এখন সম্পাদকীয় লেখার কথা ভাবলেই মাথায় অজস্র বিষয় কিলবিল  করতে থাকে। কিন্তু কোন বিষয়‌ই ঠিকঠাক থিতু হয়না। কতরকম বাধা বিপত্তি। ভাবি কোন রাজনৈতিক ভাবনাকে আমল দেবনা, তাকে প্রকাশ করবোনা। বিবেক বস্তুটা সব সময় পিছনে লেগে আছে। বাস্তবের সঙ্গে সহাবস্থান আর বিবেকের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা চলছেই। অনবরত চোখের সামনে, সমাজের হাতায় যে সব ঘটনা ঘটছে তা এক কথায় মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। অথচ মগজের মধ‍্যে কিলবিল করে ওঠে বিদ্রোহ করার জন‍্য। সমাজের মুখ নামক প্রহরীদের রক্তচোখ কোন বিদ্রোহের বীজ অঙ্কুরিত হতে দেয় না।

রাজনৈতিক চেতনা বলতে যে কি বোঝায় , কিছুই মাথায় ঢোকেনা। আবার অরাজনৈতিক কথাটাও ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ব‍্যাক্তিগত জীবন যাপন‌ও রাজনৈতিক কৈফিয়তের আওতায় ঢুকে পড়েছে। এমতাবস্থায় এই সম্পাদকীয় টি আদতে কি চরিত্রের হয়ে উঠছে কে জানে ! সাহিত‍্য সৃষ্টি ও সাহিত‍্য পাঠ সব‌ই  এখন রাজ চক্ষু নামক ক্লোজ সার্কিট পর্যবেক্ষণের আওতায় ধরা থাকছে।

         যত‌ই বলি আমাদের এই অঙ্কুরোদ্গম ই-ম‍্যাগ রাজনৈতিক স্পর্শশূণ‍্য রাখতে চাই, থাকে কি? প্রতিবাদ করা আমাদের অধিকার, অর্জিত অধিকার। তাই প্রতিবাদ ও প্রতিবাদী লেখা নিয়ে আমাদের ই-ম‍্যাগ সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেই।

       এক দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যে অতিমারি থেকে মেরুদন্ড সোজা রেখে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে আমাদের দেশ, তার জন‍্য সারা পৃথিবীর কাছে আমাদের মাথা উঁচু হয়ে থাকবে। আরও দ্রুত দেশ পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুক।

 

শুভাশিস হালদার

কবিতা

উৎপল মুখোপাধ্যায়

শুভাশিস হালদার

হরিপদ মাহাতো

রাজশেখর

ভোলানাথ দাস

কৌশিক চট্টোপাধ্যায়

শ্যামাপদ কর্মকার

পুরবী হালদার

গৌরীশঙ্কর সিংহ

পার্বতী রায়

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

 

অনুগল্প

দিবাকর মন্ডল

 

ভিডিও

অরুণাভ ব্যানার্জী

গৌরিশঙ্কর সিনহা

শ্রাবন্তী বটব্যাল

সঙ্গীতে চন্দন কর্মকার

তবলায়

রুণা কর্মকার

ছায়ার সাথেই চলি

আলোকিত পরিবেশেও হয় উঠি ছায়ার মানুষ

 

নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন মাপি -বলি,

একি ঐশ্বর্যের -না কি নিঃস্বতার স্বরূপ

বৃত্তকে ভাঙতেই পারি না

সৃষ্টি থেকে আজ অবধি রহস্যের জৌলুস।

কিছু বেগুনী স্বপ্ন আর কিছু সবুজ ব‍্যাথা

সাজিয়ে আমার হৃদয় রেখেছি আকাশে

রাত্রিখানি পরশ পরশ নেশায় মাতন দিয়ে

বাজুক তোমার উদার রঙীন অমেয় ভালোবেসে ।

 

