কুয়াসা গাছের পাতা

অর্কিড সব সেজেছে রঙিন সাজে।

মেঘ মাখানো সেগুনের জঙ্গলে

পিউ কাঁহা ডাক শুনবে মাঝেমাঝে।

 

খাদের রেলিং-এ দাঁড়িয়ে একলা বিকেল

এলো চুলে যাওয়া তরুণীর মুখে হাসি।

ক্ষুদে চোখ জুড়ে একরাশ ভালোবাসা

বলে যায় যেন, ভালো থেকো ভিনদেশী।

 

মেঘেদের সাথে পাইনের খুনসুটি

একটু দূরেই আমন দাজুর বাড়ি।

বারান্দাতে দুলছে রোডোডেনড্রন

খোঁপায় বাঁধবে  ? আমি এনে দিতে পারি।

 

পানকৌড়ির পাখায় নামে সন্ধে

গুম্ফায় গান বাজছে কোথাও দূরে।

লালিগুরাসের নেশায় দু’ চোখ লাল

অমন দাজুর গিটার বাজছে সুরে।

 

বড় বে-শরম বুনো হাঁস দম্পতি

সারাদিন শুধু তিস্তায় জলকেলি

চল পাগলী, বুনো হাঁস হই আজ

ওদের মতোই জলছোঁইয়া ছুঁই খেলি।

দুর্গা মাগো! হচ্ছেটা কি ?

তুমিই দেখো চক্ষু মেলে

ফুলে ফেঁপে কুমড়ো-পটাশ

‘কাটমানি’- খেয়ে তোমার ছেলে।


‘হোয়াইট’ করে ‘কাটমানি’

আর এক ছেলে দিন রাত—

তোলাবাজিটা রপ্ত করতে

মামার কাছে পাকায় হাত।

পড়াশোনা শিকেয় গড়ায়-

‘ঘুঘুর বাসা’, ‘অটুট-ঝড়ে’

হাইজ্যাক্ হয়, ডেডবডি

হতভাগারাই ফাঁদে পড়ে।

আর না মা ! ঢের দেখলুম-

তোমার ছেলের কেরামতি !

ওদের তুমি সুমতি দাও-

চাই না আমি দেশের ক্ষতি।

আজ হঠাৎ হরেন এসে হাজির। আমি অবাক। এর মধ্যে হরেন!! দাদা আছো নাকি বাড়িতে? আছি বলে বারান্দাতে গেলাম। দেখি স্বয়ং দাঁড়িয়ে। আমি কিছু বলার আগেই বলল “না দাদা দরজা খুলো না।গ্রীলের ভেতর থেকেই কথা বলো। এখন তো সব দূরে দুরে”। আমি বললাম -“হ্যাঁ তাই। তা তুই কি মনে করে?” বলল- “দাদা আমাকে পাঁচশ টাকা দাও তো। ফেরত দিতে পারবো কিনা জানি না। যা অবস্থা।” আমি বললাম- “ঠিক আছে দেব। তা তুই কি আমার কাছেই?” বলল- ” হ্যাঁ ঐ তাই ধরো।” বললাম-“বস। তোর গল্প শুনি। বহুদিন পর দেখা। আর আমরা তো সামাজিক দূরত্ব মেনেই মানে দুরে দুরেই তো আছি।” ভাবছেন এই হরেন কে? বলি। ও পেশায় চোর। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। চোর। ওর সাথে পরিচয়ের একটা অবাক করা ঘটনা আছে। ওর একটি দূর্ঘটনা ঘটেছিল। মানে সেসময় আমার তাই মনে হয়েছিল। সত্যিটা আজও জানিনা। আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ওষুধ কিনে দিয়েছিলাম। ব্যস ও একদম পাখির চোখের মত আমাকে মনে রেখেছিল। ওকে দেখতাম। শহরে ঘুড়ে বেড়াত। চোখাচোখি হলে হাত জোড় করত। ঐটুকুই।

ওর ঐ ঘটনার প্রায় বছর খানেক পরের কথা। আমার ছেলে দোকানে গিয়েছিল কিছু আনতে। ওখান থেকে ছেলের নতুন সাইকেল টা চুরি হয়ে যায়। আমি খবর পেয়ে গিয়ে দেখি ছেলে কাঁদছে আর অনেক লোক ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে আমাকে দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। আশেপাশের লোকজনরা বলে- “না না ওর কোন দোষ নেই। আমরা কেউ বুঝতেই পারি নি।” মনটা খারাপ হয়ে গেল। তিনমাস হলো কিনেছি। ওকে দোষ দেব কি ওটা আমার কাছ থেকেও যেতে পারত। হঠাৎ দেখি হরেন এসে হাজির।

আমাকে বলল-” দাদা কি হয়েছে?”