কিছু প্রেম, কিছু অলসতা আর কিছু শব্দমালা

ভুবনখানি গড়েছি তোমার উদার অবকাশে

সময় আমার উতল উতল ব‍্যথার বিজন মন

ঝর্ণা ঝর্ণা বিরহ ভাসালে গহন ভালোবেসে ।

আষাঢ়ে ধান রুয়ার হিঁসত‍্যে

ই বছর খামার ভত্তি ধান,

গত বছরের রুঠুন‍্যা দশাটা পাল্টে গেইলছে।

এখন ধানের পা গজানছে

ক্ষেতে ধান, খামারে ধান, যেদিকে ভাইলব‍্যে চারধারে ধানের ছলক্কার ,

ই পোড়ে ই আঘনে ইঁদুর ঢাড়ের সাতবার ছানা হবেক

উয়ারাও জাইনে গেইলছে ইবছর আর যায় হোক খাওয়ার অভাব হবেক নাই ;

চাষি হাসি মুখে ধানক্ষেতের আইড়ে বসে স্বপুন দেখেছে ধান বিকবেক সরকারি দরে

তবে সেই বলে নাই, ছিঁড়া খাইটে লাখটাকার লটরি জিতা

কুথায় কি, সেই ত হপনা ভাঁড়ুর গদামে

হাজার বার শ,

ই রকম চললে ধারদেনাটায় শোধাব‍্যেক নাই।

হ‍্যাঁ আজ্ঞা, তুমরাত লেখাপড়হা জানা মানুষ বঠ ন

আমদের মতন গতর খাটা মানুষ লহ।

ইধার উধার চতুদ্ধারে ভুরতুকির ভুড়ভুড়ি

সব জিনিসের দাম ফুফায় ফুফায় বাড়ছে

ধানের বেলা এমনটা কেনে।

ভোট আইসব‍্যেক ,ভোট যাবেক

যারা ভোটে দাঁড়ায় তারা ত ধনকুদরা,

ধানের মর্ম কি বুঝব‍্যেক !

কত ধানে কত চাল বুঝতে না পারলে কি হবেক ?

চাষিগুলান গৈজে যাবেক

আড়তদাররা মজা লুটব‍্যেক , হায়রে কপাল।

কে বলে, গাছ শীর্ণ হল ?  আজও পাতায় সাহস বোনে,

শিকড় তাকে ক্ষমতা দেয়, নতুন নতুন বিষধারণের।

 

সপ্তাহান্তে আমরা যে যাই, যে-যার বিষাদ নামিয়ে আসি,

সেই দিয়ে তাঁর মাসকাবারি। সমগ্র। তাই স্বল্পভাষী।

 

কে বলে, গাছ ন্যুব্জ হল ?  আজও পাখির ডাক শোনা যায়

ইতিহাসের বয়স বাড়ে, যন্ত্রণা তার উঠোন সাজায়।

 

হাত দুখানা বাড়ান যখন, শব্দশিরা

এর দুধারেই সভ্যতা হয়। একটু দূরে আলতামিরা।

 

ফসলজমির নকশা পাড়ে, শাল গায়ে তাঁর মাটির শরীর

শাবলক্ষত আড়াল থাকে। দৃষ্টি তবু দেশান্তরীর।

 

কে বলে, গাছ ক্লান্ত হল ?  আজও বাতাস একই রকম

আমরা ঝড়ে আশ্রয় চাই।  তাঁর শাখা নেয় আকাশজখম।

 

গাছ, তুমি তাই এমনি থেকো। কী চাইব আর, জন্মদিনে ?

পথ হারালে আমরা যেন ফিরতে পারি রাস্তা চিনে……।।

আমি হাঁটছি – হাঁটছি, হেঁটেই চলেছি

পৃথিবীর পথে প্রান্তরে !

বৈচিত্রময় পরিবেশ, পরিবর্তিত

সমাজের অভিব্যক্তির পিছনে ।

অতীতের জীবাশ্ম ভেসে ভেসে আসে

অভিযোজনের দ্রবণের উপর !

চেয়ে চেয়ে দেখি রাসায়নিক পরিবর্তনে

সামাজিক প্রতিফলনের রূপ ।

হিসাব মেলাতে গিয়ে থেমে যায় ,

মানবিক চেতনায় রঞ্জিত অন্তর ।

মেলেনি কাঙ্খিত উত্তর, শুধু গুমরে ওঠে

হৃদয়ের গভীরে অব্যক্ত যন্ত্রনার  সুর ।

স্বযত্নে লালিত অন্তরের সৌন্দর্য স্বপ্ন

ফিকে হয়ে যায় চলমান বাস্তবের রঙে !

তবুও স্বপ্ন জাগিয়ে এগিয়ে চলি,

অনাগত ভবিষ্যতের উজ্জ্বল পথে,

সুসজ্জিত বিজ্ঞানের শিখর পানে ।

সরিয়ে নিলে মেঘলা আকাশ

শুকনো হল ভেজা মাটি

বদলে গেল দিনের যাপন

তৈরী হল আছিলা পরিপাটি।।

 

সময় দেখি নিজেই কাটে

মন কেটে যায় এবং ধড় ও

সবাই কে তো খুশিই দেখায়

ভেতরে যতই গুমরে মরো।।

 

এই আছিলায় ফুল বুনে যাই

বুকের বাগানও হল রাজি

প্লাবনে তো ঘর ভেসেছিল

নিজেই নিজের ঘরও সাজি।।

 

আবার ফিরুক বাদলা হাওয়া

বান এসে যাক আবার রোজ

হালকা কোনো বৃষ্টি হলেও

মন খারাপ রা হোক নিখোঁজ।।

 

ব্যাপ্ত হোক সারা আকাশ

প্লাবন আনুক ছন্দে শরীর

ভেঙে ভেঙে ঝরে পড়ুক

মেঘের থেকে মেঘের গভীর।।

আমি স্বপ্নের বীজ বুনে চলি—

স্বপ্ন দেখলে নাকি ঘুমের ব‍্যাঘাত হয়। ,

তবু বুনি

শুনেছি–গভীর ঘুমেই স্বপ্ন আসে

স্বপ্ন  অবচেতন মনের প্রকাশ।

স্বপ্নই তো সত্যে প্রকট হয়

সত্যের শস্যে পরিণতি।

সবুজ শস্য, সোনালী শস্য,

বিধাতার আশীর্বাদ।

ভালোবাসার আলিঙ্গনে গ্রাস করে নিপুনতা বেমালুম শীতের হাওয়ায় নাচন লাগায়

আবেগীমন চোখের ইশারা

আমলকি ফুল ডালে ডালে লাজুক কথাকলি

গেঁথে থাকে খুশীর চমক জীবনপথে,

আকাশে সোনা রোদের প্রশান্ত সকাল

মৌন নরম দুপুর শেষে

সন্ধ‍্যার হালকা হিমেল আঁচল পশ্চিম দিগন্তে

নাম না জানা পাখিদের কোলাহল

অস্তরাগের অন্তিম আভা ডানায় মেখে

আলোকমালায় সাজায় আকাশের সামিয়ানা,

ভোরের আজানে শান্তি আবেশ নিঝুম চরাচর

ফোঁটাফোঁটা শিশির ঝরে, মখমলি সবুজ গালিচা

সর্বাঙ্গ দিয়ে শুষে নেয় অবাধ‍্য ধুলিকণা যত

দুনিয়া কাঁপানো সন্ত্রাস বিলুপ্ত হবে

অস্থির সময় হবে দূর,

বিপন্নতায় নীরব অপেক্ষায় চেয়ে থাকা যখন

দিনবদলের স্বপ্নে বিভোর দুচোখ থৈ থৈ

হিমের পরশে সম্মোহন মাখামাখি,

আজন্মলালিত অভ‍্যাস শীতঘুম ভেঙে উঠি

রোজ খুঁজি উন্মুখ হয়ে

হয়তো হৃদয়ের ঘুম ঘরে ঢেউ এলোমেলো

ছিঁড়ে যাওয়া মালা থেকে পুঁতি নিয়ে আবার গাঁথি মালা

নক্ষত্ররাজী জেগেছে রাত আমার সাথে অকপটে

সোহাগী উষ্ণতায় তোকে স্বাগত জানিয়েছি

মায়ের কোল আলোময় করে আসছে উজ্জ্বল দেবশিশু

গোপনে খেলছে বুকের মাঝে পিয়ানোর রিডে রিডে

উৎসবে আঙিনা একাকার কোলাহল দিকে দিকে

স্বর্গীয় সুষমায় হিমেল পরশ মেখে

অপরূপা মোহিনী প্রকৃতির মাধুর্য যখন

নিঃশব্দে স্পর্শ করে হৃদয়ের চৌকাঠ

তারাদের রঙ্গোলী আঁকা মরসুমী ফুলের জলসায় ইচ্ছে মতো ধায়

অঘ্রাণের মেঘমুক্ত উদার আকাশ……

মৃত তারাটি মনে এসে বসলে

ছাইরাঙা হয় সরণি ;