আমি বললাম – “আর বলো না। ছেলের নতুন সাইকেলটা এইমাত্র চুরি হয়ে গেল।”

 তাই নাকি ? কি সাইকেল? সিটের রঙ?

আমি বললাম-” হিরো। আর লাল রঙের সিট কভার।”

 আপনি তো নিউটাউনে থাকেন ? তাই না ? আপনি বাড়ি চলে যান।

আমি বললাম, “মানে ? আমি এখন থানায় যাবো।

সে বলল,” দাদা আপনি বাড়ি যান। আমি আসছি।”

কি মনে হলো আর থানায় গেলাম না। ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। ঠিক আধ ঘণ্টা মতো হবে। দেখি বাইরে কে ডাকছে। বাইরে বেড়িয়ে দেখি হরেন। সঙ্গে ছেলের সাইকেল। অক্ষত। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি বলব। কিছুক্ষন পর মুখ দিয়ে বের হলো- “তুমি.. এটা… কিভাবে ? মানে….।

ও বলল, ” আরে সে অনেক ব্যাপার। কই ছেলে কোথায়?”

ততক্ষণে ছেলে চলে এসেছে। এসেই চিৎকার। মা…। এবার আমাকে ওকে ভিতরে আসতে বলতে হয়। ও এল। বারান্দায় বসল। সেদিন ওর সম্পর্কে অনেক কথা জানতে পারলাম। ওর নাম হরেন। ও অকপটে স্বীকার করল। ও চুরি করে। তবে এই চুরি টা ওর কাজ নয়। তবে ও জানে কে এই কাজটা করতে পারে। সেদিন ওর অনেক অভিজ্ঞতার  কথা শুনছিলাম। একবার ও একটা সাইকেল চুরি করেছে আর সঙ্গে সঙ্গে যার সাইকেল সে দেখে ফেলেছে। আর চিৎকার করে বলছে- ধর। ধর। হরেন বলল-” আমি তো ভাবলাম গেলাম। ক্যালানি আছে নির্ঘাত। হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেল। আমি সাইকেলের হ্যান্ডেলটা কাঁপাতে কাঁপাতে বললাম। না না ধরতে হবে না। আমি পারি। শিখে গেছি। আর যারা ধরতে এসেছিল তারা ভাবলো যে আমি বোধহয় নতুন সাইকেল চালানো শিখেছি। ব্যস।। তারপর ফুল স্পীডেএ ওখান কাটিং।”

শুনে আমার ছেলের হাসি থামে না। তারপর আর কিছুক্ষন থাকার পর ও চলে গেল। মিষ্টি খাবার জন্য টাকা দিতে গেছিলাম। নিল না। বলল – “দাদা ওষুধের দামটা কিন্তু সেদিন আমি দিইনি। থাক না ওটা। একটু কাজে লাগলাম আপনার মতো মানুষের।” কিছু বলতে পারলাম না। ওর কাছ থেকেই জানতে পারি ওর নাকি নচিকেতার গান খুব ভালো লাগে। কিছু গান আবার মুখস্থ। সেদিন মানুষটার প্রতি অন্যরকম একটা ধারনা হয়। হোকনা চোর। এরকম কত চোর আমাদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেদিন চলে যায়। কিন্তু একটা ভালো লাগা রেখে যায়। না আমার ছেলের সাইকেল ফেরত দেবার জন্য নয়। ওর অকপট স্বীকারোক্তি, সরলতা ভালো লেগেছিল। সেই হরেন আজ এসে উপস্থিত। আমি বললাম কিরে তোর ব্যবসা কেমন চলছে?

ও হেসে বলল- “দাদা খুব খারাপ। এমনিতে আমাদের ব্যবসাতে এখন সবাই জয়েন করছে।”

আমি বললাম -“মানে?”

বলল- “ভালো করেই জানেন। দেশের চূড়া থেকে নিচে সবাই আমার কলিগ। আর আমরা যারা পুরোনো তারা ব্যবসায় মার খাচ্ছি। আর এত কমিশন দিতে হয়। নিজের থাকেনা। ঐ রাস্তার কাজের মত।”

-“সব খবরই রাখিস।”