এদিকে যতদূর এসেছ সুসময়,

বসন্ত হয়েছে পলাশ..

 

মৃত্যুর থেকে যে পথটি তুলে এনেছি  কুড়ি বছর আগে, তার কাছে মাঝে মাঝে বসি, কথা বলি-

রঙমাখানো হাতচিঠি অদলবদল করি;

 

তার অচলায়তন আকারটাকে নাড়িয়ে দিই;

চৈত্রের দুপুরে নির্জন পঙক্তির মতো সহবাস

গুমরে ওঠে..

অবসরের কথাটি, বাতাসে বাঁশপাতার মতো ঘুরে  ঘুরে পড়তে থাকে গহন জলে…

স্মৃতির অন্তর্ধান থেকে তুলে রাখছি

কিছু বিবর্ণ রঙের পাল তোলা নৌকো আর ভিজে যাওয়া প্রজাপতি অক্ষর

পারি না ভুলে যেতে

এক আকাশ স্বপ্নের বাড়ি-ঘর !

 

আজকাল মনের মাটিতেই গড়ে তুলেছি মগ্ন কবিতার ঈশ্বর

কোথা থেকে আসে দ্বৈত কণ্ঠের খিদে গুলি

বারংবার মাড়িয়ে যায় বসন্তের পেলব দৃশ্যটিকে  !

 

অজ্ঞাত থাকতে চাই

এইসব ব্যতিক্রমী হিসেব নিকেষ থেকে।

দরজাটিতে সাবধান লেখা প্ররোচনা

তার মানে খুলতেই হবে আলিবাবা

এখনো উদ্যত মান্ধাতার দীর্ঘ হাত

অভিমন্যু শিখেছে ঘুমে চক্রব্যূহ ভেদ।

 

জানলায় উৎসুক স্বর্গ ফুটে থাকে।

 

রাধা জানে পথটি বন্ধুর সেপাশে বঁধুয়া

পরাশর – জিনকে কুয়াশা চেনাবে ?

বিষের দড়ির উপর পারিজাত ফোটে

বাধা ও জয়ের মানে শীত ও বসন্ত

গোলাপে আগুন যদি ভাঁটফুল আছে।

 

গিলোটিন তোমাকে ভ্যাঙাই !

দমকা বাতাসে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গেল কমলার। স্বামী দীনমজুর ভোলানাথ বর্গা আইনের বলে ভূপতি সামন্তের বিঘেটেক জমির দখলে নিয়েছিল। সে আজ বছর তিরিশের আগের কথা। বেশ চলছিল কমলাদের। গেল বর্ষায় বীজধান পায়নি বলে,পঞ্চায়েতের উপর গোসা। মনোভাব ব‍্যালটবাক্সে …দক্ষিণপন্থীদের জয়জয়কার। ভূপতি সামন্তের ছেলে ধনপতি এল লাঠিয়াল নিয়ে জমি দখলে। ভোলানাথ ‘জান দেব কিন্তু ধান দেবনা’ বলে রুখে দাঁড়ায়। কিন্তু আসুরিক লেঠেল বাহিনীর হাতে ভোলানাথ প্রাণে মারা গেল। লেঠেল বাহিনীর দানবীয় উল্লাসে বস্তিতে বস্তিতে লাগলো আগুন। অসহায় কমলাদের স্হান হলো ত্রাণশিবিরে।

অঘ্রাণে ত্রাণশিবিরের পাশে সোনা সোনা ধান দেখে প্রাণ হু হু করে উঠে কমলার। তারপর শক্ত হাতে কাস্তেটা ধরে ভিটেমাটির দিকে রওনা দেয় সে।