সে বলল-“যুগের সাথে চলতে হবে। এবিপি দেখি। খবর পাই। আর এখন সাইকেল চুরি করে লাভ নেই। বিক্রি হয়না। সবারই আছে এখন। আর তাছাড়া এখন দুপুরবেলা সবাই বাড়িতে। রাতেও হয়না। সবাই এখন বেশীক্ষণ রাত জাগে। আর চুরি যদি করিও। বেচার লোক নাই। এই করোনার ভয়ে সবাই বাড়িতে। মানে আমাদের যাদের পিছনে সীল আছে আমরা চোর। তারা সবাই বাড়িতে। কলিগদের কথা বলতে পারবো না। তাছাড়া মেয়েটা বড় হচ্ছে। এখন খারাপ লাগে। বড় মায়া ওর চোখ গুলোতে। দাদা এই সময় একটা জিনিস দেখে খুব মজা পাচ্ছি। এতদিন পুলিশের মার আমরা খেতাম এখন ভদ্রলোকরাও মার খাচ্ছে। কি মজা হচ্ছে। আমরা বুঝছি। ওরা বোঝেনা কেন? বাড়িতে থাক।” আমি বললাম -“তোদের তো এজন্য সরকার থেকে সাহায্য দিচ্ছে”।

ও হেসে বলল-“দাদা শুনতে আর বলতে অনেককিছুই ভালো লাগে।” তারপর বলল “না যাই। চাল ডাল নিতে হবে। কতদিন যে চলবে।”

আমি যাবার সময় বললাম – “আলো জ্বালিয়েছিলি?”

মাথা নেড়ে বলল -” হ্যাঁ জ্বেলেছি তো। এইখানে” বলে পেটটা দেখালো আর আমার দিকে বোধহয় একটু করুনা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল – “ওগুলো আপনাদের জন্য।” আমি এই উত্তরটা আসা করিনি। আমাকে অবাক করে ও চলে গেল।

বিছানায় শোয়ার সাথে সাথেই তীব্র বাজী পটকার আওয়াজে গমগম করে উঠলো চারিদিক। চমকে উঠলো তপন। এত্ত রাতে এত বাজী ফাটাবে কে! কোথাও তো কোনো অনুষ্ঠান নেই। একটু অবাক হলো তপন। দরজা ঠেলে বারান্দায় আসতেই সে দেখতে পেলো বড় বাজারের দিকের আকাশটা কেমন লাল হয়ে উঠেছে আর শব্দটা আসছে ওই দিক থেকেই। আগুন নাকি! বড় বাজারে তপনের ছোট্ট মনিহারির দোকান। হাজার দশেক টাকার মাল তুলেছে তপন চারদিনও হয়নি। অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপতে লাগলো তপনের। রাস্তায় পা ফেলতেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসা কালুর থেকে জানতে পারলো আগুনই লেগেছে বড় বাজারে। ভয়ঙ্কর আগুন। ঘর থেকে কোনো মতে জামাটা গায়ে গলিয়ে বড় বাজারের দিকে ছুটল তপন। বড় বাজারে পৌঁছে দেখলো ভয়ঙ্কর আগুন। দমকল তখনও এসে পৌঁছোয় নি। আগুনটা লেগেছে বাজি পটকার হোলসেলের দোকান গুলির ওদিক থেকেই। জতুগৃহ বলে পরিচিত বড় বাজারের এই আগুন দমকল যে নেভাতে পারবে না তা ভালোমতোই জানে তপন। ভিড় বাড়ছে। দোকান মালিকদের, দর্শকদের। নির্বাক তপন কাঁপাকাঁপা পায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।



বিছানায় বালিশ চাপা দিয়ে শুয়ে পড়ল তপন। যাতে বড় বাজারের তীব্র হাহাকার তার কানে এসে না পৌঁছায়। ঘুম এল না। ঘুম আসাটা স্বভাবিকও নয়। তার ছোট্ট সংসারের বর্তমান ভবিষ্যতে কে যেন আগুন লাগিয়ে দিল। ভোরের আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে পড়ল তপন বড় বাজারের উদ্দেশ্যে। পুলিশ গোটা এলাকাটাকে ব্যারিকেড করে রেখেছে। স্থানীয় দোকানদার ছাড়া কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাঁধা ঠেলে এগিয়ে গেল তপন। না, অবশিষ্ঠ কিছুই নেই। তপনের দোকান ছিল বাজি ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনেই। তার দোকানের টিন টুকু দলা পাকিয়ে পড়ে আছে। নিজের দোকান ছাড়িয়ে এগিয়ে গেল তপন। সমস্ত বড় বাজারটাই যেন একটা পোড়া নগরী। পায়ে পায়ে হেঁটে চারিদিকে তাকাতে তাকাতে হাহাকারের পরিবর্তে তার চোখে ভেসে উঠলো অন্য এক চিত্র। যা কিছু প্রাচীন, যা কিছু ঠুনকো তা যেন সব খসে গেছে। আবার গড়ে উঠেছে নতুন এক বাজার । সকলের মনে নতুন এক আশা। সব কিছুর সঙ্গে মানান সই করে নিতে গেলে জীবনটাকেও তো নতুন করে নিতে হয়।